তিন ধরনের বন্ধু


তিন ধরনের বন্ধু 

রাসূলে খােদা صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: মৃত ব্যক্তির সাথে তিনটি জিনিস যায়: (১) তার পরিবারের লােকেরা (২) তার সম্পদ এবং (৩) তার আমল। অতঃপর দুটি জিনিস ফিরে আসে আর একটি তার সাথে রয়ে যায়। পরিবারের লােকেরা এবং সম্পদ ফিরে আসে আর তার আমল তার সাথে যায়। (বুখারী, কিতাবুর রিকাক, বাবু সাকারাতিল মউত, ৪/২৫০, হাদীস নং-৬৫১৪) 

আর হযরত আবু হুরায়রা رَضِيَ اللّٰهُ  تَعَالٰی عَنۡهُ থেকে বর্ণিত: যখন কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে তখন ফিরিশতারা বলে: مَا قَدَّمَ অর্থাৎ সে পূর্বে কি পাঠিয়েছে? এবং লােকে জিজ্ঞাসা করে: مَا خَلَّفَ : অর্থাৎ সে কি রেখে গেছে? (শুয়াবুল ঈমান, বাবু ফিয যুহুদ ও কসর আল আমল, হাদীস নং-১০৪৭৫, ৭/৩২৮) অর্থাৎ মৃত্যুর সময় ওয়ারিশরা রেখে যাওয়া সম্পদের চিন্তায় থাকে যে, কি রেখে যাচ্ছে? এবং যে ফিরিশতা রূহ কবয করার জন্য আসে, সে আমল ও আক্বীদার হিসাব করে। (মিরাতুল মানাজি, ৭/৪৯)। 

প্রিয় ইসলামী বােনেরা! বুদ্ধিমত্তার চাহিদা যে, আমরা যেনাে দুনিয়া এবং এর মধ্যকার জিনিসের চিন্তা ছেড়ে দিই এবং নেক আমল অর্জনে লিপ্ত হয়ে যাই। যেই ধন সম্পদ উপার্জনের জন্য আমরা জীবন শেষ করে দিচ্ছি, এর মধ্য থেকে শুধুমাত্র এতটুকুই আমাদের, যা ব্যয় করে দিয়েছে। যা অবশিষ্ট রয়ে গেছে তা আমাদের নয়, বরং ওয়ারিশদের। তাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় হলাে যে, ধন সম্পদ এবং দুনিয়ার আকাঙ্ক্ষাকে ছেড়ে দেয়া এবং পরিনাম সাজানাের প্রতি মনােযােগ দেয়া। এই অর্থ কারাে বিশ্বস্ততা করেনি, এটা আসলেই হাতের ময়লা, মনে করুন! যদি জীবনে কোটি কোটি টাকা জমাও করে নেয়া হয়, তবুও আমরা ততটুকুই ব্যবহার করতে পারবাে যতটুকু আমরা করতে পারি। এভাবে বুঝে নিন, যেমন কোন ব্যক্তির ক্ষুধা (Hunger) লেগেছে, সামনে বিরিয়ানি রান্না হচ্ছে, বিরিয়ানির সুগন্ধি মন ও মননকে মুগ্ধ করে দিচ্ছে, মন সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে, মুখে পানি এসে যাচ্ছে, মন চাচ্ছে যে পুরাে পাতিলই খেয়ে নিই কিন্তু আসলে এর থেকে কতটুকুই বা খেতে পারবে। এক প্লেট বিরিয়ানিই যথেষ্ট, খুব বেশি খেলে দুই বা তিন প্লেট খাওয়ার পর আর খাওয়ার সুযােগই নেই। অনেক সময় এমন হয় যে, পেট ভরে যায় কিন্তু মন ভরেনা, ইচ্ছে করে যে, আরাে খাই, খুবই সুস্বাদু হয়েছে কিন্তু খায়না, এই কারণেই যে, খাওয়ার উপায়ও তাে নাই, পেট ভরে গেছে, আর কিভাবে খাবে, ঠিক অনুরূপভাবে আমরা যতই উপার্জন করিনা কেন, কোটি কোটি টাকা জমা করে নিইনা কেন কিন্তু এর থেকে এতটুকুই খাবাে, যতটুকুতে পেট ভরে। অনুরূপভাবে কাপড়ও ততটুকুই ব্যবহার করা হবে যতটুকু দ্বারা একটি পােষাক হয়ে, মােটকথা দুনিয়াবী সম্পদের ভান্ডার জমা নেয়া হলেও ব্যবহার ততটুকুই করতে পারবে যতটুকু নিজের জন্য সম্ভব, অবশিষ্ট সবই দুনিয়ায় রয়ে যাবে। যেমনটি হাদীসে পাকে রয়েছে: নবীয়ে আকরাম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেন: বান্দা আমার সম্পদ আমার সম্পদ করতে থাকে, অথচ তার সম্পদ শুধুমাত্র তিনটি অংশ: প্রথমতঃ তা, যা খেয়ে শেষ করে দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয়তঃ তা, যা পরিধান করে ময়লা করে দেয়া হয়েছে এবং তৃতীয়তঃ তা, যা কাউকে (আল্লাহর পথে) দিয়ে দেয়া হয়েছে আর জমা করে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া যাকিছু রয়েছে সবই নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং তা  অপরের জন্য রেখে যেতে হবে। (মুসলিম, কিতাবুয যুহদ ওয়ার রিকাক, ১২১০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৭৪২৫০) 

صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب

صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد 

_______________

কিতাব : দুনিয়া আমাদেরকে কি দিয়েছে

লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন