দুনিয়ার প্রতি উদাসিন খলিফা

 

দুনিয়ার প্রতি উদাসিন খলিফা

আমীরুল মুমিনিন হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযীয  رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ যখন খলিফা নিযুক্ত হলেন, তখন দুনিয়ার প্রতি উদাসিনতাকে অবলম্বন করে নিলেন,আরাম ও আয়েশকে ছুঁড়ে দিলেন, সুস্বাদু আহার ছেড়ে দিলেন এবং খুবই সাধারণ খাবার খেতে শুরু করলেন। 

নুআঈম বিন সালামত  رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন যে, আমি আমীরুল মুমিনিন হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযীয  رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এর নিকট গেলে দেখলাম যে, যয়তুনের তেল দিয়ে রুটি আহার করছেন। (সীরাতে ইবনে জাওযী, ১৮০ পৃষ্ঠা)

 ইউনুস বিন শায়াব  رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বর্ণনা করেন যে, আমি আমীরুল মুমিনিন হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযীয  رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ কে খেলাফত লাভের পর এই অবস্থায় দেখলাম যে, যদি আমি চাই তবে না ছুঁয়েই তার পাজরের হাঁড়গুলাে গুনে নিতে পারতাম। (সীরাতে ইবনে জাওযী, ১৮১ পৃষ্ঠা) তাঁর গােলাম বলেন যে, একদিন আমি আমার মুনিব আমীরুল মুমিনিনের নিকট এলাম, তখন তিনি  رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ মসুরের ডাল আহার করছিলেন, আমি বললাম: كُلَّ یَوۡمٍ عَدَسٌ অর্থাৎ রােজ রােজ ডাল! তাঁর সম্মানিতা স্ত্রী বললেন: هَذَا طَعَامُ مَولَاكَ اَمِیۡرِ الۡمُؤۡمِنِیۡن  অর্থাৎ তােমার মুনিব আমীরুল মুমিনিন  رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এর এটিই খাবার। (সীরাতে ইবনে জাওযী, ১৮১ পৃষ্ঠা) 


 বাহ! “মসুর ডাল” এর কি বরকতা!

سُبۡحٰنَ اللّٰه عَزَّ وَجَلَّ 

 উৎসর্গীত হয়ে যান! আমীরুল মুমিনিন হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযীয رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এর দুনিয়ার প্রতি উদাসিনতার উপর! যিনি এতাে বড় সম্রাজ্যের খলিফা হয়েও সাধারন খাবার খেতেন, তাই আমাদেরও উচিৎ যে,আমরাও যেনাে আল্লাহ ওয়ালাদের পদাঙ্ক অনুসরন করে সাধাসিধে জীবন অতিবাহিত করি এবং ডাল সবজিও আনন্দ চিত্তে খেয়ে নিই।  اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ عَزَّ وَ جَلَّ মসুরের ডালের কিরূপ শান যে, হাদীসে পাকে একে বরকতময় বস্তু বলে ঘােষণা করা হয়েছে, যেমনটি রাসূলে আকরাম صَلَّی اللّٰهُ تَعَالٰی عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم  ইরশাদ করেন: তােমরা মসুরের ডাল অবশ্যই খাও, কেননা এটি বরকতময় বস্তু। যা অন্তরকে কোমল এবং অশ্রুকে বৃদ্ধি করে। এতে ৭০জন আম্বিয়ায়ে কিরামের বরকত অন্তর্ভুক্ত, যাঁদের মধ্যে হযরত ঈসা عَلَیۡهِ السَّلَام অন্তর্ভূক্ত। (ফিরদাউসুল আখবার, ২/৬৭, হাদীস নং-৩৮৭৬) 

ইমাম শিবলী رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ  বলেন যে, হযরত সায়্যিদুনা ওমর বিন আব্দুল আযীয رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ একদিন যয়তুন, একদিন মাংস এবং একদিন মসুরের ডাল রুটি দিয়ে আহার করতেন। এক বুযুর্গ رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলেন: মসুরের ডাল এবং যয়তুন নেককারদের আহার, মুসরের ডাল শরীরের মেদ কমায় আর মেদহীন শরীর ইবাদতে সাহায্য করে, মসুরের ডাল এমন কামভাব জাগ্রত করে না, যা মাংস খাওয়াতে জাগ্রত হয়। (তাফসীরে কুরতুবী, ১/৩৪৬)। 

মে কম খানা খা'নে কি আ'দত বানাওঁ 

খােদা করম! ইস্তেকামত ভি পা'ও 


দুনিয়া ও আখিরাত

প্রিয় ইসলামী বােনেরা! এটি একটি সত্যিকার বাস্তবতা যে, অবিনশ্বর আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া অনেক দ্রুত ধ্বংসশীল, দুনিয়ার আকাঙক্ষীরা প্রকাশ্য এই দুনিয়াকে অর্জনের জন্য অনেক বেশি খুশি হয়, এর সাথে দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষা জুড়ে নেয়,এর রঙ তামাশায় মত্ত হয়ে যায় কিন্তু যখন হুঁশে ফিরে তখন আফসােস করতে থাকে। দুনিয়ায় অবস্থান করে যারা আখিরাতের উন্নতির চেষ্টা করে, তার দুনিয়াও উত্তম হয়ে যায় এবং আখিরাতও সজ্জিত হয়ে যায় আর দুনিয়ায় অবস্থান করে শুধুমাত্র ধন সম্পদ উপার্জনকারী আখিরাতের উপকারীতা ও প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। দুনিয়া রঙ তামাশায় মত্তরা শয়তানের প্রিয়ভাজন হয়ে থাকে, আর 

আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহনকারীরা আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হয়ে যায়। দুনিয়ার পথ সাধারনত কামনা ও দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষার কারণে সহজ মনে হয়, কিন্তু এর পরিনতি অনেক খারাপ, আখিরাতের পথ প্রকাশ্যভাবে কঠিন মনে হয় কিন্তু এর গন্তব্য জান্নাতের সুন্দর এবং স্থায়ী স্থান। যেহেতু দুনিয়া আখিরাতে তুলনায় আমাদের অনেক নিকটবর্তী, তাই এর প্রতি মন দ্রুত আকৃষ্ট হয়ে যায় আর আখিরাত হলাে দুনিয়ার পর, তাই এর প্রতি উদাসিনতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

মনে রাখবেন! দুনিয়াকে দুনিয়া বলার কারণও এটি যে, দুনিয়া আখিরাতের তুলনায় আমাদের বেশি নিকটবর্তী। 

_______________

কিতাব : দুনিয়া আমাদেরকে কি দিয়েছে

লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন