দান ও সদকায়ে জারিয়ার ফযীলত

 

 দান ও সদকায়ে জারিয়ার ফযীলত


** হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হইতে রেয়ায়েত করিয়াছেন,তিনি ফরমাইয়াছেন," কোন লোকের নিজ জীবনে সুস্থাবস্থায় এক দিরহাম সদকাহ (দান) অন্তিম সময়ের শত দেরহাম সদকাহ করার চেয়ে বেশী উৎকৃষ্ট। (আবু দাউদ শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ১৭৭৬,পৃ:- ২৮৩)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হইতে রেওয়ায়েত করিয়াছেন," বান্দা বলে আমার মাল,আমার মাল; তাহার।শুধু তিন রকমের মাল দ্বারাই উপকার হয়।যাহা খাইয়া শেষ করিয়াছে অথবা পরিধান করিয়া

পুরাতন করিয়া ফেলিয়াছে, অথবা দান করিয়া পরকালের জন্য জমা করিয়াছে। এবং উহা ভিন্ন যাহা সব চলিয়া যাইবে,অন্যের জন্য ছাড়িয়া যাইবে।( মুসলীম শরীফ,তরীকুল

ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,পৃ:- ২৭৮)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম হইতে রেওয়ায়েত করিয়াছেন, তিনি

ফরমাইয়াছেন," দুই ব্যক্তির মধ্যে সুবিচার

করা সদকাহ( দান), কাউকে জন্তুর উপর

আরোহন করিতে সাহায্য করা অথবা তাহার

আসবাব উঠাইয়া দেওয়া সদকাহ এবং ভাল

কথা সদকাহ।যেই কদম নামাযের জন্য চলিবে, উহাতেও সদকাহ। রাস্তা হইতে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করাও সদকাহ।( বুখারী ও মুসলীম শরীফ,তরীকুল ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,পৃ:- ২৮২)।


** হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করিয়াছেন যে,হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমাইয়াছেন, যে মুসলমান বৃক্ষ রোপন করে অথবা ফসল বপন করে উহা হইতে কোন লোক অথবা পাখী অথবা চতুষ্পদ জন্তু কিছু খাইয়া থাকিলে এই সবই উহার জন্য সদকাহ হইবে।( বুখারী ও মুসলীম শরীফ,তরীকুল ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,পৃ:- ২৮২)।


** হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন,"

নিজের ভাইয়ের সাথে মুছকি হাসা সদকাহ

( দান),নেক কাজের হুকুম করা সদকাহ; খারাপ কাজ হইতে বিরত রাখাও সদকাহ,পথ

ভোলাকে পথ বাতাইয়া দেওয়াও সদকাহ;

দুর্বল দৃষ্টি সম্পন্ন লোকের সাহায্য করাও

সদকাহ।রাস্তা হইতে পাথর,কাঁটা হাড্ডী দূর

করাও সদকাহ।নিজের ডোলছি হইতে নিজের

ভাইয়ের ( দ্বীনী ভাই) ডোলছিতে পানি

ঢালিয়া দেওয়াও সদকাহ।( তিরমিযী শরীফ,

তরীকুল ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,পৃ:- ২৮২)।


** হযরত হাসান বছরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম হইতে রেওয়ায়েত করিয়াছেন,হুযুর

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ

করিয়াছেন, আল্লাহ তায়ালা ফরমাইয়াছেন,"

হে আদম সন্তান! নিজের অর্থ ভান্ডার হইতে

আমার নিকট কিছু জমা দাও,উহা আগুনে

জ্বলিবে না,পানিতে ডুবিবে না; কেহ চুরি

করিয়া নিতে পারিবে না। তোমাকে আমি

পুরা দিয়া দিব ঐ সময় - যখন তুমি উহার বেশী মোহতাজ হইবে।( তাবরানী ও বায়হাকী

শরীফ,তরীকুল ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,

পৃ:- ২৮৪)।


** হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম

রদ্বিয়াল্লাহু আনহু রেওয়ায়েত করেন,রসূলে

করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

বলেছেন যে,খয়রাতের ( দানের) এক দিরহাম

আল্লাহ পাকের নিকট লক্ষ দিরহামের চেয়ে

উত্তম। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন,এটা

কি করে হতে পারে? তিনি বললেন,এক ব্যক্তি তার অঢেল ধন - সম্পদ থেকে এক লাখ

দিরহাম বের করে খয়রাত করলো।পক্ষান্তরে

এক ব্যক্তির নিকট দু' দিরহাম ব্যতীত কিছুই

ছিল না। সে তা থেকে মনের খুশিতে এক

দিরহাম দান করে দিলো। এখানে এক

দিরহাম ওয়ালা লক্ষ দিরহাম ওয়ালার চেয়ে

উত্তম।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ৭৭৯,

আর হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায়, নাসায়ী,ইবনে খুযায়মা ও ইবনে

হাব্বান,তরীকুল ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,

পৃ:- ২৮৪)।


** রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম ইরশাদ করেছেন," রাতের ভিখারিকে কখনো খালি হাতে ফিরিয়ো না। কারণ,তোমাদের কাছে রাতে কখনও এমন

কেউ এসে হাত পাতে,যে জ্বীনও নয়; ইনসানও

নয়। বরং আল্লাহর ফেরেস্তা নেমে আসে।

তারা দেখতে আসে যে,আল্লাহ তোমাকে যে

নেয়ামত দান করেছেন,তা দিয়ে তোমরা কি

আমল কর।( আল - ফাতহুর রব্বানী,পৃ:

৪৬৯,কৃত,গাউসুল আযম, বড়পীর মাহবুবে

সোবহানী হযরত আবদুল ক্বাদির জিলানী

রদ্বিয়াল্লাহু আনহু)।


** হাদীস শরীফ: যখন তোমাদের মধ্য

থেকে কেউ নফল দান - খয়রাত কর তখন উচিত।যে,তা নিজের মা - বাবার পক্ষ থেকে করা। যেন এর সাওয়াব তাঁরা পেয়ে যায় এবং তার (অর্থাৎ - দানকারীর) সাওয়াবের মধ্যেও

কোন কমতি হবে না।( শুআবুল ঈমান,খন্ড -

৬ষ্ঠ,হাদীস নং- ৭৯১১,পৃ:- ২০৫,নামাযের

আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ৩৫১)।


** রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেন," যে মুসলমান তার পাক -

পবিত্র উপার্জন থেকে সদকা করে - আল্লাহ

পাক পবিত্রতাকেই গ্রহণ করেন।আল্লাহ

তায়ালা এই সদকা ডান হাতে গ্রহণ করেন।

এরপর তা লালন - পালন করেন,যেমন

তোমাদের কেউ উটের বাচ্চা লালন - পালন

করে।অবশেষে খেজুর বাড়তে বাড়তে ওহুদ

পাহাড়ের সমান হয়ে যায়।( ইহইয়াউল

উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৮৮)।


** এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে - হুযুর

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," আমি বেহেশতের দরজায় লিখা - সদকার সওয়াব দশগুন এবং ঋনের (ধার দেওয়ার) সওয়াব আঠার গুন।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,

পৃ:- ৩৬০)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," দাতা ব্যক্তি আল্লাহরও

নিকটে, বেহেশতেরও নিকটে ; মানুষেরও

নিকটে অথচ দোযখ থেকে দূরে এবং কৃপন

ব্যক্তি আল্লাহ থেকেও দূরে, বেহেশত থেকেও দূরে; মানুষ হতেও দূরে অথচ দোযখের

নিকটে। নিশ্চয় মুর্খ দাতা কৃপন সাধক

অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।

(তিরমিযী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং-

১৭৭৫,পৃ:- ২৮৩)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

কর্তৃক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," এক ব্যক্তি এক মাঠে অবস্থান করছিলো।এমন সময় মেঘের মধ্যে এক শব্দ শুনতে পেল।" অমুকের বাগানে পানি দাও।" তারপর মেঘমালা সেই দিকে সরে গেল এবং এক প্রস্তরময় স্থানে পানি বর্ষালো। তখন দেখা গেল, সেখানকার নালাসমূহের এক নালা সমস্ত পানি নিজের মধ্যে পুরিয়ে নিল। তখন সে ব্যক্তি পানির অনুসরণ করল এবং দেখল যে,এক ব্যক্তি তার বাগানে দাঁড়িয়ে সেচনী দ্বারা পানি সেচছে। তখন সে তাঁকে জিজ্ঞেস করল,হে আল্লাহর বান্দা! তোমার নাম কি? সে বলল, আমার নাম অমুক - যে নাম সে মেঘের মধ্যে শুনেছিল সে নাম।তখন এ ব্যক্তি বলল,হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কেন আমাকে আমার নাম জিজ্ঞেস করলে? সে বলল,যেই মেঘের পানি সেই নেঘের মধ্যে আমি একটি শব্দ শুনেছি - তোমার নাম করে বলা হয়েছে

যে,অমুকের বাগানে পানি দাও!( হে আল্লাহর বান্দা! বল) তুমি তা দ্বারা কি কি কাজ কর?সে উত্তর করল,যখন তুমি এটা বললে তখন শুন,তাতে যা ফলে তার প্রতি আমি দৃষ্টি

করি এবং ভাগ করি।এর এক ভাগ দান করি,

এক ভাগ আমি ও আমার পরিবার খাই এবং

আরেক ভাগ এতে লাগাই।( মুসলীম শরীফ,

মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ১৭৮৩,পৃ:- ২৮৪)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," দানশীলতা বেহেশতের

একটি বৃক্ষ স্বরুপ।যে ব্যক্তি দানশীল সে যেন

তার একটি শাখা ধরেছে আর শাখা তাকে

ছাড়বে না।যে পর্যন্ত না তাকে বেহেশতে

পৌঁছিয়ে দেয় এবং কৃপনতা হচ্ছে দোযখের

একটি বৃক্ষ।যে ব্যক্তি কৃপন সে যেন তার

একটি শাখা ধরেছস আর শাখা তাকে ছাড়বে

না,যে পর্যন্ত না তাকে দোযখে পৌঁছিয়ে

দেয়।( বায়হাকী শুআবুল ঈমানে,মিশকাত

শরীফ,হাদীস নং- ১৭৯২,পৃ:- ২৮৬)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," দান ধন কমায় না; ক্ষমা

দ্বারা আল্লাহ কোন বান্দার সম্মান বৃদ্ধি

ছাড়া হ্রাস করেন না এবং যে কেউ আল্লাহর

ওয়াস্তে বিনয় প্রকাশ করে, আল্লাহ তাকে

উন্নত করেন।( মুসলীম শরীফ,মিশকাত

শরীফ,হাদীস নং- ১৭৯৫,পৃ:- ২৮৬)।


** হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু

আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে কোন মুসলমান

কোন মুসলমানকে তার উলঙ্গতায় কাপড়

পরাবে,( কিয়ামতের দিন) আল্লাহ তাকে

বেহেশতের সবুজ জোড়া পরাবেন। আর যে

কোন মুসলমান কোন মুসলমানকে তার মুখে

অন্য দান করবে, আল্লাহ তাকে বেহেশতের

ফল খাদ্যরুপে দান করবেন এবং যে কোন

মুসলমান কোন মুসলমানকে তার পিপাসায়

পানি পান করাবে,আল্লাহ তায়ালা তাকে

( কিয়ামতে) মুখ বন্ধ করা বোতলের স্বচ্ছ

পানি পান করাবেন।( আবু দাউদ ও তিরমিযী

শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ১৮১৮,পৃ:-

২৮৯)।


**  হযরত আবু মাসউদ আনসারী

রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,"যখন কোন মুসলমান নিজের পরিবারের প্রতি কোন খরচ করে আর তার সাওয়াবের আশা রাখে, তা তার পক্ষে দান স্বরুপ হয়।( বুখারী ও মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ১৮৩৪,পৃ:- ২৯১)।


** হযরত খুরায়ম ইবনে ফাতেক

রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কিছু ব্যয় করে,তার আমলনামায় তার সাত শত গুন লিখা হয়ে থাকে।(তিরমিযী ও নাসায়ী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৩৬৫০,পৃ:- ৫৪৩)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," যখন মানুষ মরে যায়,তখন

তার আমল ( ও সাওয়াব) বন্ধ হয়ে যায়; কিন্তু

তিনটি আমল ( এগুলোর সাওয়াব বন্ধ হয় না),

১/ সদকায়ে জারিয়া, 

২/ ইলম - যার দ্বারা (লোকের) উপকার সাধিত হয় এবং 

৩/ সু -সন্তান,যে তার জন্য দু'আ করে।(সন্তানকে সুশিক্ষা দেয়াই হল তার আমল)। ( মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ১৯৩,পৃ:- ৭২)।

__________________

ফয়যানে শরিয়ত ও মারফত (আমলের ভান্ডার)

লেখক : মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন