জান্নাতী হুরদের ভিন্ন ভাষা বুঝার ক্ষমতা

 

জান্নাতী হুরদের ভিন্ন ভাষা বুঝার ক্ষমতা


নবী করীম হুজুর পুরনুর صَلَّى اللّٰهُ عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم  ইরশাদ করেন: “কোন মহিলা যখন দুনিয়াতে তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখন তার বেহেশতী হুর স্ত্রীগণ বলে থাকে لَا تُوۡذِیۡهِ قَاتَلَكِ للّٰهُ فَاِنَّمَا هُوَ عِنۡدَكِ دَخِیۡلٌ یُوۡشِكُ اَنۡ یُّفَارِقَكِ اِلَیۡنَا   অর্থাৎ আল্লাহ্ তায়ালা তােমার ধ্বংস করুন, তাকে তুমি কষ্ট দিও না। তিনি তােমার কাছে কিছু দিনেরই মেহমান। শীঘ্রই তিনি তােমার নিকট থেকে পৃথক হয়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন।” (তিরমিযী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৩৯২, হাদিস নং-১১৭৭)। 


হুরেরা যখন বিভিন্ন ভাষা বুঝতে পারে, তখন অলিকুল সম্রাট হুজুর গাউছে আযম  رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ ওফাতের পর বিভিন্ন ভাষা কেন বুঝতে পারবেন না!


 হাদিস শরীফটির ঈমান উদ্দীপক ব্যাখ্যা 


হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খান  رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ  উক্ত হাদিসটির টীকায় (মিরকাত, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৯৮) বলেছেন: হাদিসটি থেকে কয়েকটি মাসআলা বেরিয়ে আসে।

 {১} হুরগুলাে নূরানী হওয়ার কারণে বেহেশতে অবস্থান করে পৃথিবীর ঘটনাগুলাে দেখতে পায়। দেখুন তাে, ঝগড়া হচ্ছে কোন বন্ধ রুমে, অথচ তা দেখে নিচ্ছে হুরেরা! মিরকাত প্রণেতা হযরত সায়্যিদুনা মােল্লা আলী ক্বারী  رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ এ স্থানে বলেন: উর্ধ্বলােকের ফেরেশতারা দুনিয়াবাসীদের প্রতিটি আমল 

সম্পর্কে খবর রাখেন। 

{২} মানবকুলের পরিণতি সম্পর্কে হুরেরা জানে। যেমন; অমুক মুত্তাকী মুমিন লােকটি মৃত্যু বরণ করবেন (তাই তাে তারা বলে, শীঘ্র তিনি তােমাকে ছেড়ে আমাদের নিকট চলে আসবেন')। 

{৩} মানবকুলের মর্যাদা সম্পর্কিত জ্ঞান, যেমন; কিয়ামতের পর অমুক মানুষটি বেহেশতের অমুক স্তরে অবস্থান করবেন।

{৪} হুরেরা এখান থেকেই তাদের মানুষ স্বামীদের চিনে।

{৫} এখন থেকেই আমাদের দুঃখে হুরদের দুঃখ হয় । হুরদের জ্ঞানের অবস্থা যদি এমন হয়ে থাকে, তা হলে হুজুর পুর নূর, নবী করীম صَلَّى اللّٰهُ عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم যিনি সমগ্র সৃষ্টি থেকে সেরা জ্ঞানের অধিকারী তাঁর ইলম সম্পর্কে কী বলার থাকতে পারে? 

মুফতি ছাহেব সামনে আরও বলেছেন: 

{৬} হুজুর صَلَّى اللّٰهُ عَلَيۡهِ وَاٰلِهٖ وَسَلَّم বেহেশতের অবস্থাদি (এবং) হুরদের কথাবার্তা সম্পর্কেও জানেন। অথচ কথাগুলাে বলছে সেই হুরই যার স্বামী রয়েছে ওই ঘরটিতে। অর্থাৎ তিরমিযী শরীফে হাদিসটি ‘গরীব। 

কিন্তু ইবনে মাজার রেওয়াতে গরীব না। এই গরীব হওয়া কিন্তু ক্ষতিকর নয়। কেননা, কুর’আন শরীফ হাদিসটির সহায়ক ঘােষণা দিচ্ছে। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন: یَعۡلَمُوۡنَ مَا تَفۡعَلُوۡنَ কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: “তােমরা যা যা কর তা তারা জানে।” (আল ইনফিতার, আয়াত- ১২) 

ইবলিস এবং ইবলিসের বংশধরদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন : اِنَّهٗ یَرٰىکُمۡ هُوَ وَ قَبِیۡلُهٗ مِنۡ حَیۡثُ لَا تَرَوۡنَهُمۡدۡ ؕ

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ : “নিশ্চয় সে আর তার বংশীয়রা সেখান থেকে তােমাদের দেখতে পায়, তােমরা কিন্তু তাদের দেখতে পাও না।” (পারা: ৮। সূরা আরাফ । আয়াত: ২৭)। 


হাদিস শরীফের সহায়ক যখন কুর’আন শরীফের আয়াত হয়ে যায়, তখন দুর্বল হাদিসও শক্তিশালী হয়ে যায় । (মিরআত, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৯৮) 


যাই হােক, আখিরাত-জগতের বিষয়াদি আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত এবং স্বভাব-বিরুদ্ধই বটে। তাদের সাথে দুনিয়ার কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না। অর্থাৎ যে ব্যাপারগুলাে দুনিয়াতে কষ্ট করে (কোন না কোন চেষ্টায়) লাভ করা যায়, সেগুলাে সেখানে কেবল প্রদত্তভাবেই লাভ হয়ে যায়। হযরত মােল্লা আলী কারী  رَحۡمَةُ اللّٰهِ تَعَالٰی عَلَيۡهِ বলছেন: 

لِاَنَّ اُمُوۡرَ الۡاٰخِرَةِ مَبۡنِيَةٌ عَلٰى خَرۡقِ الۡعَادَۃِ٭

অর্থাৎ : কেননা, আখিরাতের বিষয়গুলাে (দুনিয়াবী) স্বভাবের বিরুদ্ধ ধরনের । (মিরকাত ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩৫৪, হাদিস নং ১৩১ এর টীকা)। 


রাস্তে পুরখার, মঞ্জিল দূর, বন সুনসান হে আল মদদ, 

আয় রেহনুমা! ইয়া গাউছে আযম দস্তগীর! (ওয়াসায়িলে বখশিশ, পৃষ্ঠা: ৫২২)। 

_____________________

হযরত আলী كَرَّمَ اللّٰه تَعَالٰی وَجۡهَهُ الۡكَرِیۡمِ এর কারামত,

লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন