হুযূর পূর নূর (ﷺ) এর তাঁর সাহস ও পরাক্রম


সাহস হলো এমন একটি গুণ যা’তে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বুদ্ধিবৃত্তির আনুগত্যকারী ক্রোধ-শক্তি। আর পরাক্রম কোনো সত্তার শৌর্য-বীর্যকে বোঝায়, যে সত্তা মৃত্যুর মুখোমুখি হলে তার ভীতির পরিবর্তে পরাক্রম-ই প্রশংসাযোগ্য হয়।


মহানবী (ﷺ)-এর বেলায় বিপজ্জনক পরিস্থিতির মোকাবেলা করাটা তাঁর মোটেও অজানা ছিল না। তিনি একাধিকবার এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, যেখান থেকে সাহসী বীরেরাও পলায়ন করে থাকে। কিন্তু ছিলেন অটল, অবিচল এবং এসব পরিস্থিতিতে পিছু হটেননি। বরঞ্চ তিনি অগ্রসর হয়েছেন এবং দোদুল্যমান-ও হননি। এমন কোনো সাহসী ব্যক্তি-ই নেই যিনি কোনো না কোনো মুহূর্তে পিছু হটেননি, কিন্তু এর একমাত্র ব্যতিক্রম হলেন মহানবী (ﷺ)।


❏ আবূ ইসহাক্ব আল-হামদানী (رحمة الله) বলেন যে, এক ব্যক্তি আল-বারা’আ (رضي الله عنه)-কে জিজ্ঞেস করেন, “আপনারা কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে হুনায়নের যুদ্ধে ছেড়ে পিছু হটেননি?” তিনি জবাব দেন, “কিন্তু হুযূরে পাক (ﷺ) পিছু হটেননি।” এরপর তিনি আরো বলেন, “আমি তাঁকে তাঁর সাদা খচ্চরের পিঠে উপবিষ্ট দেখতে পাই। আবূ সুফিয়ান সেটার লাগাম ধরে রেখেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলছিলেন, ‘আমি (আল্লাহর) রাসূল, আর এটা কোনো মিথ্যে নয়।’ ” অন্য কেউ একজন যোগ করেন যে, তিনি বলছিলেন, “আমি ইবনে আব্দিল মোত্তালিব।” বর্ণিত হয়েছে যে, ওই দিন তাঁর মতো পরাক্রমশালী আর কেউই ছিলেন না। অপর একজন বলেন, “মহানবী (ﷺ) তাঁর খচ্চরের পিঠ থেকে নেমে আসেন।” 


❏ ইমাম মুসলিম (رحمة الله) বর্ণনা করেন হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)-এর কথা, যিনি বলেন, “মুসলমান যোদ্ধারা যখন (মক্কার) কুফফারদের মুখোমুখি হন, তখন তাঁরা পিছু হটে আসেন; কিন্তু মহানবী (ﷺ) কুফফারদের দিকে তাঁর খচ্চর ছুটিয়ে যান; ওই সময় আমি লাগাম টেনে ধরে তাঁর খচ্চরটিকে সামনে যেতে দিতে চাইছিলাম না। আবূ সুফিয়ান ছিলেন হুযূর পাক (ﷺ)-এর জিনের পাশে অবস্থানরত। অতঃপর মহানবী (ﷺ) সবাইকে ডাক দেন এই বলে, “ওহে মুসলমান সকল!’”


কথিত আছে যে,রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাগ করলে তা একমাত্র আল্লাহর খাতিরেই করতেন এবং কোনো কিছুই তাঁর রাগের সামনে দাঁড়াতে পারতো না।


❏ হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন, “আমি আর কাউকেই মহানবী (ﷺ)-এর মতো এতো সাহসী, পরাক্রমশালী ও উদার দেখিনি, বা তাঁর সঙ্গের মতো সুখদায়ক কারো সঙ্গ-ও দেখিনি।” [আল-দারিমী] 

হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, “পরিস্থিতি যখন উত্তপ্ত, ভয়-ভীতি চরমে এবং যুদ্ধ-ও তুঙ্গে, আমরা হুযূর পাক (ﷺ)-এর ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলাম। তাঁর মতো শত্রুর এতো কাছে আর কেউই ছিলেন না। আমি বদর (যুদ্ধের) দিবসে তাঁকে দেখেছিলাম, যখন আমরা তাঁর আশপাশে অবস্থান করছিলাম; আর তিনি ছিলেন শত্রুদের সবচেয়ে কাছাকাছি। ওই দিন তিনি-ই ছিলেন সবচেয়ে সাহসী।” [আহমদ ইবনে হাম্বল, নাসাঈ, আত্ তাবারানী ও আল-বায়হাক্বী। মুসলিম এর আংশিক বর্ণনা করেছেন]


কথিত আছে যে,(সাহাবা-এ-কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের মধ্যে) সাহসী তিনি-ই ছিলেন, শত্রুরা খুব কাছে এসে পড়লে যিনি মহানবী (ﷺ)-এর পাশে অবস্থান করছিলেন। এটা কেবল এই বাস্তবতার সুবাদে যে তিনি হুযূর পাক (ﷺ)-এর পাশে ছিলেন [যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (বাহিনীর) সর্বাগ্রে অবস্থান করছিলেন]।


❏ হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, “মহানবী (ﷺ) মানুষের মাঝে সবচেয়ে মহৎ, উদার ও সাহসী সত্তা ছিলেন। এক রাতে মক্কাবাসী সর্বসাধারণ একটি আওয়াজ শুনে চমকে ওঠেন এবং তাঁদের কেউ কেউ ওই আওয়াজের উৎসস্থলের দিকে ছুটেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইতোমধ্যেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং তিনি সেখান থেকে আবূ তালহার একটি রেকাব-বিহীন ঘোড়ার পিঠে চড়ে ফেরার পথে তাঁদের সাক্ষাৎ পান। ওই সময় তাঁর হাতে তরবারি ছিল এবং তিনি তাঁদেরকে বলেন, ‘আপনারা ভয় পাবেন না।’ ” [মুসলিম ও আল-বুখারী]


❏ এমরান বিন হুসাইন (رضي الله عنه) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমন কোনো (শত্রু) বাহিনীর মোকাবেলা করেননি, যেখানে তিনি সর্বপ্রথম আঘাত হানেননি।"


উবাই ইবনে খালাফ উহুদের যুদ্ধে মহানবী (ﷺ)-কে দেখতে পায়। এর আগে সে চিৎকার করে বলেছিল, “কোথায় মুহাম্মদ (ﷺ)? তিনি যদি বাঁচেন, তবে আমি যেন না বাঁচি!” ইতিপূর্বে বদরের জ্বেহাদে উবাই উৎসর্গ দিয়ে বলেছিল, “আমার একটি ঘোড়া আছে যাকে আমি প্রতিদিন এক ‘ফারাক্ব’ 🔴🔴🔴🔴🔴(১৯ (رحمة الله)otls) পরিমাণ যব/গম খাওয়াই। আমি তাতে চড়া অবস্থাতেই আপনাকে (হুযূর পাককে) হত্যা করবো।” এর পরিপ্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-ও তাকে বলেন, “আল্লাহর ইচ্ছা হলে আমি-ই তোমাকে হত্যা করবো।” অতঃপর উহুদের ময়দানে সে যখন তাঁকে দেখে, তৎক্ষণাৎ সেদিকে ঘোড়া ছুটায়। মুসলমান বাহিনীর কেউ কেউ তার পথরোধ করে দাঁড়ালে মহানবী (ﷺ) বলেন, “তাকে ছেড়ে দাও (মানে আসতে দাও)।” তিনি হারিস্ ইবনে সাম্মা হতে একটি বর্শা নিয়ে তা এমনভাবে নাড়া দেন যে তাঁর সামনে আর কেউই দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি। এরপর হুযূর পূর নূর (ﷺ) উবাইয়ের মুখোমুখি হয়ে তার গলায় বর্শা দিয়ে আঘাত করেন, যার দরুন সে ঘোড়া থেকে গড়িয়ে পড়ে যায়। মানুষেরা বলাবলি করতে থাকে, “তার পাঁজরের একখানি হাড় ভেঙ্গেছে মাত্র।” সে কুরাইশদের কাছে ফিরে গিয়ে বলে, “মুহাম্মদ (ﷺ) আমাকে হত্যা করেছেন।” তারা তাকে বলে, “তোমার তো (শারীরিক) কোনো ক্ষতি-ই হয়নি।” সে জবাবে বলে, “আমার যে আঘাত লেগেছে, তা অন্যদের লাগলে সবাই নিহত হতো। তিনি কি বলেন নি, ‘আমি তোমায় হত্যা করবো।’ আল্লাহর কসম! তিনি যদি আমাকে থুতু-ও মারতেন, তা-ও আমার প্রাণ কেড়ে নিতো।” (উহুদ যুদ্ধশেষে) শত্রু বাহিনী মক্কায় ফেরার পথে ’সারিফ’ (মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী) এলাকায় উবাই ইবনে খালাফ মারা যায়। [ইবনে সা’আদ, আল-বায়হাক্বী ও আবদুর রাযযাক্ব বর্ণিত; আল-ওয়াক্বিদীও এটা বর্ণনা করেছেন]।

________________

কিতাবঃ আশ শিফা [অসম্পূর্ণ]

মূল: ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله)

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন


সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন