একটি আপত্তি ও তার জবাব (২)
আপত্তিঃ কদমবুছী করার সময় মাথা নত হয়ে যায়, যা সেজদার মত আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করা শিরিক ও হারাম।
জবাবঃ মাথা নত করলেই সেজদা হয়না। যদি মাথা নত করলেই সেজদা হয়ে যেত তাহলে তাে নামাজের মধ্যে এত কষ্ট করে দুই হাত, দুই পা, নাক ও কপাল, দুই হাটু ইত্যাদি জমীনে লাগিয়ে সেজদা দেওয়া প্রয়ােজন ছিলনা, বরং সমান্য একটু মাথা নত করলেই হত। যেনে রাখা প্রয়ােজন যে, সেজদার জন্য কমপক্ষে ৭-৮টি অঙ্গ জমীনে লাগা প্রয়ােজন। যেমন সহিহ হাদিসে আছে,
حدثنا قبيصة ، قال: كنا فيان ، عن عمرو بن دينار ، عن طاؤس ، عن ابن عباس قال: أمر النبي صلى الله عليه وسلم أن يسجد على سبعة أعضاء ولا يه شعرا ولا ثوبيا: الجبهة واليدين والركبتين والرجلين
-"হজরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: নবী করিম (ﷺ) সাতটি অঙ্গের দ্বারা সিজদা করতে এবং চুল ও কাপড় না গুটাতে আদিষ্ট হয়েছেন। (সাতটি অঙ্গ হল) চেহারা, দুই হাত, দুই হাটু ও দুই পা।"(সহিহ বুখারী, ১ ম খন্ড, হাদিস / ৭৭২ ; সহিহ মুসলিম)
সুতরাং এই সাতটি অঙ্গের মাধ্যমে সেজদা করলে সেজদা পরিপূর্ণ হবে, নচেৎ পরিপূর্ণ হবেনা। কারণ এই ৭ টি অঙ্গের যে কোন একটি ভঙ্গ হলে সিজদার ৭ টি শর্তের একটি শর্ত ভঙ্গ হয়ে যাবে, ফলে সিজদা শুদ্ধ হবেনা। হ্যা, এখন জানতে হবে সামান্য মাথা নত হলে সমস্যা হবে কিনা। আমরা স্বাভাবিক দৃষ্টিকোন থেকে অনেক কাজেই সামান্য মাথা নত করে থাকি। যেমন প্রচন্ড ভিড়ের মাঝে পকেট থেকে টাকা পড়ে গেলে সেই টাকা মাথা নত করেই উঠাই। ঘরের দরজার শিকল যদি নিচের দিকে থাকে তাহলে মাথা নিচের দিকে নিয়েই শিকল খুলি। মাঠের ফসল কাটার সময় মাথা নত করেই ফসল কাটি। এমনকি স্বাভাবিক দৃষ্টিকোন থেকে নামাজের সময় আমাদের মাথা হয়ত ওয়ালের দিকে অথবা অন্যান্য মুছল্লীগণের পিছনে নত হয়, তাই বলে কি আমরা ইট-পাথরের ওয়াল অথবা ঐ সামনে থাকা মানুষকে সেজদা করি? অবশ্যই না। বরং মহান আল্লাহ তা'লার কাছেই মাথা নত করি। তাহলে এতসব কিছুর মাঝে আমরা কিসের মাধ্যমে পার্থক্য করব যে, আমরা আল্লাহর কাছে মাথা নত করি, নাকি গায়রুল্লাহর কাছে। মাথা নত করি? এর জবাব খুবই সহজ ও অনুমেয়। কারণ হাদিস শরীফে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
إنما الأعمال بالنيات
-"নিশ্চয় সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।"(সহিহ বুখারী, হা / ১)
যদি কোন মানুষ কিংবা গাইরুল্লাহকে আল্লাহর মত মনে করে মাথা নত করা হয় তাহলে অবশ্যই শিরক হবে। আর যদি ইলিম, ভদ্রতা, পরহেযগারী ইত্যাদি দেখে কদমবুছী করার সময় মাথা নত হয় তাহলে অবশ্যই শিরিক হবেনা। কারণ এখানে নিয়ত হল কদমবুছী করার, কারাে কাছে মাথা নত করা নয়। স্বয়ং দ্বীনের নবী (ﷺ) কদমবুছীকে সমর্থন করেছেন এবং প্রিয় নবীজির সাহাবায়ে কেরাম কদমবুছী করেছেন। তাই এর বিরুধিতা করার কোন সুযােগ নেই। কারণ সকল মানুষের মুক্তির ও নাজাতের মডেল হলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ। যেমন মহান আল্লাহ তালা এরশাদ করেন:
لقد كان لكم في رسول الل أو خسنت
-"তােমাদের জন্য রাসূল (ﷺ) এর মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।"(সূরা আহযাব: ২১ নং আয়াত।
অতএব, দয়াল নবী রাসূলে পাক (ﷺ) এর পবিত্র আদর্শের মধ্যে কদমবুছী। রয়েছে, তাই আমরা তাঁর উম্মত হিসেবে কদমবুছীর আমল করব এটাই পবিত্র কোরআনের নির্দেশ।
_______________
সহিহ হাদিসের আলােকে মাজার যিয়ারত পূজা নয় ও কদমবুছির সমাধান
গ্রন্থনায়ঃ মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জিহাদী
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন