আল্লাহ ছাড়া অন্য কারাে কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া কি কখনও ওয়াজিব হয়?
প্রশ্ন (১৫): কোন কারণে কি গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ছাড়া অন্য কারাে) নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা ওয়াজিব হয়ে যায়?
উত্তর : জী, হ্যা। এমনও রয়েছে যে, গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ছাড়া অন্য কারাে) নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা ওয়াজিব হয়ে যায়। । কোন কোন অবস্থায় বান্দার উপরও ওয়াজিব হয়ে যায় যে, সে যেন সাহায্য করে। এই প্রেক্ষিতে এমনসব ফিকহী মাসআলা পেশ করা হচ্ছে, যেগুলােতে সাহায্য প্রার্থনা করা এবং সাহায্য প্রদান করা ওয়াজিব হয়ে যায় ।
যেসব ক্ষেত্রে সাহায্য প্রার্থনা করা ওয়াজিব
* যদি (পােষাক নেই, অবস্থা এমন যে, উলঙ্গ নামায পড়বে আর) অন্যের কাছে পােষাক থাকে, ধারণা করা যায় যে, চাইলে পাওয়া যাবে, এমতাবস্থায় চাওয়া ওয়াজিব । (বাহারে শরীয়ত। ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৪৮৫)।
* যদি আপনার সাথীর কাছে পানি থাকে, ধারণা যদি এই হয় যে, (পানির রূপে সাহায্য) চাইলে সে দেবে, তা হলে পানি চাইবার পূর্বে তায়াম্মুম জায়েয হবে না। আর যদি না চাওয়া হয়, আর তায়াম্মুম করে নামায পড়ে নেয়, নামাযের পরে চাইল, সে দিয়েও দিল, অথবা চাওয়ার আগেই সে দিয়ে দিল, তা হলে ওযু করে পুনরায় নামায পড়ে দেওয়া ওয়াজিব হয়ে যাবে। যদি চাওয়ার পর না দিয়ে থাকে, তা হলে নামায হয়ে গেছে। সে যদি পরেও না চেয়ে থাকে,যাতে করে সে কি দেবে না কি দেবে না তা জানা যেত, আর সে নিজেও দেয় নি, তা হলে নামায হয়ে গেছে। আর যদি দেওয়ার ধারণা বেশি নয়, তাই তায়াম্মুম করে নামায পড়ে নিয়েছে, সে ক্ষেত্রেও একই অবস্থা যে, পরে পানি যদি দিয়ে দেয়, তা হলে ওযু করে নামায পুনরায় পড়ে দেবে, অন্যথায় নামায হয়ে গেছে ।(বাহারে শরীয়ত। ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩৪৮)
যেসব ক্ষেত্রে সাহায্য করা ওয়াজিব
{১} কোন বিপদগ্রস্থ লােক আবেদন করছে, নামাযী লােককে আহ্বান করছে, সাধারণত: কোন মানুষকে আহ্বান করছে, কেউ আগুনে পুড়ে যাচ্ছে, কেউ পানিতে ডুবে যাচ্ছে, কোন অন্ধ পথিক কূপে পড়তে যাচ্ছে, এসব অবস্থায় (নামায) ভেঙ্গে দেওয়া ওয়াজিব। যদি নামাযী লােকটি তাদের বাঁচাবার ক্ষমতা বা শক্তি রাখে। (প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ৬৩৭)।
{২}মাতা-পিতা, দাদা-দাদী ইত্যাদি বংশের কেউ কেবল আহ্বান করলেই নামায ভঙ্গ করা জায়েয নাই। অবশ্য তাদের আহ্বানও যদি কোন বড় ধরনের বিপদের কারণে হয়ে থাকে, যেমন : পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলে নামায ভেঙ্গে দেবে (এবং তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে)। এ বিধান হল ফরজ নামাযের ক্ষেত্রে। নামায যদি নফল হয়ে থাকে, আর আহ্বানকারীও জানে যে, সে নামায পড়ছে, তা হলে তাদের সাধারণ আহ্বানেই নামায ভেঙ্গে দেবে। আর যদি তার নফল নামায পড়া সম্বন্ধে তার ধারণা না থাকে, আহ্বান করেছে, তা হলে নামায ভেঙ্গে দেবে এবং জবাব দেবে । যদিও মামুলিভাবেই আহ্বান করে থাকে। (বাহারে শরীয়ত । ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৬৩৮) ।
{৩}কেউ শুয়ে আছে কিংবা নামায পড়তে ভুলে গেছে, এমতাবস্থায় যার জানা আছে তার উপর ওয়াজিব যে, (তাকে এভাবে সাহায্য করা যে,) শােয়া থেকে জাগিয়ে দেবে। আর ভুলে থাকা লােকটিকে মনে করিয়ে দেবে । (বাহারে শরীয়ত । ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৭০১)।
{৪}ভুলে কেউ খেয়ে নিল কিংবা পান করে ফেলল বা সংগম করল, তাতে রােজা ভাঙ্গবে না। চাই সেই রােজাটি ফরজ হয়ে থাকুক বা নফল। আর রােজার নিয়্যত করার পূর্বে এসব পাওয়া গেল কিংবা পরে পাওয়া গেল, কিন্তু তাকে মনে করিয়ে দেওয়ার পরও যদি মনে এল না যে, সে রােজাদার, তা হলে এমতাবস্থায় রােজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। শর্ত হল যে, মনে করিয়ে দেওয়ার পরেই যদি সে ওসব কাজ করে থাকে। কিন্তু এমতাবস্থায় কাফফারা দিতে হবে না।
{৫}কোন রােজাদারকে এসব কাজে দেখা গেল, তা হলে মনে করিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। (তাকে এভাবে সাহায্য করা হল না, অর্থাৎ) মনে করিয়ে দিল না, তা হলে গুনাহগার হবে। কিন্তু সেই রােজাদারটি যদি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে থাকে যে, মনে করিয়ে দিলে সে পানাহার বন্ধ করে দেবে। আর দুর্বলতা এতই বেড়ে যাবে যে, রােজা রাখাই সম্ভব হবে না, আর খেয়ে নেবে এবং রােজাও ভালমত পূর্ণ করে নেবে। অন্যান্য এবাদতগুলােও ভাল ভাবে পালন করবে। তা হলে এমতাবস্থায় মনে করিয়ে না দেওয়া উত্তম। (বাহারে শরীয়ত। ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৯৮)।
{৬}কোন ব্যক্তি যদি (কুরআন শরীফ) ভুল তেলাওয়াত করে, তা হলে শ্রোতার উপর শুদ্ধ করে দেওয়া ওয়াজিব। শর্ত হল শুদ্ধ করে দেওয়ার কারণে যদি হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি না হয়। অনুরূপ যদি কারাে কুরআন শরীফ ধার স্বরূপ নিয়ে থাকে, তাতে যদি মুদ্রণগত ভুল দেখতে পায়, তা হলে তা ঠিক করে দেওয়া (কারণ, এটিও একটি সাহায্য) ওয়াজিব হবে । (বাহারে শরীয়ত। ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৫৫)
হে ইন্তেজামে দুনিয়া ইমদাদে বাহামি ছে,
আ জায়েগি খারাবি ইমদাদ কি কমি সে।
প্রশ্ন (১৬): পবিত্র কুরআনে রয়েছে: وَ لَا تَدۡعُ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ : কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “আল্লাহ্ ব্যতীত তাদের আহ্বান করিও না।”(পারা: ১১, সূরা: ইউনুস, আয়াত: ১০৬) বুঝা গেল যে, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে আহ্বান করা জায়েয নেই।
উত্তর : উক্ত আয়াতটিতে مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ : (আল্লাহ্ ব্যতীত) অন্য কাউকে আহ্বান করাকে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে উদ্দেশ্য হল মূর্তি। আর আহ্বান করার অর্থ হল ইবাদত। (তাফসীর তাবারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা: ৬১৮)
আলা হযরত رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ উপর্যুক্ত আয়াতাংশের অনুবাদ করছেন এভাবে: আর তােমরা আল্লাহ্ ব্যতীত আর কারাে বন্দেগী করবে না। অপর আয়াত এর সহায়ক অর্থ প্রদান করছে। যেমন:
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: وَ لَا تَدۡعُ مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ ۘ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۟; কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ : “আর আল্লাহর সাথে অপর খােদাদের পূজা করবে না। তিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নাই।”
(পারা: ২০, সুরা ক্বাসা, আয়াত-৮৮)
বুঝা গেল যে, গাইরুল্লাহকে খােদা মনে করে আহ্বান করা শিরক। কেননা, এ হল গাইরুল্লাহরই ইবাদত । (বিশদ ভাবে জানার জন্য হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খান رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এর কিতাব ইলমুল কুরআন অধ্যয়ন করুন)।
আল্লাহ্ কি আতা ছে হেঁ মােস্তাফা মদদগার,
হেঁ আম্বিয়া মদদ পর হেঁ আউলিয়া মদদগার।
প্রশ্ন (১৭): মুশরিকরা মূর্তিদের আর আপনারা নবী-ওলীদের। নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে থাকেন। উভয় কি শিরকের দিক থেকে সমান হল না?
উত্তর : আল্লাহর পানাহ! বিষয় দুইটি কখনও এক নয়। মুশরিকদের আকীদা হল আল্লাহ মূর্তিদেরকে ইলাহ হওয়ার যােগ্যতা দান করে দিয়েছেন (অর্থাৎ মাবুদ বানিয়ে দিয়েছেন)। তাছাড়া তারা মূর্তি ইত্যাদিকে তাদের ওসীলা বা সুপারিশকারী বলে ধারণা করে । মূলত: মূৰ্তিরা তা নয়। اَلۡحَمۡدُ لِلّٰهِ عَزّ وَجَلَّ আমরা মুসলমানেরা কোন নৈকট্যশীল থেকে নৈকট্যশীলদের এমনকি মদিনার তাজেদার নবী করিম صَلَّى اللّٰهُ عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم কেও ইলাহ্ বলি না। আমরা নবী-ওলীদেরকে তাে আল্লাহর বান্দা এবং সম্মানের দিক থেকে আল্লাহরই অভিপ্রায় ও পূর্ব অনুমােদন সাপেক্ষে আমাদের জন্য ওসীলা, হাজত্-রওয়া ও মুশকিল কোশা বলেই মানি।
_____________________
হযরত আলী كَرَّمَ اللّٰه تَعَالٰی وَجۡهَهُ الۡكَرِیۡمِ এর কারামত,
লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন