কালাম অর্থ কথা বা বাক্য আল্লাহ্ তায়ালা কলীম (বাক্যধারী)।তাঁর কালাম বা বাক্যও অবিভাজ্য। আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত তিনি ওই একটি বাক্যের বক্তা। আদেশ, নিষেধ, বিজ্ঞপ্তি, জিজ্ঞাসা, জবাব, সমস্তকিছুই ওই এক, অতুলনীয় ও অবিভাজ্য বাক্যের প্রকাশ। রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণের প্রতি যে সকল কিতাব ও সহিফা অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলো উক্ত অবিভাজ্য বাক্যের কোনো এক পৃষ্ঠা সদৃশ। তওরাত কিতাবের প্রতিলিপি করা হয়েছে সেখান থেকেই। ইঞ্জিলও সেখান থেকে লাভ করেছে অক্ষরের আকার। যবুরও সেখান থেকে আগত। কোরআন শরীফও।
প্রকৃত কালাম এক, মহান আল্লাহর অবতীর্ণ হলো ধরে বিভিন্ন আকার।
আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেছেন, ‘লাইসা কামিছলিহী শাইউঁও ওয়া হুয়াস্ সামিউল বাসীর’। অর্থ কোনোকিছুই তাঁর অনুরূপ নয় এবং তিনি শ্রবণশীল, দ্রষ্টা।
এখানে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, সত্তাগতভাবে তিনি (আল্লাহ্) যেমন অতুলনীয়, এক, অবিভাজ্য গুণাবলীতেও তেমনি। আর নমুনা হিসাবে এখানে দু’টি গুণের (সামা ও বাসার) উল্লেখ করা হয়েছে। এলেম, কালাম, সামা, বাসার তাঁর এরকম সকল গুণাবলীকেই জানতে হবে আনুরূপ্যহীন, এক এবং অবিভাজ্য।
আল্লাহ্ তায়ালার কাজ
____________
আল্লাহ্ তায়ালার কাজসমূহও তেমনি। তাঁর আফআ’ল অর্থাৎ কার্যাবলীও এক। সৃষ্টির আরম্ভ থেকে শেষ পর্যন্ত সকল সৃষ্ট পদার্থ ওই এক কাজ দ্বারাই সৃজিত হয়েছে। এখনো হয়। আগামীতেও হবে।
এসম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালার এরশাদ এরকম ‘‘এবং আমার আদেশ, একই আদেশ ব্যতীত অন্য কিছু নয়, যেমন চোখের একটি পলক’’(সূরা ক্বমার ৫০ আয়াত)।
জীবিতকরণ অথবা মৃত্যুপ্রদান ওই এক- অদ্বিতীয় কাজের উপরেই নির্ভরশীল। কষ্ট প্রদান অথবা অনুগ্রহ প্রদানও তেমনি। সৃজন কিংবা ধ্বংস এরকম সকল কাঙ্খিত অথবা অনাকাঙ্খিত কাজ ওই এক কাজেরই বিভিন্ন বিকাশ।
মোট কথা, আল্লাহ্ তায়ালার কাজের মধ্যে বিভিন্ন সম্বন্ধ নেই। বরং এক সম্বন্ধের ফলেই অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের সমুদয় সৃষ্টি আপন আপন অস্তিত্ব, স্থিতি অথবা বিলয় লাভ করে চলেছে। আর ওই সম্বন্ধটিও অতুলনীয়, অবিভাজ্য এবং আকার-প্রকারহীন। অপরপক্ষে সৃষ্টি (মাখলুক) আকার প্রকারের বৃত্তে আবদ্ধ এবং সতত পরিবর্তনশীল। সুতরাং, আকারসম্ভুত বস্তু আকারাতীত আল্লাহ্ তায়ালার দিকে দৃষ্টিবিক্ষেপ করতে অক্ষম। চিন্তাবিক্ষেপ করতেও অপারগ।
আল্লাহ্ তায়ালার সৃষ্টিকরণ গুণকে তাকবীন বলা হয়। এই তাকবীন বা সৃষ্টিকরণ গুণকে ইমাম আবুল হাসান আশআরী (রহঃ) নতুন বলেছেন এবং আল্লাহ্ তায়ালার কার্যকলাপসমূহকে নতুন সৃষ্টি বলে ধারণা করেছেন।
এই ধারণা ভুল একথা বলেছেন হজরত মোজাদ্দেদে আলফে সানি শায়েখ আহমদ ফারূকী সেরহিন্দি (রহঃ)।
তিনি বলেন, নতুন যা, তা হচ্ছে আল্লাহ্ তায়ালার সিফাতে তাকবীনের (সৃষ্টিকরণ গুণের) ক্রিয়া বা ফল মাত্র। অবিকল তাঁর সৃজনগুণ 'তাকবীন’ নয়।
আবার কোনো কোনো সুফী তাজাল্লীয়ে আফআ’ল অর্থাৎ আল্লাহ্ তায়ালার কার্যকলাপের আবির্ভাব সম্পর্কে বলেছেন, তাঁরা সকল সৃজিত বস্তুর মধ্যে এক আল্লাহ তায়ালার কাজ ব্যতীত অন্য কিছু দেখেন না। এদের ভুলও ইমাম আশআরীর ভুলের মতো। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা যা দেখেন, তা আল্লাহ্ তায়ালার এক,অনাদি, অতুলনীয়, অবিভাজ্য আকার-প্রকারহীন সৃষ্টিকরণ গুণ অর্থাৎ, সিফাতে তাকবীনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বা ফলাফল। অবিকল আল্লাহ্ তায়ালার কাজের তাজাল্লী নয়। আল্লাহ্ তায়ালার কাজ তাঁর পবিত্র অস্তিত্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। সুতরাং আকার, প্রকার এবং আদিসম্ভুত সৃষ্টির দর্পনে তার সংকুলান এবং অবস্থান সম্ভব নয়।
হজরত মোজাদ্দেদে আলফে সানি (রহঃ) বলেন ‘এ ফকিরের নিকট আল্লাহ্ তায়ালার কার্যকলাপ ও গুণাবলীর (আফআল ও সিফাতের) তাজাল্লী বা আবির্ভাব তাঁর পবিত্র অস্তিত্বের (জাতের) তাজাল্লী থেকে বিচ্যুত হওয়া অসম্ভব। জাত থেকে যা বিচ্যুত বা বিচ্ছিন্ন হয়, তা তাঁর গুণাবলী ও কার্যাবলীর প্রতিবিম্ব (জেল)। মূলবস্তু এবং তার প্রতিবিম্ব নিশ্চয়ই এক নয়। কিন্তু সকলের জ্ঞান এই পূর্ণস্তরে পৌঁছতে পারে না’। এটা আল্লাহ্ তায়ালার প্রতুল অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা এটা দান করেন। আল্লাহ্পাক অতি উচ্চ অনুকম্পাপরবশ’। আল কোরআন।
_________________
ইসলামী বিশ্বাস
কৃত: মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ
ইসলামী বিশ্বকোষ ও ইসলামিক বই সম্ভার
এপ্সে রয়েছে ২৩০ টি কিতাব
👉https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
🌬যাজাকাল্লাহু খাইরান
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন