❏ এখানে উদ্ধৃত কিছু অংশ বর্ণিত হয়েছে, মে’রাজ রাতের ঊর্ধ্বগমন সংক্রান্ত আল্লাহ (ﷻ)'র পাক কালামে [আল-কুরআন, ১৭:১]
– “পবিত্রতা তাঁরই জন্যে, যিনি আপন বান্দাকে রাতারাতি নিয়ে গিয়েছেন মসজিদ-ই হারাম হতে মসজিদ-ই আক্কসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত রেখেছি, যাতে আমি তাঁকে আপন মহান নিদর্শনগুলো দেখাই; নিশ্চয় তিনি শুনেন, দেখেন।” [তাফসীরে নূরুল এরফান]
❏ আর সূরা নজমেও তা বর্ণিত হয়েছে,
“এবং তিনি ওই জ্যোতি দু’বার দেখেছেন; সিদরাতুল মুন্তাহার কাছে। সেটার কাছে রয়েছে ‘জান্নাতুল মাওয়া’। যখন সিদরার ওপর আচ্ছন্ন করছিল যা আচ্ছন্ন করছিল; চক্ষু না কোনো দিকে ফিরেছে, না সীমাতিক্রম করেছে। নিশ্চয় আপন রবের বহু বড় নিদর্শনাদি দেখেছেন” আল-কুরআন, ৫৩:১৩-১৮]।
এতে সরাসরি বিবৃত হয়েছে মহানবী (ﷺ)-এর অতুলনীয় মাকাম (উচ্চ মর্যাদা) ও আল্লাহর নৈকট্য এবং তাঁরই প্রত্যক্ষকৃত অলৌকিক বিষয়াদি। আরো একটি বাস্তব উদাহরণ হলো এই যে, তিনি মানুষের (ক্ষতি) থেকে সুরক্ষিত।
❏ আল্লাহ (ﷻ) ইরশাদ ফরমান: “আর আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করবেন মানুষের (ক্ষতি) থেকে” [আল-কুরআন, ৫:৬৭]।
❏ অন্যত্র ফরমান: “যখন কাফেরবর্গ আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল যে আপনাকে বন্দী করে রাখবে কিংবা শহীদ করবে অথবা নির্বাসিত করবে এবং তারা নিজেদের মতো ষড়যন্ত্র করছিল; আর আল্লাহ নিজের গোপন কৌশল (প্রয়োগ) করছিলেন; এবং আল্লাহর গোপন কৌশল-ই সর্বাপেক্ষা উত্তম” [আল-কুরআন, ৮:৩০]।
❏ আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন: “যদি তোমরা ‘মাহবূব’কে সাহায্য না করো, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেছেন” [আল-কুরআন, ৯:৪০]।
আল্লাহ (ﷻ) মহানবী (ﷺ)-কে শত্রুদের ক্ষতি থেকে সে সময় রক্ষা করেন, যখন তারা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল এবং তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল। তিনি তাদের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আল্লাহ (ﷻ) তাদের দৃষ্টিভ্রম ঘটিয়েছিলেন এবং তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খোঁজে গুহায় যেতে দেননি। এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট নিদর্শনগুলো এবং হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর প্রতি অবতীর্ণ সাকিনা (প্রশান্তি), আর সুরাক্কা ইবনে মালেকের ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে মুহাদ্দেসীন ও সীরাহ-লেখকবৃন্দ কর্তৃক লিখিত মহানবী (ﷺ)-এর গুহায় অবস্থান ও মদীনায় হিজরতের ইতিহাসে।
❏ আল্লাহ (ﷻ) আরো ঘোষণা করেন: “হে মাহবূব! নিশ্চয় আমি আপনাকে ’কাউসার’ (অসংখ্য গুণাবলী) দান করেছি; সুতরাং আপনি আপনার রবের জন্যে নামায পড়ুন এবং ক্কোরবানী করুন। নিশ্চয় যে আপনার শত্রু, সে-ই সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত (নির্বংশ হবে)” [আল-কুরআন, ১০৮:১-৩]
আল্লাহ (ﷻ) মহানবী (ﷺ)-কে যা যা দিয়েছেন, তার সবই তাঁকে জানিয়েছেন। বলা হয় যে ‘কাউসার’ বলতে তাঁর হাউয (জলাধার)-কে বোঝানো হয়েছে। এ কথাও বলা হয়েছে যে, এটা বেহেশতে অবস্থিত একটা নদী; অফুরন্ত আশীর্বাদ; শাফায়াত তথা সুপারিশ; তাঁর অগণিত মো’জেযা তথা অলৌকিকত্ব; তাঁর নবুওয়্যত; কিংবা এলমে গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞান। অতঃপর আল্লাহ পাক তাঁর শত্রুদেরকে জবাব দিয়েছেন এবং খণ্ডন করেছেন এই বলে,
❏ “নিশ্চয় যে আপনার শত্রু, সে-ই সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত (নির্বংশ হবে)।”
এতে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি হচ্ছে আপনারই শত্রু এবং আপনাকে যে ব্যক্তি ঘৃণা করে। “বঞ্চিত” (নির্বংশ) মানে গরিব ও অপমানিত, কিংবা একাকী অবস্থায় প্রত্যাখ্যাত, অথবা তার মধ্যে কোনো রকম ভালাই না থাকা।
[❏ মুফতী আহমদ ইয়ার খান (رحمة الله) তাঁর ‘তাফসীরে নূরুল এরফান’ গ্রন্থে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, “ফলে, তার ভাগ্যে না ঈমান জুটবে, না উত্তম চর্চা, না বরকত, না কোনো মঙ্গল, না পরকালে সে ক্ষমা পাবে। সুতরাং ‘আস্ ইবনে ওয়াইলের যদিও সন্তান-সন্ততি ছিলো, তবুও মহান রব তার সন্তানদেরকে ঈমানের ক্ষমতা দান করে প্রকারান্তরে তাকে নিঃসন্তান করে দিয়েছেন।”]
❏ আল্লাহ (ﷻ) ইরশাদ ফরমান: “এবং নিশ্চয় আমি আপনাকে সপ্ত-আয়াত (সাবআ’ন্ মিনাল মাসা’নী) প্রদান করেছি, যেগুলো পুনঃপুনঃ আবৃত্ত হয় আর শ্রেষ্ঠত্বসম্পন্ন কুরআন” [আল-কুরআন, ১৫:৮৭; তাফসীরে নূরুল এরফান]।
এটা বলা হয় যে সপ্ত-আয়াত (সাবআ’ন্ মিনাল মাসা’নী) হচ্ছে প্রথম দীর্ঘ সূরাগুলো; আর ‘কুরআনুল আযীম’(শ্রেষ্ঠত্বসম্পন্ন কুরআন) বলতে উদ্দেশ্য করা হয়েছে উম্মূল কুরআন তথা সূরা ফাতিহাকে। এ কথাও বলা হয়েছে যে, সপ্ত-আয়াত বলতে স্বয়ং উম্মূল কুরআন তথা সূরা ফাতেহাকে বুঝিয়েছে এবং শ্রেষ্ঠত্বসম্পন্ন কুরআন বলতে বোঝানো হয়েছে কুরআন মজীদের বাকি অংশকে। আরো বলা হয়েছে যে, সপ্ত-আয়াত বলতে আল-কুরআনে নিহিত (খোদায়ী) আদেশ ও নিষেধ, খোশ-খবরী (সুসংবাদ) ও সতর্কবার্তা, আশীর্বাদের রূপক ও ক্রমিক বর্ণনাকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
❏ এর অর্থ আরেক কথায়, “আমি আপনাকে শ্রেষ্ঠত্ব সম্পন্ন কুরআনের খোশ-খবরী দিয়েছি।”
❏ এই কথা বলা হয়েছে যে, উম্মূল কুরআন (সূরা ফাতেহা)-কে “মাসা’নী” অভিহিত করা হয় এ কারণে যে, প্রতি ওয়াক্ত নামাযে এটা অন্ততঃ দু’বার পাঠ করা হয়। ❏ এ-ও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ (ﷻ) এটাকে অন্যান্য আম্বিয়া (عليه السلام)-এর পরিবর্তে হযরতে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্যেই সুনির্দিষ্ট করে রেখেছিলেন। আল্লাহ (ﷻ) আল-কুরআনকে “মাসা’নী” অভিহিত করেছেন, কেননা এতে কাহিনীগুলো পুনঃপুনঃ আবৃত্তি করা হয়েছে। এ কথা বলা হয়েছে যে, “সপ্ত-আয়াত” মানে “আমি আপনাকে মহা-মর্যাদার সাতটি চিহ্ন দ্বারা সম্মানিত করেছি: হেদায়াত (সঠিক পথপ্রদর্শন), নবুওয়্যত, করুণা, শাফায়াত (সুপারিশ), বন্ধুত্ব, শ্রদ্ধা ও প্রশান্তি।”
❏ আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন: “এবং হে মাহবূব! আমি আপনার প্রতি এ স্মৃতি (যিকর তথা আল-কুরআন] অবতীর্ণ করেছি যেন আপনি মানুষের কাছে তা (খোলাসাভাবে) বর্ণনা করেন।”[আল-কুরআন, ১৬:৪৪; তাফসীরে নূরুল এরফান]।
❏ এবং অন্যত্র ইরশাদ করেন:“এবং হে মাহবূব! আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি, এমন রেসালাত সহকারেই যা সমগ্র মানবজাতিকে পরিব্যাপ্ত করে নেয় সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে” [আল-কুরআন, ৩৪:২৮; প্রাগুক্ত নূরুল এরফান]।
❏ এবং আরো ইরশাদ ফরমান: “হে রাসূল, আপনি বলুন, ওহে মানবকুল! আমি তোমাদের সবার প্রতি (প্রেরিত) আল্লাহর ওই রাসূল” [আল-কুরআন, ৭:১৫৮]।
মহানবী (ﷺ)-এর প্রতি আল্লাহর মঞ্জুরিকৃত বিশেষ নেয়ামত (আশীর্বাদ)-গুলোর এটা একটা।
❏ আল্লাহ ঘোষণা করেন: “এবং আমি প্রত্যেক রাসূলকে তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি যেন তিনি তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বলে দেন” [আল-কুরআন, ১৪:৪]।
আল্লাহ (ﷻ) (পূর্ববর্তী) পয়গম্বরবৃন্দের জন্যে নিজ নিজ জাতিকে সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন; কিন্তু তিনি হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (ﷺ) কে সমগ্র মানবজাতির জন্যে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেন, যেমনটি হুযূর পূর নূর (ﷺ) স্বয়ং ইরশাদ ফরমান: আমি সমগ্র মানবকুলের জন্যে (রাসূল হিসেবে) প্রেরিত হয়েছি।”
❏ আল্লাহ (ﷻ) ঘোষণা করেন: “এই নবী (ﷺ), মুসলমানদের আপন আপন প্রাণ অপেক্ষাও সন্নিকটে (মানে তাদের প্রাণের ওপর তাঁর মালিকানা বেশি), এবং তাঁর স্ত্রীবৃন্দ হলেন তাদের মা” [আল-কুরআন, ৩৩:৬]।
❏ কুরআন তাফসীরবিদ মণ্ডলী বলেন যে, “মুসলমানদের আপন আপন প্রাণ অপেক্ষাও সন্নিকটে”, এ আয়াতটির অর্থ মহানবী (ﷺ) মুসলমানদেরকে যা নির্দেশ দেন, তা-ই তাদেরকে পালন করতে হবে, যেমনিভাবে কোনো গোলাম তার মনিবের নির্দেশ পালন করে থাকে। এ কথা বলা হয়েছে যে, কারো নিজস্ব মতামত মেনে চলার চেয়ে রাসূল (ﷺ)-এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলাই উত্তম। “তাঁর স্ত্রীবৃন্দ হলেন তাদের মা”, এ আয়াতটির অর্থ তাঁরা আমাদের মায়ের মর্যাদা ভোগ করে থাকেন। মহানবী (ﷺ)-এর বেসালপ্রাপ্তির পরে তাঁদের আর কারো সাথে বিয়ে হতে পারবে না। এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে প্রদত্ত এক মহা সম্মান ও বিশেষ নেয়ামত। এটা এ কারণে যে তাঁরা বেহেশতেও তাঁরই স্ত্রী। কুরআন মজীদের একটি (বিরল) সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত আছে: “মহানবী (ﷺ) মো’মেনবর্গের পিতা।”
কিন্তু এটা আর এখন তেলাওয়াত করা হয় না, কেননা এটা হযরত উসমান (رضي الله عنه)-এর আল-কুরআনের প্রমিত সংস্করণের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
❏ আল্লাহ (ﷻ) ঘোষণা করেন: “এবং আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব (ঐশীগ্রন্থ) ও হেকমত (আধ্যাত্মিক জ্ঞান) অবতীর্ণ করেছেন” [আল-কুরআন, ৪:১১৩] এবং
❏ “আপনার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে” [৪:১১৩]।
এ কথা বলা হয় যে ওই “মহা অনুগ্রহ” বলতে নবুওয়্যতকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, কিংবা সেসব খোদায়ী দানকে যা মহানবী (ﷺ) ইতোমধ্যেই প্রাক-অনন্তকালে পেয়ে গিয়েছেন।
❏ আল-ওয়াসিতী (رحمة الله) বলেন যে, এটা হুযূর পাক (ﷺ) কর্তৃক (খোদাতা’লাকে মে’রাজ রাতে) দেখার ক্ষমতা, যা হযরত মূসা (عليه السلام) ধারণ করতে পারেননি।
________________
কিতাবঃ আশ শিফা [অসম্পূর্ণ]
মূল: ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন