ইলমের ফযীলত

 

ইলমের ফযীলত


** প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন যে,আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির জীবন উজ্জ্বল করুক,যে আমার কথা শুনেছে; অত:পর তা স্বরণ রেখেছে এবং পরিপূর্ণভাবে সংরক্ষন করছে আর অপরের নিকট তা পৌঁছে দিয়েছে। অনেক।জ্ঞান বহনকারী লোক এমন ব্যক্তির নিকট তা পৌঁছে দেয়,যে তার অপেক্ষা জ্ঞানী ও বিজ্ঞ।( তিরমিযী শরীফ,যুগ জিজ্ঞাসা,পৃ:- ৩৯)।


** তাবেয়ী হযরত কাসীর ইবনে কায়েস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি দামেশকের মসজিদে আবুদ্দারদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে বসা আছি, এমন সময় তার নিকট একজন লোক এসে পৌঁছল এবং বলল," হে আবুদ্দারদা! আমি সুদূর মদীনায়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে আপনার নিকট শুধু একটি হাদীসের জন্য এসেছি; এছাড়া অন্য কোন প্রয়োজনে আসিনি।শুনেছি,আপনি নাকি তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করে থাকেন।তখন হযরত আবুদ্দারদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, (হ্যাঁ) আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি ; তিনি বলেছেন,"যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষন করার উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করেছে,আল্লাহ তায়ালা তার দ্বারা তাকে বেহেশতের পথ সমূহের একটি পথে পৌঁছিয়ে দেন এবং ফেরেশতাগণ ইলম অন্বেষনকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা পেতে দেন। এতদ্ব্যতীত যারা আলেম তাদের জন্য আসমানে ও যমীনে যারা আছেন সকলেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দু'আ করে থাকেন।এমনকি মাছসমূহ পানির মধ্যে থেকেও ( ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন)। আলেমগণের ফযীলত (ইলেমহীন) আবেদদের ( সাধকদের) উপর, যেমন - পূর্ণ চন্দ্রের ফযীলত সমস্ত তারকারাজির উপর এবং আলেমগণ হচ্ছেন নবীগণের ওয়ারিশ।নবীগণ কোন দীনার বা দেরহাম মীরাস ( উত্তরাধিকার) রেখে যান না,তাঁরা মীরাসরুপে রেখে যান শুধু ইলম।

সুতরাং যে ব্যক্তি ইলম গ্রহন করেছে সে পূর্ণ

অংশ গ্রহন করেছে।(মুসনাদে আহমদ,

তিরমিযী,আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও

দারেমী শরীফ,মিশকাত শরীফ, হাদীস নং-

২০২,পৃ:- ৭৪)।


** হযরত ইমরান ইবনে হিত্তান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,একবার আমি হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে একখানা কাল চাদর জড়ানো অবস্থায় একাকী মসজিদে পেলাম।তখন বললাম,হে আবু যর! এ একাকিত্ব কীরুপ! তিনি

বললেন,আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি," অসৎ সঙ্গ

অপেক্ষা একাকী থাকা অধিক উত্তম এবং

একাকী বসে থাকার চাইতে সৎ সঙ্গ উত্তম।

নিশ্চুপ থাকা থেকে ভাল কথা শিক্ষা দেয়া

উত্তম এবং খারাপ কিছু শিক্ষা দেয়া অপেক্ষা নীরব থাকা উত্তম।( বায়হাকী শুআবুল ঈমান,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৪৬৫০,

পৃ:- ৬৮৩)।


** হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা

রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইরশাদ করেন," আমি

বললাম ইয়া রসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম! যখন আমি আপনাকে দেখি তখন আমার অন্তর আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে যায় এবং আমার চোখ জুড়িয়ে যায়। হুযুর,আমাকে প্রত্যেক বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান দিন।তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন," প্রতিটি বস্তু পানি থেকে উৎপত্তি। আমি আরয করলাম,হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে সে বিষয়ে জানিয়ে দিন যা আমি আপন করে নিলে জান্নাত পেয়ে যাব।রসূল সাল্লাল্লাহু।আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন,(মানুষদের) খাবার খাওয়াও এবং সালামের প্রচলন কর।আর আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা কর। রাতে নফল নামায পড় যখন মানুষ ঘুমায়,তাহলে তুমি নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে ইমাম আহমদ,খন্ড - ৩য়,

হাদীস নং- ৭৯১৯,পৃ:- ১৭৪,রমযানের ফযীলত,পৃ:- ৩৬৩)।


** হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," নি:সন্দেহে আল্লাহ তায়ালা,তাঁর ফেরেশতারা, আসমান ও জমীনের অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের পিপীলিকা এবং সমুদ্রের মাছ সেই শিক্ষকের জন্য রহমত কামনা করে,যে মানুষকে কল্যানকর জিনিস শিক্ষা দেয়। (ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ৩২)।


** রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেন,ইলমের মজলিস হাজির হওয়া

হাজার রাকা'আত নফল নামায পড়া অপেক্ষা

উত্তম।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৫৮)।


** হযরত ওয়াসেলা ইবনে আসকা'

রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।বলেছেন," যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষন করেছে এবং তা লাভ করতে পেরেছে,তার জন্য দুই গুন পারিশ্রমিক ( সওয়াব) রয়েছে। আর যদি তা লাভ করতে নাও পারে, তাহলেও তার জন্য একগুন পারিশ্রমিক রয়েছে।( দারেমী শরীফ,

মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২৩৬,পৃ:- ৭৮)।


** হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা

বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লামকে বলতে শুনেছি,তিনি বললেন,"

আল্লাহ তায়ালা আমার নিকট ওহী পাঠিয়েছেন, যে ব্যক্তি ইলম তলবের উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করবে,তার জন্য আমি জান্নাতের পথ সহজ করে দিব এবং যে

ব্যক্তির দুই চক্ষু আমি নিয়ে গিয়েছি,তাকে

এর পরিবর্তে আমি জান্নাত দান করব।ইবাদত

অধিক হওয়া অপেক্ষা ইলম অধিক হওয়া

উত্তম।দ্বীনের ( তথা ইলম ও আমলের) আসল

হচ্ছে শোবা - সন্দেহের জিনিস হতে বেঁচে

থাকা।( বায়হাকী শুআবুল ঈমান, মিশকাত

শরীফ,হাদীস নং- ২৩৮,পৃ:- ৭৯)।


** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস

রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন," রাতের কিছু

সময় ইলমের আলোচনা করা ( ইবাদতে) পূর্ণ

রাত্র জাগরণ অপেক্ষা উত্তম।( দারেমী

শরীফ,মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২৩৯,

পৃ:- ৭৯)।

__________________

ফয়যানে শরিয়ত ও মারফত (আমলের ভান্ডার)

লেখক : মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন