যদি প্রত্যেক জায়গায় হাজের অর্থাৎ বিরাজমান হওয়া এবং প্রত্যেক জায়গা হাতের তালুর ন্যায় দেখা, উলুহিয়াতের দলিল হয়, তাহলে এক, দুই নয়, বরং লক্ষাদিক ইলাহ মেনে নেয়া বাধ্য হয়ে পড়বে।
যেমন কোরআন করীম বলেন,আসফ বিন বরখিয়া হযরত সােলাইমান আলাইহিস সালাম সমীপে আরজ করলেন
قال انا اتيك به ان يرتد اليك طرفك
অর্থাৎ আমি আপনার খেদমতে বিলকিসের সিংহাসন আপনার চোখের পলক মারার আগেই উপস্থিত করবাে। স্মর্তব্য যে, বিলকিসের সিংহাসন ইয়ামন রাজ্যের সাবা' নামক শহরে বিলকিসের প্রাসাদে তালাবদ্ধ আছে। আর তিনি আছেন ফিলিস্তিনে। কারাে থেকে সেই শহরের রাস্তা জিজ্ঞেস করলেন না, আসা-যাওয়ার জন্য কোন গাড়ীও সাথে নিলেন না, আর পলকের পূর্বেই এত ওজনী সিংহাসন বহন করে হযরত সােলাইমান (আলাইহিস সালাম এর খেদমতে উপস্থিত করলেন। এটা হচ্ছে, বনী ইস্রাইলের একজন ওলীর সর্বত্র উপস্থিত হওয়ার প্রমাণ।
কোরআন করীম আরও বলেন
قل يتوفاكم ملك الموت الذى وكل بكم
অথাৎ তােমাদের সবাইকে মৃত্যু দান করে মৃত্যুর ফেরেস্তা, যাকে তােমাদের উপর নিয়ােগ করা হয়েছে। অন্যত্র বলেন- وتوفتهم رسلنا অর্থাৎ তাদের সবাইকে আমার ফেরেস্তারা ওফাত (মৃত্যু) দান করে। অর্থাৎ মালাকুল মাউত এর সাহাৰ্য্যকারী।
দেখুন হযরত মালাকুল মাউত এবং তার সহযােগী ফেরেস্তারা এক মুহূর্তে সহস্র স্থানে হাজার হাজার মৃত্যুবরণকারীর প্রাণ বাহির করে নেয়। অর্থাৎ তােমরা যেখানে থাক না কেন, তাদের সামনে থাকবে, এবং সর্বত্র তাদের হাত পৌছে থাকে।
আরও বলা হয়েছে
انه يراكم هو وقبيله من حيث لا ترونهم
অর্থাৎ সেই ইবলিস এবং তার গােষ্ঠী ও বংশধররা তােমাদের সবাইকে ওখান থেকে দেখে থাকে, যেখান থেকে তােমরা তাকে দেখতে পাও না।
বুঝা গেল যে, ঐ সব বেঈমান লােকদের পরিচালিত করার জন্য এত শক্তি প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়েছে যে, একই মুহূর্তে সমস্ত মানবজাতিকে দেখে থাকে ও তাদের বিপদাপদ এবং মনবাসনা সমূহ সম্বন্ধে পূর্ণ ওয়াকিবহাল। এ জন্যই যখন কোন ব্যক্তি নেক কাজের ইচ্ছা কিংবা মনস্থির করে, তখনই সে তাকে (বিপথে পরিচালিত করে। চাঁদ-সুরজ, তারােকারাজি সর্বত্র বিরাজমান সর্বত্রই একই সময় দেখা যায় এবং সর্বত্রই স্বীয় আলাে দান করে, ফসলাদি বিকশিত করে, নাপাক স্থলকে শুকায়ে পবিত্র করে। যদি হাজের নাজের হওয়া উলুহিয়াতের পরিধি হয়, তবে হযরত মালাকুল মাউত এবং তাঁর সমস্ত সহযােগী ফেরেস্তারা ইলাহ হয়ে যাবে, শয়তান এবং তার সমস্ত বংশধর ইলাহ হয়ে যাবে এবং চাঁদ-সুরজ ও সমস্ত তারকা রাজিকে ইলাহ হিসেবে স্বীকার করতে হবে। হিন্দুরা তাে দশ-বিশটি ইলাহ মানে, কিন্তু এ সব তৌহিদীদের ইলাহ হিন্দুদের চাইতে বেশী হয়ে যাবে।
“অসুবিধা বিদূরণকারী, হাজত পূর্ণকারী, সাহার্যদাতা হওয়া"
এসব বিষয় সমূহও উলুহিয়াতের পরিধি নয়। আল্লাহ তা'য়ালা স্বীয় নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের এবং তাদের তবরুক সমূহকে এর ক্ষমতা দান করেছেন। যেমন কোরআন করীম বলেন, জনাবা মরয়ম (আলাইহিস সালাম) এর প্রসববেদনা যখন শুরু হলাে, তিনি (তখন) জঙ্গলে একাকী ছিলেন, যেখানে তাঁর নিকট না ছিলাে বৃদ্ধা স্ত্রীলােক, না ছিলাে ধাত্রী। এর পূর্বে কখনাে এ কষ্ট দেখেননি ও অনুভবও করেননি।
তাই তিনি ভীত হয়ে বললেন-
ياليتنى مت قبل هذا و كنت نسيا منسيا
অর্থাৎ হায়! আমি এর পূর্বেই যদি মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যেতাম।
এ আরজীতে মহান বিধাতার রহমতের সাগর উতলে উঠলাে এবং আরজী কবুল হলাে
فناداها من تحتها ان لا تحزنى قد جعل ربى تحتك سريا
অর্থাৎ নীচ থেকে আওয়াজ আসলাে, হে, মরয়ম! ভয় করাে না, তােমার প্রভু তােমার কদমের নীচে একটা শীতল পানির প্রস্রবণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। تحتك শব্দ দ্বারা ইঙ্গিতে বুঝা যাচ্ছে,এ প্রস্রবণ জনাবা মরয়ম (আলাইহিস সালাম) এর কদম শরীফের উসিলায় উৎপন্ন হয়েছে।
যেমন জমজমের পানি জনাব ঈসমাইল আলাইহিস সালাম এর পায়ের গােড়ালি শরীফের আঘাত দ্বারা প্রবাহিত হয়েছিলাে।
وهزي إليك بجزع النخلة تساقط عليك رطبا جنيا
(এবং খেজুরের দন্ড যা শুকিয়ে গেছে, নীচের দিকে আন্দোলিত কর, তা অকস্মাৎ পাকা খেজুর ফলাবে।)
ঐ খেজুর সমূহ খেয়ে এ পানি পান করে নাও। তােমার বিপদ সহজ হয়ে যাবে এবং সহজেই সন্তান ভূমিষ্ট হয়ে যাবে।
হযরত মরয়ম (আলাইহিস সালাম) এর বিপদ বিদূরণ অল্প খেজুর এবং পানি দ্বারা করা হয়েছে। কিন্তু সেই খেজুর তার হাত থেকে এবং পানি তাঁর পা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
এখানে বলা হয়েছে যে, ওলীর হাত লাগার দরুন শুকনা খেজুরের ডালি তৎক্ষণাৎ সবুজ বর্ণ হয়ে ফল ফলাতে পারে এবং তৎক্ষণাৎ পাকিয়ে দিতে পারে এবং এ ফল দ্বারা সমস্ত বিপদ আপদ সহজ হয়ে যেতে পারে। অতএব যদি আমাদের মৃত আত্মা সমূহের উপর কোন ওলীর সুদৃষ্টি পড়ে, তবে এ আত্মা তরতাজা হয়ে মারফতের ফল-ফুল দিতে পারে এবং এর দ্বারা সমস্ত বিপদ-আপদ সহজ হয়ে যেতে পারে।'
কোরআন মজীদ আরও বলেন, ফেরাউন নিমজ্জিত হওয়ার দিন জিব্রাইল আলাইহিস সালাম একটি ঘােড়ার আরােহী ছিলেন। এ ঘােড়ার খুরের আঘাতে মরু ভূমি অঞ্চলে উদ্ভিদ সষ্টি হয়েছিল। যাদুকর সামরী (হযরত মুছা আলাইহিস সালাম এর সম সাময়িক বিখ্যাত যাদুকর) ঐ ঘােড়ার খুরের নিছের কিছু মাটি নিয়ে নিল। যখন মুছা আলাইহিস সালাম তৌরাত কিতাব গ্রহণ করার জন্য তুর পাহাড়ে তশরীফ নিলেন এবং সেখানে কিছু দেরী হল, তখন সামরী' সােনা দিয়ে একটি গাে বাচুর তৈরী করে তার মুখে এ মাটি ঢেলে দেয়, ফলে তা জিন্দা প্রাণী হয়ে চিঙ্কার করতে শুরু করলাে, এবং ঈসরাইলীরা একে পুজা করতে লাগলাে।
যেমন বলা হচ্ছে
فقبضت قبضة من اثر الرسول فنبذتها و كذالك سولت لى نفسى অর্থাৎ আমি হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এর ঘােড়ার কদমের চিহ্ন থেকে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে নিলাম, তা আমি এ প্রাণীর মুখে ঢেলে দিই, আমার অন্তর ইহা বলেছিলাে। এ আয়াত এ কথাই বলছে যে, “প্রভূর নৈকট্য প্রাপ্তদের তবরুক সমূহ জীবনহীনকে জীবিত করতে পারে। এ সম্বন্ধে মূলতঃ কিছু রহস্য রয়েছে যে, জিব্রাইল আলাইহিস সালাম লেগেছিল কাষ্ঠের সাথে, সেটা লেগেছিলাে ঘােড়ার পিঠের সাথে, ঘােড়ার খুর লেগেছিল মাটির সাথে,সেই মাটি মূর্তির মুখে পৌছে একে জীবন দান করল। মাটিতো তার স্বীয় কার্য সম্পাদন করেছে; কিন্তু সােনা ছিল বাস্তবিক পক্ষে ফেরাউনীদের। এ কারণে এর আওয়াজ দ্বারা মানবতার হেদায়াত হয়নি বরং গােমরাহ হয়েছে, যেমন বে-দ্বীন আলেমের ওয়াজ দ্বারা মানুষ গােমরাহ হয়ে থাকে। এক আয়াতে বলা হয়েছে যে, মদিনা মনােয়ারার মাটি মুছিবত বিদূরণকারী এবং আরােগ্যেদানকারী। এ জন্যেই ইহাকে ‘খাকে শেফা' (আরােগ্যের মাটি) বলা হয়। কারণ এখানকার মাটির অনুসমূহ জনাবে মােস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র জুতাে মােবারক চুমাে খেয়ে ছিল।অতএব, যদি মছিবত বিদূরণ করা উলুহিয়াতের পরিধি হয়!
তবে জনাব মিরয়ম (আলাইহিস সালাম) এবং হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামও ইলাহ হওয়া উচিত।
এমনকি চিকিৎসকদের শিরাব, মদক, বড়ি সমূহ, জঙ্গলের (গাছের) মূল ইত্যাদি ইলাহ হয়ে যাবে। শরবতে ফরয়াদরস, হুবে মিসকীন-ই- নওয়াজ, হুবে শেফা, হুবে দাফেয়ে ফরযে কুশা খুলিয়া ইত্যাদি সব ইলাহ হয়ে গেছে- নাউযুবিল্লাহ মিনহা।
সৃষ্টিকর্তা, মালিক, ও চিরস্থায়ী হওয়াঃসৃষ্টি কর্তা, মালিক ও চিরস্তায়ী হওয়া-
এ সমস্ত বিষয়াদিও উলুহিয়াতের পরিধি নয়।কেননা যখন কোন বান্দা সৃষ্টি হয়নি, তার মালিকত্ব গুনটাও প্রকাশ পায়নি; তখনও তিনি ইলাহ্ ছিলেন। জান্নাত এবং ওখানকার নেয়ামত সমূহ জান্নাতি লােক, এভাবে দোযখ সমূহ, ওখানকার আযাব, এবং দোযখীরা তথায় পৌছে সবাই চিরস্থায়ী হয়ে যাবে। যেমন মহান প্রভূ বলেন- اكلها دائم
তার ফল সর্বদা বিদ্ধমান আছে,
خالدين فيها ابدا
জান্নাতী ও জাহান্নামীরা তথায় স্ব স্ব স্থানে সর্বদা থাকবে।
তবে এ থেকে অপরিহার্য হয়ে পড়ে যে, প্রত্যেক জান্নাতী ও দোযখী ইলাহ হয়ে যায়। (নাউযুবিল্লাহ)
একটি ঘটনা
বর্তমান যুগের একজন একেশ্বরবাদী আলেম কোন এক স্থানে ওয়াজ করার উদ্দেশ্যে তশরীফ নিলেন এবং ওয়াজের মধ্যে কলেমা’ই তায়্যেবা' এর অর্থ এমনি করলেন- নেই কোন সন্তানদাতা, নেই কোন রক্ষক, নেই কোন অসুবিধা বিদূরণ কারী, নেই কোন হাজতপূর্ণকারী আল্লাহই একমাত্র। ঘটনাক্রমে মাহফিল আয়ােজনকারী সুন্নী ছিলেন। তাঁর এ ওয়াজে দাওয়াতকারী মর্মাহত এবং আশ্চার্যান্নিত হলেন। পরদিন সকালে মৌলভী সাহেবকে নজরানা (টাকা পয়সা) দেয়ার জন্য - আসলেন না। শেষ পর্যন্ত মৌলভী বাধ্য হয়ে মাহফিল আয়ােজনকারীর নিকট এসে নজরানা প্রার্থনা করলেন। তখন তিনি বললেন মৌলভী সাহেব রাতের ওয়াজ কি ভুলে গেছেন, প্রত্যুষেই কি শির্কে গ্রেপ্তার হয়ে গেলেন। لا اله নেই কোন ভাড়া , প্রদানকারী,لا اله নেই কোন নজরদাতা،الا الله একমাত্র আল্লাহই।
আপনি আমার কাছে কেন নজরানা প্রার্থনা করছেন? প্রভূর নিকট আবেদন করুন।
যাই হােক, ইলাহ শব্দের এ অর্থ এবং উল্লেখিত বিষয়াদি উলুহিয়াতের পরিধি . হওয়াটা একেবারেই ভিত্তিহীন।
_________________
কিতাবঃ ইসলামের মৌলিক চারটি বিষয়।
মূলঃ হাকিমুল উম্মাহ মুফতি ইয়ার খান নঈমী (রহঃ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন