কথিত আছে যে, একদা এক বাদশাহ তাঁর অনুচরদের নিয়ে বাগানের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, বাগানের ভিতর থেকে এক ব্যক্তি ছােট ছােট পাথরের ঢিল নিক্ষেপ করছে। এমন কি একটি ঢিল বাদশাহর গায়েও এসে পড়ল। তিনি অনুচরদের বললেন, ঢিল নিক্ষেপকারীকে আমার নিকট ধরে নিয়ে আস। অনুচরেরা দ্রুত গিয়ে একজন বেদুঈনকে ধরে নিয়ে আসল। বাদশাহ বললেন, এ ছােট ছােট পাথরের টুকরাগুলাে তুমি কোথায় পেয়েছ? সে ভয়ে ভয়ে বলল, জাহাপনা! আমি বন জঙ্গলে ভ্রমণ করছিলাম। হঠাৎ এই সুন্দর সুন্দর পাথরের টুকরাগুলাের প্রতি আমার নজর পড়ল। আমি তা আমার থলেতে ভরে নিলাম।
অতঃপর আমি ঘুরতে ঘুরতে এ বাগানে এসে পৌঁছি। গাছ থেকে ফল পাড়ার জন্যই এখন আমি এ কাঁকরগুলাে (ছােট ছােট পাথর) ছুড়ে মারছি। বাদশাহ বললেন, তুমি কী জান এ (পাথর গুলাের) মূল্য কত? সে বলল না। বাদশাহ বললেন, এ পাথরের টুকরাগুলাে আসলে ছিল এক একটি মূল্যবান হীরার খন্ড, যা তুমি অজ্ঞতাবসতঃ অযথা নষ্ট করে ফেললে। এতে সে আফসােস করতে লাগল। কিন্তু তার আফসােস করাটা অর্থহীন ছিল। কেননা ওই মূল্যবান হীরার খন্ডগুলাে তার হাত ছাড়া হয়ে গেছে।
“দিনভর খেলো মে খাক উড়ায়ি
লাজ্জ আয়ি না যাররোঁ কি হাঁসি ছে।”
জীবনের প্রতিটি মুহুর্তই এক একটি মূল্যবান হীরা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! অনুরূপ আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত, শ্বাস-প্রশ্বাসই এক একটি মূল্যবান হীরা। যদি আমরা তা অযথা নষ্ট করে দেই, তাহলে পরবর্তীতে আমাদের আক্ষেপ ও আফসােসের অন্ত থাকবে না। মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে একটা বিশেষ উদ্দেশ্যের একটি সীমিত সময়ের জন্য এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তিনি পবিত্র কুরআনের ১৮ তম পারার সূরা আল মুমিনুন এর ১১৫ নং আয়াতে ইরশাদ করেন,
اَفَحَسِبۡتُمۡ اَنَّمَا خَلَقۡنٰكُمۡ عَبَثًا وَّاَنَّكُمۡ اِلَيۡنَا لَا تُرۡجَعُوۡنَ ۞
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ : তবে তােমরা কি এ কথা মনে করছাে যে, আমি তােমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তােমাদেরকে আমার প্রতি প্রত্যাবর্তন করতে হবে না।
তাফসীরে খাযায়েনুল ইরফানে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে, তােমাদের কি পরকালে কর্মফলের জন্য উঠানাে হবে না? বরং তােমাদেরকে ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তােমাদের উপর ইবাদত আবশ্যকও করা হয়েছে। পরকালে তােমাদেরকে আমার নিকট ফিরে আসতেই হবে। তখন তােমাদেরকে তােমাদের আমল সমূহের প্রতিদান দেয়া হবে।
জীবন মৃত্যু সৃষ্টির রহস্য বর্ণনা করে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের ২৯ তম পারার সূরাতুল মূলক এর দ্বিতীয় আয়াতে ইরশাদ করেন,
الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَالۡحَيٰوةَ، لِيَبۡلُوَكُمۡ اَيُّكُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ : তিনি, যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তােমাদের পরীক্ষা হয়ে যায় তােমাদের মধ্যে কার কর্ম অধিক উত্তম।
জীবনকাল খুবই অল্প
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! উল্লেখিত দুইটি আয়াত ছাড়াও কুরআনুল কারীমের আরাে অসংখ্য আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। এ ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে মানুষকে থাকতে হবে একেবারে স্বল্প সময়। কিন্তু এ স্বল্প সময়ের মধ্যেই তাকে প্রস্তুতি নিতে হবে কবর, হাশর ইত্যাদির সুদীর্ঘ জীবনের। প্রস্তুতি নিতে হবে পরকালের বিভীষিকাময় ও বিপদ সঙ্কুল অবস্থা হতে পরিত্রান লাভের। তাই মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত খুবই মূল্যবান। সময় একটি দ্রুতগামী গাড়ির মত নিঃশব্দে চলে যাচ্ছে। কোন বাধা প্রদানকারী একে বাধা প্রদান করতে পারছে না, কেউ এর গতি রােধ করতে সক্ষম হচ্ছে না। যে নিঃশ্বাস আমরা একবার ত্যাগ করছি তা পুনরায় আমাদের নিকট আর ফিরে আসছে না।
_______________
কিতাব: অমূল্য রত্ন
লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন