ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর দোয়ার নির্যাশ ইসা (عليه السلام ) এর সুসংবাদ ও মা জননীর স্বপ্ন কথা গুলোর ব্যাখ্যা
(এক) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণী : انى دعوة ابراهيم (আমি পিতা ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর দোয়ার নির্যাশ) কথাটির ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, সাইয়্যিদিনা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) যখন পবিত্র কাবা ঘর তৈরী করেন, তখন মহান আল্লাহ পাকের দরবারে প্রার্থনা জানালেন যেন এ শহরটিকে তিনি নিরাপদ রাখেন, মানবের হৃদয়কে এরদিকে মুগ্ধ করে দেন এবং বহু প্রকার ফলমূল তাদেরকে দান করেন। যেমন, এ প্রসঙ্গে কোরআনে পাকে এরশাদ হচ্ছে:
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنتَ العَزِيزُ الحَكِيمُ .
অর্থাৎ:- হে আমাদের প্রতি পালক! আপনি তাদের মধ্যে এমন এক রাসূল প্রেরন করুন, যিনি তাদের (স্বীয় কওমের) কাছে আপনার পবিত্র আয়াতসমুহ পাঠ করে শুনাবে, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষাদান করত: পবিত্র তথা আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ দান করবেন।
আপনি অবশ্যই মহাপরাক্রমশালী সুক্ষকৌশলী। এ মোবারক আকুতীর সঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তাঁর দোয়া মঞ্জুর করে নিলেন। ফলে তাঁরই দোয়ার ফসলস্বরুপ মহান আল্লাহ পাক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে সর্বশ্রেষ্ট ও সর্বশেষ নবী হিসেবে জগতবাসীর কাছে প্রেরণ করেন।
পিতা ইব্রাহীম (عليه السلام ) কর্তৃক মোহাম্মদ (ﷺ) পবিত্র ভূমি মক্কাতে প্রেরণের দোয়া ও করেছিলেন বিধায় তিনি মক্কাতেই জন্ম গ্রহণ করেন।
হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) মোহাম্মদ (ﷺ) এর জন্য দোয়া করত: স্বীয় আওলাদ ভূক্ত করার জন্য এবং শ্রেষ্ট নবী হিসেবে জগতবাসীর কাছে পাঠানোর কাহিনী আল্লাহ পূর্ব থেকেই জ্ঞাত ছিলেন বিধায় মহান আল্লাহ পাক তাঁকে স্বীয় আযলীতে শ্রেষ্ট রাসূল, সর্বশেষ নবী। রূপে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন, যাতে করে ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর ভাগ্য অতি সুপ্রসন্ন এবং আলোচনা বুলন্দ হয়। আর এজন্যই হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর দোয়ার প্রেক্ষিতে হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) স্বীয় বংশে আর্বিভূত হন। (তাঁর পৃষ্ট ধরে স্থানান্তরীত হয়ে)
(দুই) হুযূর (ﷺ) এর বাণী :
واما بشراى عيس عليه الصلاة والسلام-
অর্থাৎ- আমি হযরত ঈসা (عليه السلام ) কর্তৃক ভবিষ্যত সুসংবাদের বিকাশ। এ হাদীসের মর্মার্থ হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (عليه السلام ) কে এ মর্মে ফরমান জারী করেন যে, হে ঈসা! আপনি স্বীয় সম্প্রদায়ের কাছে হযরত মোহাম্মাদ (ﷺ) এর আগমনের শুভ বার্তা জানিয়ে দাও, যাতে করে তারা (বনী ইস্রাঈলরা) তাঁর আগমনের পূর্বেকার সমস্ত গুনাবলী ও শ্রেষ্টত্বের পরিচয় জেনে তাঁর প্রতি ঈমান গ্রহণ করতে পারে। যেমন : তাঁর গুনকীর্তণ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং এরশাদ ফরমান:
وَمُبَشِّراً بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ
অর্থাৎ- ওহে সম্প্রদায়গণ! জেনে রাখ! আমি একজন রাসূলের আগমনের শুভসংবাদ জানাচ্ছি, যিনি আমার পরেই আগমন করবেন এবং তাঁর নাম হবে আহমদ। আয়াতে কারীমাতে হযরত ঈসা (عليه السلام ) কর্তৃক মহানবী (ﷺ) এর আগমনের সুসংবাদ প্রমাণিত হয়।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্ম কালীন অলৌকিক ঘটনাবলী
আরবের নবী করুনার ছবি জগতবাসীর হেদায়েতের উজ্জল প্রদীপ মহানবী (ﷺ) এর আগমনের বছরটি সমগ্র আরবে শুস্কতা, অনুর্বরতা দুর্ভিক্ষতার কঠোর বন্যার ফলে তা কুরাইশদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভিসহ হয়ে উঠে। পরবর্তীতে বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ রহমতে আলম (ﷺ) এর শুভাগমনে সেখানকার মাটি তার উর্বরতা শক্তি ফিরে পায়, সমস্ত বৃক্ষলতা ফল মূল ও বীজ উৎপাদনের উপযোগী হয় এবং সমগ্র মক্কা উৎপাদন শক্তি সম্পন্ন হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে আরবের এ বছরকে সানাতুল ফাতহে ওয়াল ইবতেহাজ, তথা আনন্দ, প্রফুল্লতা ও বিজয়ের বছর বলে নাম করন করে।
খাজা আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه ) ছিলেন তখনকার যুগে সমগ্র আরব ও কুরাইশদের বিধাতা। তিনি প্রত্যেহ সজ্জিত হয়ে বের হয়ে পবিত্র কাবা প্রদক্ষিণ করতেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে এ বলে ভাষন দিতেন, ওহে কুরাশগন! জেনে রাখ যে, আমি আমার উভয় চোখের মধ্যখানে মানবাকৃতি বিশিষ্ট কিছু দেখি, যা আমার কাছে একটি পুর্ণ নূরের টুকরা হিসেবে মনে হয়। কিন্তু কুরাইশরা তাঁর এ সংবাদ হিংসা পরায়ন হয়ে অথবা অন্ধ বিশ্বাসের দ্বরুন অস্বীকার করে বসে।
যে মহানবী, অগনীত নবীগণের পরিক্রমা শেষ করে সকল যোগাড় আয়োজন সমাপ্তে বিশ্ব সভার মহা সমাবেশকে অলংকৃত করবেন, যে মহিমান্বিত রাসূল। আজ সে মহামহিমের আগমন ঘটবে বিশ্ব ভূবনে এ সংবাদ-বার্তা জানালো চতুস্পদ জন্তুরা এভাবে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) বলেন:
ان كل دابة كانت لقريش نطقت تلك الليلة وقبلت حمل برسول الله {صلى الله عليه وسلم} ورب الكعبة وهو امان الدنيا وسراج اهلها.
অর্থাৎ- মহানবী (ﷺ) এর মহাগমনের রাত্রে কুরাইশদের সমস্ত জন্তুরা পরস্পর কথোপকথন করেছিল এবং এ বলে বার্তা জানিয়েছিল যে, মহানবী (ﷺ) জগতে ভুমিষ্ট হয়েছেন। কাবার মালিকের কসম, ইনি হচ্ছেন সমগ্র দুনিয়াবাসীর ইমাম এবং তার অধিবাসীর জন্য দ্বীপ্তমান বিশাল সুর্য। তাঁর মহাগমনের রাত্রে আরবের সমগ্র যাদুগীর ও সমগ্র গোত্রের লোকেরা নিজ নিজ সহর্ধমিনী থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, তাদের যাদু মন্ত্র উপড়ানো হয়েছিল। তাঁর মহাগমনে দুনিয়ার সমস্ত রাজ সিংহাসন উপোড় হয়ে গিয়েছিল এবং সকল ক্ষমতাশীল সম্রাটদের বাকশক্তি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। সেদিন কথা বলার সাধ্য কারও ছিলনা।
তাঁর মহাগমনের শুভ বার্তা নিয়ে প্রাচ্যের হিংস্র প্রাণীরা পাশ্চাত্যদেশের হিংস্র প্রাণীদের কাছে চলাচল করেছিল। এমনিভাবে সমুদ্রের প্রাণীকুল ও পরস্প-পরস্পরকে এ শুভ বার্তা জানিয়েছিল। মাতৃগর্ভে থাকাকালীন প্রতিমাসে আসমান জমীন তথা ৮০ হাজার জগতের মধ্যকার ৫০ হাজার প্রাণীকে এ বলে অবিসংবাদ জানানো হতো যে, হে বিশ্ববাসীরা! তোমরা শুভ সংবাদ গ্রহণ করো যে, হযরত আবুল কাসেম মোহাম্মাদ (ﷺ) জমীনে আগমনের সময় হয়ে গেছে। তিনি পৃথিবীর ধরাধামে অতি সৌভাগ্যবান ও মোবারাক হয়ে আগমন করছেন।
সকল বর্ণনাকারীদের মতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় জননীর রেহেমে পূর্ণদশ মাস অবস্থান করেন। এ দশ মাসের মধ্যে স্বীয় জননী কোন প্রকার ক্ষুধার জ্বালা অনুভব করেন নি এমনকি প্রসব কালীন সময়কার অন্যান্য মহিলাদের বেলায় যে সমস্ত প্রয়োজনীয় বিষয় দরকার ছিল তাও প্রয়োজন হয়নি।
_______________
আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)
মূলঃ ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন