যিকিরের ফযীলত


যিকিরের ফযীলত


** যে ব্যক্তি নৌকায় আরোহনের সময় "

বিছমিল্লাহ" এবং " আল হামদু লিল্লাহ" পাঠ

করে নেবে যতক্ষন পর্যন্ত সে তাতে সাওয়ার

থাকবে,তার জন্য শুধু নেকী আর নেকী লিখা

হবে।( তাফসীরে নঈমী,খন্ড - ১ম,পৃ:- ৪২,

বিসমিল্লাহর ফযীলত,পৃ:- ২৪)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," সাত ব্যক্তি :- তাদের আল্লাহ তায়ালা ছায়া দিবেন নিজের (আরশের) ছায়ায় - যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না।

১/ ন্যায়পরায়ন শাসক।

২/সে যুবক যে বর্ধিত হয়েছে আল্লাহর এবাদতে।

৩/ সে ব্যক্তি,যার অন্তর লেগে থাকে মসজিদের সাথে - যখন সে সেখান থেকে বের হয় যতক্ষন না ফিরে আসে সেখানে।

৪/ সে দুই ব্যক্তি,যারা একে অন্যকে ভালবাসে আল্লাহর ওয়াস্তে,উভয়।মিলিত হয় তার জন্য এবং উভয় পৃথক হয় তার জন্য।

৫/সে ব্যক্তি,যে নির্জনে স্বরণ করে আল্লাহকে; আর অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে তার দুই চক্ষু,৬/ সে ব্যক্তি,যাকে কোন সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী আহবান করে,আর সে বলে,আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং

 ৭/সে ব্যক্তি,যে দান করে কোন দান,আর গোপন করে তা,এমনকি তার বাম হাত জানেনা তার ডান হাত কী দান করে।( বুখারী ও মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৬৪৯,পৃ:- ১৩৬)।


** হযরত মুহিউদ্দীন ইবনে আরাবী

রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,আমার নিকট

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস, " যে ব্যক্তি সত্তর হাজার বার " লা - ইলাহা ইল্লাল্লাহ " পড়বে,আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন"। যখন পৌঁছে,তখন আমি এই কলেমা সত্তর হাজার বার পড়েছি। একদিন এক দাওয়াতে গেলাম - সেখানে একজন সাহেবে কাশফ যুবক উপস্থিত ছিলেন।তাঁর কাশফ সম্পর্কে সবাই অবহিত। খাবার গ্রহণের সময় যুবকটি কাঁদতে লাগলো।আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কান্নার কারণ কি? তিনি বললেন - আমি আমার পিতা - মাতাকে কবরে দেখি যে,তাঁদের উপর আযাব হচ্ছে,তাদেরকে।আযাবরত অবস্থায় দেখে কাঁদতেছি।ইবনে।আরাবী বলেন,আমি ঐ সময় মনে মনে পঠিত সত্তর হাজার বার কলেমা যুবকের পিতা - মাতাকে দান করে দিলাম। সাথে সাথে যুবক হাসতে লাগলেন।আমি তাঁর হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন,আমার পিতা - মাতার আযাব দূরিভূত হয়েছে,তারা এখন আযাব মুক্ত।

হযরত মুহিউদ্দীন ইবনে আরাবী রহমাতুল্লাহি

আলাইহি বলেন,আমার কাছে ঐ হাদীস

শরীফের বিশুদ্ধতা এই যুবকের কাশফের

দ্বারা প্রমাণিত হল।( শরহে শেফা আরবী,খন্ড ১ম,পৃ:- ৩৯৯,বিষয় ভিত্তিক কারামাতে আউলিয়া,কৃত: মাওলানা মুহাম্মাদ ওসমান গনী,পৃ:- ১৬১ - ১৬২)।


** নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন,"যে ব্যক্তি একবার লা -

ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়বে,তার মুখ থেকে একটি সবুজ পাখি বের হয়ে যাবে।তার দুটি সাদা পাখা হবে। ইয়াকুত ও মুক্তা দ্বারা সেগুলো সজ্জিত হবে। পাখিটি আকাশে উড়বে। তারপর আরশের নিচে মৌমাছির মত তার গুঞ্জন শোনা যাবে। তাকে বলা হবে, শান্ত হও; সে বলবে আমি শান্ত হব না।

আমাকে যে পাঠ করেছে,তাকে মাফ না করা

পর্যন্ত আমি শান্ত হব না।তারপর তার পাঠকারীকে মাফ করে দেয়া হবে। এরপর

সেই পাখির সত্তরটি ঠোট বানানো হবে।

কিয়ামত পর্যন্ত সে তার পাঠকের জন্য ক্ষমা

প্রার্থনা করবে।কিয়ামতের দিন সেই পাখিটি এসে তার পাঠকের হাত ধরে টেনে পথ দেখিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

(তাম্বিহুল গাফিলীন,পৃ:- ৩৩৪)।


** হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,যিকিরের মজলিসে বসা হাজার

রাকা'আত ( নফল) নামায পড়ার চেয়ে উত্তম

ইলমের মজলিসে গমন হাজার রোগীর কুশল

জানার চেয়ে এবং হাজার জানাযার পিছনে

যাওয়ার চেয়ে উত্তম।একজন প্রশ্ন করলো,

হুজুর; কুর'আন তিলাওয়াতের চেয়েও কি উত্তম? তিনি বললেন,কুর'আন তিলাওয়াতের উপকারীতা এটি ইলম বলেই।" ( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ৫৫)।


** যে ব্যক্তি প্রত্যহ ১০০ বার - " লা

ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহদাহু লা শারিকালাহু

লাহুল মূলকু ওলাহুল হামদু ওহুয়া 'আলা কুল্লি

শাইয়িং ক্বদির।"

এই কালেমা পাঠ করবে,তা তার জন্য দশটি

গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব হবে।তার জন্য ১০০ নেকী লেখা হবে।তার ১০০ গুনাহ মাফ করা হবে। সে সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত

শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকবে। তার

আমল থেকে উত্তম অন্য কারও আমল হবে না, সে ব্যক্তি ব্যতিত; যে ১০০ বারের অধিক এই কলেমা পাঠ করবে।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ২৭২)।


** যখন বান্দা " আলহামদু লিল্লাহ " বলে,তখন তা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থিত

খালি জায়গাকে পরিপূর্ণ করে দেয়।এরপর

যখন দ্বিতীয় বার বলে,তখন সপ্তম আকাশ

থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন পৃথিবী পর্যন্ত

সবকিছু পরিপূর্ণ করে দেয়।এরপর যখন তৃতীয় বার বলে,তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

( বান্দা তুমি) চাও,তুমি পাবে।( ইহইয়াউল

উলুমুদ্দীন,পৃ:- ২৭৩)।


** হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম এর দরবারে বসে নিবেদন

করলাম,ধনীরা সব সাওয়াবে আমাদেরকে

পেছনে ফেলে দিয়েছে। আমরা যা বলি,তারাও তা বলে; কিন্তু খরচ করে তারা,আমরা করিনা। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,আমি তোমাকে এমন আমল বলে দিচ্ছি,যা তুমি করলে;তোমার অগ্রগামীকে ধরে ফেলবে এবং তোমার পশ্চাদগামীর উপর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হবে। তবে যে তোমার কথা মত কথা বলে, তার কথা ভিন্ন।তুমি প্রত্যেক নামাযের পর ৩৩ বার ছুবহানাল্লাহ,৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ,এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়ে নেবে।

(ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ২৭৪)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি প্রত্যেক

নামাযের পর ৩৩ বার ছুবহানাল্লাহ,৩৩ বার

আলহামদু লিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার

বলেছে, এই হলো মোট ৯৯ বার; তারপর শত পূর্ন করার জন্য বলেছে - " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু

ওহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মূলকু ও লাহুল

হামদু ওহুয়া 'আলা কুল্লি শাইয়িং ক্বদীর।"

তার সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে,যদিও তা

সমুদ্রের ফেনার মত ( অধিকও) হয়।( মুসলীম

শরীফ, মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৯০৫,পৃ:- ১৬৮)।


** হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু

আনহু বলেন,একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা

হল,কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট

বান্দাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ ও অধিক

মর্যাদাবান হবে? তিনি বললেন," আল্লাহর

যিকিরকারী পুরুষ ও নারী। আবার তাঁকে

জিজ্ঞাসা করা হল,ইয়া রসূলাল্লাহ! আল্লাহর

রাস্তায় জিহাদকারী অপেক্ষাও কি? তিনি

বললেন,হ্যাঁ; যদি সে আপন তরবারী দ্বারা

কাফির ও মুশরিকদের কাটে,এমনকি তার

তরবারী ভেঙ্গে যায়, আর সে নিজে রক্তাক্ত

হয় - তা থেকেও আল্লাহর যিকিরকারী

শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান।( আহমদ ও তিরমিযী

শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২১৭৩,

পৃ:- ৩৩১)।


** হযরত মু'আয ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,কোন বান্দা এমন কোন আমল করতে পারেনা,যা তাকে আল্লাহর যিকির অপেক্ষা আল্লাহর আযাব থেকে অধিক রক্ষা করতে পারে।( মালেক, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২১৭৬,পৃ:- ৩৩২)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," আমি আমার ছুবহানাল্লাহ,

আলহামদু লিল্লাহ,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার - বলা, সমগ্র পৃথিবী অপেক্ষাও আমার নিকট প্রিয়তর।( মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২১৮৭,পৃ:- ৩৩৪)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি দৈনিক একশত

বার বলবে,ছুবহানাল্লাহি ও বিহামদিহী -

অর্থাৎ,আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর

প্রশংসার সাথে,তার গুনাহ সমূহ মাফ করা

হবে; যদিও তা সমুদ্র - ফেনার চেয়ে বেশী

হয়।( বুখারী ও মুসলীম শরীফ,মিশকাত

শরীফ,হাদীস নং- ২১৮৮,পৃ:- ৩৩৪)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি সকাল - সন্ধ্যায় একশত বার বলবে,ছুবহানাল্লাহি ও

বিহামদিহী - কিয়ামতের দিন তার এটা

অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বাক্য নিয়ে কেউ উপস্থিত

হতে পারবে না; শুধু সেই ব্যক্তি ব্যতীত,যে

এর অনুরুপ বা এর অপেক্ষা অধিকবার বলবে।

(বুখারী ও মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,

হাদীস নং- ২১৮৯,পৃ:- ৩৩৫)।


** হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন,যে ব্যক্তি বলবে,"

ছুবহানাল্লাহিল 'আযিম ও বিহামদিহী,"অর্থাৎ

মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর

প্রশংসার সাথে।" তার জন্য বেহেশতে একটি

খেজুর গাছ রোপন করা হবে।( তিরমিযী

শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২১৯৬,

পৃ:- ৩৩৬)।


** আমর ইবনে শোআইব তাঁর পিতার

মাধ্যমে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে,তাঁর দাদা বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি সকালে একশত বার " ছুবহানাল্লাহ" বলবে,বিকালে একশত বার বলবে; সে তাঁর মতো হবে - যে একশত হজ্জ্ব করেছে।যে ব্যক্তি সকালে একশত বার ও বিকালে একশত বার " আলহামদু লিল্লাহ" বলবে,সে তাঁর মতো হবে; যে একশত ঘোড়ায় একশত মুজাহিদ রওয়ানা করে দিয়েছে।

যে ব্যক্তি সকালে একশত বার ও বিকালে

একশত বার " লা - ইলাহা ইল্লাল্লাহ! বলবে,

সে তাঁর মতো হবে; যে ইসমাঈল বংশীয় একশত দাস মুক্ত করেছে এবং যে সকালে একশত বার ও বিকালে একশত বার " আল্লাহু আকবার" বলবে, সে দিন তার অপেক্ষা অধিক সাওয়াবের কাজ আর কেউ করতে পারবে না - অবশ্য সে ব্যক্তি ব্যতীত,যে এরকম বলেছে বা এটা অপেক্ষা বেশী বলেছে।(তিরমিযী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২২০৪,পৃ:- ৩৩৭)।


** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি পাতা শুষ্ক গাছের নিকট পৌঁছলেন এবং আপন লাঠি দ্বারা তাকে আঘাত করলেন।এতে তার পাতা ঝরতে লাগলো। তখন তিনি বললেন," আলহামদু

লিল্লাহ" "ছুবহানাল্লাহ" ও " লা - ইলাহা

ইল্লাল্লাহু ওল্লাহু আকবার "- বান্দার।গুনাহকে ঝরিয়ে দেয় - যেভাবে ঐ গাছের পাতা ঝরছে।( তিরমিযী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২২১০, পৃ:- ৩৩৭)।

__________________

ফয়যানে শরিয়ত ও মারফত (আমলের ভান্ডার)

লেখক : মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন