শিয়া পরিচিতি

দ্বিতীয় পর্ব

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

************

১৩।  মা'মারিয়া  শিয়া:    এ   দল   আবুল    খাত্তাবের   পর মা'মারকে     তাদের      নেতা    বলে    বিশ্বাস    করে     এবং শরীয়তের  যাবতীয় আইন কানুন  তার উপর সোপর্দ -  বলে আক্বীদা পোষণ করে। এরা বলে - ”ইমাম জাফর সাদেক  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  ছিলেন   নবী  - তারপর  নবী ছিলেন   আবুল  খাত্তাব।  এরপর    তাদের  নেতা  মা'মার হচ্ছেন  শেষ    নবী।   তিনি   যাবতীয়  বিধি   নিষেধ  তুলে  দিয়েছেন       এবং       শরীয়তের       বাধ্যবাধকতা       রহিত  করেছেন   ”।   এরা   মূলত:   দ্বাদশ   (ইসনা   আশারিয়া)  গ্রুপেরই একটি উপশাখা মাত্র।

১৪।      গোরাবিয়া      শিয়া:      এই      চরমপন্থী      শিয়াদের  নামকরণ    হয়েছে   ”গোরাব”   বা     কাক   শব্দ    থেকে।  এদের দৃঢ় বিশ্বাস - ”এক কাক যেমন আরেক কাকের সদৃশ্য,  এক  মাছি  আর  এক   মাছির  সদৃশ্য  -    তদ্রুপ  শারিরীক গঠনে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন নবী  করিম   সাল্লাল্লাহু  আলাইহি     ওয়া  সাল্লাম  সদৃশ্য। আল্লাহ    তায়ালা     হযরত   জিব্রাঈলকে   হযরত    আলীর নিকট প্রেরণ করেছিলেন। শারিরীক গঠনের সাদৃশ্যের কারণে জিবরাঈল ভূল করে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম - এর নিকট রিছালাতের দায়িত্ব অর্পন   করে    ফেলেছেন”।  (নাউযুবিল্লাহ)   এ  কারণেই গোরাবিয়া      শিয়া       সম্প্রদায়       হযরত       জিবরাঈলকে  অভিসম্পাত   (লানত)   দিয়ে  থাকে।  তাদের  এক  কবি বলেন:  ”জিবরাঈল    আমিন   গলদ   করে   রিছালাতকে আলী  হায়দার  থেকে   অন্যত্র   নিয়ে   গেছেন”।   হযরত গাউসুল আযম রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু গুনিয়াতুত  ত্বালেবীন গ্রন্থে এদেরকে ইসলামের ইয়াহুদী সম্প্রদায় বলেছেন।

১৫।   জুবাবিয়া  শিয়া:   জুবাব  অর্থ  -  মাছি।  এক  মাছি অন্য  মাছির  সদৃশ।   তারা     বলে    -   ”হযরত  মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়া    সাল্লাম    ছিলেন    আল্লাহ    -  সদৃশ। তবে তিনি নবী ছিলেন”।

আল্লাহ    তাদের      ধবংস      করুক।      জুবাব    বা    মাছির সাদৃশ্যতার উপমা নবী ও আল্লাহর ক্ষেত্রে জুড়ে দেয়ার করণে  এই  চরমপন্থী শিয়াদেরকে  জুবাবিয়া শিয়া বলা হয়।

১৬।   যাম্মিয়া  শিয়া:     'যাম্মুন'  আরবী  শব্দ।  অর্থ  হলো বদনাম আরোপ    করা। এই   সম্প্রদায়ের  শিয়াগণ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম - এর উপর এই অপবাদ আরোপ করে যে, ”হযরত আলী হচ্ছেন খোদা এবং   তিনি  হযরত  মুহাম্মাদ    সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়া সাল্লামকে   তাঁর   দিকে     লোকদেরকে   আহবান   করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা না করে নিজের জন্যই, আল্লাহ বলে দাবী করে বসলেন।

তাদের    মধ্যে  সমঝোতা  স্বরূপ   নবী   করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া  সাল্লাম   এবং   হযরত  আলী  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উভয়কেই  আল্লাহ বলে   স্বীকার  করে নেয়া হয়। তবে   এক   নম্বর   আর   দুই   নম্বর   নিয়ে   তাদের   মধ্যে  মতভেদ  থেকে    যায়।  তাদের  মধ্যে  কেউ  কেউ   পাক পাঞ্জাতন (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়া   সাল্লাম), হযরত আলী, ফাতিমা, হাসান  ও হোসাইন  রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা        আনহুম)        খোদা        বলে        বিশ্বাস        করে।  (নাউযুবিল্লাহ)।

১৭।      ইসনাইনিয়া       শিয়া:      এরা       যাম্মিয়া       গ্রুপের  উপশাখা।  তারা  নবী  করিম  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়া  সাল্লামকে    যাম্মিয়াদের    তফসিল   মতে     আল্লাহ   বলে  আক্বীদা     পোষণ     করে।     তারা     যাম্মিয়াদের     দ্বিতীয়  উপশাখা বলে ইসনাইনিয়া নামে খ্যাত।

১৮।       খামছিয়া      শিয়া:       এরা      যাম্মিয়াদের       তৃতীয় উপশাখা।   এরা   পাক     পাঞ্জাতনকে  ইলাহ  বা  আল্লাহ  বলে   স্বীকার   করে।  এ   জন্য  এদের    পৃথক  নামকরণ করা হয়েছে খামছিয়া বা পঞ্চ খোদায় বিশ্বাসী।

১৯।   নাসিরিয়া   শিয়া:  এই   চরমপন্থী  শিয়াদের  অপর নাম আলভী শিয়া। এরা সিরিয়ার হিমস, হলব ও উত্তর সিরিয়ায়     বসবাস    করে।     এদের      আক্বীদা    হচ্ছে     - ”আল্লাহ   তায়ালা   হযরত  আলী  ও  তাঁর  বংশধরগণের মধ্যে    প্রবেশ   করেছেন”।    তবে   এরা      আল্লাহ    অর্থে আমীরকে রূপক হিসাবে বুঝায়।

২০।  ইসহাকিয়া   শিয়া:    ইসহাক  নামীয়  জনৈক  শিয়া  নেতার অনুসারী  এই দলটি। এরা  বলে - ”এই পৃথিবী অতীতে     কখনও     নবী     থেকে      শূন্য       ছিলনা       এবং ভবিষ্যতেও  শূন্য  থাকবেনা। আল্লাহ  -  হযরত   আলীর মধ্যে আছেন”। (কাদিয়ানিরাও একথাই বলে)।

২১।  ইলবাইয়া শিয়া: ইলবা ইবনে  আরওয়া আসাদীর অনুসারীগণকে ইলবাইয়া শিয়া বলা হয়। এদের মতে - ”হযরত  আলী   রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু  হলেন   খোদা    এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে উত্তম। মুহাম্মাদ    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়া        সাল্লাম     হযরত আলীর            হাতে           বাইয়াত              গ্রহণ           করেছেন”। (নাউযুবিল্লাহ)।

২২।  রাজজামিয়া  শিয়া: এই সম্প্রদায় মুহাম্মাদ  ইবনে হানফিয়া, তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ -  এর পুত্র আলী, তার পুত্র  আবুল  মনসুর  কে   ইমাম   বলে  মান্য  করে।   এরা ইতিহাসখ্যাত আবু মুসলিম  খোরাসানীকে    খোদা বলে স্বীকার   করে।    হারামকে    হালাল     বলে   স্বীকার   করা  এদের  আক্বীদা।   (আবু মুসলিম খোরাসানী   আব্বাসীয় হুকুমত প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রেখেছিল -  লেখক)।

২৩।    মুকান্নাইয়া   শিয়া:    ইমাম    হোসাইন   রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-  এর    পর   মুকান্নাকে  এরা  খোদা  বলে   স্বীকার করে।

২৪। ইমামিয়া শিয়া: ”ইমামত” মতবাদে বিশ্বাসী বলে এদেরকে  ইমামিয়া  শিয়া  বলা   হয়।    এদের  বিশ্বাস  -  ”নবুয়াত  ও  রিসালাত”    এর  মধ্যে  হযরত  আলী  নবী করিম       সাল্লাল্লাহু     আলাইহি     ওয়া      সাল্লামের     সাথে অংশীদার।   এই   ফির্কা   খিলাফতে   বিশ্বাসী  নয়।  এরা বলে    -  ”হযরত  আলী   রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু  নবী   করিম সাল্লাল্লাহু        আলাইহি       ওয়া       সাল্লাম         কর্তৃক        তাঁর উত্তরাধিকারী   নিযুক্ত  হয়েছিলেন   -   কিন্তু  হযরত  আবু  বকর ও হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা খিলাফত বা নির্বাচন পদ্ধতি আবিষ্কার করে জনগণের রায়ে খলিফা হয়ে  যান।  তাদের মতে  ইমামত  বা   ঐশী মনোনয়নই ইসলামের         সঠিক        পদ্ধতি           -        খিলাফত         হলো প্রতারণামূলক  নির্বাচন  পদ্ধতি।”  (দেখুন  -  ”মাওলার  অভিষেক”    বইটি)।    এই     ফির্কাটি     পুনরায়     ৩৫    টি উপদলে বিভক্ত।


আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন