দো'আ ও ইস্তেগফারের ফযীলত

 

দো'আ ও ইস্তেগফারের ফযীলত


** হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,যে লোক কোন বাজারে গিয়ে বলবে," লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহদাহু লা শারিকা লাহু,লাহুল মূলকু ও লাহুল হামদু ইয়ুহয়ি ওইউমিতু ওহুয়া 'আলা কুল্লি শাইয়িং ক্বদীর।" তার জন্য দশ লাখ সওয়াব লেখা হবে এবং তার দশ লাখ গুনাহ ক্ষমা করা হবে।বেহেশতে তার জন্য একটি ঘর নির্মিত হবে।( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ২৭৩)।


** এক হাদীসে আছে," আছতাগফিরুল্লা হাল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল ক্বইইউমু ও আতুবু ইলাইহি।" যে ব্যক্তি এই কালেমা বিছানাতে শোয়ার সময় তিন বার পাঠ করবে,আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন,যদিও তা সমুদ্রের বালু কনার বরাবর অথবা বৃক্ষরাজির পাতার সমান অথবা

পৃথিবীর দিন সমূহের সমান হয়।( ইহইয়াউল

উলুমুদ্দীন,পৃ:- ২৮১ - ২৮২)।


** একদা জনৈক সাহাবী প্রিয় নবী

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমীপে হাজির হয়ে আরয করলেন,হে আল্লাহর

রসূল! আমি আমার মাতাপিতার জীবদ্দশায়

তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতাম,এখন

তাঁরা উভয় এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন,

তাঁদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার কোন পন্থা আছে কি? প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যুত্তরে এরশাদ করলেন," মৃত্যুর পর তাঁদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার পন্থা এই যে,

তোমার নামাযের সাথে তাঁদের জন্যও নামায পড় এবং তোমার রোযার সাথে তাঁদের জন্যও

রোযা রাখ।" এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম

আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,"

যদি তুমি সওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে নিজের

জন্য নফল নামায পড় কিংবা রোযা রাখ,

তাহলে তাঁদের পক্ষ থেকেও কিছু নফল

নামায পড়, তবে তাঁদের নিকট এ সাওয়াব

পৌছবে।অথবা নামায,রোযা ও তোমার

সম্পাদিত সকল নেক কাজের সাওয়াব তাদের

নিকট পৌঁছানোর নিয়্যত কর,তবে তাঁদের

নিকট এ সাওয়াব ( অবশ্যই) পৌঁছবে,আর

তোমার এ সাওয়াব কিছুমাত্র হ্রাস পাবে

না।( ফতোয়া - ই রজভীয়া,খন্ড - ৮ম,যুগ

জিজ্ঞাসা, পৃ:- ৩৩২)।


** হুজুর গাউসে পাক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

এরশাদ করেছেন," যে কোন দু:খ ও অশান্তিতে কেউ আমার থেকে সাহায্য প্রার্থনা করবে,তার দু:খ দূর হয়ে যাবে।আর যে বিপদের মূহুর্তে আমার নাম নিয়ে আমাকে আহবান করবে,সে বিপদ হতে রক্ষা পাবে।( নুযহাতুল হাতিরিল ফাতির ফি মানাকিবে আশ শায়খ আবদিল ক্বাদির, কৃত: - মোল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও যুগ জিজ্ঞাসা,পৃ:- ১০৩)।


** হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

হতে বর্ণিত,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে আরজ করা হলো -

ইয়া রসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম! কোন সময়ের দূ'আ দ্রুত ক্ববুল হয়?

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন," শেষ রাত্রের দো'আ এবং ফরয নামায সমূহের সালাম ফিরানোর পরে দো'আ দ্রুত ক্ববুল হয়।(তিরমিযী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৯০৬,পৃ:- ১৬৮)।


** যে কেউ সমস্ত মু'মিন পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে,আল্লাহ আযযা ও জাল্লা তার জন্য প্রত্যেক মু'মিন পুরুষ ও মহিলাদের বিনিময়ে একটি করে নেকী লিখে দেন।" (মাজমাউয যাওয়ায়িদ,খন্ড - ১০ম,হাদীস নং- ১৭৫৯৮,পৃ:- ৩৫২,নামাযের

আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ৩৫৩)।


** মাওলায়ে কায়েনাত,শেরে খোদা

হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,

সমস্ত নবীদের সর্দার, প্রিয়ন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন," ওহে আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আমি কি তোমাকে এমন বাক্য বলে দেব না যা তুমি মুসীবতের সময় পড়বে? আরয করলেন, " অবশ্যই ইরশাদ করুন।" আপনার জন্য আমার জান

কুরবান! সর্ব প্রকারের ভাল বিষয়গুলো আমি

আপনার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

এর কাছ থেকেই শিখেছি। ইরশাদ করলেন,"

যখন তুমি কোন মুসিবতের সম্মুখীন হও,তখন

এভাবে পাঠ কর -" বিছমিল্লাহির রহমানির

রহীম,ওলা হাওলা ওলা ক্বুউয়াতা ইল্লা

বিল্লাহিল 'আলিয়্যিল 'আযিম।" অতএব,এর

বরকতে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা যে সমস্ত

বিপদ - আপদকে ইচ্ছা করেন,দূর করে দিবেন। (আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলা লি ইবনি সুন্নী,পৃ:- ১২০,বিসমিল্লাহর ফযীলত,

পৃ:- ৭০)।


** বিশিষ্ট মহিলা সাহাবী,উম্মাহাতুল

মু'মিনীন উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা

থেকে বর্ণিত,নবী করীম সাল্লাল্লাহু।আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," কেউ যদি বিপদে পড়ে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী " ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন" পড়ে এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে বিপদের জন্য উত্তম বিনিময়ের জন্য দু'আ করে।তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে অবশ্যই তা দান করবেন।তারপর উম্মে সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন,আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

ইন্তেকাল করলে আমি এই দু'আ করলাম এরপর মনে মনে বললাম,আবু সালামার চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে? কিন্তু সত্যই আল্লাহ

তায়ালা তাঁকে উত্তম দান করলেন এবং

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে বিনিময় করলেন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বিয়ে করলেন। (মুসলীম,তিরমিযী,নাসাঈ,আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ,মুসনাদে আহমদ ও মুয়াত্তা মালেক,তাম্বিহুল গাফিলীন,পৃ:- ২০৬)।


** তাফসীরে আযীযীর মধ্যে রয়েছে

যে,যে ব্যক্তি কোন কঠিন বিপদে নিপতিত

হয়ে সে যদি " বিসমিল্লাহ" কে বার(১২)

হাজার বার এভাবে পরে যে,এক হাজার "

বিসমিল্লাহ" পড়ে দু' রাকা'আত নফল নামায

পড়বে,সুতরাং প্রতিটি এক হাজার পড়ে নফল

নামায পড়বে।অত:পর দু'আ প্রার্থনা করবে।

ইনশা আল্লাহ! তার দু'আ কবূল হবে।(তাফসীরে নাঈমি,খন্ড - ১ম,পৃ:- ১২০)।


** হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি কোন দো'আ

করে,নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সে যা চায় তা

দেন অথবা তার অনুরুপ  বিপদকে তার

থেকে দূরে রাখেন।যতক্ষন না সে দো'আ করে

কোন গুনাহের কাজের অথবা আত্মীয়তা বন্ধনছেদের।( তিরমিযী শরীফ,মিশকাত

শরীফ,হাদীস নং- ২১৩১,পৃ:- ৩২৬)।


** ইমাম তিরমিযী হাকিম মুহাম্মাদ ইবনে

আলী " নওয়াদেরুল উসূল" এ বর্ণনা করেন যে, হুজুর আলাইহিস সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, যে কেউ এ দু'আটা কোন কাগজে লিখে মৃত

ব্যক্তির বুক ও কাফনের মাঝখানে রাখলে ওর

কবর আযাব হবে না এবং সে মুনকার -

নকীরকে দেখবে না।ফাতাওয়ায়ে কুবরা লিল

মক্কীতে এ হাদীছ উদ্ধৃতি করে বলা হয়েছে

( এ হাদীসটা) এ দু'আর উৎস এবং ফক্বীহ ইবনে আজিল এর নির্দেশ দিতেন এবং যাকাতের উট সমূহের গায়ে যে," আল্লাহ" লিখা হয়। এর উপর অনুমান করে এ দু'আ লিখা জায়েয বলে ফতওয়া দিতেন। সেই দু'আটা হচ্ছে," লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার । লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওহদাহু লা শারিকালাহু,।লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু লাহুল মূলকু ওলাহুল হামদ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওলা হাওলা ওলা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল 'আযিম।( জা - আল হক,প্রথম খন্ডের দ্বিতীয়াংশ,পৃ:- ১৬৮ -১৬৯)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন,"আমাদের পরওয়ারদেগার

তাবারকা ও তায়ালা প্রত্যেক রাতেই এই

নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন।যখন

রাত্রির শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে এবং

বলতে থাকেন,কে আছ? যে আমায় ডাকবে

আর আমি তার ডাকে সাড়া দিবো?কে আছ,

যে আমার নিকট কিছু চাইবে,আমিব তাকে

দান করবো এবং কে আছ? যে আমার নিকট

ক্ষমা চাইবে,আর আমি তাকে ক্ষমা করবো।

(বুখারী ও মুসলীম)।

মুসলীমের এক বর্ণনায় এটা রয়েছে, তারপর

তিনি আপন দুই হাত পাতিয়ে বলতে থাকেন,

কে আছ? যে ঋন দিবে অ - দরিদ্র ও অ -

অত্যাচারিকে,যতক্ষন না উষার উদয় হয়।

(মিশকাত শরীফ,হাদীস নং-১১৫৫,পৃ:- ২০১)।


** হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু

আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম বলেছেন,তাক্বদীরকে ফিরাতে

পারেনা দো'আ ছাড়া অন্য কিছু এবং বয়স

বাড়াতে পারেনা নেকী ছাড়া অন্য কিছু।

(তিরমিযী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং-

২১২৯,পৃ :- ৩২৬)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন,তিন ব্যক্তির দো'আ ফিরিয়ে দেয়া হয় না।রোযাদারের দো'আ যখন সে ইফতার করে,ন্যায় বিচারক শাষকের দো'আ এবং অত্যাচারিতের দো'আ।তার দো'আকে আল্লাহ মেঘের উপর উঠিয়ে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়; এবং পরওয়ার দেগারে আলম বলেন," আমার ইজ্জত - সম্মানের কসম! আমি নিশ্চয় তোমার সাহায্য করব,যদিও কিছু সময় পরে হয়।(তিরমিযী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২১৪৩,পৃ:- ৩২৭)।


** হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু

আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে কোন মুসললমান

যে কোন দো'আ করে,যাতে কোন গুনাহের

কাজ অথবা আত্মীয়তা বন্ধন ছেদের কথা

নেই।নিশ্চয়,আল্লাহ তাকে এ তিনটির একটি

দান করেন।তাকে তার চাওয়া বস্তু দুনিয়াতে

দান করেন অথবা তা তার পরকালের জন্য

জমা রাখেন অথবা তার অনুরুপ কোন

অমঙ্গলকে তার থেকে দূরে রাখেন। সাহাবীগণ বললেন,তবে তো আমরা অনেক লাভ করবো। হুযুর বললেন,আল্লাহ এটা অপেক্ষাও অধিক দেন।( মুসনাদে আহমদ,মিশকাত শরীফ,

হাদীস নং- ২১৫২,পৃ:- ৩২৮)।


** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস

রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," নিশ্চয় মৃত ব্যক্তি হল পানিতে পড়া ব্যক্তির মত,সে তার বাপ,মা,ভাই - বন্ধুর দো'আ পৌঁছার অপেক্ষায় থাকে,যখন তার নিকট তা পৌঁছে; তখন তা তার নিকট সমগ্র দুনিয়া ও তার সামগ্রী অপেক্ষাও প্রিয়তর হয় এবং আল্লাহ তায়ালা কবরবাসীদেরকে জমীনবাসীদের দো'আর কারণে পর্বত সমতুল্য রহমত পৌঁছান,আর জীবিতদের পক্ষ থেকে মুর্দাদের জন্য হাদিয়া হল তাদের জন্য ক্ষমা চাওয়া।( বায়হাকী - শুআবুল ঈমানে,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২২৪৬,পৃ:- ৩৪২,যুগ জিজ্ঞাসা,পৃ:- ৩৩১)।


** (তাবেয়ী) হারেস ইবনে মুসলীম

তামিমী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পিতা থেকে।তিঁনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,একবার তিঁনি (হুযুর) তাকে চুপে চুপে বললেন,যখন তুমি

মাগরিবের নামায থেকে অবসর গ্রহণ করবে,

কারও সাথে কথা বলার পূর্বে সাতবার বলবে," আল্লহুম্মা আজিরনী মিনান্নার।" আল্লাহ! আমাকে দোযখ থেকে বাচাঁও।যখন তুমি তা বলবে তারপর ঐ রাতে মৃত্যুবরন করবে,

তোমার জন্য দোযখ থেকে ছাড়পত্র লেখা হবে।এভাবে যখন তুমি ফজরের নামায

পড়ে ওভাবে বলবে,তারপর যখন তুমি ঐ দিনে মৃত্যুবরন করবে,তোমার জন্য দোযখ থেকে ছাড়পত্র লেখা হবে।( আবু দাউদ

শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২২৮৫,

পৃ:- ৩৪৮)।


** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," যখন কোন ব্যক্তি ঘর

থেকে বের হবার কালে বলে " বিছমিল্লাহি

তাওয়াক্বালতু আলাল্লাহ,লা হাওলা ওলা

কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" আল্লাহর নামে

(বের হলাম) আল্লাহর উপর ভরসা করলাম,

আমার কোন উপায় নেই,ক্ষমতা নেই আল্লাহ ব্যতীত;" তখন তাকে বলা হয় পথ পেলে, উপায় পেলে, রক্ষিত হলে।সুতরাং শয়তান তার নিকট থেকে দূর হয়ে যায় এবং অন্য শয়তান এ শয়তানকে বলে,তুমি কি করতে

পারবে সেই ব্যক্তিকে, যাকে পথ দেখানো

হয়েছে,উপায় অবলম্বন দেয়া হয়েছে এবং

রক্ষা করা হয়েছে?( আবু দাউদ শরীফ,আর

তিরমিযী " তখন শয়তান দূর হয়ে যায়" পর্যন্ত।

মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২৩৩০,পৃ:- ৩৫৩)।


** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অধিকাংশ সময়ের দো'আ ছিল:- ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﺁﺗِﻨَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻭَﻓِﻲ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻭَﻗِﻨَﺎ ﻋَﺬَﺍﺏَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ " হে আমাদ প্রতিপালক! আমারেকে দুনিয়ায় কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে আখিরাতে কল্যাণ দাও আর আমাদেরকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা করো।’( আল - কুরআন)।( বুখারী ও মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২৩৭৩,পৃ:- ৩৫৮)।


** হযরত মুআয ইবনে আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু

আনহু থেকে বর্ণিত,রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি খানা খাওয়ার পর এ দো'আ " আল হামদু লিল্লাহিল্লাযী আত্ব আমানী হাযাত তোআমা ওয়া রযাকানীহি মিন গইরি হাওলিম মিন্নী

ওয়ালা কুওয়াতিন," পড়ে,তার অতীতের সমস্ত

গুনাহ মাফ হয়ে যায়।( তিরমিযী,আর আবু দাউদ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন,যে ব্যক্তি নূতন কাপর পরিধান করে এ দো'আ " আল হামদু লিল্লাহিল্লাযী কাসানী হাযা ওয়া রযাকানীহি মিন গইরি হাওলিম মিন্নী ওয়ালা

কুওয়াতিন" পড়ে,তার পূর্বের ও পরের সমস্ত

গুনাহ মাফ হয়ে যায়।( মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৪১৪৯,পৃ:- ৬২১ - ৬২২)।


** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," কোন বান্দা পিতা - মাতা উভয়জন কিংবা তাদের একজন এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে যে,সে তাদের অবাধ্য ছিল। কিন্তু তাদের। মৃত্যুবরনের পর সে - ই তাদের জন্য সর্বদা দো'আ করে এবং তাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা চায়,ইস্তিগফার করে।অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তাকে পূন্যবানদের অন্তর্ভূক্ত করেন।

(বায়হাকী শরীফ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৪৭২৫,পৃ:- ৬৯৩)।


** হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী

রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে,

নবিয়্যে করীম,রউফুর রহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন," কোন দু:খ,কোন ব্যথা,কোন উদ্বেগ - উৎকন্ঠা,কোন কষ্ট,কোন দুর্ভোগ ও কোন পেরেশানী মুসলমান পায় না,এমনকি

কাঁটাও যা বিদ্ধ হয়,বরং আল্লাহ তায়ালা এগুলোর কারণে তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন।" (বুখারী শরীফ,খন্ড - ৭ম,হাদীস 

নং- ৫৬৪১ - ৫৬৪২,পৃ:- ৩,ক্ষুধার ফযীলত,

পৃ:- ১৬৪)।


** আমীরুল মু'মিনীন, মাওলায়ে

কায়েনাত,শেরে খোদা হযরত আলী

রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে,দো - জাহানের, সুলতান আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফরমানে ফযীলত নিশান হচ্ছে," যে কেউ যমীন থেকে এমন কাগজ উঠিয়ে নেবে যাতে আল্লাহর নাম সমূহ হতে কোন নাম ( লিখা) থাকবে,তাহলে আল্লাহ ঐ উত্তোলনকারী ব্যক্তির নামকে ( রুহ সমূহের সবচেয়ে উঁচু স্থান) ইল্লিয়্যীন এ উঁচু স্থান দিবে এবং তার মাতা - পিতার আযাব কমিয়ে হালকা করে দিবে যদিও তার মাতা - পিতা

কাফির হোক।"( মাজমাউয যাওয়ায়িদ,খন্ড -

৪র্থ,পৃ:- ৩০০,বিসমিল্লাহর ফযীলত,পৃ:- ৯৬)।


** হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যখন বান্দা গুনাহ স্বীকার করে এবং মাফ চায়,আল্লাহ তা কবূল করেন।(বুখারী ও মুসলীম শরীফ,মিশকাত শরীফ,

হাদীস নং- ২২২২,পৃ:- ৩৩৯)।


** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন," আল্লাহ বলেন - হে আদম সন্তান! যতক্ষন তুমি আমাকে ডাকবে

এবং আমার ক্ষমার আশা রাখবে,আমি তোমাকে ক্ষমা করব - তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন,আমি কারও পরওয়া করিনা। আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ

পর্যন্তও পৌঁছে,তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও,আমি তোমাকে ক্ষমা করব; আমি কারও পরওয়া করিনা।আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমান গুনাহ নিয়েও আমার

সাক্ষাত কর এবং আমার সাথে কাউকেও

শরীক না করে আমার সাক্ষাত কর,আমি পৃথিবী পরিমান ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব।( তিরমিযী শরীফ,আর আহমদ ও দারেমী হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২২২৮,

পৃ:- ৩৪০)।


** হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে সব সময় ক্ষমা চায়,আল্লাহ তায়ালা তার জন্য সংকীর্ণতা থেকে একটি পথ বের করে দেন এবং প্রত্যেক চিন্তা থেকে মুক্তি দেন,আর তাকে রিযিক দান করেন যেখান থেকে সে কখনও ভাবেনি।(আহমদ,আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ শরীফ, 

মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২২৩০,পৃ:- ৩৪০)।


** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," আল্লাহ আযযা ও জাল্লা বেহেশতে তাঁর কোন নেক বান্দার মর্যাদা বুলন্দ করবেন আর সে বলবে,প্রভূ হে! আমার এ মর্যাদা বৃদ্ধি কি কারনে হল? তখন আল্লাহ বলবেন," তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা চাওয়ার কারণে।( মুসনাদে আহমদ,মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২২৪৫,পৃ:- ৩৪২)।


** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু

বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি কোন মযলুমের

ফরিয়াদে সাহায্য করবে,আল্লাহ তায়ালা

তার জন্য তিহাত্তরটি (৭৩) মাগফিরাত লিপিবদ্ধ করবেন।

তন্মধ্যে একটি মাগফিরাত হল তার সমুদয় বিষয়ের সংশোধন ;আর বাহাত্তরটি হল কিয়ামতের দিন তার মর্যাদা বৃদ্ধির উপকরণ।(বায়হাকী শোআবুল ঈমান,মিশকাত শরীফ,

হাদীস নং- ৪৭৮০,পৃ:- ৬৯৯)।


** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ

রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে মুমিন বান্দার আল্লাহর(আযাবের) ভয়ে দু চক্ষু থেকে অশ্রু বের হয়,যদিও তা মাছির মাথার পরিমান হয়; তারপর তার কিছু তার চেহারার উপর

গড়িয়ে পড়ে,আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম

হারাম করে দেন।( ইবনে মাজাহ শরীফ,

মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ৫১২৭,পৃ:- ৭৪৪)।


** ইবনে আবিদ দুনইয়া "মুজাবি - উদ -

দাওয়াত" গ্রন্থে,আনাছ ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেছেন,তিনি (আনাছ) বলেন; রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এক সাহাবীর ডাকনাম

ছিলো আবু মি'লাক। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন।

নিজের এবং অন্যান্যদের মাল দ্বারা ব্যবসা করতেন। তিনি অত্যন্ত ইবাদতকারী ও মুত্তাকি। একদা তিনি সফরে যান।পথিমধ্যে অস্ত্রসজ্জিত এক ডাকাতের সাথে তার সাক্ষাত হয়।সে বলে,তুমি তোমার সমস্ত মাল এখানে রেখে দাও,আমি তোমাকে হত্যা করব।

ঐ সাহাবী বললেন,তুমি আমার মাল নিতে চাও - নিয়ে নাও,ডাকাত বলল: না, আমি রক্ত বহাতে চাই।

সাহাবী বললেন,আমাকে একটু অবকাশ দাও - আমি নামায পড়ে নিই।ডাকাত বলল,তোমার যত ইচ্ছা পড়ে নাও।

অতএব,তিনি অযু করে নামায পড়লেন এবং

দো'আ করলেন :- " ইয়া ও দুউ দু ইয়া যাল 'আরশিল মাজিদু ইয়া ফা'আআ লুল্লিমা ইউরিদু আছআলুকা বি'ইযযাতি কাল্লাতি লা

তুরামু ও মূলুকিকাল্লাযী লা ইয়াদ্বমু ও

বিনূরিকাল্ললাযী মালা আরকানা 'আরশিকা আং তাকফীনি শাররা হাযাল লাচ্চ্বা ইয়া মুগীছু আগিছনী।" তিনি তিনবার এই দো'আ করলেন।অমনি দেখা গেলো একজন অশ্বারোহীর আবির্ভাব ঘটল।

যার হাতে ছিল একটি বর্শা।সে ঐ ডাকাতকে

বর্শার আঘাতে হত্যা করলো।তারপর ব্যবসায়ীর দিকে তাকাল।ব্যবসায়ী বললেন,

তুমি কে? আল্লাহ তায়ালা তোমার মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করেছেন; সে বললো, আমি চতুর্থ আসমানের ফেরেস্তা - যখন আপনি ( প্রথম বার) দু'আ করলেন,তখন আমি

আসমানের দরজা সমূহের খটখট শব্দ শুনি।যখন আপনি দ্বিতীয় বার দু'আ করলেন,তখন আমি আসমানবাসীদের আর্ত - চিৎকার শুনতে পাই।

তারপর আপনি যখন তৃতীয় বার দু'আ করলেন,তখন কেউ একজন বললো এটি হচ্ছে বিপন্ন ব্যক্তির দু'আ। আমি তখন আল্লাহ তায়ালার দরবারে নিবেদন করলাম - যেন ঐ ডাকাতকে হত্যা করার দায়িত্ব আমার উপর

অর্পন করা হয়।তারপর ফিরিস্তা বললেন,

আপনি সুসংবাদ নিন,যে ব্যক্তি অযু করে চার রাকা'আত নামায পড়বে; তারপর এই দু'আ করবে, তার দু'আ অবশ্যই কবুল হবে।চাই সে বিপদগ্রস্থ হোক বা না হোক। (ইসাবা,খন্ড - ৪র্থ,পৃ:- ১৮২,হায়াতুস সাহাবা,খন্ড - ৩য়,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন।পৃ:- ৪৩৪ - ৪৩৫)।

__________________

ফয়যানে শরিয়ত ও মারফত (আমলের ভান্ডার)

লেখক : মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন