ইবাদত ও সাধনার ফযীলত

 

ইবাদত ও সাধনার ফযীলত


** হযরত সায়্যিদুনা মুআয ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন," যে ব্যক্তি পাঁচটি রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করে,তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (সে রাত গুলো হচ্ছে) যিলহজ্জ্বের ৮,৯ ও ১০ তারিখের রাতে ( তিন রাত) আর ৪র্থ ঈদুল ফিতরের রাত এবং ৫ম,১৫ই শাবানুল মুআজ্জমের রাত( অর্থাৎ, শবে বরাত।)। ( আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব,খন্ড - ২য়,হাদীস নং- ০২,পৃ:-৯৮,রমযানের ফযীলত,পৃ:- ৩৩০)।


** হযরত সায়্যিদুনা আবু সুলাইমান দারানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন," নফসের

খায়েশগুলো থেকে কোন একটি খায়েশকে

পরিত্যাগ করা অন্তরের জন্য এক বৎসরের

রোযা ও এক বৎসরের রাতের ইবাদত থেকেও

অধিক কল্যানকর।( জাযবুল কুলুব,খন্ড - ২য়,পৃ:- ৩৩৬,ক্ষুধার ফযীলত,পৃ:- ৮৭)।


** পিয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম বলেন,"তিন ব্যক্তি কিয়ামতের

দিন মিশকের টিলায় বসবাস করবে,তাদের

হিসাব - নিকাশের কোন ভয় থাকবে না এবং

কোন রকম আতংক তাদেরকে স্পর্শ করবে না। হিসাব - নিকাশ শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের এ অবস্থা চলতে থাকবে। তাদের মধ্যে যে

আল্লাহ তায়ালার রেজামন্দির জন্য কুরআন

তিলাওয়াত করবে,নামাযে ইমামতি করে

এমতাবস্থায় যে,মুসুল্লীরা মসজিদে আযান

দেয় এবং মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে।

আর যে দুনিয়াতে দাসত্বে লিপ্ত; কিন্তু এই

দাসত্ব তার পরকালের কাজকর্মে প্রতিবন্ধক

হয় না।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ১৩৩)।


** হাদীস শরীফ:- ঈমানদার ব্যক্তি যদি

একটি উত্তম কথা শুনে এবং সে অনুযায়ী আমল করে,তবে তার জন্য তা এক বছরের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ৩২)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," আল্লাহ তায়ালা বলেন,যে আমার কোন দোস্তকে দুশমন ভাবে,আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি।

আমার বান্দা আমার নৈকট্য লাভ করতে

পারেনা এমন কোন জিনিস দ্বারা, যা আমার

নিকট প্রিয়তর হতে পারে,আমি যা তার প্রতি

ফরয করেছি। তা অপেক্ষা এবং বান্দা সর্বদা আমার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে থাকে নফল দ্বারা।অবশেষে আমি তাকে ভালবাসি।আর আমি যখন তাকে ভালবাসি,আমি হই তার কান,যা দ্বারা সে শুনে।আমি হই তার চোখ,যা দ্বারা সে দেখে। আমি হই তার হাত,যা দ্বারা সে ধরে।এবং আমি হই তার পা - যা দ্বারা সে চলে এবং যখন সে আমার নিকট চায়,

আমি তাকে দেই এবং যদি সে আমার আশ্রয় চায়,আমি তাকে নিশ্চয় আশ্রয় দেই। আর আমি ইতস্তত করিনা যা আমি করতে চাই - মুমিনের রুহ কবয করার মত ইতস্তত। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি অপছন্দ করি তাকে অসন্তুষ্ট করাকে।কিন্তু মৃত্যু তার জন্য আবশ্যক।( তবেই সে আমার নিকট পৌঁছতে পারবে।)।( বুখারী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২১৫৯,পৃ:- ৩২৯)।


** হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," আল্লাহ পাপ - পূন্য সম্পর্কে নির্ধারন করে রেখেছে,যে ব্যক্তি পূন্যের সংকল্প করে আর তা সম্পাদন না করে,আল্লাহ তার জন্য তাকে( সংকল্পকে) নিজের নিকট একটি পূর্ণ পূন্য হিসেবে লেখেন আর যদি তার সংকল্প করে তারপর তা সম্পাদন করে,আল্লাহ তার জন্য তাকে দশগুন থেকে সাত শত গুন বরং বহুগুন পর্যন্ত পূন্য

হিসেবে লেখেন। আর যে পাপের সংকল্প করে, তারপর তা সম্পাদন না করে; আল্লাহ তার

জন্য তাকে নিজের নিকট একটি পূর্ণ পূন্য হিসেবে লেখেন। আর যদি সে তার সংকল্প করে তারপর তা সম্পাদন করে,আল্লাহ তার জন্য তাকে একটি মাত্র পাপ হিসেবে লেখেন।( বুখারী ও মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,

হাদীস নং- ২২৬৪,পৃ:- ৩৪৪)।


** হযরত সাওবান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী

করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে

বর্ণনা করেন,তিনি বলেন; বান্দা আল্লাহর সন্তোষ লাভ করতে চায়,আর তার চেষ্টা করতে থাকে।ফলে আল্লাহ ওয়া জাল্লা জিব্রাঈলকে বলেন,আমার অমুক বান্দা আমাকে সন্তুষ্ট করতে চায়; জেনে নাও - তার প্রতি আমার দয়া রয়েছে। তখন জিব্রাঈল

বলেন,আল্লাহর দয়া অমুকের প্রতি, আর এ

ধরনের বলেন আরশ বহনকারীগন এবং তাদের পার্শ্বের ফেরেশতাগণ।অবশেষে অনুরুপ বলে সপ্ত আসমানের অধিবাসীগণ।তারপর দয়া তার জন্য অবতীর্ন হয় জমীনের দিকে।( মুসনাদে আহমদ,মিশকাত শরীফ,

হাদীস নং- ২২৬৯,পৃ:-৩৪৫)।


** হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

থেকে বর্ণনা করেন যে,তিনি বলেন: যে কোন মুসলমানের স্ত্রী - লোকের সৌন্দর্যের প্রতি হঠাৎ প্রথমে দৃষ্টি পড়ে যায়,তারপর সে আপন চক্ষু নীচু করে, আল্লাহ তার জন্য এক এবাদতের সুযোগ সৃষ্টি করেন - যাতে সে তার স্বাদ পায়।( মুসনাদে আহমদ,মিশকাত

শরীফ,হাদীস নং- ২৯৯০,পৃ:- ৪৩৭)।


** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে

বর্ণিত,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," আল্লাহর পথে একটা সকাল কিংবা একটা সন্ধ্যা ব্যয় করা, দুনিয়া ও তার সমস্ত জিনিস হতে অধিক উত্তম।( বুখারী ও মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৩৬১৮,পৃ:- ৫৩৭)।


** হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," কোন ব্যক্তির নীরবতার উপর।কায়েম থাকা ষাট বছরের ( নফল) এবাদত থেকেও উত্তম।( বায়হাকী শুআবুল ঈমান,মিশকাত শরীফ,

হাদীস নং- ৪৬৫১,পৃ:- ৬৮৩)।


** হযরত মা'কেল ইবনে ইয়াসার

রদ্বিয়াল্লাহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," ফিতনার

সময়( তাতে লিপ্ত না হয়ে) ইবাদতে মশগুল

থাকার সওয়াব আমার দিকে হিজরত করে

আসার সমতুল্য।( মুসলীম শরীফ,মিশকাত

শরীফ,হাদীস নং- ৫১৫৮,পৃ:- ৭৫১)।


** যমযম শরীফের পানির ব্যাপারটাই তো

অন্য রকম। " এ পানি ইবাদতের নিয়্যাতে

দেখলে এক বৎসরের ইবাদত এর সওয়াব লাভ হয়।তা পান করে যে দুআ - ই করা হয় তা কবূল হয়।( আল - মাসলাকুল মুতা ক্বাসসিতুল মা'রুক মানাসিকুল মুল্লা আ'লী ক্বারী,পৃ:-৪৯৫,

ক্ষুধার ফযীলত, পৃ:- ৮০)।


** রজব মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, ঐ রাতে নেক আমলকারীদেরকে একশত বছরের নেকীর সওয়াব দান করা হয়। আর তা রজবের ২৭ তারিখের রাত।যে ব্যক্তি ঐ রাতে ( বার) রাকা'আত নামায এই ভাবে আদায় করবে যে,প্রতি রাকা'আতে সূরায়ে ফাতিহা ও অন্য যে কোন একটি সূরা পাঠ করবে।আর প্রতি দু' রাকা'আত পর পর আত্তাহিয়্যাতু পড়বে এভাবে ১২ রাকা'আত পূর্ণ হলে সালাম

ফিরাবে। এরপর ১০০ বার বর্ণিত দো'আ

পড়বে," ছুবহানাল্লাহি ওল হামদু লিল্লাহি

ওলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওল্লাহু আকবার।" ১০০

বার ইস্তিগফার,১০০ বার দুরুদ শরীফ আর নিজ দুনিয়া ও আখিরাতের যা ইচ্ছা তা চেয়ে দু'আ করবে,আর সকালে রোযা রাখবে; তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার সমস্ত বৈধ দু'আ কবুল করবেন।( শুআবুল ঈমান,খন্ড - ৩য়,

হাদীস নং- ৩৮১২,পৃ:- ৩৭৪,রমযানের ফযীলত,পৃ:- ৩৮৯)।


** হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারীম বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যখন অর্ধ শা'বান আসবে,তার রাত্রিতে তোমরা নামায পড়বে এবং তার দিনে তোমরা রোযা রাখবে। কেননা,তাতে সুর্যাস্তের সাথে সাথেই আল্লাহ তায়ালা এ নিকটতম আসমানে

অবতীর্ণ হন এবং বলতে থাকেন,কোন ক্ষমা

প্রার্থনাকারী আছ কি?যাকে আমি ক্ষমা

করে দেই।কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ

কি? যাকে আমি রিযিক দেই।এবং কোন

বিপন্ন ব্যক্তি ( সাহায্যপ্রার্থী) আছ কি? যাকে আমি বিপদমুক্ত করি। এভাবে আরও আরও ব্যক্তিকে ডাকেন যতক্ষন না ফজর হয়।

(ইবনে মাজাহ শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস

নং- ১২৩৩,পৃ:- ২১০)।


** হাদীসে পাকে রয়েছে," আল্লাহ

তায়ালার মহান দরবারে যিলহজ্জ্ব মাসের

প্রথম দশ দিন ইবাদত অন্য দিনের তুলনায়

অধিক পছন্দনীয়।সেগুলোর মধ্যে প্রতিদিনের

রোযা এক বছরের রোযা এবং প্রতি রাতে

জাগ্রত রয়ে ইবাদত করা শবে ক্বদরের সমান।

( জামে তিরমিযী,খন্ড - ২য়,হাদীস নং- ৭৫৮,

পৃ:- ১৯২,রমযানের ফযীলত,পৃ:- ৪১৯)।

__________________

ফয়যানে শরিয়ত ও মারফত (আমলের ভান্ডার)

লেখক : মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন