ফোকাহাদের দৃষ্টিতে মহিলাদের কবর যিয়ারত (৩)
শরহে বুখারী ইমাম কাস্তালানী رحمة الله এর ফতোওয়া
لا فرق في زيارته صلى الله عليه وسلم بين الرجال والنساء ،
-”নবী করিম (ﷺ) এর রওজা শরীফের যিয়ারতের ব্যাপারে পুরুষ ও মহিলাদের যিয়ারতের কোন পার্থক্য নেই।”(ইমাম কাস্তালানীঃ মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ৪ র্থ খন্ড, ২১৫ পৃঃ)
অতএব, পুরুষ লােকের মত মহিলাদেরও কবর যিয়ারত মােস্তাহাব, তবে মহিলাদের কবর যিয়ারতের জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বণ করতে হবে। যেমন অধৈর্যের কারণে বিলাপ করা যাবেনা, নিজের গায়ে আঘাত করা যাবেনা, জাহেলী যুগের মত কোন কাজ করা যাবেনা, নারী-পুরুষ এক সাথে এক স্থান থেকে যিয়ারত করা যাবেনা। এক কথায় কোন ধরণের ফেতনার আশংকা থাকলে মহিলারা কবর যিয়ারত থেকে বিরত থাকবেন। যদি ফেতনার আশংকা না থাকে এবং মহিলাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে তাহলে তারা শরিয়ত সম্মতভাবে যিয়ারত করবে, ইহাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর চুড়ান্ত ফাতওয়া।
ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর মাজারের কাছে দোয়া
إني لأتبرك بأبي حنيفة وجيء إلى قبره ، فإذا عرضت لي حاجه ضليت ركعتين وسألت اللللہ تعالی عند قبره فقضى شريعا .
-"নিশ্চয় আমি আবু হানিফা (رحمة الله) এর দ্বারা বরকত হাছিল করি এবং তার কবরের কাছে যাই। যখন আমার কোন হাজত বা সমস্যা দেখা দেয় তখন দুই রাকাত নামাজ আদায় করি এবং ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর মাজারের কাছে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, ফলে আমার হাজর দ্রুত সমাধান হয়ে যেত।"(ইবনে আবেদীন ; ফাতওয়ায়ে শামী, ১ ম খন্ড, ১৪৯ পৃঃ)
সনদ সহকারে খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) তদীয় তারিখের কিতাবে এভাবে উল্লেখ করেছেন,
أخبرنا القاضي أبو عبد الله الحسين بن علي بن محمد الصيمري ، قال: أخبرنا عمر بن إبراهيم المقرئ ، قال: مما مكرم بن أحمد ، قال حدا ترین حقی بن إبراهيم ، قال: حدثنا علي بن میمون ، قال: سمعت الشافعي ، يقول إني لأتبر بأبي حنيفة وأجيء إلى قبره في كل يوم ، يعني زائرا ، فإذا عرضت في حجة صليت ركعتين ، وجئت إلى قبره وسألت الله تعالى الحاجة عنده ، فما بعد عني حتى تقضى .
-"আলী ইবনে মাইমুন বলেন, আমি ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: আমি অবশ্যই ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এর উছিলায় বরকত হাছিল করতাম এবং তার মাজারে প্রতিদিন যেয়ারতের উদ্দেশ্যে আসতাম। আমার যখন কোন হাজত থাকত তখন দুই রাকাত নামাজ আদায় করতাম এবং তার মাজারের কাছে যাইতাম ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম। ফলে আমার হাজত বা চাহিদা দ্রুত পূরণ হয়ে যেত।"
(খতিবে বাগদাদী: তারিখে বাগদাদ, ১ ম খন্ড, ৪৪৫ পৃঃ)
অতএব, হানাফী মাজহাব মােতাবেক কবর যিয়ারত করা ও যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা উভয়ই মােস্তাহাব সুন্নাত। শাফেয়ী মাজহাকে কিয়দাংশ লােক এর বিরুদীতা করলেও ইমাম গাজ্জালী শাফেয়ী (رحمة الله) ইহা রদ বা খন্ডন করেছেন। সর্বোপরি ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) সূদুর ফিলিস্থিন থেকে ইরাকের কুফায় ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) এর মাজারে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসতেন, তাই শাফেয়ী মাজহাবের ইমামের আমলের দিকে লক্ষ্য করলে আর কোন বিতর্ক থাকেনা। তাই সর্বসম্মতিক্রমে কবর যিয়ারত করা ও যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা উভয় মােস্তাহাব সুন্নাত।
ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর মাজারের কাছে দোয়া
قحط المطر عندنا بمرقند في بعض الأعوام ، فاستسقى التاس مرارا ، فلم قوا ، فأتي رجل صالح معروف بالصلاح إلى قاضي سمرقند فقال له: إني رأيت رأي أعرضه عليك . قال: وما هو ؟ قال: أرى أن تخرج ويخرج التاس معك إلى قبر الإمام محمد بن إسماعيل البخاري ونستسقي عنده ، فعسی الله أن يسقينا . فقال القاضي: يعم ما رأيت . فخرج القاضي والناس معه ، واستسقى القاضي بالناس وبكى التاس عند القبر وتشفعوا بصاحبه ، فأرسل الله تعالي السماء بماء عظيم غزير ، أقام الناس من أجله بخرتنك سبعة أيام أو نحوها ، لا يستطيع أحد الوصول إلى سمرقند من كثرة المطر وغزارته . وبين سمرقند ورتنك نحو ثلاثة أميال .
-"সমরকান্দ শহরে কয়েক বছর যাবৎ বৃষ্টির অভাব দেখা দিল। লােকেরা একাধিকবার বৃষ্টির নামাজ পড়লাে কিন্তু বৃষ্টি হলনা। অত: পর ছিলাহ নামে প্রসিদ্ধ এক নেককার ব্যক্তি কাজীর দরবারে আসল বলল, আমি একটি ভাল সপ্ন দেখেছি যা আপনার কাছে বর্ণনা করতে চাই। কাজী বলল ; বলাে। লােকটি বলল ; আমি সপ্নে দেখলাম আমি ও লােকেরা আপনার সাথে ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর কবরের দিকে বের হয়েছি এবং তার মাজারের কাছে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করছি। অতঃপর আল্লাহ পাক অচিরেই বৃষ্টি প্রদান করলেন। কাজী বলল: তুমি উত্তম সপ্ন দেখেছ। অত: পর কাজী বের হল ও লােকের তার সাথে বের হল এবং ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর মাজারের পাশে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করলেন ও আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করলেন। ফলে আল্লাহ তা'লা আসমান থেকে প্রচুর পরিমানে বুষ্টি বর্ষন করলেন। লােকেরা ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর মাজারের কাছে ৭ দিন কিংবা অনুরূপ সসময় অবস্থান করল এবং একজন লােকও সমরকন্দ শহরে যেতে পারল না। অথচ সেখান থেকে সমরকন্দ শহর মাত্র ৩ মাইল দূরত্ব ছিল।"
(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, ৬ ষ্ঠ খন্ড, ১৪০ পৃ: ইমাম বুখারীর জিবনীতে ; ইমাম যাহাবী: সিয়ারে আলামিন নুবালা, ১২ তম খন্ড, ৪৬৯ পৃ: ইমাম বুখারীর আলােচনায় ইমাম সুবকী: তাবকাতুশ শাফেইয়্যা, ২ য় খন্ড, ২৩৪ পৃঃ)
উল্লেখিত দালায়েলের আলােকে প্রমাণিত হয়, মাজারের কাছে যাওয়া ও বিভিন্ন প্রয়ােজনে মাজারবাসীকে উসিলা করে দোয়া করা সরাসরি সহিহ হাদিস সমর্থিত ও ছালফে ছালেহীনের সুন্নাত। আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উছিলা হল নেক বান্দাগণের মাজার। পবিত্র কোরআনের সূরা কাহাফ এর ২১ নং আয়াত অনুযায়ী জানা যায়, আসহাবে কাহাফ এর মাজারের কাছে তৎকালিন মুসলমানেরা সালাত আদায় করত ও তাদের মাজার থেকে বরকত হাছিল করত। অতএব, যিয়ারতের জন্য মাজারের কাছে যাওয়া ও মাজারবাসীকে উছিলা করে দোয়া করা বা বরকত হাছিল করা সবই কোরআন-সুন্নাহ সমর্থিত। এ গুলােকে কবর পুজা বা মাজার পুজা বলা চরম গােমরাহী ও পথভ্রষ্টতা।
_______________
সহিহ হাদিসের আলােকে মাজার যিয়ারত পূজা নয় ও কদমবুছির সমাধান
গ্রন্থনায়ঃ মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জিহাদী
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন