শিয়া পরিচিতি

দ্বিতীয় পর্ব

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

*************


৬। মুগীরিয়া শিয়া: এই চরমপন্থী শাখাটি  হলো মুগীরা ইবনে    সাঈদ    আজারীর    অনুসারী।    এদের    আক্বীদা  নিম্নরূপ: (ক) আল্লাহ স্বশরীরী স্বত্বা। আল্লাহর    আকার  একজন  পুরুষের   আকারের  মত।   তাঁর   মাথায়  নূরের টুপি আছে। তাঁর ক্বলব আছে। সেখান থেকেই যাবতীয় হিকমত  উৎসারিত  হয়ে   থাকে।  (খ)  শয়তান    হযরত আবু  বকর  ও  হযরত  ওমরকে  কুফরী  করার  পরামর্শ  দিলে  তাঁরা  শয়তানের  পরামর্শ  অনুযায়ী  কুফরী  করে  বসে।   তখন    শয়তান   এই   বলে    বিদায়   নেয়   ”আমি তোমাদের  থেকে পৃথক  হয়ে    গেলাম”। এই  মুগীরিয়া শিয়াদের  মতে  হযরত   আবু   বকর  ও  হযরত  ওমরের কুফরী প্রসঙ্গেই নাকি কুরআনের নিম্ন আয়াতটি নাজিল হয়   মাছালুহুম   কামাছালিশ   শাইতন,  ইজ   ক্বলা   লিল  ইনছানিকফুর,   ফালাম্মা   কাফারা    ক্বলা   ইন্নী    বারিউম মিনকা”   অর্থাৎ   -   ”তাদের    উপমা    হলো   শয়তানের ন্যায়   -   যখন  সে  কোন  মানুষকে   বলে  -  তুমি  কুফরী কর। যখন সে কুফরী করে বসে - তখন শয়তান বলে- আমি    তুমা   হতে   বিমুখ    হলাম”।    (গ)   হযরত   আলী রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু     এর  পুত্র   ইমাম   হাসানের   প্রপৌত্র মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ হচ্ছেন ভবিষ্যতের প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী। পর্বতমালায়   এখনও  অবস্থান করছেন। 

৭।  জানাহিয়া   শিয়া:  হযরত  আলী   রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহু  এর   ভাই  শহীদ   জাফর   তাইয়ারের   পুত্র   আবদুল্লাহর নাতী - আবদুল্লাহ ইবনে মুয়াবিয়ার অনুসারী এই দল। জাফর   তাইয়ার   রাদ্বিয়াল্লাহু   আনহু   এর   উপাধী   ছিল  ”জুল   জাহানাঈন”।    তারা   এজন্য   তাদের    পরিচিতি হিসেবে    জানাহিয়া   শিয়া   বলে   প্রচার     করে।   এদের  আক্বীদা পঞ্চম দলের অনুরূপ: অর্থাৎ আত্মার স্থানান্তরে এরা   বিশ্বাসী।  তারা  বলে  -  ”আল্লাহর  আত্মা  নবীগণ  হয়ে   হযরত   আলী   ও   তাঁর   তিন   পুত্রের   মধ্যে   এসে  সমাপ্ত    হয়েছে।   এ  ধারা  পূণরায়  হযরত  আলীর  ভাই জাফর  তাইয়ারের  বংশে  আবদুল্লাহ  ইবনে  মুয়াবিয়ার  মধ্যে স্থান লাভ করেছে। তিনি মৃত্যুবরণ করেননি, বরং ইস্পাহানের একটি পাহাড়ে জীবিত অবস্থান করছেন”। এই   চরমপন্থীরা কিয়ামতকে   অস্বীকার করে এবং  সব মৃতজন্তু  ও  অন্যান্য  হারাম বস্তুকে হালাল বলে  বিশ্বাস  করে।     (উল্লেখ্য     -      অকাট্য     দলীল     দ্বারা     প্রমাণিত  হারামকে হালাল মনে করা কুফরী)

৮।  বয়ানিয়া  শিয়া:  চরমপন্থী  শিয়াদের  অষ্টম  গ্রুপের  নাম   বয়ানিয়া।   নজদের    বনু   তামীমের    বয়ান   ইবনে ছামআন - এর অনুসারী এই দল। এদের ধারণামতে - ”আল্লাহ  তায়ালা  একজন  মানুষের    আকৃতিধারী  এবং আল্লাহর  আত্মা    প্রথমে  হযরত  আলীর  মধ্যে,  তারপর তাঁর  অন্য  স্ত্রীর   পুত্র   মুহাম্মাদ ইবনে হানফিয়ার মধ্যে, তারপর     তার     পুত্র      আবু      হাশেমের     মধ্যে      প্রবেশ করেছে”।   এরা   মুহাম্মাদ    ইবনে   হানফিয়াকে    ইমাম  মানে      -      ইমাম      হাসান      ও      হোসাইন      রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহুমাকে মানেনা।

৯।        মনসুরিয়া        শিয়া:        আবু        মনসুর        আজালীর  অনুসারীদেরকে   মনসুরিয়া  শিয়া  নামে  অভিহিত   করা হয়।   এদের  আক্বীদা  হচ্ছে:  ”রিছালাতের  দরজা   বন্ধ হবে    না।    শরীয়তের    বিধি    বিধান     সবই    উলামা   ও ফক্বিহগণের মনগড়া। বেহেস্ত- দোযখ বলতে কোন বস্তু নেই”। ইমাম বাকের  রাদ্বিয়াল্লাহু  আনহুর  পর   তাদের ইমাম হচ্ছেন আবু মনসুর।

১০।   গামামিয়া   শিয়া:  এদের  আক্বীদা   হচ্ছে-   আল্লাহ তায়ালা  বসন্তকালে   মেঘ  মালায়    ভর  করে   পৃথিবীতে অবতীর্ণ  হন    এবং  সমগ্র   পৃথিবী  ভ্রমণ    করে  পুনরায়  আকাশে আরোহন করেন।    এ কারনেই  বসন্ত মৌসুমে পৃথিবী ধনধান্যে, ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে উঠে।

১১।    তাফভিজিয়া   শিয়া:   এদের    আক্বীদা   ও   বিশ্বাস হচ্ছে:    ”আল্লাহ   তায়ালা   হযরত      মুহাম্মাদ    সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লামকে  সৃষ্টি করে   তাঁর  হাতে সৃষ্টির  ভার    অর্পন   করেছেন।    তিনি    নিজে   হচ্ছেন   পৃথিবীর অবশিষ্ট বস্তুরাজীর মহা স্রষ্টা”।

এদের কেউ কেউ আবার হযরত আলীকে পৃথিবীর স্রষ্টা বলে বিশ্বাস করে।   আবার কেউ  বিশ্বাস  করে -    ”নবী করিম    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়া    সাল্লাম    ও    হযরত  আলীকে  যৌথভাবে  পৃথিবী   সৃষ্টির  দায়িত্ব  অর্পন   করা হয়েছে।”  এ    কারণেই    তাদেরকে  তাফভিজিয়া  শিয়া বলা হয়। তাফভিজ অর্থ - নিজের ক্ষমতা অন্যের উপর ন্যাস্ত করা।

১২।  খাত্তাবিয়া   শিয়া:  চরমপন্থী  শিয়াদের  এই দলের নেতা   হলো   আবুল    খাত্তাব  আসাদী।   এদের  আক্বীদা হচ্ছে-

”নবীগণ    হলেন    প্রকৃত    ইমাম    এবং    আবুল    খাত্তাব  একজন      নবী।     অন্যান্য      নবীগণ     আবুল     খাত্তাবের আনুগত্য       করাকে        মানুষের       উপর       ফরয        করে   দিয়েছেন”।  আর এক কদম অগ্রসর  হয়ে এরা বলে -  ”সমস্ত ইমামগণই  খোদা, ইমাম   হাসান -  হোসাইনের পুরুষ সন্তানগণ সকলেই আল্লাহর সন্তান ও প্রিয়। ইমাম জাফর সাদেক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু খোদা। তাদের নেতা আবুল খাত্তাব  হযরত আলী ও ইমাম জাফর সাদেকের চেয়েও উত্তম”।

এরা        এদের        স্বপক্ষীয়        লোকদের        পক্ষে        এবং  বিপক্ষগণের  বিরুদ্ধে মিথ্যা  স্বাক্ষ্য  প্রদানকে বৈধ   মনে করে।      তাদের      নেতা       নিহত      হওয়ার        পর      এরা কয়েকগ্রুপে    বিভক্ত    হয়ে      পড়ে।    এক    গ্রুপ     বলে- ”আবুল     খাত্তাবের        পর     মা'মার     তাদের     ইমাম”।  আল্লাহর ইবাদতের ন্যায়  তারা   মা'মার -   এর ইবাদত শুরু করে দেয়। তাদের মতে - ”দুনিয়ার ধন   -  সম্পদ ও   অন্যান্য   নেয়ামতসমূহই   বেহেস্ত   এবং   অমঙ্গল   ও  মুসিবত  সমূহই   দোযখ”।  এরা  হারাম  বস্তুকে   হালাল মনে করে   এবং ফরয  সমূহ  বর্জন করে। তাদের  অন্য গ্রুপের দাবি হলো - আবুল খাত্তাবের হত্যার পর বাজি' নামক ব্যক্তি  তাদের    ইমাম।  তাদের  বিশ্বাস: প্রত্যেক মুমিনের  নিকটই ওহী  আসে”।  তাদের  তৃতীয় গ্রুপের ধারণা   -  ”আবুল  খাত্তাবের   পর  তাদের   ইমাম  ওমর  ইবনে বয়ান   আজালী”। (আমাদের  দেশের কিছু  ভন্ড ফকির তাদের অনুসারী)।


আল্লামা আবদুল জলীল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর 'শিয়া পরিচিতি' থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন