❏ আল্লাহ (ﷻ) ইরশাদ ফরমান: “(এবং স্মরণ করুন) যখন আল্লাহ আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দের কাছ থেকেঅঙ্গীকার নিয়েছিলেন, ‘আমি তোমাদেরকে যে কিতাবও হেকমত প্রদান করবো, অতঃপর তাশরীফ আনবেনতোমাদের কাছে রাসূল (ﷺ) যিনি তোমাদেরকিতাবগুলোর সত্যায়ন করবেন, তখন তোমরাঅবশ্যঅবশ্য তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকেসাহায্য করবে।’ ইরশাদ করলেন, ‘তোমরা কি স্বীকারকরলে এবং এ সম্পর্কে আমার দেয়া গুরুদায়িত্ব গ্রহণকরলে?’ সবাই আরয করলো, ‘আমরা স্বীকারকরলাম।’ ইরশাদ করলেন, ‘তবে (তোমরা) একেঅপরের সাক্ষী হও এবং আমি নিজেই তোমাদের সাথেসাক্ষীদের মধ্যে রইলাম’।” [সূরা আলে ইমরান, ৮১ আয়াত; তাফসীরে কানযুল ঈমান]
❏ আবূল হাসান আল-কাবিসী (رحمة الله) এ সম্পর্কে বলেন, “আল্লাহ পাক তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর কোনো শ্রেষ্ঠত্বের জন্যে তাঁকে আলাদা করে নিয়েছেন। এ আয়াতে সে কথাই তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন।”
❏ তাফসীরবিদ উলামাবৃন্দ বলেন যে, আল্লাহ (ﷻ) এই অঙ্গীকার আদায় করেছিলেন ওহীর (ঐশী প্রত্যাদেশের) মাধ্যমে। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কথা উল্লেখ না করে এবং তাঁর বর্ণনা না দিয়ে কোনো নবী বা রাসূল (عليه السلام)-কে পাঠাননি। অঙ্গীকারের শর্ত এই ছিল যে যদি সেই নবী বা রাসূল (عليه السلام) মহানবী (ﷺ)-এর দেখা পান, তবে তাঁকে রাসূলে খোদা (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান আনতে হবে। এ কথা বলা হয়েছে যে, অঙ্গীকারের মধ্যে এমন শর্ত দেয়া হয়েছিল যাতে আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দ তাঁদের নিজ নিজ উম্মত বা জাতির কাছে মহানবী (ﷺ) সম্পর্কে বলেন এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও তাঁর সম্পর্কে বর্ণনা দেন। “অতঃপর তাশরীফ আনবেন তোমাদের কাছে রাসূল (ﷺ)” – খোদায়ী এ কালাম বস্তুতঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সময়কার কিতাবসম্পন্ন সম্প্রদায়ের মানুষদের উদ্দেশ্যে বর্ণিত হয়েছে।
❏ হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (رضي الله عنه) বলেন, “হযরত আদম (عليه السلام)-এর যুগ থেকে আরম্ভ করে আল্লাহ (ﷻ) এমন কোনো নবী বা রাসূল (عليه السلام) পাঠাননি, যাঁর কাছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সম্পর্কে তিনি প্রতিশ্রুতি আদায় করেননি। ওই নবী বা রাসূল (عليه السلام) বেঁচে থাকা অবস্থায় মহানবী (ﷺ)-কে পাঠানো হলে তাঁকে অবশ্যই হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান আনতে হতো এবং সর্বাত্মক সাহায্য করতে হতো। তাঁকে তাঁর জাতির স্বার্থ না দেখেই এই অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হতো।” মহানবী (ﷺ)-এর একাধিক বৈশিষ্ট্য ও মাহাত্ম্য প্রকাশ করে এমন আরো অনেক আয়াতে করীমা সম্পর্কে আস্ সুদ্দী ও কাতাদা অনুরূপ মন্তব্য করেছেন।
❏ আল্লাহ (ﷻ) ইরশাদ ফরমান: “এবং হে মাহবূব! স্মরণকরুন, যখন আমি আম্বিয়াবৃন্দের কাছ থেকে অঙ্গীকারগ্রহণ করেছি এবং আপনার কাছ থেকে আর নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মরিয়ম–তনয় ঈসার কাছ থেকে।”[আল-কুরআন, ৩৩:৭; মুফতী আহমদ ইয়ার খান সাহেব কৃত ‘তাফসীরে নূরুল এরফান’]
❏ আবার অন্যত্র তিনি ফরমান: “নিঃসন্দেহে, হে মাহবূব, আমি আপনার প্রতি ওহী প্রেরণ করেছি, যেমন ওহী নূহও তার পরবর্তী আম্বিয়াবৃন্দের প্রতি প্রেরণ করেছি; এবং আমি ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক্ব, ইয়া’কুব ও তাঁরপুত্রবৃন্দ; আর ঈসা, আইয়ূব, ইয়ূনুস, হারূন এবংসুলাইমানের প্রতি ওহী প্রেরণ করেছি; এবং আমিদাউদকে যাবূর দান করেছি। এবং ওই রাসূলবৃন্দকে (প্রেরণ করেছি) যাদের উল্লেখ আমি আপনার কাছে আগে করেছি আর ওই সব রাসূলকে যাদের উল্লেখ আপনার কাছে করিনি। আর আল্লাহ মূসার সাথে প্রকৃত অর্থে কথা বলেছেন। রাসূলবৃন্দকে (প্রেরণ করেছি) সুসংবাদ দাতা ও সাবধান কারী করে, যাতে রাসূলবৃন্দেরপরে আল্লাহর কাছে মানুষের কোনো অভিযোগেরঅবকাশ না থাকে; এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। কিন্তু, হে মাহবূব, আল্লাহ সেটারই সাক্ষী, যাতিনি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন।” [আল-কুরআন, ৪:১৬৩-৬]
❏ বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বেসাল তথা পরলোকে আল্লাহর সাথে মিলনপ্রাপ্তির পর হযরত উমর ফারূক (رضي الله عنه) আহাজারি করে বলছিলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমার পিতা ও মাতা আপনার জন্যে কুরবান হোন। (ঐশী বাণীতে) অবতীর্ণ হয়েছে যে, আল্লাহর কাছে আপনার শ্রেষ্ঠত্বের একটি অংশ হলো তিনি আপনাকে সবশেষ নবী হিসেবে প্রেরণ করলেও তাঁদের সবার আগে আপনার নাম উল্লেখ করেছেন: ‘এবং হে মাহবূব! স্মরণ করুন, যখন আমি আম্বিয়াবৃন্দের কাছ থেকে অঙ্গীকারগ্রহণ করেছি এবং আপনার কাছ থেকে আর নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মরিয়ম–তনয় ঈসার কাছ থেকে[আল–কুরআন, ৩৩:৭]।’
❏ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার পিতা ও মাতা আপনার জন্যে কুরবান হোন। (ঐশী বাণীতে) অবতীর্ণ হয়েছে যে, আল্লাহর কাছে আপনার শ্রেষ্ঠত্বের একটি অংশ হলো জাহান্নামে সাজাপ্রাপ্ত লোকেরা তাদের সাজা পাওয়ার সময় আক্ষেপ করবে এ কথা বলে যে তারা যদি আপনাকে মান্য করতো। তারা বলবে: ‘হায়, কোনোমতে যদি আমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য করতামএবং তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর নির্দেশও মান্য করতাম’[আল-কুরআন, ৩৩:৬৬]।”
❏ কাতাদা (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, মহানবী (ﷺ) ইরশাদ ফরমান: “আমাকেই আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দের মধ্যে সর্বপ্রথমে সৃষ্টি করা হয়, আর তাঁদের সবার শেষে প্রেরণ করা হয়।” এ কারণেই তাঁকে হযরত নূহ (عليه السلام) ও অন্যান্যদের আগে উল্লেখ করা হয়েছে।
❏ ইমাম আবু লাইস আস্ সামারকান্দী (رحمة الله) বলেন, “আমাদের রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সব আম্বিয়া (عليه السلام)-এর শেষে প্রেরণ করা হলেও তাঁদের আগে তাঁর নাম মোবারক উল্লেখ করে তাঁকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে। এর মানে হলো, আল্লাহ (ﷻ) যখন তাঁদেরকে হযরত আদম (عليه السلام)-এর পিঠ থেকে ছোট্ট ছোট্ট পিঁপড়ার মতো বের করে আনেন, তখন তিনি তাঁদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন।”
❏ আল্লাহ (ﷻ) ইরশাদ ফরমান: “এঁরা রাসূল, আমি তাঁদের মধ্যে এককে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠ করেছি। তাঁদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কেউ এমনও আছেন, যাঁকে সবার ওপর মর্যাদাসমূহে উন্নীত করেছেন।” [আল-কুরআন, ২:২৫৩]
❏ তাফসীরবিদ উলামাবৃন্দ বলেন যে, ‘কেউ এমনও আছেন, যাঁকে (আল্লাহ) সবার ওপর মর্যাদাসমূহে উন্নীতকরেছেন’ – আল্লাহর এ কালাম শরীফ মহানবী (ﷺ)-কে উদ্দেশ্য করেছে, কেননা তিনি সমগ্র মানবজাতির জন্যে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ (ﷻ) তাঁর জন্যে গনীমতকেও হালাল করেছেন এবং তাঁকে বিশেষ বিশেষ মো’জেযা মঞ্জুর করেছেন। তিনি অন্যান্য নবী-রাসূল (عليه السلام)-কে মঞ্জুর করেননি এমন কোনো বৈশিষ্ট্য বা মর্যাদাকর গুণ যা তিনি মহানবী (ﷺ)-কে মঞ্জুর করেননি। একজন তাফসীরবিদ বলেন যে, তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের একটি অংশ হলো এই যে, আল্লাহ (ﷻ) তাঁর পাক কিতাবে অন্যান্য নবী-রাসূল (عليه السلام)-কে তাঁদের নাম ধরে ডেকেছেন, কিন্তু মহানবী (ﷺ)-কে সম্বোধন করেছেন ‘হে নবী’ বা ‘হে রাসূল’ বলে।
❏ আস-সামারকান্দী (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, “এবং নিশ্চয় ইব্রাহীম(عليه السلام) তাঁরই দলের অন্তর্ভুক্ত” [আল-কুরআন, ৩৭:৮৩]
❏ খোদায়ী এ কালাম সম্পর্কে আল-কালবী (رحمة الله) বলেছেন, (আয়াতোক্ত) আরবী ‘হু’ (তাঁরই) সর্বনামটি মহানবী (ﷺ)-কে উদ্দেশ্য করেছে; যার মানে হলো ইব্রাহীম (عليه السلام) মহানবী (ﷺ)-এর দলেরই অন্তর্ভুক্ত, তাঁরই দ্বীন ও পথের অনুসারী।
❏ আল-ফাররা’ (رحمة الله) এই ব্যাখ্যাটি গ্রহণ করেছেন এবং মক্কী তাঁর কাছ থেকে এটা বর্ণনা করেছেন। এ কথাও বলা হয়েছে যে, এতে নূহ (عليه السلام)-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। [নোট: শেষোক্ত মতটি অধিকাংশ তাফসীরবিদ উলামার]।
________________
কিতাবঃ আশ শিফা [অসম্পূর্ণ]
মূল: ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন