আল্লাহ তায়ালা আদি, চিরন্তন, শ্রবণকারী, দ্রষ্টা, হাজতপূর্ণকারী, বিপদ বিদূরণকারী, সৃষ্টি কর্তা, মালিক, রক্ষক, শেফা ও রুজী দাতা। কিন্তু এ সব কিছুর মধ্যে ইলাহ, আবৃদ (বান্দা) এবং মাবুদের (উপাস্য) মধ্যে ভিন্নতা ছাড়া কোন বক্তব্য নেই।যে জিনিস বান্দা এবং ইলাহ' এর মধ্যে পার্থক্য করতঃ যেই ভিত্তির উপর বান্দা বান্দা থাকে এবং ইলাহ্ ইলাহ থাকে, তা হচ্ছে এক জিনিস অর্থাৎ ধনী আর বেনিয়াজী (পরমুখী না হওয়া)। বান্দা হচ্ছে সে-ই,যে অপরের মুখাপেক্ষী হয়। তার রশি অন্য কারাে হাতে থাকে এবং সে নিজেই অন্যের অধীনে থাকে।
ইলাহ হচ্ছে তিনিই, যিনি কোন কিছুর হাজত প্রার্থী, ও আবেদন প্রার্থী নয়, সবার চাইতে ধনী এবং প্রয়ােজনমুক্ত। দেখুন সুরা এখলাছে প্রথমে বলা হয়েছে الله الصمد
অর্থাৎ "আল্লাহ পর মুখাপেক্ষী নন" ।
এটা হচ্ছে তার বে-নিয়াজীর প্রমাণ
যেমন বলা হয়েছে,
لم يلد و لم يولد
"না সে কারাে পিতা না কারাে সন্তান"।
কেননা পিতৃত্ব এবং পুত্রত্ব আবেদন প্রার্থনার ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। অতঃপর শেষান্তে এরশাদ হয়েছে :
و لم يكن له كفوا أحد
অর্থাৎ" তার কোন সমকক্ষ নাই" । কেননা সবাই তাহার মুখাপেক্ষী। আর তিনি সবার হাজতপূর্ণকারী। এবং বলা হচ্ছে
والله غني عن العالمين
অর্থাৎ" আল্লাহ সৃষ্টি জগত থেকে বে-পরওয়া এবং বে-নিয়ার্জ" ।আরও বলা হয়েছে
والله غني و انتم الفقراء
"আল্লাহ বেনিয়াজ, তােমার তার ফকির ও নিয়াজ প্রার্থী"।
আরাে বলা হয়েছে
ولم يتخذ وليا من الذل
অর্থাৎ "আল্লাহ তায়ালা স্বীয় অপারগতা ও হাজত প্রার্থীর ভিত্তিতে কাউকে নিজ অভিভাবক বানাননি"। এবং বলেন و لم يعى بخلقهن
অর্থাৎ" আল্লাহ তায়ালা আসমান ও জমিন সৃষ্টি করে দুর্বলতা অনুভব করেনি" এবং দুর্বল হয়ে কারাে নিয়াজ প্রার্থী হয়নি।
এটা হচ্ছে সেই কষ্টি পাথর, যার ভিত্তিতে বান্দা বান্দা থাকে, আর প্রভূ প্রভূই।
কোরআন হাকীম বলেন والله سميع بصير
" আল্লাহ দ্রষ্টা ও শ্রবণকারী" এবং অন্যত্র বলেছেন আমি মানবজাতিকে শ্রবণকারী এবং দ্রষ্টা বানায়েছি। আল্লাহ জিন্দা, বান্দাও জিন্দা, কিন্তু
তারপরও আল্লাহ ইলাহ এবং বান্দা বান্দা কেন?
এ জন্যই যে, আল্লাহ বে-নিয়াজ হয়ে। শ্রবণকারী, দ্রষ্টা, জিন্দা, চিরস্থায়ী, মালিক এবং রাজা।
আর বান্দা, প্রভূর হাজত প্রার্থী এবং তাঁর মুখাপেক্ষী হয়ে জিন্দা, শ্রবণকারী, দ্রষ্টা, মালিক এবং রাজা। এসব গুণাগুণ বান্দাকে প্রভূ প্রদান করেছেন এবং যখন ইচ্ছা করেন তা তাদের থেকে চিনিয়ে নেয়।
জরুরী টীকা
:ছুফি সাধকগণের পরিভাষায় চিরস্থায়ীত্ব হচ্ছে বেলায়তের একটি স্তর। এ স্তরে পৌছলে বান্দাকে কায়উম (স্থায়ী) বলা হয়। এ জন্যেই মােজাদ্দেদীয়া খান্দানের বুজুর্গানের কিতাবসমূহে কতেক অলি আল্লাহগণকে কায়উমে আউয়াল, (প্রথম কায়উম) কায়উমে ছানী (দ্বিতীয় কায়উম) বলা হয়েছে। হাদীছ শরীফে এর প্রতি ইশারা মওজুদ আছে
بهم يمطرون وبهم يرزقون
এভাবে আল্লাহ তায়ালা রক্ষক, হাজত পূর্ণকারী, বিপদ বিদুরণকারী এবং শেফা, আওলাদ প্রদানকারী এবং কতেক: বান্দারাও তাঁর দান ও ইচ্ছাক্রমে রক্ষক, বিপদ বিদূরণকারী এবং আওলাদ প্রদানকারী হয়। সে সম্বন্ধীয় আয়াত পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও বান্দা বান্দাই, প্রভূ প্রভূই। আল্লাহর এ সমস্ত গুণাগুণ বে-নিয়াজ ও ধনী হওয়ার ভিত্তিতে, আর বান্দাদের এ গুণাগুণ তার হাজত প্রার্থী ও নিয়াজ প্রার্থীর ভিত্তিকে। কারণ তাদের এ সব গুণাগুণ মহান প্রভূ দান করেছেন এবং তারা খােদ এবং এসব গুণাগুণ প্রভুর সষ্টি ও কুদরতের নিয়ন্ত্রনাধীন। আল্লাহর ধনীত্ব ও বে-নিয়াজী সত্ত্বাগত এবং হাকিকী (প্রকৃতগত) হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।
আর বান্দার ক্ষেত্রে রূপক ও দানকৃত হিসেবে ব্যাখা করা হয়। এ হলাে উলুহিয়াত ও আবদিয়াতের মধ্যে পার্থক্যের কারণ। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ইঞ্জিন এবং রেলের সমস্ত বগি সমূহ একই লাইনের উপর একই গতিতে দৌড়ে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানেন যে, যা দৌড়ছে তা হচ্ছে বগি,আর দৌড়াচ্ছে ইঞ্জিন; যা মুখাপেক্ষী তা হচ্ছে বগি আর যার প্রতি মুখাপেক্ষী তা হচ্ছে ইঞ্জিন।
আয়নায় সূর্যের ছায়া এসেছে, ফলে আয়নায় আলাের প্রতিবিম্ভতায় উত্তপ্ত অর্থাৎ সূর্যের সমস্ত গুণ প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। এতে অনুভূতি সম্পন্ন ব্যক্তিরা জানেন যে, সূর্য সূর্যই, আর আয়না আয়নাই। সূর্য আয়নায় আসেনি, আর আয়না সূর্য পর্যন্ত পৌছেনি। আয়নার মালিককে আয়নাতে দেখা যাচ্ছে, তার শরীর সমস্ত অংশ সমূহ রং সৌন্দর্য
পােশাক-পরিচ্ছেদ নড়া চড়া ইত্যাদি আয়নায় দেখা যায়। সে আঙ্গুলী নাড়াচাড়া করছে আয়নায়ও প্রতিচ্ছবি নড়ছে। কিন্তু মূল মূলই আর ছায়া, ছায়াই । এখানেও ধনী : মােহতাজ, হাকিকত-মজাজ, সত্ত্বাগত ও প্রদত্ত এর পার্থক্য রয়েছে। জনৈক ছুফি কি সুন্দর বলেছেন :
عارف خدا نما است دے اونه مى شود
آئنه رو نما است دلے رونه می شود
অর্থাৎ "আরিফ, (যিনি খােদা চিনতে সক্ষম হয়েছেন) খােদার পরিচয় দানকারীও বটে,তবে আরিফ খােদা হয়ে যায় না। আয়না চেহারা দেখায় কিন্তু সে চেহারা হয়ে যায় না" ।এখন সেই হাদিসে কুদসীটি দেখুন।
فإذا أحببته، كنت سمعه الذي يسمع به، وبصره الذي يبصر به، ويده التي يبطش بها، ورجله التي يمشي بها، وإن سألني أعطيته، ولئن استعاذني لأعيذنه
মহান প্রভূ বলেন, বান্দা যখন আমার অতি নৈকট্য লাভ করে, তখন আমি তার জবান হয়ে যাই, যদ্বারা সে কথা-বার্তা বলে,'আমি তাঁর হাত হয়ে যাই, যদ্বারা সে ধরে, আমি তার পা হয়ে যাই,যদ্বারা সেচলা-ফেরা করে, তার চক্ষু হয়ে যাই, যদ্বারা সে প্রত্যক্ষ করে, তাঁর কান হয়ে যাই যদ্বারা সে শ্রবণ করে। এখানে একাকার বা অনুপ্রবেশ নয়। বরং রাব্বানী তাজাল্লী যখন বান্দারউপর পতিত হয় তখন বান্দার থেকে খােদায়ী কাজ প্রকাশিত হতে থাকে।
একটি সন্দেহঃ
আমার উপরােক্ত বক্তব্যের উপর বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষ থেকে একটা সন্দেহ হতে পারে। তা এ যে, যদি উলুহিয়াতের পরিধি ধনীত্ব আর আবদিয়াতের (দাসত্বের) পরিধি মুখাপেক্ষী হয়, এবং ইলাহ যদি সেই যিনি বেনিয়াজ আর বান্দা সে, যে নিয়াজ প্রার্থী হয়, তাহলে আরবের মুশরিকগণ মুশরিক না হওয়া দরকার ছিলাে এবং না তাদের বাতিল উপাস্যদেরকে ইলাহ বলা উচিৎ ছিল। অথচ কোরআন করীম তাদেরকে ইলাহ বলছে। আর তাদের পূজারীদেরকে মুশরিক বলেছে। কেননা, কোন মুশরিক স্বীয় উপাস্যদেরকে ঐশ্বর্যশালী এবং বে-নিয়াজ স্বীকার করে না। যেমন তাদের আকিদা ছিলাে আমাদের মাবুদ (উপাস্য) আল্লাহর বান্দা এবং তার প্রতি হাজত প্রার্থী। কোরানে হাকীম বলছে- যদি তােমারা ঐ সব মুশরিকদেরকে জিজ্ঞেস কর যে, আসমান জমিন কার? তারা বলবে আল্লাহর । যদি তাদেরকে বলা হয় তােমাদেরকে জীবিকা কে দেন? বলবে আল্লাহ। যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় আসমান জমিনের বাদশাহী কার অধিকারে? তারা বলবে আল্লাহর।হাদিস সমূহ দ্বারাও প্রমাণিত যে, আরবের মুশরিকগণ যখন হজ্ব অথবা উমরার ইহরাম বাঁধতাে, তারা তলবীয়ায় এ শব্দসমূহ ও বলতাে
لاشريك لك الأ شريكا واحدا هو عبد لك
অর্থাৎ "হে প্রভূ! তােমার কোন শরীক নেই এক ব্যতিত, এবং সেই শরীকও তােমার বান্দা"
এসব কথা সত্ত্বেও তারা স্বীয় মূর্তিদেরকে ইলাহ বলে আর কোরআন করীম তাদেরকে মুশরিক ঘােষণা করেছে।
এখন চিন্তা করা দরকার যে, সেটা কি আকিদা ছিলাে, এবং কাফিররা তাদের মূর্তিদের সম্বন্ধে কি আকিদা রাখতাে, যাদেরকে তারা ইলাহ মানতাে এবং তাদের খােদার শরীক জানতাে। সেটা শুধু এ আকিদা ছিলাে যে, আমাদের মাবুদ সমূহ অদৃশ্যজ্ঞানী, সর্বত্র বিরাজমান, দূর নিকট থেকে দ্রষ্টা ও শ্রবণকারী, আমাদের হাজত পূর্ণকারী, বিপদ বিদূরণকারী, ফরিয়াদ গ্রহণকারী। এসব আকিদার কারণে তারা মুশরিক হয়েছে। কারণ এসব গুণাগুণ উলুহিয়াত্যেপরিধিভূক্ত।যে বান্দার মধ্যে এ সব গুণাগুণ মানা যায়, তাকে আল্লাহ স্বীকার করা হলাে। মুশরিকগণ এসব গুণাগুণ স্বীয় দেবতাদের মধ্যে স্বীকার করে মুশরিক হয়েছে এবং আজকের মুসলমানরা নবী ওলীদের মধ্যে এসব গুণাগুণ স্বীকার করে মুশরিক হয়ে যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এ সব মুসলমানরা স্বীয় পীর এবং ওলীদেরকে ইলাহ মানছে।
টীকাঃ
বিরুদ্ধবাদীদের এটা হচ্ছে চূড়ান্ত দলিল, যার উপর ভিত্তি করে তারা সাধারণ মুসলমানদেরকে মুশরিক বলছে।
এ সন্দেহের অবসানঃ
শিরক হচ্ছে কাউকে আল্লাহর বরাবর স্বীকার করা।
কোরআন করীম ইরশাদ ফরমান
ثم الذين كفروا بربهم يعدلون
("অতঃপর কাফিরগণ বান্দাদেরকে স্বীয় প্রতিপালকের সর্মকক্ষ করে দেয়" ) আরও ইরশাদ হচ্ছে কিয়ামত দিবসে কাফিরগণ স্বীয় উপাস্যদের বলবে যে, আমরা অতি পথভ্রষ্ট ছিলাম। কেননা আমরা তােমাদেরকে রাব্বল আলামিনের সমকক্ষ জানতাম।
اذ نسويكم برب العالمين
বুঝা গেল যে, শিরক হচ্ছে কোন বান্দাকে প্রতিপালকের সমকক্ষ মনে করা।
প্রতিপালকের সমকক্ষ মনে করাটা দুইভাবে হতে পারে। প্রথমতঃ বান্দাকে এতটুকু উচ্চ মনে করা অর্থাৎ তার প্রতিপালকের সমকক্ষ স্থান দেয়া, আল্লাহর ন্যায় সত্ত্বাগত ভাবে সৃষ্টিকর্তা, মালিক, অদৃশ্যজ্ঞানী, রক্ষক ইত্যাদি হিসেবে মেনে নেয়া। দ্বিতীয়তঃ মহান প্রভূর শান ক্ষুন্ন করে তাকে স্বীয় বান্দাদের কাতারে প্রতিষ্ঠিত করা। আর এটা স্বীকার করা যে, কিছু জিনিসের জন্য বান্দারা আল্লাহর মুখাপেক্ষী আর কিছু জিনিসের জন্য মহান প্রভূ বান্দার মুখাপেক্ষী। এই দুই অবস্থায় বান্দাকে আল্লাহ স্বীকার করা হচ্ছে।
আরবের কাফিরগণ এ দুই প্রকারের শিরকে লিপ্ত ছিলাে।কাফিরদের একাংশ ফেরেস্তাদেরকে খােদার পুত্র, আর একাংশ স্বীয় দেবতাদেরকে খােদার কন্যা মানতাে, একাংশ স্বীয় দেবতাদেরকে খােদার পুত্র মানতাে। উল্লেখ্য যে, পিতা-পুত্র পরস্পরের মধ্যে একজন অন্যজনের মুখাপেক্ষী হয় “জাতিগত সমকক্ষ”
এ আকিদার কারণে ঐ লােকেরা মুশরিক হয়েছে। তাদের খণ্ডন কোরআন করীমের অনেক আয়াত বিদ্যমান,
যেমন মহান প্রভূ বলেন
لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد
"না তিনি কাউকে জন্ম দিয়েছেন, না তিনি কাহারাে থেকে জন্ম হয়েছেন। তাঁর কোন সমকক্ষ নেই" । আরও বলা হয়েছে
।و جعلوا بينه وبين الجنة نسبا
আরবের |َ সাধারণ মুশরিকদের আকিদা ছিলাে যে আমাদের মূর্তি ও উপাস্যরা আল্লাহর বান্দা বটে,কিন্তু মহান প্রভূ তাদের মুখাপেক্ষী। প্রভূ পৃথিবী সৃষ্টি করে এত বেশী দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে যে, তিনি এখন দুনিয়া পরিচালনা ও ইন্তেজাম নিজ আয়ত্বাধীন রাখতে অক্ষম। আমাদের এসব মাবুদরা দুনিয়া পরিচালনা করছেন এবং এখানকার কাজকর্ম চালাচ্ছেন। এ আকিদা হচ্ছে শিরক। কারণ এখানে বান্দাদেরকে প্রভূর সমকক্ষ স্বীকার করা হয়েছে। কারণ বান্দাদেরকে প্রভূর প্রতি এবং প্রভূকে বান্দার প্রতি নির্ভরশীল বলে স্বীকার করা হয়েছে। তাদের খন্ডনে বহু আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।
মহান প্রভূ বলেন
وما مسنا من لغوب
“জগত সৃষ্টির বেলায় আমার একটুও দূর্বলতা অনুভব হয়নি"। আল্লাহ তা'য়ালা এসব বস্তুকে পয়দা করে ক্লান্ত হননি।
অন্যত্র বলা হয়েছে।
ولم يتخذ وليا من الذل
“আল্লাহর তায়ালা অসহায় ও দুর্বল হিসেবে কাউকে বন্ধু বলে গ্রহণ করেননি" ।
মােট কথা, তাদের এ আকিদা ছিল শিরক। কাফিরদের একাংশ পৃথিবীর জন্য দুইজন স্বাধীন খােদা, স্রষ্টা ও মালিক মানতাে। তারা বলতাে যে, ভাল এবং খারাপের স্রষ্টা ভিন্ন ভিন্ন হওয়া দরকার। ভাল কাজের স্রষ্টার নাম “ইযদানী” বলতাে আর খারাপের স্রষ্টার নাম বলতাে “আহরে মন"। তারা তাদের কতেক কাল্পনিক বান্দাকে খুবই উচ্চস্তরে স্থান দিয়ে খােদা মেনে নিয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ!কোন মুসলমান এ রকম জঘন্য আকিদা রাখে না।শুধু কোন বান্দাকে আল্লাহ প্রদত্ত্ব ইলমে গায়েবের অধিকারী স্বীকার করা এবং আল্লাহ প্রদত্ত কোন মাহবুব বান্দাকে সৃষ্টির রক্ষক, বিপদ বিদূরণকারী মনে করা না শিরক, না কুফর। আরবের মুশরিকগণ এ সমস্ত আকিদার জন্য মুশরিক হয়নি বরং মুশরিকে পরিণত হয়েছে ঐ আকিদার কারণে, যা আমি কোরআন করিমের আলােকে বর্ণনা করেছি।
ছাহাবায়ে কেরাম হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কে আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে তাদের হাজপূর্ণকারী,বিপদবিদূরনকারী ও রক্ষক মনে করতেন। যখন তাদের কোন ত্রুটি বিচ্যুতি সংঘটিত হতাে, তখন প্রিয় নবীর পবিত্রতম বিচারালয়ে উপস্থিত হয়ে আরজ করতাে
طهرنى يا رسول الله
অর্থাৎ" হুজুর আমাকে পবিত্র করুন" ।
একথা বলবেইতাে। কেননা যেখানে স্বয়ং মহান প্রভূ হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে বলছেন : 'আমার মাহবুব তাদেরকে পবিত্র করেন এবং কিতাব ও হিকমত অর্থাৎ কোরআন ও হাদিছ শিক্ষা দেন।
আর বলছেন
হে মাহবুব! তাদের ছদকা সমূহ উশুল করুণ এবং ছদকার মাধ্যমে তাদের জাহেরী বাতেনী পরিষ্কার করুণ, এবং তাদের জন্য রহমতর প্রার্থনা করুন, (কেননা) আপনার দোয়া হচ্ছে তাদের আত্মার প্রশান্তি।
এ সব আয়াত থেকে প্রতিয়মান হলাে যে, শুধু কোরআন, হাদিছ, নামাজ, রােজা ইত্যাদি আমাদের পাক এবং পরিষ্কার করতে পারেন না, যতক্ষণ না জনাবে মােস্তফা “ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সুদৃষ্টি না হয়। কোরআন হাদিছ রূহানী সাবান ও পানি স্বরূপ। হুজুরের (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) দয়া ও রক্ষণাবেক্ষন, এবং রূহানী সাহায্যই হচ্ছে পাক করার হাত। শুধু সাবান ও পানি কারাে হাত লাগা ব্যতিত কাপড়কে পরিষ্কার ও পাক করে না। অন্ধরা হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর শরানাপন্ন হয়ে চক্ষু প্রার্থনা করেছে। মৃগরােগীরা হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) থেকে আরােগ্য প্রার্থনা করেছে, শুকনাে কাষ্ঠ, পাথর সমূহ হুজুর (সাল্লাল্লাহু। আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর আশ্রয় নিয়েছে। সায়্যেদেনা রাবিয়া ইবনে কা'ব (রাঃ) হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) থেকে জান্নাত প্রার্থনা করেছিলেন।
যেমন
মুসলিম শরীফে আছে اسئلك موافقتك في الجنة "হুজুর,আমি আপনার কাছে এটাই প্রার্থনা করছি যে, যেন আমি জান্নাতে আপনার সান্নিধ্যে অবস্থান করতে পারি" ।
অর্থাৎ ঈমান, আমল, শেষ ভাল, কবরের পরীক্ষায় কামেয়াবী, কঠিন হাশরের নাজাত, পুলছিরাত পারাপার, জান্নাতে প্রবেশ, হুজুরের (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) নৈকট্যতা ইত্যাদিই প্রার্থনা করা হয়েছে। কিন্তু উভয় জগতের শাহীনশাহ্ এ কথা বলেননি যে, এটা আল্লাহরই ইখতিয়ারে, আমি কিভাবে দিতে পারি বরং বলেছেন এ ব্যতিত কি আরও কিছু প্রার্থনা করার আছে? আরজ করলেন এটাই হচ্ছে আমার বাসনা। বুঝা গেল যে, হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) খােদা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চাহিদা পূর্ণ করে থাকে। যদি কোন বান্দাকে আল্লাহ প্রদত্ত্ব ইলমে গায়েবের অধিকারী স্বীকার করা,বিচারক ও রক্ষক মনে করা, বিপদ বিদূরণকারী, হাজতপূর্ণকারী মনে করা শিরক হয়; তবে ছাহাবা কেরাম সবাই মুশরিক হয়ে যায়, নাউযুবিল্লাহ।
আশ্চায্যের বিষয় যে, হযরত আম্বিয়া-ই কেরামের ইলমে গায়েব, মশকিলকুশা, হাজত রাওয়া হওয়া এমন সুস্পষ্ট মাসআলা যে, যাকে এ যুগের কাফিররাও অস্বীকার করতে পারে না।
কোরআন করিম বলে যে, যখন ফিরাউন এবং তার অনুসারীদের উপর আল্লাহর আযাব আসতাে, তখন তারা পালিয়ে গিয়ে হযরত মুছা কলিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম এর বারগাহে উপস্থিত হয়ে অরজ করতাে
لئن كشفت عنا الرجز لنؤمنن و لمرسلن معك
অর্থাৎ" হে মুছা! (আলাইহিস সালাম) যদি এবার আপনি এ আযাব আমাদের থেকে দূর করে দিতে পারেন, তবে আমরা আপনার উপর ঈমান আনবাে, এবং আপনার সাথে বনি ঈসরাইলকে পাঠিয়ে দেব" । মহান প্রভূ ও মুছা কলিমুল্লাহ তাদের এ ফরিয়াদকে শিরক বলে ঘােষনা দেননি বরঞ্চ মুছা আলাইহিস সালাম দোয়া করতেন এবং মহান প্রভূ সেই আযাব তুলে নিতেন।
পুনরায় এসব লােকেরা বিশ্বাস ঘাতকতা করতাে। ফলে তাদের উপর দ্বিতীয়বার আযাব আসততা, প্রভূ নিজেই বলেছেন:
فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ الْعَذَابَ إِذَا هُمْ يَنكُثُونَ
"যখন আমি তাদের থেকে আযাব তুলে নিতাম, তখন তারা পুনরায় ফিরে যেতাে" । যদি তাদের এ কাজ শিরক হতাে, তাহলে তাদের উপর আযাব বেশী হওয়া বাঞ্চনীয় ছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, এ যুগের কিছু সংখ্যাক কলেমা পড়ুয়া ঐ সব লােকদের চাইতেও মুর্খ ।
আল্লাহ সবাই কে বুঝতে সাহায্য কর। আমীন।
_________________
কিতাবঃ ইসলামের মৌলিক চারটি বিষয়।
মূলঃ হাকিমুল উম্মাহ মুফতি ইয়ার খান নঈমী (রহঃ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন