মহানবী (ﷺ)-কে সম্বোধন করার ক্ষেত্রে আল্লাহ (ﷻ)'র দয়া ও মহানুভবতা


❏ আল্লাহ (ﷻ) ইরশাদ ফরমান: “তোয়াহা। হে মাহবুব(ﷺ)! আমি আপনার ওপর এই কুরআন এ জন্যেঅবতীর্ণ করিনি যে আপনি ক্লেশে পড়বেন।” [সূরা তোয়াহা, ১-২ আয়াত]


❏ কথিত আছে যে,‘তোয়াহা’ মহানবী (ﷺ)-এরই একটি নাম মোবারক। আরো কথিত আছে যে,এটা আল্লাহ পাকেরও একটি পবিত্র নাম। বলা হয়ে থাকে এর অর্থ, “ওহে মানুষ!” আরো বলা হয়ে থাকে, এটা বিভিন্ন অর্থবোধক পৃথক পৃথক শব্দকে ইঙ্গিত করে। আল-ওয়াসিতী বলেন যে, এর অর্থ, “ওহে পুতঃপবিত্র” (তাহের), “ওহে পথপ্রদর্শক” (হাদী)।


এ কথা বলা হয়েছে যে, ক্রিয়াটির (ফে’ল) দ্বারা পায়ে হাঁটা আবশ্যক হয়েছে এবং আরবী ‘হা’ শব্দটি দ্বারা পৃথিবীকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে; অর্থাৎ, পৃথিবীর বুকে দু’পায়ে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে এবং এক পায়ে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ কারণেই আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, “আমি আপনার ওপর এই কুরআন এ জন্যে অবতীর্ণ করিনি যে আপনি ক্লেশে পড়বেন।” তিনি এ আয়াত এমনই এক সময় নাযিল করেন যখন মহানবী (ﷺ) সারা রাত জেগে দাঁড়িয়ে এবাদত-বন্দেগী করতেন এবং ক্লান্ত হয়ে যেতেন। 


❏ আর্ রাবীউ ইবনে আনাস্ (رضي الله عنه) বলেন যে, হুযূর পূর নূর (ﷺ) এবাদতরত অবস্থায় এক পায়ের ওপর দাঁড়াতেন এবং তারপর অপরটির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। তাই আল্লাহ পাক তাঁকে বলেন, “তোয়াহা”, অর্থাৎ, “হে মাহবুব! পৃথিবীর বুকে দু’পায়ের ওপর দণ্ডায়মান হোন। আমি আপনার ওপর এই কুরআন এ জন্যে নাযিল করিনি যে আপনি ক্লেশে পড়বেন।” সে যা-ই হোক, এটা পরিষ্কার যে এসব-ই (আল্লাহর তরফ থেকে) মহাসম্মান ও উত্তম ব্যবহার পরিস্ফুট করে।


“তোয়াহা” শব্দটি মহানবী (ﷺ)-এর একটি নাম হোক বা কোনো শপথ-ই হোক, এতে মহান প্রভুর দয়া ও সম্মান প্রদর্শন প্রতিভাত হয়।


❏ আল্লাহ (ﷻ) ইরশাদ ফরমান: “হয়তো আপনি আক্ষেপেআত্মবিনাশী হয়ে পড়বেন তাদের জন্যে, যদি তারা এবাণীর প্রতি ঈমান না আনে” [সূরা কাহাফ, ৬ আয়াত]। 

অর্থাৎ, দুঃখ, ক্ষোভ বা আক্ষেপে আত্মহননের পথ বেছে নেবেন। এর সাথে নিম্নের ঐশী বাণীর মিল রয়েছে: 


❏ “হয়তো আপনি আপন প্রাণবিনাশী হয়ে যাবেন এ দুঃখে যে তারাঈমান আনেনি” [সূরা শুয়ারা, ৩ আয়াত; তাফসীরে কানযুল ঈমান]। 


এর পরবর্তী আয়াতে ঘোষিত হয়েছে, 

❏ “যদি আমি ইচ্ছা করি, তাহলে আসমান থেকে তাদেরওপর কোনো নিদর্শন অবতীর্ণ করবো, যাতে তাদের উঁচুউঁচু গ্রীবাগুলো সেটার সামনে বিনত থেকে যায়।” [সূরা শুয়ারা, ৪ আয়াত]


❏ একই ধারায় আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান: “অতএব, প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা দিন যা আপনার প্রতি আদেশ করা হয়েছে এবং মূর্তি পূজারীদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েনিন। নিশ্চয় সেই বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে আমি–ইযথেষ্ট; যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য স্থির করে; সুতরাং শিগগিরই তারা জেনে যাবে। এবং নিশ্চয় আমারজানা আছে যে,তাদের কথায় আপনার অন্তর সংকুচিত(ভারাক্রান্ত) হয়” [সূরা হিজর, ৯৪-৯৭ আয়াত]। 


❏ আরো ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয় আপনার পূর্ববর্তী রাসূল(عليه السلام)-বৃন্দের সাথেও ঠাট্টা–বিদ্রূপ করা হয়েছিল।অতঃপর আমি কাফেরদেরকে কিছুদিনের জন্যে অবকাশ দিয়েছিলাম। এরপর তাদেরকে পাকড়াওকরেছি; আর আমার (প্রদত্ত) শাস্তি কেমন ছিল?” [সূরা রা’দ, ৩২ আয়াত]


❏ মক্কী (رحمة الله) বলেন, “আল্লাহ পাক এ কথা দ্বারা রাসূলে করীম (ﷺ)-কে সান্ত্বনা দিয়েছেন এবং মূর্তি পূজারীদের প্রদত্ত দুঃখ কষ্ট হতে তাঁকে মুক্ত করে দিয়েছেন। তিনি মহানবী (ﷺ)-কে জানিয়েছিলেন যে যারা এ ধরনের আচরণ অব্যাহত রাখতে চাইবে, তারা পূর্ববর্তী অনুরূপ আচরণকারীদের পরিণতি ভোগ করবে।


❏ একই সান্ত্বনা বিধৃত হয়েছে নিম্নের কালামে পাকে – “আর যদি এরা আপনাকে অস্বীকার করে, তবে নিশ্চয় আপনার পূর্ববর্তী কতো রাসূলকেই তো অস্বীকার করা হয়েছে” [সূরা ফাতির, ৪ আয়াত; তাফসীরে কানযুল ঈমান]। 


❏ অন্যত্র ঘোষিত হয়েছে: “এমনিভাবেই যখনতাদের পূর্ববর্তীদের কাছে কোনো রাসূল তাশরীফএনেছেন, তখন তারা বলেছিল, ‘যাদুকর’ অথবা‘উন্মাদ’।” [সূরা যা-রিয়াত, ৫২ আয়াত]।


আল্লাহ (ﷻ) মহানবী (ﷺ)-কে পূর্ববর্তী কওম (জাতি)-গুলো সম্পর্কে, তারা তাদের আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দকে কী বলেছিল সে সম্পর্কে এবং পূর্ববর্তী পয়গম্বর (عليه السلام)-মণ্ডলী তাদের কাছ থেকে যে আঘাত পেয়েছিলেন সে সম্পর্কে জানিয়ে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। তিনি বিশ্বনবী (ﷺ)-কে এ তথ্য জানিয়ে আশ্বস্ত করেছেন যে মক্কার অবিশ্বাসীদের কাছ থেকে তিনি যে আঘাত পেয়েছেন, তা তাঁর পূর্ববর্তী আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দের মতোই একটি ঘটনামাত্র। এ ধরনের বৈরী আচরণের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি-ই প্রথম নন।

অতঃপর আল্লাহ (ﷻ) তাঁকে মানসিক শান্তি দিয়েছেন এ কথা বলে – 

❏ “অতএব, হে মাহবুব! আপনি তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। এতে আপনার কোনো দোষ হবে না” [সূরা যা-রিয়াত, ৫৪ আয়াত]। 

অর্থাৎ, তাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিন; এতে আপনি তাদের কাছে যে (ঐশী) বাণী পৌঁছে দিয়েছেন, তা তারা মান্য না করার কারণে আপনাকে দায়ী করা হবে না এবং আপনাকে যে কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তা পৌঁছানোর জন্যেও আপনাকে দায়ী করা হবে না।


অনুরূপভাবে, 

❏ আল্লাহ পাক ইরশাদ ফরমান: “হে মাহবুব! আপনি আপন প্রতিপালকের আদেশের ওপর স্থিরথাকুন! কেননা, নিশ্চয় আপনি আমার রক্ষণাবেক্ষণে রয়েছেন” [সূরা তুর, ৪৮ আয়াত]। 


এর মানে কাফেররা আপনার যে ক্ষতিসাধন করতে চায়, তা মোকাবেলায় আপনি অটল, অবিচল থাকুন। আপনি সব সময়েই আমার (মানে আল্লাহর) করম নজর (পবিত্র দৃষ্টি তথা হেফাযত)-এর আওতায় আছেন; সর্বদা আমার হেফাযতেই আছেন। অনুরূপ আরো বহু আয়াতে করীমায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মহানবী (ﷺ)-কে এভাবে সান্ত্বনা দিয়েছেন।

________________

কিতাবঃ আশ শিফা [অসম্পূর্ণ]

মূল: ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله)

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন


সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন