কোন প্রকারের দুনিয়া ভাল, কোন প্রকারের দুনিয়া নিন্দনীয়?

 

কোন প্রকারের দুনিয়া ভাল, কোন প্রকারের দুনিয়া নিন্দনীয়? 

প্রিয় ইসলামী বােনেরা! দুনিয়াবী দ্রব্যাদি তিন ধরনের: (১) সেই দুনিয়াবী দ্রব্যসামগ্রী যা আখিরাতে সহযােগীতা করে আর যেগুলাের উপকারিতা মৃত্যুর পরেও পাওয়া যায়, এ ধরনের দ্রব্য কেবলই দুইটি: ১. ইলম ও ২. আমল। আমল বলতে একনিষ্টতা সহকারে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা। (২) সেসব দ্রব্যসামগ্রী যেগুলাের উপকারিতা কেবল দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকে; আখিরাতে সেসবের কিছুই অর্জিত হয়না, যেমন; গুনাহ করার মাধ্যমে স্বাদ ভােগ করা, বৈধ দ্রব্য থেকে প্রয়ােজনের অতিরিক্ত উপকার গ্রহণ করা। যেমন; জায়গা-জমি, সােনা-রূপা, উন্নত পােষাক, উন্নত মানের খাবার ইত্যাদি এবং এই প্রকারটি নিন্দনীয় প্রকারের অর্ন্তভূক্ত। (৩) সেসব দ্রব্যাদি যেগুলাে নেক কাজে সহযােগিতা করে, যেমন; প্রয়ােজনীয় খাবার ও পােষাক ইত্যাদি। এই প্রকারটিও প্রশংসনীয় কিন্তু এগুলাে দ্বারা যদি দুনিয়ার সাময়িক উপকারিতা ও স্বাদ গ্রহণ উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে এই দুনিয়ার দ্রব্যাদিকেও নিন্দনীয় বলা হবে। (ইহইয়াউল উলুম, ৩/২৭০-২৭১)। 

صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب

صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد 

প্রিয় ইসলামী বােনেরা! দুনিয়া হচ্ছে একটি মুসাফিরখানার মতােই, যেখানে মুসাফিররা এসে অবস্থান করে এবং কয়েকদিন অবস্থান করে সেখান থেকে চলে যায়, মুসাফিরখানায় এসে কয়েকদিন অবস্থানকারীরা কখনােই সেখানে থাকাবস্থায় দীর্ঘস্থায়ীত্বের আশা করেনা এবং এর পরিবেশে মন লাগায় না। তাই আমাদেরও উচিৎ যে, আমরাও এই অস্থায়ী ঘর অর্থাৎ দুনিয়ারই হয়ে না যাই, কেননা আমাদেরতে একদিন এখান থেকে চলে যেতে হবে, আমাদের গন্তব্য এটা নয় বরং জান্নাত। আসুন নিজের অন্তরে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি বৃদ্ধি করতে এবং আখিরাতের ভাবনা উদ্ধোলিত করতে প্রিয় নবী صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم এর তিনটি বাণী শ্রবণ করি এবং নসিহতের মাদানী ফুল কুঁড়িয়ে নিই: (১) ইরশাদ হচ্ছে: যে ব্যক্তি সর্বদা দুনিয়ার চিন্তায় লিপ্ত থাকে (এবং দ্বীনের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবে না) তবে আল্লাহ তায়ালা তার সকল কাজ কঠিন করে দিবেন এবং তার দারিদ্রতা সর্বদা তার সামনেই থাকবে আর তার দুনিয়া ততটুকুই অর্জিত হবে যতটুকু তার নিয়তিতে লিখা ছিলাে এবং যার নিয়্যত আখিরাতের দিকে থাকবে তবে আল্লাহ তায়ালা তার একাগ্রতার জন্য তার কাজকে সঠিক করে দেন এবং তার অন্তরে দুনিয়ার প্রতি অগ্রাহ্যতা প্রদান করে দেন আর দুনিয়া তার নিকট সয়ংক্রিয় ভাবে এসে যায়। 

(ইবনে মাজাহ, কিতাবুয যুহদ, ৪/৪২৪, হাদীস নং-৪১০৫) 

(২) ইরশাদ হচ্ছে: দুনিয়া হচ্ছে তার ঘর, যার (আখিরাতে) কোন ঘর নেই এবং দুনিয়া তার জন্য সম্পদ, যার অন্য কোন সম্পদ নেই আর দুনিয়ার জন্য সেই ব্যক্তি সঞ্চয় করে, যার নিকট জ্ঞান নেই। 

(শুয়াবুল ঈমান, ফসলু ফি মা বাল্লিগনা আন সাহাবাতি... ৭/৩৭৫, হাদীস নং-১০৬৩৮)। 

(৩) ইরশাদ হচ্ছে: যে দুনিয়াকে ভালবাসলাে, সে নিজের আখিরাতকে ক্ষতিগ্রস্থ করলাে এবং যে নিজের আখিরাতকে ভালবাসলাে, সে নিজের দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্থ করলাে, ব্যস! তােমরা ধ্বংসশীল দুনিয়ার উপর স্থায়ী আখিরাতকে প্রাধান্য দাও। 

(মুসনাদে ইমাম আহমদ, মুসনাদুল কাউফিইয়িন, হাদীস আবী মুসা আল আশআরি, ৭/১৬৫, হাদীস নং- ১৯৭১৭) 

বর্ণনাকৃত হাদীসে পাকের আলােকে হাকিমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খান নাঈমী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: এই মহান বাণী থেকে জানা গেলাে যে, দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের ভালবাসা একত্রে মনের মাঝে থাকতে পারে না, দুনিয়া আখিরাতের পরিপন্থি। ইমাম গাযালী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ  বলেন: জ্ঞান ও ঈমানের সবচেয়ে নিম্নস্তর হলাে, মানুষের জেনে নেয়া যে, দুনিয়া নশ্বর (ধ্বংসশীল) এবং আখিরাত অবিনশ্বর (স্থায়ী), এর প্রতিফল এরূপ যে, দুনিয়ায় অবস্থান করে আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহন করা, দুনিয়ায় মগ্ন হয়ে না যাওয়া। (মিরাতুল মানাজি, ৭/১৮) 

صَلُّوۡا عَلَى الۡحَبِيۡب

صَلَّى اللّٰهُ تَعَالٰى عَلٰى مُحَمَّد 

_______________

কিতাব : দুনিয়া আমাদেরকে কি দিয়েছে

লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন