ইবনে মুলজাম এর লাশের টুকরােকে পুড়ে ছাই করা হল
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাছান,সায়্যিদুনা ইমাম হুসাঈন ও সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন জাফর عَلَيۡهِمُ الرِّضۡوَان মওলা আলী رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡه গােসল দেন। হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাছান মুজতাবা رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡه জানাযার নামায পড়ান, রাতে রাজধানী কূফায় দাফন করেন।
লােকেরা ইবনে মুলজাম এর মত অসৎ ও মন্দ পাপিষ্ঠের দেহকে টুকরাে টুকরাে করে একটি ঝুড়িতে রেখে আগুন লাগিয়ে দিল, আর তা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। (তারীখুল খুলাফা, পৃ-১৩৯) ।
মওলা আলী كَرَّمَ اللّٰه تَعَالٰی وَجۡهَهُ الۡكَرِیۡمِএর হত্যাকারীর হৃদয় কাঁপানাে ঘটনা
দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মাদীনা কর্তৃক প্রকাশিত “ফয়যানে সুন্নত” ২য় খন্ডের অন্তর্ভূক্ত ৫০৫ পৃষ্ঠা সম্বলিত অধ্যায় “গীবত কী তাবাকারিয়া” এর ১৯৯ নং পৃষ্ঠায় রয়েছে : ইছমা আব্বাদানি বলেন: আমি জঙ্গলে ঘুরছিলাম। তখন আমি একটি গীর্জা দেখতে পেলাম। গীর্জায় এক পাদ্রী ছিল। ঐ পাদ্রীকে আমি বললাম, আপনি এই বিরান ভূমিতে সবচেয়ে আশ্চর্য ও অলৌকিক বস্তু দেখেছেন তা আমাকে বলুন! তখন তিনি বললেন: আমি একদিন এখানে উট পাখির ন্যায় একটি দৈত্যদেহী সাদা পাখি দেখলাম । সে ঐ পাথরটির উপর বসে বমি করল । বমির সাথে একটি মানুষের মাথা বেরিয়ে আসল। সে বমি করতেই চলল আর এর সাথে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেড়িয়ে আসতে লাগল। আর খুব দ্রুততার সাথে একটি অঙ্গ অপরটির সাথে জোড়া লাগতে রইল । এমনকি শেষ পর্যন্ত তা একটি পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হয়ে গেল! ঐ মানুষটি যখনই উঠার চেষ্টা করল, তখনই ঐ দৈত্যদেহী পাখিটি তাকে ঠোকর মারল, তাকে খন্ড বিখন্ড করে ফেলল। অতঃপর তাকে গিলে ফেলল। অনেকদিন পর্যন্ত আমি এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখতে থাকলাম। আল্লাহর কুদরতের উপর আমার বিশ্বাস বেড়ে গেল যে, আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর পরে জীবিত করতে সক্ষম, একদিন আমি ঐ দৈত্যদেহী পাখিটির কাছে গেলাম এবং তার কাছে জানতে চাইলাম যে, ওহে পাখি! আমি তােমাকে ঐ স্বত্তার কসম দিয়ে বলছি যিনি তােমাকে সৃষ্টি করেছেন!
এবার যখন ঐ লােকটি সম্পূর্ণ গঠন হয়ে যায় তখন তুমি তাকে একটু ছেড়ে দিও, যাতে আমি তার সাথে কথা বলেতে পারি! তখন ঐ পাখিটি সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় বলল : “আমার আল্লাহ সব কিছুর বাদশাহ। প্রতিটি বস্তু ধ্বংসশীল আর তিনিই একমাত্র চিরস্থায়ী । আমি তাঁর একজন ফেরেস্তা, এই ব্যক্তির উপর আমাকে নিয়ােজিত করা হয়েছে, যাতে গুনাহের শাস্তি দিতে থাকি।” যখন বমিতে ঐ মানুষ বের হল, তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম : ওহে নিজ আত্মার উপর জুলুম কারী ব্যক্তি! তুমি কে? আর তােমার এ অবস্থা কেন? সে উত্তর দিল: “আমি হযরত আলী رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡه এর হত্যাকারী আব্দুর রহমান ইবনে মুলজাম। যখন আমি মারা গেলাম তখন আল্লাহ তায়ালার দরবারে আমার রূহ হাজির হল। তিনি আমাকে আমার আমল নামা দিলেন, যাতে আমার জন্ম থেকে হযরত আলী رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡه কে শহীদ করা পর্যন্ত সকল পূণ্য এবং গুনাহ লিপিবদ্ধ ছিল। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা এই ফেরেশতাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত আযাব দেয়।” এতটুকু বলে সে চুপ হয়ে গেল আর দৈত্যদেহী পাখিটি তার উপর ঠোকর মেরে তাকে গিলে ফেলল এবং চলে গেল । (শরহুস সুদুর, পৃ-১৭৫)।
কুপ্রবৃত্তির অনুসরনের ভয়ানক পরিণতি
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা দেখলেন তাে! মওলা আলী শেরে খােদা رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡه এর হত্যাকারী খারেজী, বাতিল, পথভ্রষ্টের কেমন ভয়ানক পরিণতি ঘটেছে! ঐ হতভাগা কেন এত বড় গুনাহ করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল যেমনিভাবে তা প্রথমেই বর্ণনা করা হয়েছে যে, সে এক খারেজীয়া মহিলার প্রেমে আটকা পড়ে গিয়েছিল । ঐ খারেজীয়া মহিলাটি বিয়ের মােহরানা এটাই নির্ধারণ করেছিল যে,তােমাকে হযরত আলী মুরতাদ্বা رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡه কে শহীদ করতে হবে। আফসােস! শত কোটি আফসােস! দুনিয়ার প্রেমে ইবনে মুলজাম অন্ধ হয়ে গিয়েছিল আর সে হযরত মওলা মুশকিল কুশা, আলী মুরতাদ্বা, শেরে খােদা كَرَّمَ اللّٰه تَعَالٰی وَجۡهَهُ الۡكَرِیۡمِ কে শহীদ করে দিল। এই অপদার্থের তাে ঐ মহিলার সাক্ষাত পাওয়াটা মাটিতে মিশে ধূলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল।
হাতে নাতে তার এই সাজা মিলল যে, লােকেরা দেখতে না দেখতেই তাকে ধরে ফেলল। অবশেষে তার শরীরকে টুকরাে টুকরাে করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হল, সে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল, তার জন্য মৃত্যুর পর কিয়ামত পর্যন্ত অবধারিত ভয়ানক শাস্তির কথা আপনারা এই মাত্র জানলেন। ঐ দূর্ভাগাটি না এদিকের রইল না ওদিকের! হযরত সায়্যিদুনা আবু দারদা رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰی عَنۡهُ সত্য বলেছেন, “সামান্য সময়ের জন্য কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করাটা দীর্ঘ পেরেশানীর কারণ হয়ে যায়। (ইমাম বায়হাকী প্রণীত আয যুহদুল কবীর, পৃ: ১৫৭, হাদীস নং : ৩৪৪)।
_____________________
হযরত আলী كَرَّمَ اللّٰه تَعَالٰی وَجۡهَهُ الۡكَرِیۡمِ এর কারামত,
লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন