নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকাল হতে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য ফিতনা ও তার সংখ্যা সম্পর্কে অভিহিতকরণ (৪)
হাদিস - ৩১
হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার সঙ্গির কল্যাণ সম্পর্কে শিক্ষা করতে। আর আমি অকল্যাণ বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা করতাম তার মধ্যে পতিত হওয়ার ভয়ে। (বর্ণনাকারী ঈসা বলেন) অর্থাৎ ফিতনার মধ্যে পতিত হওয়ার ভয়ে। ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩১]
হাদিস - ৩২
হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামানে (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা এক সময় মুর্খতা ও মন্দের মধ্যে নিমজ্জিত ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই কল্যাণ (অর্থাৎ দ্বীন-ইসলাম) দান করেন। তবেকি এই কল্যাণের পর পুনরায় অকল্যান আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আসবে। তবে তা হবে ধোঁয়াযুক্ত। ঐ সমস্ত লোকেরা আমাদের মতই মানুষ হবে এবং আমাদের ভাষাই কথা বলবে। তুমি তাদের মধ্যে ভালো কাজও দেখতে পাবে এবং মন্দ কাজও দেখতে পাবে। জাহান্নামের দ্বারে দাঁড়িয়ে কতিপয় আহ্বানকারী লোকদেরকে সেই দিকে আহ্বান করবে। যে ব্যক্তি তাদের অনুসরণ করবে, তাকে তারা জাহান্নামে প্রবিষ্ট করে ছাড়বে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩২]
হাদিস - ৩৩
হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন (অর্থাৎ ৩২ নং হাদীসের অনুরূপ)।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৩]
হাদিস - ৩৪
হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট কল্যাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করত। আর আমি ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এই ভয়ে যেন আমি তাতে লিপ্ত না হই। একদিন আমি রাসূল (ﷺ) এর নিকট বসা ছিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যেই কল্যাণ দান করেছেন সেই কল্যাণে পর কি পুনরায় অকল্যাণ দান করেছেন। সেই কল্যাণের পর কি পুনরায় অকল্যাণ আসবে? যা পূর্বেও ছিল। তিনি বললেন হ্যাঁ, আসবে। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম তারপর কি হবে? রাসূল (ﷺ) বললেন, ধোকার উপর সন্ধি চুক্তি হবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সন্ধিচুক্তির পর কি হবে? তিনি বললেন,কতিপয় আহ্বানকারী গোমরাহীর দিকে আহ্বান করবে। যদি তুমি তখন আল্লাহর কোন খলীফা (শাসক) এর সাক্ষাৎ পাও তাহলে অবশ্যই তার আনুগত্য করবে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৪]
হাদিস - ৩৫
হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন। আমার ওম্মত ধ্বংস হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের মধ্যে তামায়ুয, তামায়ুল ও মাআমূ প্রকাশ না পাবে।
হুজাইয়া (رضي الله عنه) বলেন, আমি বললাম, ইয়ারাসূলুল্লাহ আমার আব্বা, আম্মা আপনার জন্য কুরবান হউক তামায়ুম কি জিনিস? রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তামায়ুম হচ্ছে আমাবিয়্যাত বা স্বজনপ্রীতি যা আমার পরে মানুষের মাঝে ইসলামের ক্ষেত্রে প্রকাশ পাবে।
অতঃপর জিজ্ঞাস করলাম, তামায়ুল কি জিনিস? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এক গোত্র অন্য গোত্রে প্রতি হামলা করবে এবং অত্যাচারের মাধ্যমে একে অপরের উপর আক্রমণ করাকে বৈধ মনে করবে।
এরপর জানতে চাইলাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! মাআমূ কি জিনিস? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জবাব দিলেন, এক শহরবাসী অন্য শহরবাসীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে, যার কারণে তারা একে অপরের বিরোধীতায় মেতে উঠবে। এটা বুঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতে প্রবেশ করালেন। তিনি আরো বললেন, এ অবস্থা তখনই হবে যখন ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশৃংঙ্খলা দেখা দিবে এবং বিশেষ কিছু লোকের অবস্থা তুলনামূলক ভালো থাকবে। সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যাকে আল্লাহ তাআলা খাছ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে এসলাহ দান করেছেন।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৫]
হাদিস - ৩৬
হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী ইসরাঈলদের মধ্যে এমন কোন বিষয় ছিলনা যা তোমাদের মধ্যে সংঘটিত হবেনা।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৬]।
হাদিস - ৩৭
হযরত আবুল আলিয়া (رحمة الله) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তাসতুর নামক এলাকা বিজয় হয়,তখন আমরা হরমুজের স্টোর রুমে একটা জিনিষ পেলাম, দেখলাম, খাটিয়ার উপর রাখা একটি লাশের মাথার পার্শ্বে একটা লিখিত কিছু রেখে দেয়া আছে। ধারনা করা হয় এটা হযরত দানিয়াল আঃ এর লাশ।
অতঃপর আমরা সেটাকে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওমর (رضي الله عنه) এর কাছে পাঠিয়ে দিলাম। হযরত আবুল আলিয়া বলেন, আরবদের থেকে আমিই সেটাকে সর্বপ্রথম পাঠ করি। পরবর্তীতে লিখিত কাগজগুলোকে কা’ব এর নিকট পাঠানো হলো তিনি সেগুলো আরবী ভাষায় অনুবাদকালে, দেখা গেল; হযরত দানিয়াল আঃ এর সাথে থাকা কাগজের মধ্যে যাবতীয় সব ফিৎনার বর্ণনা স্পষ্টভাবে রয়েছে। ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৭]
হাদিস - ৩৮
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি নিম্নের আয়াত সম্বন্ধে বলেন, এখনো পর্যন্ত উক্ত আয়াতের মর্ম প্রকাশ পায়নি। আয়াতটি হচ্ছে, ---------------------- অর্থাৎ, হে মুমিনগন! তোমরা নিজেদের চিন্তা কর। তোমরা যখন সৎপথে রয়েছে, তখন কেউ পথভ্রান্ত হলে তাতে তোমাদের কোনো ক্ষতি নেই। (সূরা মায়েদাহ-১০৫)।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহ তাআলা সর্ব বিষয়কে সামনে রেখে কুরআন শরীফ নাযিল করেছেন। তার মধ্যে এমন কতক বিষয় রয়েছে, যা কুরআন অবতির্ণ হওয়ার পূর্বেই প্রকাশ পেয়েছে, আবার কতক আয়াত এমন রয়েছে যার ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে প্রকাশ পেয়েছে। কিছু আয়াত এমন আছে, যার সামান্য ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর সংঘটিত হয়েছে। কিছু আয়াত এমন আছে, যার ব্যাখ্যা পরবর্তী যুগে প্রকাশ পাবে। আবার কিছু আয়াতের ব্যাখ্যা ফুটে উঠবে হিসাব-নিকাশের দিন। সেগুলো হচ্ছে, ঐ সব আয়াত যার মধ্যে হিসাব-নিকাশ, জান্নাত-জাহান্নাম সম্বন্ধে লেখা রয়েছে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৮]
হাদিস - ৩৯
ওমাইর ইবনে হানী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন এমন কতক শাইখ যারা সিফফীন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা বলেন, আমরা যূদী পাহাড়ে এসে হঠাৎ করে আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) এর সাক্ষাৎ হলো। আমরা তাকে একহাত অন্যহাতের উপর রেখে পিছনে ধরে রাখা অবস্থায় পেলাম। পাহাড়ের সাথে ঠেশ দিয়ে বসে আল্লাহ তাআলার যিকিররত থাকতে দেখলাম। আমরা তাকে সালাম দিলে তিনি সালামের উত্তর দিলেন। আমরা তাঁকে বললাম,এ ফিৎনা সম্বন্ধে আমাদেরকে কিছু অবগত করুন। অতঃপর তিনি বললেন, নিশ্চয় তোমরা উক্ত ফিৎনার ক্ষেত্রে তোমরা তোমাদের শত্র“র বিরুদ্ধে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। এরপর তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের ফিৎনা প্রকাশ পাবে, যা মূলতঃ মধুর মধ্যে পানির ন্যায়। তেমনিভাবে তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেয়াহবে, অথচ তোমরা নগন্য এবং লজ্জিত হবে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৩৯]
হাদিস - ৪০
হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (رضي الله عنه) বলেন, কিয়ামত সংঘঠিত হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা বড় বড় কিছু বিষয় স্বচক্ষ্যে দেখবেনা এবং তোমরা সেগুলো নিজেদের মধ্যেও আলোচনা করার সাহস পাবে না।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৪০]
_______________
আল ফিতান
কৃত:নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন