আল্লাহ তায়ালাই প্রকৃত অস্তিত্ব


তিনি ছাড়া বাকী যা কিছু আছে সে সমস্তকে আল্লাহ্পাকই অস্তিতে এনেছেন। সুতরাং,স্বয়ং অস্তিত্ব যিনি, তিনিই আল্লাহ্‌। তিনি খালেক (স্রষ্টা)। আর তিনি যাদেরকে অস্তিত্ব প্রদান করেছেন তারা মাখলুক (সৃষ্টি)।

আল্লাহ্পাকের জাত (সত্তা ও অস্তিত্ব) এক, অদ্বিতীয় । তার সিফাত (গুণাবলী) এক, অদ্বিতীয় এবং তার আফআ'ল (কার্যাবলী)ও এক, অদ্বিতীয় । তার অস্তিত্ব, গুণাবলী ও কাজ, সৃষ্টির অস্তিত্ব, গুণাবলী এবং কাজের মতো নয়। 

প্রকৃতপক্ষে কোনো বিষয়ে কেউ বা কোনো কিছু তার সঙ্গে সংযুক্ত নয়। অংশীও নয়। না অস্তিত্বে বিষয়ে । না গুণাবলী বা কাজের বিষয়ে ।


আল্লাহ্পাকের জাত প্রকারবিহীন (বেমেছাল)। তার সিফাতও বে-মেছাল।  তেমনি তার কার্যকলাপও বে-মেছাল। সৃষ্ট বন্তসমূহের জাত, গুণ ও কাজের সঙ্গে তার কোনোই সম্বন্ধ নেই।


আল্লাহ্ তায়ালার গুণাবলী


আল্লাহ্ পাকের গুণাবলীর আলোচনায় প্রথমে ‘এলেম’ গুণটির কথাই ধরা যাক। আল্লাহ পাকের এই গুণ অনাদি এবং অবিভাজ্য। তাঁর এই ‘জ্ঞান’ গুণটির সঙ্গে বহু বিষয়ের সম্বন্ধ আছে। তবুও মূলে কিন্তু একাধিকতার অবকাশ নেই। যেহেতু তাঁর ‘এলেম’ একটিমাত্র অবিভাজ্য বিকাশ। আর ওই অবিভাজ্য ও অতুলনীয় বিকাশ থেকে আদি-অন্তের সকল জানিত বস্তু বিকশিত হয়েছে।

 

আল্লাহ তায়ালা সকল সৃষ্টবস্তুকে তাদের অনুকূল ও প্রতিকূল সকল  অবস্থায় সমষ্টিগত বা আংশিকভাবে সংশ্লিষ্ট সময়ের চলমানতায় এবং অবিভাজ্য মুহূর্তেই জানেন।

যেমন জায়েদ নামক কোনো ব্যক্তির জন্ম, মৃত্যু, অস্তিত্ব, অনস্তিত্ব তাঁর ভ্রুণজাত অবস্থা, শিশু অবস্থা, যৌবন, বার্ধক্য, জীবনাবসান তার দণ্ডায়মানতা, উপবেশন, শয়ন তার আনন্দ, বেদনা, সম্মান, লজ্জা তার কবরজীবন, হাশর জীবন, বেহেশত  অথবা দোজখ জীবন সবকিছুই তাঁর  একই মুহূর্তের জ্ঞাতব্য ব্যাপার। সুতরাং আল্লাহ্ তায়ালার জন্য একাধিক সম্বন্ধ নেই। একাধিক সম্বন্ধের জন্য বিভিন্ন মুহূর্তের বা সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার জন্য সৃষ্টির সূচনা থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত এক অবিভাজ্য মুহূর্ত ব্যতীত অন্যকিছুই নেই। একাধিকতা এখানে অস্তিত্বহীন। কেননা আল্লাহ তায়ালার প্রতি কোনো সময় অতিবাহিত হওয়া অসম্ভব। তাঁর জন্য অগ্র-পশ্চাৎ বলে কিছু নেই। সুতরাং তাঁর জ্ঞানের সঙ্গে যদি জানিত বস্তুসমূহের সম্বন্ধ লক্ষ্য করি, তবে সেই সম্বন্ধকেও আমরা সকল জানিত বস্তুর সঙ্গে সম্বন্ধিত দেখতে পাবো। আর ওই সম্বন্ধও হবে তাঁর এলেম গুণের মতো অতুলনীয়, অবিভাজ্য এবং প্রকারবিহীন।

যেমন  একটি  উদাহরণ একজন  পাঠক  একই  সঙ্গে  বাক্যস্থিত  বিশেষ্য, বিশেষণ, ক্রিয়া, স্বরবর্ণ, ব্যাঞ্জনবর্ণ, দেশী শব্দ, বিদেশী শব্দ, অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যতে পালনীয় অনুজ্ঞা ইত্যাকার অনেক অবস্থা একই সঙ্গে জানতে পারে। একই বাক্যের আধারে অক্ষর  ও শব্দাবলীর বহু বিচিত্র সম্মিলিত অবস্থা একই মুহূর্তে দেখা যদি  সৃষ্টজীবের পক্ষে সম্ভব হয়, তবে অবশ্যম্ভাবী এবং অতুলনীয় আল্লাহ তায়ালার পক্ষে নিশ্চয় তা সম্ভব।

এখানে শাদা সরল দৃষ্টিতে পরস্পরবিরোধী বস্তুসমূহের একত্রীকরণ মনে হচ্ছে। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে বিষয়টি পরস্পরবিরোধী বস্তুর একত্রায়ণ নয়। বরং পরস্পরবিরোধী অবস্থাসমূহকে একই সঙ্গে জানার ব্যাপার। কেননা, আল্লাহ তায়ালা যদিও একই মুহূর্তে জায়েদ নামক ব্যক্তিকে অস্তিত্বধারী ও অস্তিত্বহীন জানেন কিন্তু সেই মুহূর্তে একথাও জানেন যে, জায়েদের আবির্ভাব অমুক  সময়ে  হাজার  বছর  আগে বা  পরে। তারপর তার পৃথিবীর জীবন শুরু। আবার পঞ্চাশ, আশি বা একশ বছর পর তার মৃত্যু। এবার বুঝা গেলো, এখানে জায়েদের জন্ম-মৃত্যুকে একত্রিত করা হয়নি। বরং তার জন্ম-মৃত্যুর সংবাদ একই মুহূর্তে জানা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, শুধু জায়েদের বিষয় নয়। সমস্ত সৃষ্টির সকল বিষয়ই আল্লাহ্ তায়ালার জ্ঞানে এক, অতুলনীয় এবং অবিভাজ্য মুহূর্তে প্রতিভাত বা প্রতিভাসিত।

 

জানা আবশ্যক, আল্লাহ্ তায়ালার জ্ঞান পরিবর্তনশীল নয়। এতে নতুনত্বও নিবারিত। ভ্রান্ত দার্শনিকেরা মনে করে, একটির পর একটি বিষয় আল্লাহ্ তায়ালার অবগতিতে আসে। কিন্তু এরকম অসম্ভব। ক্রমাগত জ্ঞান লাভ নয়, একই মুহূর্তে সমগ্র সৃষ্টির আদি-অন্তরের সকল জ্ঞাতব্য বিষয় যেহেতু আল্লাহ্ তায়ালার জানা, তাই পরিবর্তনশীলতা এবং নতুনত্বের ধারণা এখানে অস্তিত্বহীন। একাধিক সম্বন্ধ, নতুনত্ব এবং পরিবর্তনশীলতা সৃষ্টির দিক থেকে হয়। সৃষ্টির জ্ঞান সীমাবদ্ধ। আর আল্লাহ্ তায়ালার জ্ঞান অসীম, অতুল, উদাহরণবিহীন।

________________

 ইসলামী বিশ্বাস

কৃত: মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ

ইসলামী বিশ্বকোষ  ও ইসলামিক বই সম্ভার

এপ্সে রয়েছে ২৩০ টি কিতাব

👉https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan

🌬যাজাকাল্লাহু খাইরান

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন