পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত

  

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত


** উভয় জগতের সুলতান, নবী করীম হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বানী হচ্ছে," যে ব্যক্তি নিজের সন্তানকে কুরআনে করীম তিলাওয়াত শেখায়,এর কারণে তার আগে পরে সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।( মাজমাউয যাওয়ায়িদ, খন্ড- ৭ম, হাদীস নং:- ১১৭২১,পৃ:- ৩৪৪, খাবারের ইসলামী নিয়মাবলী, পৃ:- ৩০৩)।

** তাফসীরে রুহুল বয়ানে সপ্তম পারায় সূরা আন'আমের আয়াত - "ও হাযা কিতাবুন আংজালনাহু মুবারকুন"- এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে, হযরত আরজ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি কুরআন খতম করেন,তাঁর মুনাজাতে চার হাজার ফিরিস্তা আমীন বলেন এবং সন্ধ্যা বা সকাল পর্যন্ত তার জন্য দুআ ও মাগফিরাত কামনা করতে থাকেন।( তাফসীরে রুহুল বয়ান ও ইমাম নববীর " কিতাবুল আযকার", জা'আল হক দ্বিতীয়াংশ,পৃ:- ৬৭)।

** হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি নামাযে দাঁড়িয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে, সে প্রতিটি অক্ষরের পরিবর্তে একশটি নেকী পায়। যে নামাযে বসে কুরআন তিলাওয়াত করে, সে প্রতিটি অক্ষরের পরিবর্তে পঞ্চাশটি নেকী পায়। এবং অযু ব্যতীত পাঠ করে সে দশটি সওয়াব পায়। রাতে নামাযে দাঁড়িয়ে পড়া সর্বোত্তম।(ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:-২২৯)।

** হযরত আবু মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন", সে মু'মিনের উপমা - যে কুরআন পড়ে, যেন তুরঞ্জ ফল, যার গন্ধ উত্তম এবং স্বাদও উত্তম; আর সে মু'মিনের উপমা - যে কুরআন পড়ে না, যেন খেজুর; যার কোন গন্ধ নেই, তবে তার স্বাদ উত্তম। আর সে মুনাফিকের উপমা - যে কুরআন পড়ে না, যেন তিত ফল, যার কোন গন্ধ নেই অথচ তার স্বাদও কটু এবং সে মুনাফিকের উপমা - যে কুরআন পড়ে, যেন ফুল,যার গন্ধ আছে,অথচ তার স্বাদ কটু।(বুখারী ও মুসলীম,মিশকাত শরীফ, হাদীস নং:- ২০১২, পৃ:- ৩১২)।

** হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন", যে কুরআন পড়েছে,এবং তাকে মুখস্ত রেখেছে, তারপর তার হালালকে হালাল - এবং হারামকে হারাম জেনেছে,তাকে আল্লাহ বেহেশতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশ ব্যক্তি সম্পর্কে তার সুপারিশ কবুল করবেন, যাদের প্রত্যেকের জন্য দোযখ অবধারিত হয়েছিলো। (আহমদ,তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও দারেমী, মিশকাত শরীফ, হাদীস নং :- ২০৩৮,পৃ:- ৩১৬)

** হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম একটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন দেখলেন, সেই কবরে শায়িত মৃতের উপর চরম আযাব হচ্ছে। এটা দেখে তিনি কিছুদূর এগিয়ে গেলেন। সেখানে থেকে শৌচকর্ম সেরে ফিরে আসলেন। আবার সে কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন দেখলেন যে, কবরটি পরিপূর্ন আলোই ঝলমল করছে এবং সেখানে রহমতে এলাহী'র বর্ষণ হচ্ছে। তিনি চরম আশ্চর্যাম্বিত হলেন এবং আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন আমাকে এর রহস্য বলুন! ঘোষণা হয়েছে হে রুহুল্লাহ! এ লোক চরম পাপী ও বদ অভ্যাসী ছিলো, এ জন্য সে আযাবে ফেঁসেছিলো। কিন্তু সে স্বীয় স্ত্রীকে গর্ভাবস্থায় রেখে এসেছিলো। তাঁর ছেলে হয়েছে, আজ তাকে মক্তবে পাঠানো হয়েছে।

শিক্ষক তাকে " বিছমিল্লাহ" পড়িয়েছেন। আমার লজ্জা হচ্ছে যে, জমীনের মধ্যে এই লোকটাকে আযাব দিবো। কারণ, তার বাচ্চা জমীনে আমার নাম স্বরণ করছে।( তাফসীরে নাঈমী - ১ম খন্ড, পৃ:- ১২০)।


কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত (সূরা)

_____________

** রসূলে করীম রউফুর রহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,"তোমরা দুটি সমুজ্জল সূরা পাঠ করতে থাক। সূরা বাক্বারা ও সূরা আলে ইমরান।কেননা, এ দুটি সূরা কেয়ামত দিবসে তিলাওয়াতকারী তিলাওয়াতের প্রতিদান স্বরুপ ছায়া দান করবে এবং আল্লাহর দরবারে তিলাওয়াতকারীর জন্য ঝগড়া করে শাফায়াত করবে। ( সুবহানাল্লাহ)। (তাফসীরে বায়জাভী ও নঈমী শরীফ, মাসিক তরজুমান মাহে রজব - ১৪৩১ হি:, পৃ:- ৫)।

** হাদীস শরীফের মধ্যে আছে যে, যে ঘরের মধ্যে প্রত্যহ সূরা বাক্বারা শরীফ তিলাওয়াত করা হয়, সে ঘর শয়তান থেকে রক্ষিত থাকবে। সুতরাং জিনদের রোগ থেকেও নিরাপদ থাকবে। যে ব্যক্তি সকাল - সন্ধ্যা ও ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরছি পাঠ করে, ইনশাআল্লাহ! তার ঘর আগুন লাগা ও চুরি থেকে নিরাপদ থাকবে। সূরা ফালাক্ব ও নাছ পাঠ করার কারণে ঝড় - বায়ু ও অন্ধকার দূরীভূত হয় এবং এর নিয়মিত পাঠক ইনশাআল্লাহ! জাদু থেকে রক্ষা পাবে।( আশরাফুত তাফাসীর - তাফসীরে নঈমী, খন্ড- ১ম, পৃ:- ৮৫-৮৬)।

** রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যেমন প্রত্যেক জিনিসের উচ্চতা থাকে তেমনই কুরআনের উচ্চতা হচ্ছে সূরা বাক্বারাহ। যে ব্যক্তি রাত্রিকালের নীরব ক্ষনে নিজের নিভৃত কক্ষে তা পাঠ করে, তিন রাত্রি পর্যন্ত শয়তান সেই ঘরে যেতে পারেনা। আর দিনের বেলায় যদি পড়ে তাহলে তিন দিন পর্যন্ত সেই ঘরে শয়তান পা দিতে পারেনা।( তাবরানী - ৬/১৬৩, ইবনে হিব্বান - ২/৭৮, দুরুদ পড় নবীর নামে! শাফায়াত করবেন আখেরাতে - পৃ:- ৫০২)।

** নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন," কুরআন মজিদে এমন একটি সূরা রয়েছে যা তিলাওয়াতকারীর জন্য আল্লাহর দরবারে শাফায়াত এবং এটার তিলাওয়াত শ্রবণকারীর গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হবে। তোমরা জেনে রাখ এই সূরা হল ইয়াছিন শরীফ।(তাফসীরে কাশশাফ, মাসিক তরজুমান মাহে জমাদিউল আউয়াল - ১৪৩৩ হি:,পৃ:- ৪০)।

** নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন," যে মুমিন নর -নারীর নিকট মৃত্যুর ফেরেশতা হযরত আযরাঈল আলাইহিস সালাম ( রুহ কবজ করার জন্য) অবতীর্ণ হওয়ার মূহুর্তে সূরা ইয়াছিন তিলাওয়াত করা হলে এ সূরার প্রত্যেক হরফের বদলায় দশজন করে ফেরেশতা নাযিল হবে যারা এ মুমিন ব্যক্তির সম্মুখে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষণের দোয়া করবে। তার জন্য মাগফিরাত কামনা করবে, তাকে গোসল দেয়ার সময়ও তারা উপস্থিত থাকেন এবং দাফনের সময় উপস্থিত হয়ে তাঁর জন্য দোয়া করেন। তাই মৃত্যুর নিকটবর্তী মুসলিম নর - নারীর শিয়রে সূরা ইয়াছিন পাঠ করা অনেক বরকতময়। ( তাফসীরে কাশশাফ ও জামে তিরমিযী, মাসিক তরজুমান মাহে জমাদিউল আউয়াল - ১৪৩৩ হি: পৃ:- ৪০)।

** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," প্রত্যেক জিনিসের একটি কলব( হৃদয়) রয়েছে, আর কুরআনের কলব হলো " সূরা ইয়াছিন"। যে তা একবার পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তার দরুন তার জন্য দশ বার কুরআন পড়ার সওয়াব নির্ধারণ করবেন।(তিরমিযী ও দারেমী, মিশকাত শরীফ , হাদীস নং- ২০৪৪, পৃ:- ৩১৬)।

** ( তাবেয়ী) হযরত আতা ইবনে রাবাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার নিকট বিশ্বস্ত সূত্রে এ কথা পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনের প্রথম দিকে " সূরা ইয়াছিন" পড়বে,তার সমস্ত প্রয়োজন পূর্ণ হবে।( দারেমী, মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০৭৩, পৃ:- ৩১৯)।

** হযরত মা'কেল ইবনে ইয়াসার মুযানী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে " সুরা ইয়াসিন" পড়বে,তার পূর্ববর্তী সগীরা গুনাহ সমূহ মাফ করা হবে, সুতরাং তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের নিকট তা পড়বে।(বায়হাকী শুআবুল ঈমান,মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০৭৪, পৃ:- ৩১৯)।

** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, " যে ব্যক্তি প্রত্যেক রাতে সূরা ওয়াকেয়াহ পড়বে, কখনও সে দারিদ্রে পতিত হবে না। (পরবর্তী রাবী বলেন) হযরত (আবদুল্লাহ) ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর কন্যাদেরকে প্রত্যেক রাতে তা পড়তে বলতেন।( বায়হাকী শুআবুল ঈমান, মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০৭৭,পৃ:- ৩১৯)।

** হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু একজন লোককে বললেন, আমি কি তোমাকে একটি উপহার দেব না - যাতে তুমি খুশি হয়ে যাবে? লোকটি বললেন অবশ্যই! ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি সূরা মুলক অর্থাৎ তাবা র কাল্লাযী পড়ো, মুখস্ত করো, এবং তোমার পরিবার, সন্তান, ঘরের শিশু - প্রতিবেশী সবাইকে উক্ত সূরা শিক্ষা দাও। কেননা,উহা নাজাতদানকারী। কিয়ামতের দিনে উহা পাঠকারীর পক্ষে আল্লাহর কাছে দস্তুর মত ঝগড়া করবে। উহা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করবে। যাতে তিলাওয়াতকারীকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করা হয়। যতক্ষন পর্যন্ত উহা তিলাওয়াতকারীর পেটে ( মুখস্ত) থাকে। আল্লাহ পাক এই সূরা পাঠকারীকে কবরের আযাব থেকেও রক্ষা করবে।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন," আমি একথা পছন্দ করি - এই সূরা যেন আমার উম্মতের সকলের ক্বলবে থাকে।( মুসনাদে আবদ ইবনে হামীদ, হায়াত মউত + কবর হাশর, পৃ:- ৮৯)।

** আমিররুল মু'মিনীন মাওলায়ে কায়েনাত আলী মুরতাজা শেরে খোদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন," যে কেউ শবে ক্বদরে সূরা ক্বদর সাত বার পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রত্যেক বালা - মুসিবত থেকে নিরাপত্তা দান করেন। আর সত্তর হাজার ফিরিশতা তার জন্য জান্নাত প্রাপ্তির দো'আ করেন। যে ব্যক্তি ( সারা বছরে যখনই) জুমার দিন জুমার নামাযের পূর্বে তিনবার সূরা ক্বদর পড়ে, আল্লাহ তায়ালা ওই দিনে সমস্ত নামায সম্পন্নকারীর সংখ্যার সমান নেকী তার আমলনামায় দান করেন। ( নুযহাতুল মাজালিস,খন্ড - ১ম,পৃ:- ২২৩ ও রমজানের ফজিলত, পৃ:- ২৩৭)।

** হযরত ইবনে আব্বাস ও আনাছ ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু আমহুমা বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," সূরা ইযা যুলযিলাত" ( সাওয়াব) কুরআনের অর্ধেকের সমান," ক্বুল হুওল্লাহু আহাদ" এক তৃতীয়াংশের সমান এবং ক্বুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন" এক চতুর্থাংশের সমান। ( তিরমিযী, মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২০৫২, পৃ:- ৩১৭)।

** হযরত ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন," তোমাদের মধ্যে কেউ কি প্রত্যহ হাজার আয়াত পড়তে পারেনা? সাহাবীগণ বললেন, কে প্রত্যহ হাজার আয়াত পড়তে পারবে? তখন তিঁনি বললেন, তবে কি তোমাদের কেউ প্রত্যহ সূরা " আলহাকুমুত তাকাছুর" পড়তে পারে না? ( বায়হাকী - শুআবুল ঈমানে, মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০৮০, পৃ:- ৩২০)।

** হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত - তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন," তোমাদের মধ্যে কেউ কি রাত্রিকালে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করতে পারে না? সাহাবীগণ আরজ করলেন," কুরআনের এক তৃতীয়াংশ কিভাবে পাঠ করা যায়? রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন," ক্বুল হুওল্লাহু আহাদ( সম্পূর্ণ সূরা ইখলাছ) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। ( বুখারী ও মুসলীম, গাউছিয়া তারবিয়াতি নেসাব - প্রকাশনায় :- আঞ্জুমান - এ -  রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাষ্ট,  পৃ:- ৫০১ - ৫০২)।

** হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে এক সেনাদলের সেনাপতি করে পাঠালেন। সে তার সঙ্গীদের নামায পড়াত এবং "ক্বুল হুওল্লাহু আহাদ" দ্বারা " কিরাআত) শেষ করত। যখন তারা মদীনায় ফিরলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এর উল্লেখ করলেন।

তিনি বললেন, তাকে জিজ্ঞাসা করো,সে কি কারণে এরকম করে।তারা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, কেননা - এতে আল্লাহর গুনাবলী পাঠ করতে ভালবাসি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তাকে ভালবাসেন। ( বুখারী ও মুসলীম,মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০২৬, পৃ:- ৩১৪)।

** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি এ সূরা " ক্বুল হুওল্লাহু আহাদ" কে ভালবাসি। হুযুর বললেন, তোমার তাকে ভালবাসা তোমাকে বেহেশতে পৌঁছিয়ে দিবে। ( তিরমিযী, আর বুখারী তার সমার্থ একটি হাদীস বর্ননা করেছেন। মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০২৭,পৃ:- ৩১৫)।


** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন; যেব্যক্তি প্রত্যেক দিনে দু'শত বার সূরা " ক্বুল হুওল্লাহু আহাদ" পড়বে, তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মুছে দেওয়া হবে যদি তার উপর ঋনের বোঝা না থাকে। ( তিরমিযী ও দারেমী, কিন্তু দারেমীর বর্ণনায় ( দু' শতের স্থলে) পঞ্চাশ বারের কথা রয়েছে।এবং ঋনের কথা উল্লেখ করেননি।( কোন কোন ব্যাখ্যাকারের মতে দু'শত বারের বর্ণনায় ঠিক।মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২০৫৪,পৃ:- ৩১৭)।

** হযরত আনাছ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ঘুমাবার ইচ্ছায় শয্যা গ্রহন করবে এবং ডান পার্শ্বের উপর শয়ন করবে তারপর একশত বার সূরা " ক্বুল হুওল্লাহু আহাদ" পড়বে, যখন কিয়ামতের দিন আসবে, পরওয়ারদেগারে আলম তাকে বলবেন হে আমার বান্দা! তোমরা ডান দিকের বেহেস্তে প্রবেশ কর।( তিরমিযী,মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২২৫৫, পৃ:- ৩১৭)।

** (তাবেয়ী) হযরত সায়ীদ ইবনে মুসাইয়্যাব মুরসাল হিসেবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন," যে দশ বার " ক্বুল হুওল্লাহু আহাদ" পড়বে, তার জন্য বেহেশতে একটি বালাখানা তৈরি করা হবে। যে বিশ বার পড়বে তার জন্য বেহেশতে দুটি বালাখানা তৈরি করা হবে,আর যে ত্রিশ বার পড়বে, তার জন্য বেহেশতে তিনটি বালাখানা তৈরি করা হবে। এটা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, খোদার কসম! ইয়া রসূলাল্লাহ! তবে তো আমরা বহু বালাখানা লাভ করবো,হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহররহমত এটা অপেক্ষাও অধিক প্রশস্ত। ( এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই হে ওমর)। ( দারেমী, মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২০৮১,পৃ:- ৩২০)।

** হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন প্রত্যেক রাতে শয্যা গ্রহন করতেন,দু'হাতের তালু একত্র করতেন: তারপর তাতে " ক্বুল হুওল্লাহু আহাদ", " ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক্ব ও ক্বুল আউযু বিরব্বিন নাছ", পড়ে ফুঁ দিতেন। এরপর সেগুলো দ্বারা নিজের শরীরের যাহা সম্ভব হত মুছে ফেলতেন। আরম্ভ করতেন মাথা ও চেহারা এবং শরীরের সম্মুখ ভাগ থেকে। এভাবে তিনি তিনবার করতেন। ( বুখারী ও মুসলীম, মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০২৯,পৃ:- ৩১৫)।

** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে খুবায়ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার আমরা ঝড় - বৃষ্টি ও ঘোর অন্ধাকারময় এক রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তালাশে বের হলাম এবং তাঁকে পেলাম।তখন তিনি বললেন, পড়িও! আমি বললাম কি পড়বো? তিঁনি বললেন, তিন বার পড়বে " ক্বুলহু ওল্লাহু আহাদ" " ক্বুল আউযু বিরব্বিল ফালাক্ব " ও " ক্বুল আউযু বিরব্বিন নাছ"। যখন তুমি সকাল করবে ও যখন তুমি সন্ধ্যা করবে। এটা প্রত্যেক বস্তুর ( বিপদাপদে) মুকাবিলায় তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। ( তিরমিযী,আবু দাউদ ও নাসায়ী, মিশকাত শরীফ, হাদীস  নং- ২০৫৯,পৃ:- ৩১৮)।

** হযরত ওকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! ( বিপদ থেকে রক্ষার ব্যাপারে) আমি কি সূরা হুদ পড়বো, না সূরা ইউসুফ? তিনি বললেন, এ ব্যাপারে সূরা " ক্বুল আউযু বিরব্বিল ফালাক্ব" অপেক্ষা আল্লাহর নিকট উত্তম কোন সূরা তুমি কখনো পড়তে পারবে না।( আহমদ, নাসায়ী ও দারেমী,মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০৬০, পৃ:- ৩১৮)।

** হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,এক সময় হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন, এমন সময় উপর দিক থেকে একটি দরজা খোলার শব্দ শুনলেন।তিনি উপর দিকে মাথা উঠালেন এবং বললেন, আসমানের এ যে দরজাটি আজকে খোলা হল,এটা আজকের পূর্বে আর কখনও খোলা হয়নি। ( হুযুর বললেন) তা থেকে একজন ফেরেশতা নামলেন, ইনি আজকের দিন ছাড়া ইত:পূর্বে আর কখনও যমীনে নামেননি। ( হুযুর বললেন) তিনি সালাম করলেন, তারপর আমাকে বললেন, দুটি নূরের ( জ্যোতির) সুসংবাদ গ্রহন করুন। যা আপনাকে দেয়া হয়েছে এবং আপনার পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি - সূরা ফাতেহা ও সূরা বাক্বারার শেষাংশ। আপনি উহাদের যে কোন বাক্যই পড়বেননা কেন,নিশ্চয় - আপনাকে তা দেয়া হবে। ( মুসলীম শরীফ, মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০২২, ৩১৪ ও হযরত নুমান বিন বশীর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় মুসলীম শরীফের বরাতে, " কাদেরিয়া তরিকার শাজরাহ শরীফ, পৃ:- ৯৩ - ৯৪)।


কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত ( আয়াত)

_______________

** হযরত সায়্যিদুনা জাবির বিন আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,যখন " বিছমিল্লাহির রহমানির রহীম" অবতীর্ণ হলো তখন মেঘ পূর্ব দিকে ছুটে চলল, বাতাস স্তব্দ হয়ে গেল, সমুদ্র উত্তেজনায় এসে পড়ল, চতুষ্পদ জন্তু সমূহ মনোযোগ সহকারে শুনার জন্য নিজেদের কান লাগিয়ে দিল ও শয়তানদেরকে আসমান থেকে পাথর নিক্ষেপ করে হলো এবং আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা ইরশাদ করলেন, " আমার সম্মান ও মহত্বের শপথ! যে বস্তুর উপর " বিছমিল্লাহির রহমানির রহীম" পাঠ করা হয় - আমি তাতে বরকত দান করবো। ( আদ দুররুল মানসুর, খন্ড - ১ম, পৃ:-২৬ ও বিছমিল্লাহর ফযীলত,পৃ:- ২ - ৩)।


** হযরত সায়্যিদুনা ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তাজেদারে মদীনা প্রিয় মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনন্দদায়ক ফরমান হচ্ছে," যে ব্যক্তি " বিছমিল্লাহির রহমানির রহীম" পাঠ করবে, আল্লাহ প্রত্যেক অক্ষরের বিনিময়ে তার আমলনানায় ৪ হাজার নেকী লিপিবদ্ধ করে দেবেন, ৪ হাজার গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং ৪ হাজার পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে দেবেন। ( ফিরদাওসুল আখবার, খন্ড- ৪র্থ, হাদীস নং- ৫৫৭৩ ও বিছমিল্লাহর ফযীলত,পৃ:- ৪৭)।

** যে ব্যক্তি কোন প্রানীর উপর আরোহন করার সময় " বিছমিল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ " পড়ে নিবে,তখন সেই প্রানীর প্রতিটি কদমের জন্য সেই আরোহীর অনূকুলে একটি সওয়াব বা কল্যান লিপিবদ্ধ হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি কোন নৌযানে আরোহন করার সময়, " বিছমিল্লাহির ও আলহামদুলিল্লাহ" পড়ে নিবে, যতক্ষন পর্যন্ত সে সেই আরোহনে বর্তমান থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত তাঁর জন পূন্য ও কল্যান লিপিবদ্ধ হবে।( আশরাফুত তাফাসীর - তাফসীরে নাঈমী,খন্ড - ১ম, পৃ:- ১১৯)।

** হানাফী মাযহাবের ফিক্বহ এর কিতাব সমূহের মধ্যে বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ " দুররে মুখতার" কিতাবে রয়েছে, এক ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে এ অসিয়ত করলো যে, ইন্তিকালের পর আমার সীনা ও কপালে " বিছমিল্লাহির রহমানির রহিম" লিখে দেবে, সুতরাং তাই করা হলো। অত:পর কেউ স্বপ্নে তাকে দেখে তাঁর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলো। সে বলল যে, যখন আমাকে কবরে রাখা হলো,তখন আযাবের ফিরিশতাগণ আসলো,অত:পর আমার কপালে যখন " বিছমিল্লাহির রহমানির রহীম" লিখা দেখলো তখন বললো যে, তুমি আযাব থেকে বেঁচে গেছো। ( রদ্দুল মুহতার সম্বলিত দুররে মুখতার, খন্ড - ৩য়, পৃ:- ১৫৬, বিছমিল্লাহর ফযীলত - পৃ:- ৬৭ ও জা'আল হক,পৃ:- ১৬৯ - ১৭০)।

** ইমাম বায়হাকী এবং সাঈদ ইবনে মনসূর হযরত মুগীরা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, " যে ব্যক্তি নিদ্রার প্রাক্কালে সূরা বাক্বারার দশটা আয়াত পাঠ করবে, সে কখনো কুরআন শরীফ ভূলবেনা। আয়াত গুলো হচ্ছে:- এ সূরার ( বাক্বারার) প্রথম চার আয়াত, আয়াতুল কুরছি ও তদসংলগ্ন দু'আয়াত ও সুরার শেষ তিনটি আয়াত। ( তাফসীরে খাজাইনুল ইরফান, কৃত :- সদরুল আফাযিল নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি,পৃ:- ৪)।

** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর উক্তি আছে যে, যে ঘরে সূরা বাক্বারার প্রথম চারটি আয়াত, আয়াতুল কুরছি,তার পরবর্তী দুটি আয়াত এবং শেষের তিনটি আয়াত, এই দশটি আয়াত পাঠ করা হয়,শয়তান সেই ঘরে ঐ রাতে যেতে পারেনা এবং সেইদিন ঐ বাড়ীর লোকদের শয়তান অথবা কোন খারাপ জিনিস কোন ক্ষতি করতে পারে না।( দারিমী,খন্ড - ২য়,পৃ:- ৩২২, দুরুদ পড় নবীর নামে, শাফায়াত করবেন আখেরাতে, পৃ:- ৫০২)।

** হযরত আবু মাসউদ আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," সূরা বাক্বারার শেষ দু' আয়াত - যে তা রাতে পড়বে, তার তা যথেষ্ট হবে।( বুখারী ও মুসলীম, মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০২৩,পৃ:- ৩১৪)।

** ( তাবেয়ী) জুবায়ের ইবনে নুফায়র রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," আল্লাহ তায়ালা সূরা বাক্বারাকে এমন দুটি আয়াত দ্বারা সমাপ্ত করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নীচের ভান্ডার থেকে দান করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা তা শিক্ষা করবে এবং তোমাদের নারীদেরকেও তা শিক্ষা দিবে। কেননা, তাতে রয়েছে ক্ষমা - প্রার্থণা, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় ও দোয়া।  (দারেমী - মুরসাল হিসেবে, মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০৬৯, পৃ:- ৩১৯)।

** হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইরশাদ করেছেন যে,আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি,যে ব্যক্তি প্রতি নামাজের পর আয়াতুল কুরছি পড়বে,তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা হতে কোন বস্তু বাধা দিতে পারবে না। মৃত্যু হওয়া মাত্র জান্নাতে চলে যাবে। যে ব্যক্তি রাতে আয়াতুল কুরছি পড়বে, সে তার প্রতিবেশী ও আশপাশের লোকজন শয়তান ও চোর হতে নিরাপদে থাকবে। ( শুআবুল ঈমান ও বায়হাকী শরীফ, কাদেরিয়া তরিকার শাজরাহ শরীফ,পৃ:- ৯০)।

** হাদীস শরীফে আছে যে, কেহ বিপদাপদ ও কষ্টের সময় আয়াতুল কুরছি এবং সূরায়ে বাক্বারার শেষ ২ আয়াত ( আমানার রসূলু) পাঠ করবে,আল্লাহ তায়ালা তার মসীবত ও কষ্ট দূর করে দিবেন।

আয়াতুল কুরছি নিম্নরুপ :-

বিছমিল্লাহির রহমানির রহীম

আল্লহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল ক্বইয়ুম। লা তা' খুজুহু চিনাতুঁও ওলা নাউম।লাহু মা ফিচ্ছামাওয়াতি ওমা ফিল আরদ্বি মাং যাল্লাযী ইয়াসফা'উ 'ইংদাহু ইল্লা বিইজনিহ, ইয়া'লামু মা বাইনা আইদিহিম ওমা খলফাহুম - ওলা ইউ'হিত্বুনা বিশাইয়িম মিন 'ইলমিহী ইল্লা বিমা শাআ,ও চিয়া কুরছিয়্যুহুছ ছামাওয়াতি ওল আরদ্ব। ওলা ইয়া উদুহু ' হিফজুহুমা, ওহুওল 'আলিয়্যুল 'আজীম। (২৫৫)।কাদেরিয়া তরিকার শাজরাহ শরীফ,পৃ:- ৯৩)।


** হযরত আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ( একদা) আমি হযরত আবু বকর ইবনে মুজাহিদের কাছে ছিলাম, তখন শিবলী এলেন, আবু বকর ইবনে মুজাহিদ তার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তার সাথে আলিঙ্গন করলেন। তার দু' চোখের মাঝখানে ( কপালে) চুম্বন করলেন। তখন আমি বললাম, হে আমার সরদার! আপনি শিবলীর সাথে এই ব্যবহার করলেন? অথচ আপনি এবং সমগ্র বাগদাদবাসী তাকে পাগল মনে করে! তখন তিনি উত্তর দিলেন,আমি শিবলীর সাথে সেই ব্যবহারই করলাম,যেমন আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে করতে দেখেছি। তাহলো এই, আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, এই শিবলী হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে এসেছেন,তখন তিঁনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তার দু' চোখের মাঝখানে চুম্বন করলেন। তখন আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি শিবলীর সাথে এই ব্যবহার করেন? ( এতো একজন পাগল)? তিঁনি ফরমালেন, এই শিবলী প্রত্যেক নামাজের পর " লাক্বদ জা আকুম রসূলুম মিন আন ফুছিকুম " সূরার শেষ পর্যন্ত পড়ে। এরপর তিনবার " সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া মুহাম্মাদ" (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঠ করে। হযরত মুহাম্মদ ইবনে ওমর বলেন, যখন শিবলী প্রবেশ করলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,তিনি নামাজের পর কি যিকির করেন? তখন তিনি সেরুপই বর্ণনা করলেন,যেরুপ আমি শুনেছিলাম। ( জালাউল ইফহাম ইবনে কায়্যিম,পৃ:- ২৯৭,যিকর- ই - জামিল,কৃত:- আল্লামা মুহাম্মাদ শফী উকারভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি,পৃ:- ৯৯ - -১০০)।

সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত:-

বিছমিল্লাহির রহমানির রহীম

লাক্বদ জা আকুম রসূলুম মিন আংফুছিকুম 'আযিযুন 'আলাইহি মা 'আনিত্তুম 'হারিছুন 'আলাইকুম বিল মু'মিনীনা রউফুর রহীম। ফাইং তাওল্লাও ফাক্বুল 'হাছবিয়াল্লহু - লা ইলাহা ইল্লা হু, 'আইইহি তাওক্কালতু ওহুয়া রব্বুল 'আরশিল 'আযীম। (১২৮ - ১২৯ নং- আয়াত)।

** হযরত মা'কেল ইবনে ইয়াসার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন; যে ব্যক্তি সকালে উঠে তিনবার বলবে, " আউযু বিল্লাহিছ ছামিয়িল আলীমি মিনাশ শাইত্বনির রজীম" তারপর সূরা হাশরের শেষের তিন আয়াত পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন - যারা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দো'আ করতে থাকবেন। আর যদি সে এদিনে মৃত্যুবরণ করে, মৃত্যুবরণ করবে শহীদরুপে এবং যে ব্যক্তি তা সন্ধায় পড়বে,সেও হবে অনুরুপ মর্তবার অধিকারী।( তিরমিযী ও দারেমী, মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০৫৩, পৃ:- ৩১৭)।

সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত :- হুওল্লহুল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হু,'আলীমুল গইবি ওশশাহাদাতি হুওর রহমানির রহীম। হুওল্লহুল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হু, আল মালিকুল ক্বুদ্দুছুছ ছালামুল মু'মিনুল মুহাইমিনুল আজীজুল জাব্বারুল মুতাকাব্বির; ছুবহানাল্লহি 'আম্মা ইউসরিকুন।হুওল্লহুল খলিক্বুল বা রিউল মুচও উইরু লাহুল আছমাউল হুছনা, ইউছাব্বিহু লাহু মাফিচ্ছামা ওয়াতি ওল আরদ্ব,ওহুওল 'আযীযুল হাকীম।( পারা - ২৮,সূরা হাশর,আয়াত - ২২,২৩,২৪)।

** নোট:- প্রশ্ন, ফজর ও আসরের জামাতের পর সূরা হাশরের শেষাংশ তিলাওয়াতের পূর্বে বিছমিল্লাহির রহমানির রহীম বলা যাবে কিনা,জানালে খুশি হব।

উত্তর:- হ্যাঁ অবশ্যই যাবে।

বরং বিছমিল্লাহির রহমানির রহীম সহকারে কুরআন তিলাওয়াত করবে। কেবলমাত্র সূরা তাওবার শুরুর আয়াত ছাড়া পবিত্র কুরআনের যেকোন সুরা - আয়াত তিলাওয়াত প্রাক্কালে " বিছমিল্লাহ" পড়া সুন্নাত ও অনেক মঙ্গল।( তাফসীরে নাঈমী,তাফসীরে কবীর,যুগ জিজ্ঞাসা, পৃ:-১৩৯ ইত্যাদি)।


** হযরত হাসান ইবনে আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,যে ব্যক্তি কুরআনের বিশটি আয়াত পড়বে,আমি তার যিম্মাদার,জিন শয়তান,মানুষ শয়তান, যালিম,ডাকাত বা কোন হিংস্র প্রানী তার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। আয়াত বিশটি হলো :- আয়াতুল কুরছি ( সূরা বাক্বারা - ২৫৫) সূরা আরাফের তিন আয়াত -৫৪,৫৫,৫৬, সূরা আস সাফফাতের প্রথম দশ আয়াত,সূরা আর রহমানের তিন আয়াত - ৩৩,৩৪,৩৫, ও সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত। ( তাম্বিহুল গাফিলীন,পৃ:- ৫৪১)।

** আমর ইবনে মায়মুন বলেন,যে লোক ফযরের নামায শেষে কুরআন খুলে কমপক্ষে একশ আয়াত তিলাওয়াত করে,আল্লাহ পাক তাকে সমগ্র দুনিয়াবাসীর আমলের সমপরিমান সওয়াব দান করেন। ( ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন,পৃ:- ২২৭)।

** হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে আল্লাহর কিতাবের কোন একটি আয়াত পাঠ করেছে, তার কারণে তার নেকী মিলবে,আর নেকী হচ্ছে আমলের দশগুন। আমি বলছিনা যে, " আলিফ - লাম - মিম"একটি অক্ষর; বরং আলিফ একটি অক্ষর, " লাম" একটি অক্ষর এবং " মিম" একটি অক্ষর। ( সুতরাং আলিফ, লাম,মিম, বললেই ত্রিশটি নেকী পাবে)। ( তিরমিযী ও দারেমী, মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০৩৪,পৃ:- ৩১৫)।

** হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি সকালে সূরা হামীম আল - মু' মিন....... ইলাইহিল মাছির" পর্যন্ত এবং আয়াতুল কুরছি পড়বে, তা দ্বারা তাকে হেফাজত রাখা হবে সন্ধ্যা পর্যন্ত,আর যে তা সন্ধায় পড়বে,তা দ্বারা তাকে হেফাজতে রাখা হবে সকাল পর্যন্ত।( তিরমিযী ও দারেমী, মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ২০৪১, পৃ:- ৩১৬)।

** (তাবেয়ী) হযরত হাসান ( বসরী) রদ্বিয়াল্লাহু আনহু মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করেন,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন," যে রাতে একশটি আয়াত পড়বে, কুরআন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে না ঐ রাতে। আর যে ব্যক্তি রাতে দু'শত আয়াত পড়বে তার জন্য লেখা হবে এক রাতের এবাদত। আর যে ব্যক্তি রাতে পাঁচশ থেকে হাজার আয়াত পর্যন্ত পড়বে,সে ভোরে উঠে এক কিন্তার সওয়াব দেখবে। তারা জিজ্ঞেস করলেন হুযুর" কিন্তার" কী? তিনি বললেন, ১২ হাজার (দীনার পরিমান ওজন)। ( দারেমী, মিশকাত শরীফ, হাদীস নং- ২০৮২, পৃ:- ৩২০)।


** হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি সূরা কাহ্ফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে,সে দাজ্জালের ফিৎনা থেকে নিরাপদ থাকবে। যে কেউ সপ্তাহে একবার " সূরা কাহ্ফ" পড়বে,সে পূর্ণ এক সপ্তাহ পর্যন্ত যে কোন ধরণের ফিৎনা থেকে নিরাপদ থাকবে।( খাযাইন,তাফসীরে নুরুল ইরফান শরীফ - পৃ:- ৮০৮)।

** যে কোন উদ্দেশ্যে একই মজলিসে সাজদার সব ( অর্থাৎ ১৪টি) আয়াত পড়ে সাজদা করে নেয়,আল্লাহ আযযা ও জাল্লা তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন। চাই এক একটি আয়াত পাঠ করার পর একটি একটি সাজদা করতে থাকে কিংবা সবগুলো পাঠ করে সবশেষে এক সাথে ১৪টি সাজদা করে নেয়।(গুনিয়াহ,দুররে মুখতার,নামাযের আহক (হানাফী), পৃ:- ২০৮, ইত্যাদি)।

__________________

ফয়যানে শরিয়ত ও মারফত (আমলের ভান্ডার) 

লেখক : মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন