আল্লাহ্ তায়ালার অস্তিত্বে, গুণে এবং কাজে কোনোরকম পরিবর্তন ঘটে না। অথচ সৃষ্টি নিত্য পরিবর্তনশীল, লয়, ক্ষয় ও বিবর্তনের অধীন।
পবিত্র ওই জাত যাঁর জাত, সিফাত ও দদ আফআল সৃষ্টির মতো পদদ রিবর্তনশীলতা এবং নতুনত্বের কলংক থেকে মুক্ত ও পবিত্র।
অজুদিয়া মতাবলম্বী সুফীগণ ‘তানায্যুলাতে খামছা’ নামের যে পঞ্চস্তরের বিবরণ দিয়েছেন, তা ওয়াজিবুল অজুদ বা অবশ্যম্ভাবী মর্যাদার মধ্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ তায়ালার জাত, সিফাত ও আফআলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
এরকম ধারণা অবিশ্বস্ত এবং ভ্রান্ত।
উক্ত পঞ্চস্তরের অনুমান আসলে জাত, সিফাত ও আফআ’লের তাজালি বা আবির্ভাবের জেল অর্থাৎ ছায়া-প্রতিচ্ছায়ার প্রতি আরোপযোগ্য।
আর একথা অকাট্য ও সন্দেহাতীত যে, প্রতিচ্ছায়াগত পরিবর্তন মূল বিষয়ের উপরে কোনোই প্রভাব রাখে না।
আল্লাহ্ তায়ালা গনী। অর্থাৎ, শর্তহীন অভাবশূন্য। অস্তিত্বে, গুণে, কাজে সকল কিছুতেই তিনি গনী। কোনো বিষয়েই তিনি অন্য কারো মুখাপেক্ষী নন। তাঁর অস্তিত্বে যেমন তিনি অমুখাপেক্ষী, তেমনি আবির্ভাব ও প্রকাশের বিষয়েও তিনি অমুখাপেক্ষী। যে সকল সুফী বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর নাম ও গুণাবলীর (ইসিম ও সিফাতের) পূর্ণতা প্রকাশের ক্ষেত্রে সৃষ্টির মুখাপেক্ষী, তাঁরা ভুল বলেন।
এরকম বাক্য উচ্চারণ করা মস্ত অন্যায়।
প্রকৃত ব্যাপার এই যে, নিজেদের পূর্ণতা অর্জনের জন্যই সৃষ্টিকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
আল্লাহ্ তায়ালা যিনি সত্তাগতভাবে স্বয়ংপূর্ণ, তাঁর পূর্ণতা লাভের তো প্রশ্নই আসতে পারে না।
আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেছেন,
‘আমি জ্বিন ও মানুষকে ইবাদত করা (আমার পরিচয় বা মারেফাত লাভ করা) ভিন্ন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি’। সূরা জারিয়াহ্, ৫৬ আয়াত।
এখানে এ বিষয়টি পরিষ্কার যে, জ্বিন ও মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য এই যেনো তারা আল্লাহ্ তায়ালার মারেফাত লাভের অভিলাষী হয় এবং পূর্ণতা অর্জনে ধন্য হয়। হাদিসে কুদসীর ভাষ্য ‘আমি গুপ্ত ধনভাণ্ডার। পরিচিত হওয়ার জন্যই আমি সৃষ্টিকে অস্তিত্বদান করেছি’। কথাটির অর্থ এই যে, সৃষ্টি যেনো পরিচয়প্রাপ্ত হয়ে তাদের জন্য নির্ধারিত পূর্ণতা অর্জনে ধন্য হয়। এরকম মনে করা অন্যায় যে আমি আল্লাহ্ সৃষ্টির নিকট পরিচিত হই এবং এই পরিচিতির কারণে আমার কিছু পূর্ণতা সাধিত হয়। আল্লাহ্ তায়ালা গনী। অমুখাপেক্ষী। সুতরাং বর্ণিত অসৎ ধারণা থেকে তিনি অতি উচ্চ, পবিত্র ও মহান।
পূর্ণতা
____
আল্লাহ্ তায়ালা সকল রকম ক্ষতি, বিনষ্টি ও নতুনত্বের কালিমা থেকে মুক্ত ও পবিত্র। তিনি শরীরধারী নন। স্থান এবং কালসম্ভূতও নন। সকল পূর্ণতা তাঁর মধ্যেই বিদ্যমান। বরং বলা যায় পূর্ণতা তিনিই। সৃষ্টি তার নিজস্ব ধরনের পূর্ণতা তাঁর অনুগ্রহেই পায়। তাঁর আটটি পূর্ণগুণ এমন যে, ওই গুণগুলি তাঁর মধ্যে অতিরিক্ত অস্তিত্ব অনুযায়ী অস্তিত্বশীল। ওই গুণাবলী হচ্ছে
১. হায়াত (জীবন)
২. এলেম (জ্ঞান)
৩. কুদরত (ক্ষমতা)
৪. এরাদা (ইচ্ছা)
৫. সামা (শ্রবণ)
৬. বাসার (দর্শন)
৭. কালাম (বাক্য)
৮. তাকবীন (সৃজন)।
এই গুণসমূহ বাস্তব। কাল্পনিক বা ধারণাসম্ভূত নয়। এই গুণ অষ্টক প্রকৃত অর্থেই আল্লাহ্ তায়ালার জাতের সঙ্গে অতিরিক্ত অস্তিত্ব হিসাবে বর্তমান।
এ ব্যাপারে মোতাজিলা দার্শনিকেরা এবং অজুদিয়া সুফীরা মনে করেন, ওই গুণ অষ্টকের অস্তিত্ব রয়েছে শুধু জ্ঞানে এবং ধারণায়। বাস্তবে জাতের সঙ্গে এক বা একাকার। কিন্তু উপরোক্ত গুণ অষ্টকের বাস্তব অস্তিত্বের স্বীকার না করা পর্যন্ত বিশ্বাসী হওয়ার উপায় নেই। বরং এরকম যারা করবে, তারা আল্লাহ্ তায়ালার সিফাতের প্রতি অবিশ্বাসী বলে বিবেচিত হবে।
__________________
ইসলামী বিশ্বাস
কৃত: মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ
ইসলামী বিশ্বকোষ ও ইসলামিক বই সম্ভার
এপ্সে রয়েছে ২৩০ টি কিতাব
👉https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
🌬যাজাকাল্লাহু খাইরান
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন