এ শব্দটা نبأ (সংবাদ) শব্দের ছিফত্ মুশাববাহ। এর অর্থ, সংবাদদাতা। যেমন- করিম মানে অনুগ্রহকারী, রহিম মানে দয়ালু, হুছাইন মানে সৌন্দর্যের অধিকারী। তদ্রুপ নবী মানে সংবাদদাতা। এরূপ সংবাদদাতা হওয়ার মধ্যে তিনটি দিক রয়েছে। যথাঃ সংবাদ দানকারী, সংবাদ সংগ্রহকারী, সংবাদ সংরক্ষণকারী। نبئ (নবী) এর অর্থ যদি খরবদানকারী হয়; তখন একান্ত জিজ্ঞাস্য মাসআলা এটা হবে যে,কি ধরণের এবং কোথাকার খরবদানকারী?
পত্র-পত্রিকা, বেতার যন্ত্র, খাম (এনভেলপ) তারবার্তা, টেলিফোন, ইত্যাদি সহ বি, বি, সি'র সংবাদ বিভাগ, সবই সংবাদদানকারী। কিন্তু তাদেরকে নবী বলা হয় না। যদি বলেন, হারাম হালালের সংবাদদাতা এবং শরীয়তের মাসআলা মাসায়েলের বর্ণনাকারী হচ্ছে নবী, তাহলে প্রত্যেক আলেম, প্রত্যেক মুজাদ্দিদ (সংস্কারক), মুজতাহিদ এ সব খবরাদি দিয়ে থাকেন, কিন্তু এদেরকে নবী বলা হয় না।
যাহােক এমন কোন বিশেষ খবর হতে হবে, যার পরিবেশনকারী-কে নবী আখ্যায়িত করা হয়। কাজেই পূর্ণ বিশ্লেষণ হচ্ছে,পৃথিবী বাসীকে পৃথিবীর সংবাদ দানকারী, তথা আলমে শুহুরের খবরাখবর বর্ণনাকারী হচ্ছে পত্র-পত্রিকা বা তারবার্তা, কিতাব কিংবা গবেষণা দ্বারা মাসআলা বর্ণনাকারী হচ্ছেন আলেম, কিংবা মুজতাহিদ। কিন্তু পরশ (পৃথিবী) বাসীদেরকে আরশের সংবাদদাতা, আলিমে গায়ব (অদৃশ্য জগতের) এর খবরাখবর বর্ণাকারী হচ্ছেন, নবী। যেখানকার খবরা-খবর আদান-প্রদানে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সমূহ অকেজো, সেখানকার খবরা খবর দানকারী হলেন নবী।
যারা প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর অদৃশ্য জ্ঞানকে অস্বীকার করে, মূলতঃ তারা তাঁর নবুয়তেরই অস্বীকারকারী। আর যারা বলে যে, নবী কেবল শরীয়তের মাসআলা সমূহ জানেন, এবং পৃথিবীবাসীদেরকে কেবল তা-ই- জানানাের জন্য আগমন করে থাকেন, তারা নবী আর মুজতাহিদের মধ্যে কি বা পার্থক্য করবে? আমি আপনাদেরকে কয়েকটি হাদীছের বর্ণনা শুনাচ্ছি, যদ্বারা প্রতিভাত হবে যে, নবী কোথাকার খবরদাতা।
নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর দরবারে হযরত যাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বিষন্ন মন নিয়ে বসা ছিলেন। প্রশ্ন করা হল, হে জাবির, কি খবর এতাে বিষন্ন কেন? আরজ করলেন, আমার পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) উহুদ প্রান্তে শহীদ হন। তাঁর বিদায়কালে কয়েকজন কন্যা ও কর্জ রেখে যান। অর্থাৎ তার বিচ্ছেদ বেদনা,নিজ বােনদের ও কর্জের চিন্তা সবই আমার মধ্যে একত্রিত হয়েছে। হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করলেন, তােমাকে কি কিছু বলবাে, যদ্বারা তােমার বিষন্নতা দূরীভূত হয়ে যাবে। আরজ করলেন, হুযুর নিশ্চয় বলবেন হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ফরমালেন অদ্যাবধি মহান প্রভূ কারাে সাথে পর্দাবিহীন অবস্থায় কালাম করেন নি। তােমার পিতাই প্রথম মৃতজন, যার সাথে তার প্রভূ পর্দাবিহীন অবস্থায় কালাম করেছেন।হযরত জাবিরের আগ্রহ হলাে সেই কালামটি শুনার জন্য। হুযুর বললেন, প্রভু তােমার পিতাকে এরশাদ করেন, কিছু কামনা করাে। তােমার পিতা আরজ করেন,হে মাওলা! তুমি মাকে সব কিছু দান করেছ; কি জিনিসের আরজু করবাে? বললেন,অবশ্যই কিছু করাে। আরজ করলাে, আমাকে পৃথিবীতে পাঠানাে হােক। অতপর ঐ উহুদ ময়দানের ন্যায় যেন পাথরী জমি হয়। এভাবে যেন রক্তে স্নান করি, এবং তােমার পথে যেন শহীদ হই। তােমার পথে শহীদ হয়ে যে মজা পেয়েছি, তা অন্য কিছুতে নাই। তখন প্রভূ বললেন, আমার এটা নিয়ম নয় যে, কাউকে পরীক্ষা করিয়ে কিংবা পাশ করিয়ে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করা।
অনুরূপ, এক মহিলা প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর দরবারে হাজির হয়ে আরজ করলাে- হে আল্লাহর রসুল! আমার একমাত্র জোয়ান পুত্র আপনার সাথে জিহাদে গিয়ে শহীদ হয়েছে, সে যদি বেহেস্তি হয়, তবে আমি ছবর করবাে, কিন্তু এর বিপরীত হলে আমি এমনভাবে কান্না কাটি করবাে, যা পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বললেন, আল্লাহর তৈরীকৃত জান্নাতের স্তর আটটি, তােমার ছেলে জান্নাতের সর্বোৎকৃষ্ট স্তর- ফেরদাউসে রয়েছে।
এক ব্যক্তিকে প্রিয়নবীর জীবদ্দশায় শাস্তি স্বরূপ পাথর নিক্ষেপ করা হয়। অন্য কোন এক ব্যক্তি, তার প্রতি পাথর নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর তাকে অপরাধী হিসেবে মনে করলাে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বললেন, ওকে মন্দ বলতেছ, অথচ সে বেহেস্তের ঝর্ণাধারা সমূহে মহাতৃপ্তিতে বিচরণ করতেছে।
দেখুন! প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) মদিনার জমিনে তশরীফ থাকাবস্থায় কোথাকার খবর দিচ্ছেন। ওটা ওখানকার খবর যেখানে খবর আদানপ্রদানের সমস্ত মাধ্যমসমূহ অকেজো।
কিন্তু প্রশ্নকারীর প্রশ্নের উত্তরে এটা বলেননি যে, আমি মদিনায় রয়েছি আর এ সব শহীদগণতাে অদৃশ্য জগতে পৌছে গিয়েছেন, আমার কাছে তথাকার কি বা খবর থাকবে। না একথা বলছেন যে, আচ্ছা, জিব্রাইল আমিন আসা পর্যন্ত একটু সময় দাও, তার থেকে জিজ্ঞেস করে বলবাে, বরং চিন্তা ভাবনা ব্যতিরেকে প্রশ্ন শুনা মাত্রই এরশাদ করে দিলেন। উপরন্তু সাহাবা-ই- কেরামের এ ধরনের প্রশ্ন প্রিয় নবীর দরবারে পেশ করা, এ কথা প্রমাণ করে যে, তারা এ আকিদাই পােষণ করতেন যে, নবী হন তিনিই, যিনি অদৃশ্য জগতের খবরা খবর দেন। আর প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক তাঁদের পেশকৃত প্রশ্নের সন্তোষজনক জওয়াব দেয়া মানে উক্ত আকিদার অনুমােদন করা।
মহান আল্লাহ হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) এর নবুয়তকে জ্ঞান-বিজ্ঞান দানের কথা দ্বারা প্রমাণ করেছেন। স্বয়ং খােদাতায়ালা বলেন- و علم ادم الاسماء كلها
আল্লাহ তায়ালা আদম আলাইহিস সালাম কে প্রত্যেক ছােট-বড়, মান-সম্মানী আ'লা-আদনা বস্তু সমূহ শিক্ষা দান করেছেন। শুধুমাত্র শিক্ষাই দেননি বরং অনু থেকে পাহাড়, বিন্দু থেকে সিন্দু, ভূমন্ডল থেকে নভােমন্ডল পর্যন্ত যা হয়েছে, আর যা হবে সব কিছুই শিক্ষা দান করেছেন। (তাফসীরে জালালাইন ইত্যাদি) উপরন্তু ভূমণ্ডল থেকে নভোমণ্ডল পর্যন্ত প্রত্যেক বস্তু তাঁর দৃষ্টি গােচরীত করেছেন।
প্রতিয়মান হলাে যে, নবী বলতেই অদৃশ্য জগতের খবরদাতাকে বুঝায়। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাইলের (সম্প্রদায়) সামনে স্বীয় নবুয়তকে অদৃশ্য জগতের সংবাদ প্রদান ও ইলমের খাযানা বলে প্রমান করেন। যেমন বলেছেন,
وأنبئكم بما تاكلون وماتدرون في بيوتكم
তােমাদেরকে খবর দিতে পারি, যা তােমরা নিজ ঘরে আহার কর, এবং অবশিষ্ট রাখ)।
نبي (নবী) শব্দটা দেখুন, আর انبئكم (উনাব্বেউকুম) শব্দটা দেখুন, উভয় শব্দ একই মূল থেকে উৎপত্তি। স্মরণ থাকা চাই যে,تاكلون হচ্ছে ‘মােজারে’ এর সিগা, যার মধ্যে বর্তমান-ভবিষ্যৎ উভয়টা অন্তর্নিহিত। যদি এর শুরুতে س(সিন) সংযােজিত হয়, তাহলে ভবিষ্যৎকাল জ্ঞাপক ক্রিয়া হয়ে যায়। যেমন سيقول السفهاء আর যদি ل (লাম) সংযােজিত হয়, তাহলে বর্তমানকালের অর্থ জ্ঞাপক হয়। যেমনঃ لتمرون عليهم (আল কুরআন) আর যদি সিন বা লাম কোনটা ন থাকে, তাহলে বর্তমান ভবিষ্যৎ উভয় অর্থ বুঝায় যেমন, تاكلون-تدخرون
যেহেতু এখানেও উভয় ক্রিয়া ل (লাম) ও س (সীন) বিহীন সেহেতু উক্ত ক্ৰিয়াদ্বয়ের অর্থ সাধারণভাবে এ হতে পারে যে, আমি তােমাদেরকে খবর দিতে সক্ষম।যে, যা কিছু তােমরা আহার কর, আর মৃত্যু অবধি পর্যন্ত খেতে থাকবে আর যা কিছু অবশিষ্ট রাখবে। অর্থাৎ ক্ষেতের উৎপাদিত ফসলের প্রত্যেক দানা, বাগান সমূহের প্রত্যেক ফল, পানির প্রতিটি ফোটা সম্পর্কে আমার জ্ঞান রয়েছে। এ আহার কে খাবে বা পান করবে, এটা হচ্ছে, নবীর তত্ত্বাবধানে। অর্থাৎ নবীর শান হচ্ছে তিনি যেমন স্রষ্টার জ্ঞান রাখেন, তেমনি সৃষ্টিরও। সৃষ্টির মধ্যে নভােমণ্ডল সমূহেরও জ্ঞান রাখেন এবং ভূমণ্ডল তথা ভূমণ্ডলীর বস্তু সমূহেরও। যেমন, যােগ্য ডাক্তার রােগীর শরীরের উপর হাত রেখে রােগীর রােগ নির্ণয় করতে পারে, তদ্রুপ আমাদের নবীর হাত মােবারকও প্রত্যেকের জ্ঞান ও ঈমানের উপর। এ আলােকে কয়েকটি হাদিস উপস্থাপন করছি।
মিশকাত শরীফে সায়্যিদেনা ওমর (রাঃ) এর প্রশংসা শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত, একদা বিশ্বকুল সরদার হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) উম্মুল মােমেনীন আয়েশা ছিদ্দিকা (রাঃ)'র নিকটে তশরীফ আনেন। তখন রাত্র ছিল। আকাশ পরিষ্কার, তারকারাজি ঝলমল করছিল। হযরত উম্মুল মােমেনীন আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এমন কোন ব্যক্তি কি আছে, যার নেকী তারকারাজির সমতুল্য। চিন্তা করুন, কতনা গুরুত্ববহ প্রশ্ন। কেননা, তারকা বিভিন্ন আসমানে বিদ্যমান, প্রথম থেকে সপ্ত আসমান পর্যন্ত বিস্তৃত, যার মধ্যে অনেক এমন ক্ষুদ্র তারকাও রয়েছে, যা অধ্যাবধি পর্যন্ত দৃষ্টির মধ্যে আসেনি। আবার অনেক এমনও রয়েছে, যা সূর্যের কিরণের কারণে দৃষ্টিগােচরীত হয় না, কিন্তু আকাশে বিচরণ করে।তদ্রুপ, কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের নেকী সমূহ হবে বিভিন্ন প্রকারের কিছু গর্তসমূহে, কিছু পাহাড় সমূহে, কিছু অন্ধকার রজনীতে, কিছু দিবালােকে, কিছু নির্জনে, কিছু সমাবেশে। মােটকথা এ প্রশ্নটা আরশ ও পরশ সম্পর্কিত। আরও উল্লেখ্য যে, উল্লেখিত বিষয় দুইটির বড় ছােট বা সমতার কথা তিনিই বলতে পারেন, যার সম্মুখে উক্ত দুই বিষয় উপস্থিত থাকে এবং তাঁর দৃষ্টি উক্ত দুইয়ের কনা-অনুকনার উপর প্রসারিত থাকে। প্রতিয়মান হলাে যে, উম্মুল মােমেনীনের আকিদা তা-ই ছিল ।
.
عرش پر ہے تیری گزر دل فرش پر ہے تیری نظر
আরশের উপর তােমার চলন - পরশের উপর তােমার নজর (দৃষ্টি)
ملکوت و ملک میں کوئی شئی نہیں وہ جو تجه پر عیاں نہیں
আত্মা ও রাজ্যে এমন কিছু নেই যা তােমার সামনে অস্পষ্ট।
এর উত্তরে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এটা বলেননি যে, ওহে আয়েশা! তােমার মত আমিও মদীনার জমিনে অবস্থিত। আমি কি জানি কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মত কি রকম হবে, কত পরিমাণ নেকী করবে এবং কোন আকাশে কত পরিমাণ তারকা রয়েছে। তুমি আমার কাছে রােযা নামাজ সম্পর্কিত মছায়েল জিজ্ঞেলা করতে পার। না এটা বলেছেন যে, জিব্রাইল আমিন আসুক, তার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নেয়া হবে। না এটা বলেছেন যে, খাতা-কলম নাও হিসাব করে দেখি, না একথা বলেছেন যে, একটু অপেক্ষা কর চিন্তা করে দেখি, বরং বিনা চিন্তায় সাথে সাথেই বলে দিলেন যে, হ্যাঁ একজন লােক আছে, যার নেকী আকাশের তারকারাজির সমান। আর তিনি হলেন হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)। উম্মুল মােমেনেীন আরজ করলেনঃ আমার পিতা ছিদ্দিকে আকবরের কি অবস্থা? বললেন, হিজরতের রাতে তাঁর সেই খেদমত। ফারুকে আজমের জিন্দেগীর নেকীর চাইতেও উত্তম। প্রতিয়মান হলাে যে, হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) তার উম্মতের প্রত্যেকের নেকী সম্পর্কে অবহিত। তিনি হলেন সর্বজ্ঞাত নবী।
বুখারী শরীফের প্রথম খণ্ডে “সাহমে গারব” নামক অধ্যায়ে আছে যে, বদর যুদ্ধে হযরত হারেজ আততায়ীর তীরের আঘাতে শহীদ হন, তাঁর মা দরবারে মােস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত হয়ে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমার সন্তান যদি জান্নাতে হয়, তাহলে আমি ধৈর্য ধারণ করতে পারি, অন্যথায় আমার সন্তানের জন্য আমি এমনভাবে ক্রন্দন করব, যাতে মানুষের মুখে মুখে আলােচিত হয়। এ ক্ষেত্রেও নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এ রূপ বলেননি যে, মা! আমার নিকট খবর কিসের, যেথায় তুমি সেতায় আমি। আর না এ রকম বলেছেন যে জিব্রাইল আমিনকে আসতে দিন; তার থেকে জিজ্ঞেস করে বলবাে। বরং বললেন, আল্লাহর বান্দাদের জন্যে জান্নাত আটটি। তম্মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদাবান হচ্ছে জান্নাতুল ফেরদাউস। তােমার সন্তান সেথায় আছে।
ও মিশকাত শরীফের কিতাবুল যাকাতে ছদকার ফযিলত শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত, উম্মুল মােমেনীন আয়েশা ছিদ্দিকা (রাঃ) বলেন, একদা তার পবিত্র বিবিগণ প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)'র দরবারে আরজ করলেন
ايها اول لحو قابك يا رسول الله
হে আল্লাহর হাবীব! আমাদের মধ্যে সবার আগে কে আপনার সাথে মিলিত হবে? বললেন اطو لكن يد (তােমাদের মধ্যে লম্বা হাত বিশিষ্ট মহিলাটি আমার সাথে প্রথম সাক্ষাত লাভ করবে) আমরা নিজেদের হাত পরিমাপ করলাম। তাতে বিবি সওদার হাত সবার চাইতে লম্বা ছিল। কিন্তু পরে প্রতিয়মান হলাে যে, লম্বা হাত মানে দান খয়রাতকারী। কারণ সবার আগে বিবি জয়নবের ওফাত হয়, যিনি সবার চেয়ে অধিক দান ছদকা করতেন। গভীরভাবে চিন্তা করুন, এ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের মাধ্যমে কতইনা বিষয় জিজ্ঞেস করলেন। প্রত্যেকের ওফাতের সময়, কখন কার ইন্তেকাল হবে, মৃত্যুর অবস্থা, আমাদের সবার মৃত্যু ঈমানের উপর হবে কিনা, মরনােত্তর নিজেদের অর্থাৎ আমরা কোথায় থাকবাে, আপনার সাথে, না অন্যত্র। কেননা তারা আরজ করছিলেন যে, আমাদের মধ্যে সবার আগে আপনার সাথে কে সাক্ষাৎ লাভ করবে। এখানেও হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলেননি যে, এসব হচ্ছে পঞ্চ বিষয়ক জ্ঞান, আমি কি করে জানাবাে, না এ রকম বলেছেন, জিব্রাইল আমিন থেকে জিজ্ঞেস করে বলবাে। বরং তৎক্ষনাৎ উত্তর দিয়ে দিলেন।
বুখারী শরীফের পবিত্রতা অর্জন বিষয়ক আলােচনায় “প্রশ্রাব থেকে বেঁচে থাকা” শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, একদা হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) একটি স্থান অতিক্রম করার সময়,দুইটি কবরের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন- এ কবরদ্বয়ে নিতান্ত সাধারণ গুনাহের কারণে আযাব হচ্ছে। ওদের মধ্যে একজন ছোগলখােরী করতেন, আর দ্বিতীয় জন উট ছড়াতেন, উঠের প্রস্রাব থেকে দূরে সরে থাকতেন না। অতপর একটি তাজা ডালিকে দ্বিখণ্ডিত করত:এক এক করে দুই কবরে পুতে দিলেন এবং বললেন, যতক্ষন পর্যন্ত এই ডালি তাজা থাকবে, ততক্ষন তাদের তাসবীহ পাঠের কারণে কবরদ্বয়ে আযাব হালকা হবে। এ হাদিস থেকে কয়েকটি মসায়েল বােধগম্য হয়ঃ
(১) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর দৃষ্টি শক্তির সামনে কোন মাটি আড়াল হতে পারে না। তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্য একই সমান দেখেন। লক্ষ্য করুণ, আযাব হচ্ছে হাজার মন মাটির নীচে জমিনের মধ্যে। আর এদিকে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) জমিনের উপর থেকে সেই আযাবকে প্রত্যক্ষ করলেন। সুবহানাল্লাহ।
(২) হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেকের প্রতিটি নেকী ও গুণাহ সম্পর্কে খবর রাখেন। লক্ষ্য করুণ, উক্ত কবরবাসীদ্বয় নিজেদের জীবদ্দশায় ছোগলখোরী করতাে, প্রস্রাবের চিঠকা থেকে পরহেয করতাে না। উল্লেখ্য যে, উক্ত ব্যক্তিরা হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সামনে এসব কাজ করেনি। কিন্তু হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর নিকট তাদের খবরাখবর ছিল। বুঝা গেল যে, প্রত্যেকের প্রতিটি আমল সম্পর্কে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) খবর রাখেন। তাই তিনি সংবাদ প্রদানকারী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)।"
কবরের উপর সবুজ ঘাস লাগানাে, তাজা ডালি, ফুল ইত্যাদি রাখা এ হাদিছ দ্বারা প্রমাণিত। এর ফলে কবরের আযাব হালকা হয়।
হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) দুনিয়ায়, কবরে, হাশরে তথা সকল সমস্যায় উম্মতের সাহায্য করেন, খবরা খবর রাখেন। কিয়ামত দিবসে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সবার আগে মখলুকের খবর নেবেন। অতঃপর হিসাব নিকাশ আরম্ভ হবে। কিয়ামতের সূচনা হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর সাহায্য দ্বারাই আরম্ভ হবে।যেমন বুখারী, মুসলিম প্রমূখ গ্রন্থের হাদিস সমূহে বর্ণিত আছে।
রহস্যঃ কিয়ামতের সমাবেশে শাফায়াতকারীর সন্ধানী মুহাদ্দিছ মুফাচ্ছির, উলামা, ফকিহ, আওলিয়া, ছুফি গাউছ-কুতুব সবাই হবেন। কিন্তু কারাে স্মরণ হবে না। যে, আজ কেবল প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র মস্তকেই শাফায়াতের মুকুট। অথচ পৃথিবীতে তাদের আকিদা ছিল যে শাফায়াতের দরজা কেবল হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) খুলবেন। কিন্তু তারা তখন এমন ভাবে ভুলে বসবেন যে, হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর নাম কারাে স্মরণ আসবে না। নিছক নিজেদের কিয়াস দ্বারা অপরাপর সম্মানিত নবীদের নিকট শাফায়াতের জন্যে ধর্ণা দিবেন এবং ওনারাও হুযুরের পরিচয় দান করতে পারবেন না। ধারণা করে হযরত নূহ, ইব্রাহীম, মুছা আলাইহিস সালাম প্রমুখের ঠিকানা বলবেন। ঈসা আলাইহিস সালাম ব্যতীত হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর নাম কেউ বলতে পারবেনা। এর মধ্যে কি রহস্য? রহস্য হচ্ছে মখলুক যদি প্রথমেই হুযুর আকদাস (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সমীপে হাজির হতেন এবং হুযুর এদের জন্য শাফায়াত করে দেন, তখন কেউ কেউ হয়তাে বলবে এ শাফায়াতে হুযুরের কিসের বিশেষত্ব? আমরা ঘটনাক্রমে এখানে এসে পড়লাম এবং শাফায়াত হয়ে গেল । যদি অন্য কোন নবীর নিকট যেতাম তখনও শাফায়াত হয়ে যেত। প্রত্যেকের ক্ষমতার পরিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হবার জন্য প্রথমে প্রত্যেকের দ্বারে দ্বারে ফিরাবেন। প্রত্যেকের দ্বারে ভিক্ষা করাবেন। এবং সবার দ্বারা স্বীকার করায়ে নেবেন যে, আজ হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ব্যতীত সাহায্যকারী নবী অন্য কেউ নাই। সাহাবায়ে কেরাম সব সমস্যার সমাধানের জন্য হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এরই আস্তানায় হাজির হতেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টি হচ্ছে না, ইয়া রাসূল আল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আজ অত্যাধিক বৃষ্টি হয়ে গেল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমি গুনাহ করে এসেছি। এমনকি, মক্কার কাফেরেরাও সমস্যা সমাধানে দোয়া করানাের জন্য হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এরই দরবারে আসতাে, জীব-জন্তু পর্যন্ত নিজেদের দুঃখ দুর্দশা হুযুরেরই পবিত্র খেদমতে আরজ করতাে।
জীব-জন্তু, গাছ-পালা, ইট-পাথর সবই জানে যে, এই নবীই হলেন আমাদের সাহায্যকারী। কেননা ফরিয়াদ বা প্রার্থনা তারই সামনে করা হয়, যিনি সবকিছুর খবর রাখেন।
আল্লাহ সবাই কে বুঝতে সহায়তা কর। আমীন।
_________________
কিতাবঃ ইসলামের মৌলিক চারটি বিষয়।
মূলঃ হাকিমুল উম্মাহ মুফতি ইয়ার খান নঈমী (রহঃ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন