আযান দেওয়া ও এর জবাবের ফজীলত

 

আযান দেওয়া ও এর জবাবের ফজীলত



** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি সাওয়াবের নিয়তে সাত বৎসর আযান দিবে,তার জন্য দোযখের আগুন হতে মুক্তি নির্ধারিত।( তিরমিযী,আবু দাউদ ও ইবনে মাযাহ শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৬১৩,পৃ:- ১৩২)।


** হযরত ইবনে ওমর রদ্বিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে,রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে বার

বছর আযান দেয় তার জন্য জান্নাত

নির্ধারিত হয়ে যায় এবং তার জন্য লেখা হয় আযানের বিনিমিয়ে প্রত্যহ ( প্রত্যেক ওয়াক্তে) ষাট নেকী,আর প্রত্যেক ইকামতের বিনিময়ে ত্রিশ নেকী। (ইবনে মাযাহ শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৬২৭,পৃ:- ১৩৩)।


** এক হাদীসে আছে,যে এক মসজিদে

সাত বছর ইমামতি করে তাঁর জন্য জান্নাত

ওয়াজিব।আর যে চল্লিশ বছর আযান দেয়,সে

বিনা হিসাবে বেহেস্তে প্রবেশ করবে।

( ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৫২)।


** মদিনার তাজেদার সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খুশগাওয়ার

ফরমান হচ্ছে," সাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে

যে আযান দেয়,সে ঐ শহীদের মতো যে রক্তে

রঞ্জিত এবং যখন সে মৃত্যুবরণ করবে কবরের

মধ্যে তার শরীরে পোকা ধরবে না।( আত

তারগীব ওয়াত তারহীব,খন্ড - ১ম,পৃ:- ১১২,

নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ১০৪)।


** সুলতানে মদীনা সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম এর ফরমানে বা - কারীনা

হচ্ছে,যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযান ঈমানের ভিত্তিতে সাওয়াবের নিয়তে দিল,তার যে সব গুনাহ পূর্বে সংঘটিত।হয়েছে তা ক্ষমা হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের ভিত্তিতে সাওয়াবের নিয়্যতে নিজের সাথীদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ইমামতি করবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।( কানযুল উম্মাল,খন্ড - ৭ম,হাদীস নং- ২০৯০২,পৃ:- ২৮৭,নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ১০৫)।


** হাদীসে পাকের মধ্যে রয়েছে,আযান

প্রদানকারীর জন্য প্রত্যেক বস্তু ক্ষমা প্রার্থনা করে এমনকি সমুদ্রের মাছেরাও।

মুয়াযযিন যে সময় আযান দেয় তখন

ফিরিস্তাগণ তার ( সাথে সাথে আযানের)

পূণরাবৃত্তি করতে থাকে,আর যখন আযান শেষ হয়ে যায় - তখন ফিরিস্তাগণ ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। যে ব্যক্তি

মুআযযিন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তার 

কবরের আযাব হয়না এবং মুআযযিন

মৃত্যুকালিন যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেয়ে যায়।

কবরের কঠোরতা এবং সংকীর্ণতা হতেও

নিরাপদ থাকে।( ইমাম গাযযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কৃত:- সূরা ইউসুফের তাফসীরের সার সংক্ষেপ,অনুদিত - পৃ:-২১,নামাযের আহকাম( হানাফী),পৃ:-১০৫ -১০৬)।


** হযরত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন,যে ব্যক্তি

সরলান্তকরণে আযানের উত্তর দিবে,সে

বেহেস্তে যাইবে।( মুসলীম ও নাসায়ী শরীফ,

তরিকুল ইসলাম - প্রথম ভাগ, পৃ:- ১৯৩)।


** মদীনার তাজদার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা ইরশাদ ফরমান,"হে মহিলাগণ! যখন তোমরা বিলাল।রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে আযান ও ইকামাত দিতে শুনবে,

তখন সে যেভাবে বলে তোমরাও অনুরুপ বলবে,কেননা; আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা তোমাদের জন্য প্রত্যেক শব্দের বিনিময়ে এক লাখ নেকী লিখে দেবেন,এক হাজার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন এবং এক।হাজার গুনাহ মুছে দেবেন।" মহিলাগণ এটা শুনে আরয করলেন,এটা তো মহিলাদের জন্য!

পুরুষদের জন্য কি রয়েছে? বললেন," পুরুষদের জন্য এর দ্বিগুন।"( কানযুল উম্মাল,খন্ড - ৭ম,পৃ:- নামাযের আহকাম (হানাফী),পৃ:- ১০৬)।


** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত,হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,যখন তোমরা মুআযযিনের আযান শুনবে তখন সে যা বলবে তার অনুরুপ বলবে। অত:পর আমার উপর দুরুদ পাঠ করবে। কারন,যে আমার উপর একবার দুরুদ পাঠ করবে - আল্লাহ তার উপর দশবার শান্তি( রহমত) বর্ষণ করবেন।

তারপর আমার জন্য আল্লাহর নিকট ওসীলা প্রার্থনা করবে। আর তা হল বেহেস্তের একটি সম্মানিত স্থান যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজন ব্যতিত অন্য কারো জন্য নয়।আমি আশা করি,ওই বান্দা আমিই হব।

যে আমার জন্য ওসীলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হবে।( মুসলীম শরীফ,যুগ জিজ্ঞাসা,পৃ:- ৩৩৭)।


** ফাতওয়ায়ে শামীর প্রথম খন্ড " আল আযান" শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে - আযানের প্রথম শাহাদত (অর্থাৎ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ) বলার সময় " সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ" বলা মুস্তাহাব এবং দ্বিতীয় শাহাদত বলার সময় " কুররতা আইনি বিকা ইয়া রসূলাল্লাহ" বলবেন।

অত:পর নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ স্বীয় চোখদ্বয়ের উপর রাখবেন এবং বলবেন " আল্লহুম্মা মাত্তি'নি বিছ ছাম'য়ি ওল বাচর" এর ফলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওকে নিজের পিছনে পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। অনুরুপ কানযুল ইবাদ ও কুহস্থানী গ্রন্থে বর্নিত আছে।ফাতওয়ায়ে সুফিয়াতেও তদ্রুপ উল্লেখিত আছে। কিতাবুল ফিরদাউছে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আযানে "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ " শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বন করে,আমি ওকে আমার পিছনে পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাবো এবং ওকে বেহেশতের কাতারে অন্তর্ভূক্ত করবো।( শামী,কানযুল ইবাদ,ফাতওয়ায়ে সূফিয়া,কিতাবুল ফিরদাউস,কুহস্থানী,বাহরুর রায়েক,শরহে ইলিয়াছ ও জামেউর রমুজ। এবং জা'আল হক,প্রথম খন্ডের দ্বিতীয়াংশ,

পৃ:-২৪৭ - ২৪৮,তরীকুল ইসলাম - প্রথম ভাগ,পৃ :- ১৯২,ও যুগ জিজ্ঞাসা,পৃ:- ১৮৪) ইত্যাদি।


** হযরত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলিয়াছেন,যদি কেহ নিম্ন লিখিত

দোয়া ( আযানের পর) পড়ে, আমি তাহার জন্য কিয়ামতে শাফায়াত করিব।

----------

আযানের পর দোয়া :- " আল্লহুম্মা রব্বা

হাজিহিদ দা'ওয়াতিত তা - ম্মাতি,ওছ

ছলাতিল ক্বয়িমাতি,আতি ছায়্যিদিনা

মুহাম্মাদানিল ওচ্বিলাতা ওল ফাদ্বিলা,

ওদ্দারাজাতার রফি'আহ,ওব ’আছহু

মাক্বামাম মাহমুদানিল্লাযি ও 'আত্তাহ,ওরজুক্বনা শাফা'আতাহু ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ,ইন্নাকা লা তুখলিফুল মি'আদ"।

(আশিয়্যাতুল লুমআত,তরিকুল ইসলাম - প্রথম ভাগ,পৃ:-১৯৩)।

__________________

ফয়যানে শরিয়ত ও মারফত (আমলের ভান্ডার)

লেখক : মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন