সম্পদ ও রিযিকের ফযীলত
** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হইতে রেওয়ায়েত করিয়াছেন," যাহার উপবাস করিতে হয়,সে উহা লোকের কাছে বর্ণনা করে ; তাদের উপবাস বন্ধ করা হইবে না এবং যদি সে আল্লাহ তায়ালার নিকট আরজ করিয়া থাকে, তাহা হইলে আল্লাহ তায়ালা অচিরেই অমুখাপেক্ষী বা আত্মনির্ভরশীল করিয়া দিবনে অথবা তারাতারি মৃত্যু আসিবে অথবা তারাতারি মালদার করিয়া দিবেন।( আবু দাউদ ও তিরমিযী শরীফ,তরীকুল ইসলাম,দ্বিতীয় ভাগ;পৃ:- ২৭৭)।
** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন," এক ব্যক্তি আরজ করলেন, হে আল্লাহর রসূল! দুনিয়া আমার দিক থেকে পিঠ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং সেটা মুখও ফিরিয়ে নিয়েছে।"
হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তাকে বললেন,তুমি ফিরিস্তাদের
সালাত ও তাসবীহ - ই খলা - ইন কেন পড়ছো
না? তারা তো এরই কারণে রিযক্ব পায়।তুমি
ফজর উদিত হবার সময় একশত বার এ দো'আ পড়ো -" ছুবহানাল্লহি ও বিহামদিহী
ছুবহানাল্লহিল 'আযিম,ও বিহামদিহী
আছতাগফিরুল্লহ।"
দুনিয়া তোমার নিকট হীন হয়ে হাজির হবে।"
এরপর লোকটি চলে গেলেন।এর কিছুদিন পর
আবার আসলেন। আর আরজ করলেন,ইয়া
রসূলাল্লাহ! আমার নিকট এ পরিমান এসেছে
যে,এখন আমি জানিনা সেগুলো কোথায়
রাখবো?( "খতীব" রুয়াত - ই - মালিক ও মাসিক তরজুমান, মাহে রমজান -১৪৩০হি:,
পৃ:- ১৩)।
** আল্লাহর হাবীব,হাবীবে লবীব হযরত
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর মহান বানী হচ্ছে," যে ব্যক্তি দস্তরখানা
থেকে খাবারের পতিত টুকরো ( অংশ) তুলে
নিয়ে খাবে,সে প্রাচুর্য্যময় জীবন - যাপন
করবে এবং তার সন্তান ও সন্তানের সন্তানেরা কম বিবেকবান ( অল্প মেধা সম্পন্ন) হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবে।"( কানযুল উম্মাল,খন্ড - ১৫,হাদীস নং- ৪০৮১৫,পৃ:- ১১১,খাবারের ইসলামী নিয়মাবলী,পৃ:- ৮০)।
** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তাজেদারে
মদীনা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর রহমতপূর্ণ বানী হচ্ছে,"
খাওয়ার আগে ও পরে অযু করাটা অভাবকে দূর করে দেয়।আর এটা নবী রসূল আলাইহিমুস সালাতু ওসসালামগণের সুন্নাতের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।( আল - মু'জামুল আওসাত, খন্ড - ৫ম,হাদীস নং- ৭১৬৬,
ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ৩০৭,খাবারের ইসলামী নিয়মাবলী,পৃ:- ৮)।
** মদীনার তাজেদার হযরত মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
বরকতময় বানী হচ্ছে," খাবারের আগে ও পরে অযু (অর্থাৎ - হাত - মুখ ধোয়া) রিযিকে
প্রশস্ততা আনে আর শয়তানকে দূর করে
দেয়।"( কানযুল উম্মাল, খন্ড - ১০ম,হাদীস নং- ৪০৭৫৫,পৃ:- ১০৬,খাবারের ইসলামী
বিয়মাবলী,পৃ:- ৯)।
** মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন রহমাতুল্লাহি
আলাইহি বলেন,ঘরে প্রবেশের সময় "
বিছমিল্লাহ" পাঠ করে প্রথমে ডান পা
দরজায় প্রবেশ করানো উচিত।অত:পর ঘরের
বাসিন্দাদের সালাম করে ঘরের ভিতরে
আসুন। যদি ঘরে কেউ না থাকে তাহলে বলুন:-- "আচ্ছালামু আলাইকা আইয়িউহান নাবিয়্যিউ ও রহমাতুল্লাহি ও বারাকাতুহু।" অনেক বুযুর্গদের দেখা গেছে যে,দিনের শুরুতে ঘরে প্রবেশ করার সময় " বিছমিল্লাহির রহমানির রহীম "শরীফ ও সূরা ইখলাছ পাঠ করে নিতেন। এতে ঘরে একতা থাকে,রুযীতে বরকত ও হয়।(মিরাআতুল মানাজীহ,খন্ড - ৬ষ্ঠ,পৃ:- ৯,বিসমিল্লাহর ফযীলত,পৃ:- ৩৬)।
** নবীয়ে করীম হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র জীবদ্দশায় সে সময় দুইজন ভাই ছিল,যাদের মধ্যে একজন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র খিদমতে ( ইলমে দ্বীন শিখার জন্য) উপস্থিত থাকতেন।একদা কারীগর ভাই এসে মদীনার তাজেদার হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিজ ভাই এর ব্যাপারে অভিযোগ করল।( সে তার বোঝা আমার উপর তুলে দিয়েছে,সে যেন আমার কাজকর্মে সহযোগীতা করে)। তখন মদীনার সুলতান,হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন -" লা'আল্লাকা তুরযাক্বু বিহু"।অর্থাৎ,হয়তো তুমি তার বরকতে রিযিক পাচ্ছ।(সুনানে তিরমিযী,হাদীস নং- ২৩৪৫,১৮৮৭ ও আশিয়াতুল লোমআত,খন্ড - ৪র্থ,পৃ:- ২৬২,
রমযানের ফযীলত,পৃ:- ৪৩২)।
** হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মাদ
গাযযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইহইয়াউল
উলুমের দ্বিতীয় খন্ডে একজন বুযুর্গ
রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর বানী উদ্ধৃত করেন
যে,মুসলমান যখন খাবারের প্রথম লোকমা
আহার করে,তখন তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।আর যে ব্যক্তি হালাল উপার্জনের জন্য অপমানজনক স্থানে যায়,
তার গুনাহ গাছের পাতার মত ঝরতে থাকে।(ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,খন্ড - ২য়,পৃ:- ১১৬,
খাবারের ইসলামী নিয়মাবলী,পৃ:- ৩)।
** হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করিয়াছেন," যে উপবাসী
অথবা অভাবগ্রস্থ তাহার অভাবের কথা
লোকের নিকট গোপন করিয়া রাখে এবং
আল্লাহর নিকট আরজ করে, আল্লাহর উপর হক্ব হইতেছে যে,এক বৎসরের হালাল রুজী তাহার জন্য খুলিয়া দেওয়া।( তিবরানী
শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৫০৩৪,
পৃ:- ৭৩১,বায়হাকী শোআবুল ঈমানে। তরীকুল ইসলাম - দ্বিতীয় ভাগ,পৃ:- ২৭৭)।
** হযরত সায়্যিদুনা আনাছ বিন মালিক
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে,
আল্লাহ তায়ালার নিকট এ বিষয়টি সবচেয়ে অধিক পছন্দনীয় যখন তিনি মুমিন বান্দাকে স্ত্রী,সন্তানের সাথে দস্তরখানায় একত্রে বসে খেতে দেখেন।কারন যখন সবাই দস্তরখানায় একত্রিত হয় তখন আল্লাহ তাদেরকে রহমতের দৃষ্টিতে দেখেন এবং আলাদা হওয়ার আগে আগেই তাদের ক্ষমা করে দেন।( তাম্বিহুল গাফিলীন,পৃ:- ৩৪৩,খাবারের ইসলামী নিয়মাবলী,পৃ:- ২১)।
** হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন উম্মে
হারাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,দু জাহানের
সুলতান,সরওয়ারে যীশান,মাহবুবে রহমান হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ক্ষমতাপূর্ণ বানী হচ্ছে," রুটির সম্মানকর,কারন তা আসমান ও যমীনের বরকতের অংশ। যে ব্যক্তি দস্তরখানা থেকে পতিত রুটি খেয়ে নেবে তার ক্ষমা হয়ে যাবে।(আল - জামিউস সাগীর,হাদীস নং-১৪২৫,
পৃ:- ৮৮,খাবারের ইসলামী নিয়মাবলী,
পৃ:- ৮৪)।
** হযরত নুবাইশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে,মক্কী মাদানী সরকার,মাহবুবে রহমান, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,যে খাওয়ার পর
থালা চেটে বেবে,ঐ থালা তার জন্য ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করবে।( ইবনে মাজাহ,
খন্ড - ৪র্থ,হাদীস নং- ৩২৭১,পৃ:-১৪,খাবারের ইসলামী নিয়মাবলী,পৃ:- ৯১)।
** হাদীসে পাকে রয়েছে, " যে ব্যক্তি
খাওয়ার পর বাসন চেটে নেয়,তখন ঐ বাসন
তার জন্য দুআ করে ও বলে,আল্লাহ তায়ালা
তোমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত
করুন,যেমনিভাবে তুমি আমাকে শয়তান থেকে মুক্ত করেছ।"( কানযুল উম্মাল,খন্ড - ১৫ম,হাদীস নং- ৪০৮২২,পৃ:- ১১১,মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ৪০৫৮,পৃ:- ৬০৯,খাবারের ইসলামী নিয়মাবলী,পৃ:- ১২৭)।
** হুযুর তাজেদারে মদীনা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,যে ব্যক্তি খাবার খেলো আর এ বাক্যগুলো বলল; তবে তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
----------
দু'আ বাক্যগুলো নিম্নরুপ:- " আলহামদু
লিল্লাহিল্লাযী আত্ব 'আমানী বিযা ও
রযাক্বানিহী মিন গইরি হাওলি মিন্নী ওলা
ক্বুওয়াতি।"
অনুবাদ :- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার
জন্য যিনি আমাকে খাবার খাইয়েছেন এবং
আমাকে কোন প্রকারের যোগ্যতা ও শক্তি
ছাড়া এই রিযিক দান করেছেন।( তিরমিযী
শরীফ,খন্ড - ৫ম,পৃ:- ২৮৪,খাবারের ইসলামী
নিয়মাবলী, পৃ:- ১২৯)।
** হাদীস শরীফে রয়েছে,যে ক্ষুধার্তকে
খাবার খাওয়ালো আল্লাহ তায়ালা তাকে
আরশের ছায়াতলে জায়গা দান করবেন।
(মাকারিমূল আখলাক লিত তাবরানী,
পৃ:- ৩৭৩,খাবারের ইসলামী নিয়মাবলী,
পৃ:- ৩১০)।
** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন,"যে ব্যক্তি স্বীয় জীবিকার বৃদ্ধি ও দীর্ঘায়ু কামনা করে,সে যেন আত্মীয় - স্বজনের সাথে উত্তম ব্যবহার করে।( বুখারী ও মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৪৭০১,পৃ:- ৬৯০)।
** হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি অল্প রিযিক্বে পরিতৃপ্ত ও আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, আল্লাহ তার অল্প আমলে সন্তুষ্ট হন।( বায়হাকী শোআবুল ঈমান,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৫০৩৩,পৃ:- ৭৩১)।
** যে কেউ আল্লাহর এ নামের ওযীফা
জপে,অর্থাৎ, " সুবহান" অথবা "এয়া সুবহান"
পড়তে থাকে,আল্লাহ তায়ালা তাকে গুনাহ
থেকে পবিত্র করবেন।প্রত্যেক ইসমে এলাহির তাজাল্লী ( জ্যোতি) সেটার জপনাকারীর উপর বিচ্ছুরিত হয়। সুতরাং যে " এয়া গনী"র ওযীফা পড়ে সে ধনী হয়ে যায়।
(তাফসীরে নূরুল ইরফান শরীফ,পৃ:- ৭৪৩)।
** যে ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করার সময়
সালাম করে,যদি ঘর খালি থাকে; তবে
হুযুরকে (নবীজিকে) সালাম করবে। আর
একবার ক্বুল হুওয়াল্লাহু শরীফ তিলাওয়াত
করে নেবে, তাহলে ইনশা আল্লাহ দারিদ্র ও
উপবাস থেকে মুক্ত থাকবে।(তাফসীর - ই
সাভী,তাফসীরে নুরুল ইরফান শরীফ,
পৃ:- ১৬৯০)।
** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্নিত হয়েছে।
তিনি বলেন,আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গেলাম।
ইতোমধ্যে তার কাছে একজন লোক হাযির
হয়ে বলল,হে আল্লাহর রসুল! আমার সম্পদ কমে গেছে।রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন," ফেরেশতাদের দো'আ,
সৃষ্টির তাসবীহ ও রিযিকের চাবিকাঠি.থেকে তো তুমি অনেক দূরে অবস্থান করছো।
লোকটি বলল,হে আল্লাহর রসূল! এগুলো কি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন,সুবহে সাদিকের পর থেকে
ফজরের নামাজ পড়ার মধ্যবর্তী সময়ে :- "
ছুবহানাল্লাহি ও বিহামদিহী.ছুবহানাল্লাহিল 'আযিম,ও বিহামদিহী আছতাগফিরুল্লাহ" একশত বার পড়লে দুনিয়া অপদস্থ হয়ে তোমার নিকট আসবে।(তানযীহ শরীআহ,
খন্ড - ২য়,পৃ:- ৩১৮,তাম্বিহুল গাফিলীন,
পৃ:- ৪৫৩)।
** হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,"কুরআনের এমন একটি আয়াত আমি জানি,যদি লোকেরা তার প্রতি আমল করত,তবে এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট হত,তা হলো :-- ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺘَّﻖِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﺠْﻌَﻞ ﻟَّﻪُ ﻣَﺨْﺮَﺟًﺎ ﻭَﻳَﺮْﺯُﻗْﻪُ ﻣِﻦْ ﺣَﻴْﺚُ ﻟَﺎ ﻳَﺤْﺘَﺴِﺐُ ۚ
আর যে আল্লাহ্কে ভয় করে, আল্লাহ্ তার
জন্য মুক্তির পথ বের করে দেবেন; এবং
তাকে ওই স্থান থেকে জীবিকা দেবেন,
যেখানে তার কল্পনাও থাকে না।( মুসনাদে
আহমদ,ইবনে মাজাহ ও দারেমী শরীফ,
মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৫০৭৫,পৃ:- ৭৩৭)।
** হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু
আনহা বর্ণনা করেন, তাঁর পিতা হযরতে আবু
বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর কাছে
তাশরিফ নিলেন এবং বললেন, আমি রসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এমন দো'আ শুনেছি,যদি কারো উপর পাহাড়
পরিমানে সোনা কর্জ থাকে আল্লাহ তায়ালা এই দোআর বরকতে ঐ কর্জ পরিশোধে ব্যবস্থা করে দেন।
দো'আটি হল:-
আল্লহুম্মা ফারিজিল হাম্মি কাশিফিল
গম্মি। উজিদি দা'ওয়াতিল মুদ্বত্বরিনা
রহমানাদ দুনইয়া ওল আখিরাতি ও রহিমাহুমা
আংতা তারহামনি বিরাহমাতি তাগনিনী
বিহা 'আর রহমাতি মাং চিওয়াক।" হে আল্লাহ! আপনিই দুশ্চিন্তা দূরকারী,কষ্ট নিরসনকারী, অসহায় লোকদের দোআ কবুলকারী ও ইহ - পরকালের সবচেয়ে বড় মেহেরবান ও দয়ালু,আমার উপর এমন দয়া করুন।
আপনার দয়া ব্যতিত অন্য কারো দয়ার
প্রয়োজন যেন না হয়।" হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,আমার উপর
একজনের কিছু কর্য ছিলো যা আমার চিন্তার
বড় কারন ছিল।আমি এই দো'আ পাঠ করার
ফলে অল্প দিনের মধ্যেই আল্লাহ আমাকে
এমন সম্পদ দিলেন,যা দিয়ে আমার কর্য
পরিশোধের ব্যবস্থা হয়ে গেল। হযরত আয়েশা
সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন,আমার
উপর হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু আনহার কর্য
ছিলো। আমি তাকে দেখলে লজ্জায় মুখে
কাপড় দিয়ে চলতাম,আমি এই দোআ পাঠ
করলে বেশী দিন অতিক্রম হয়নি,আল্লাহ
আমাকে এমন রিযিক দান করেছেন যা
ওয়ারিশ কিংবা সদকার সাথে কোন সম্পর্ক
ছিলোনা।আমি ঐ রিযিক থেকে কর্য শোধ
করে দিয়েছিলাম।( হুজ্জাতুল্লাহি আলাল
আলামীন,খন্ড -২য়,পৃ:- ২২৫,বিষয়ভিত্তিক
মু'জিযাতুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম,পৃ:- ৮৪)।
** প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ইরশাদ করেন," যে ব্যক্তি পরিশোধ
করার মানসে কারও কাছ থেকে ঋন বেয়,
স্বয়ং আল্লাহ তা'আলাই তার পক্ষ থেকে এ
ঋন পরিশোধ করে দেবেন।আর যে ব্যক্তি
অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে নেয়,আল্লাহ তার ঐ সম্পদকে ধবংস করে দেবেন।(সহীহুল বুখারী,খন্ড - ৮ম,হাদীস নং- ২২১২,পৃ:- ২১৪,
মুসনাদে আহমদ,খন্ড - ১৭,হাদীস নং- ৮৩৭৮,
পৃ:- ৪২০,সুনানে ইবনে মাজাহ,খন্ড - ৭,
হাদীস নং- ২৪০২,পৃ:- ২৪৮,সুদ : একটি
মারাত্মক অপরাধ,পৃ:- ১১,কৃত:- আলা হযরত
ইমাম আহমদ রেজা খান রহমাতুল্লাহি
আলাইহি।
** হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু
আনহা থেকে বর্ণিত,প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন," আমার
উম্মতের যে ব্যক্তি কোন ঋন গ্রহণ করল এবং
তা পরিশোধের জন্য যথাযথ চেষ্টা করল;
কিন্তু পরিশোধের পূর্বেই সে মৃত্যুবরণ করল,
তাহলে আমিই তার ঐ ঋন পরিশোধের
দায়িত্ব ও জিম্মাদার হব।"( মুসনাদে আহমদ,
খন্ড - ৫১,হাদীস নং- ২৪০৫৫,পৃ:- ২১২,সুদ :
একটি মারাত্মক অপরাধ,পৃ:- ১১)।
** বর্ণিত রয়েছে যে,এক দরিদ্র গোলাম হযরত আলী মুরতাজা শেরে খোদা
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর দরবারে আরয করলেন,".আমি নিজেকে আযাদ করার যে চুক্তি করেছি, সে মতে টাকা দিতে অপারগ। আপনি আমাকে সাহায্য করুন। তিনি রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইরশাদ করলেন," আমি তোমাকে কিছু কালিমা শিখাব যা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে
শিখিয়েছেন। যদি তোমার উপর সীর পাহাড়
সমান কর্য থাকে তবুও আল্লাহ তায়ালা
তোমার পক্ষ থেকে আদায় করে দিবেন।তুমি
এটা বলো :- " আল্লহুম্মাক ফিনি বি হালালিকা 'আন হারামিকা ও আগনিনী বি ফাদ্বলিকা 'আম্মাং চিওয়াক।" ( জামে তিরমিযী,খন্ড - ৫ম,হাদীস নং- ৩৫৭৪,পৃ:- ৩২৯)।
উল্লেখিত দো'আ উদ্দেশ্য সফল হওয়া পর্যন্ত
প্রত্যেক নামাযের পর ১১ বার করে এবং
সকালে ১০০ বার ও সন্ধ্যায় ১০০ বার (শুরুতে
ও শেষে একবার করে দুরুদ শরীফসহ) দৈনিক পাঠ করুন।( রমযানের ফযীলত,পৃ:- ১২৪)।
** হযরত আবুল ইউসর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,যে ব্যক্তি
অক্ষম ঋনীকে সময় দান করবে অথবা তার ঋন কর্তন করে দিবে,আল্লাহ তায়ালা তাকে
( হাশরের মাঠে) তাঁর ( রহমতের) ছায়া দান
করবেন।( মুসলিম শরীফ,মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২৭৭৮,পৃ:- ৪১০,হায়াত - মউত কবর - হাশর,পৃ:- ২৭৩)।
** হযরত আবু কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত।তিনি বলেছেন,আমি রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,যে ব্যক্তি অক্ষম ঋনীকে সময় দান করবে অথবা ঋন কর্তন করে দিবে,আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত দিবসের দু:খ - কষ্ট থেকে তাকে মুক্তি দান করবেন।
(মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং-
২৭৭৭,পৃ:- ৪১০)।
** হযরত সওবান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তির মৃত্যু আসবে
অহংকার থেকে মুক্ত,খেয়ানত থেকে মুক্ত
এবং ঋন থেকে মুক্ত অবস্থায়;সে বেহেশতে
প্রবেশ করবে।( তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও
দারেমী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং-
২৭৯৩,পৃ:- ৪১২)।
** হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তির প্রাপ্য থাকে অপর ব্যক্তির উপর,সে যদি খাতককে কিছু দিনের সময় দান করে, তবে
প্রতিদিনের বিনিময়ে সদকা বা দান - খয়রাত
করার সওয়াব লাভ হবে।( মুসনাদে আহমদ,
মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২৭৯৯, পৃ:- ৪১৩)।
** বুযুর্গানে দ্বীন বলেন," অভাবীকে
প্রয়োজনের সময় কর্য দেওয়াও সাওয়াবের
কাজ।বরং কোন কোন অবস্থায় কর্য দেওয়া
সাদক্বাহ অপেক্ষা ও উত্তম।কেননা,সাদক্বাহ
তো এমন লোকও নিয়ে থাকে যার প্রয়োজন
হয় না। কিন্তু কর্য শুধু ওই ব্যক্তিই নেয়,যার
প্রয়োজন দেখা দেয়।( তাফসীরে নুরুল ইরফান শরীফ,পৃ:- ১০০)।
__________________
ফয়যানে শরিয়ত ও মারফত (আমলের ভান্ডার)
লেখক : মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন