সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কঃ এক


আল্লাহ্ তায়ালা কোনোকিছুর  মধ্যে প্রবেশ করেন না। কোনো বস্তুও তাঁর ভিতরে প্রবিষ্ট হতে পারে না। তিনি সকল সৃষ্টিকে ঘিরে আছেন। সৃষ্টির সঙ্গে তাঁর নিকটতা আছে, সংশ্লিষ্টতা আছে। কিন্তু বেষ্টন, নৈকট্য এবং সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে আমাদের সীমাবদ্ধ জ্ঞান যা ধারণা অথবা অনুমান করতে পারে, প্রকৃত ব্যাপার তা নয়। কারণ সীমার ধারণা সীমানাতীত দরবারের উপযোগী হতে পারেই না। আধ্যাত্মিক সাধকেরা আত্মিক দর্শনে (কাশফে) যা অবলোকন করেন, তা থেকে তিনি মুক্ত ও পবিত্র। সৃষ্টি (মাখলুক) তাঁর  অস্তিত্ব, গুণনিচয় এবং কাজের পরিচিতি লাভ করতে গিয়ে অজ্ঞতা, অক্ষমতা এবং অসহনীয় ও বিস্ময়বিমূঢ় পিপাসা ব্যতীত আর কিছুই লাভ করতে পারে না। তাই দৃষ্ট, শ্রুত এবং জ্ঞাত নয় এরকম পবিত্র জাতের প্রতি অর্থাৎ অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। কালামুল্লাহ্ শরীফে তাই বর্ণিত হয়েছে, ‘ইউ’মিনূনা বিল গয়ীব’ (যারা অদৃশ্যের উপরে আস্থা স্থাপন করে)।

 

সুফী সম্প্রদায়কে এই কথাটা ভালোভাবে স্মরণ রাখতে হবে। কারণ বহুবিচিত্র আত্মিক বিকাশ বা কাশফ তাঁদের আধ্যাত্মিক পথপরিক্রমায় প্রায়শই পরিদৃষ্ট হয়। কিন্তু, সে সকল দর্শিত, শ্রুত এবং জ্ঞাত বিষয়কে অনুক্ষণ আবৃত্তিশীল কালেমার ‘লা’ (না) দ্বারা মুছে ফেলতে হবে।

আনকা ফাঁদে পড়বে না, 

ফাঁদ নাও তুলে ফাঁদে শুধু শূন্য বাতাস, 

ভরা আশার ভুলে।


আমাদের হজরত খাজা বাকী বিল্লাহ্ (রহঃ) এর একটি রুবায়ী (চতুর্পদী) কবিতাও এরকম অবস্থার সুন্দর দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

সে মহান আল্লাহর পবিত্র আনন এখনো অনেক দূরে তাহার কানন

পেয়েছি এবার আমি তাঁর সন্নিধান অপছন্দ করি আমি এই অনুমান।

অতএব, আমাদের বিশ্বাস এরকম থাকতে হবে যে,  

আল্লাহ সকল বস্তুকে বেষ্টনকারী, 

সকলের নিকটবর্তী এবং সকলের সঙ্গে আছেন। কিন্তু এই বেষ্টন, 

নৈকট্য ও সঙ্গতার প্রকৃত অর্থ আমাদের জানা নেই। এলেম বা জ্ঞান কর্তৃক বেষ্টন নৈকট্য এবং সঙ্গতা এরকম বলাও সমীচীন নয়। কারণ এরকম অর্থ করা মোতাশাবেহ্ বা অবোধ্য আয়াতের অর্থ করার মতো।


সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কঃ দুই

____________________

আল্লাহ্ তায়ালা সৃষ্টির সঙ্গে একীভূত হন না। সৃষ্টিও তাঁর সঙ্গে একীভূত অথবা সমীভূত নয়। কোনো কোনো সুফীর কথায় বোঝা যায়, একীভূতি অথবা সমীভূতি  সম্ভব। কিন্তু প্রকৃত অর্থ অন্যরকম। যেমন, ‘ফকর’ বা মুখাপেক্ষিতার যখন শেষ হয় তখন তা-ই আল্লাহ্- এ বাক্যের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, ফকর অথবা মুখাপেক্ষিতার শেষে যখন কেবল নাস্তি বা শূন্যতা লাভ হয়, তখন আল্লাহ ব্যতীত অন্যকিছু অবশিষ্ট থাকে না। অথচ  মূর্খ ব্যক্তিদের ধারণা, ফকির বা মুখাপেক্ষী ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে একাকার হয়ে যায় এবং আল্লাহ্ হয়ে যায়। এরকম বিশ্বাস কুফরী এবং বেদ্বীনি। আল্লাহ্ তায়ালা জালেমদের এরকম অসৎ বিশ্বাস থেকে মুক্ত ও পবিত্র। হজরত খাজা বাকী বিল্লাহ্ (রহঃ) বলেছেন ‘আনাল হক’ বাক্যের  অর্থ এরকম নয় যে ‘আমিই হক’ বা ‘আমিই আল্লাহ্' বরং এর প্রকৃত অর্থ  হচ্ছে আমিতো আমার অস্তিত্বের আধার হারিয়ে ফেলেছি আল্লাহ্ তায়ালার অস্তিত্বের আলোকচ্ছটায়। এখন অবস্থা এই  যে আমি নেই। আল্লাহ্ই আছেন। এই ‘আমি’ উচ্চারণ আমার অস্তিত্ব থেকে নয়। আল্লাহ্ তায়ালার দিক থেকে। 

আমার অবস্থা এখন হযরত মুসা (আঃ) এর সেই বৃক্ষের মতো, 

যে বৃক্ষ থেকে উচ্চারিত হয়েছিলো, 'ইন্নানি আনাল্লাহ্ .....’ (নিশ্চয় আমিই আল্লাহ্)। বৃক্ষ এখানে ঘোষক মাত্র। অথবা মাধ্যম, যেমন মাইকের হর্ণ বক্তার কথা প্রকাশের মাধ্যম হয়।

______________

ইসলামী বিশ্বাস

কৃত: মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ

ইসলামী বিশ্বকোষ  ও ইসলামিক বই সম্ভার

এপ্সে রয়েছে ২৩০ টি কিতাব

👉https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan

🌬যাজাকাল্লাহু খাইরান

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন