নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকাল হতে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য ফিতনা ও তার সংখ্যা সম্পর্কে অভিহিতকরণ (১১)


নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকাল হতে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য ফিতনা ও তার সংখ্যা সম্পর্কে অভিহিতকরণ (১১)


হাদিস - ১০১

হযরত কা’ব ( رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি একদিন ‘সিফ্ফীন’ নামক এলাকায় রাস্তার মধ্যে কিছু পাথর দেখতে পেয়ে হঠাৎ করে দাড়িয়ে পড়লেন এবং উক্ত পাথর খন্ডকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলেন। তার অবস্থা দেখে সফরসঙ্গীদের একজন বলল, হে আবু ইসহাক! এভাবে কি দেখছেন?

জবাবে তিনি বলেন, উক্ত পাথরের যে বৈশিষ্ট রয়েছে সেটা আমি কিতাবে দেখতে পেরেছি যে, উক্ত পাথরের জন্য বণী ইসরাঈল নয় বার যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনেছে এবং নিঃসন্দেহে আরবরাও অতিসত্ত্বর দশমবারে যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে, অথবা পাথরগুলো ছুড়ে মারতে হবে, যেমন বনী ইসরাঈল গণ ছুড়ে মেরেছিল।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১০১]


হাদিস - ১০২

হযরত আবুল জাল্দ (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একেরপর এক ফিতনা প্রকাশ পাবে। প্রথম ফিতনা এবং দ্বিতীয় ফিতনা চাবুকের অগ্রভাগের গিঁটের মত হবে যা আঘাত করবে তরবারির ধারালো অংশের মত। এরপর এত ব্যাপক ফিতনা প্রকাশ পাবে, যার মধ্যে সব ধরনের হারাম বস্তুকে হালাল ও বৈধ মনে করা হবে। উম্মতের সকলে কল্যাণ কামনার উপর ঐক্যমত পোষণ করলেও সেটা তাদের প্রতি খুব ধীরে ধীরে আস্তে থাকবে, যেন ঘরের ভিতর বসে থেকে তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১০২]


হাদিস - ১০৩

আবুল ওক্কাছ رضي الله عنه ه) হযরত আলী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তোমাদেরকে কি আমি ‘তারাস্সুন’ ফিতনা সম্বন্ধে বলবোনা, তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘তারাস্সুল’ ফিতনা কি? জবাবে তিনি বললেন, যদি কাউকে বাতেলরা দশ প্রকারের বাঁধন দ্বারা কয়েদ করে রাখে তারপরও তার মাধ্যমে আহলে হক্বের অনেক ক্ষতি হবে। তেমনিভাবে যদি কেউ হক্বের কারণে পরিপূর্ণভাবে গ্রেফতার অবস্থায় থাকে তারপরও তার মাধ্যমে বাতেলদের মারাত্মক ক্ষতি হবে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১০৩]


হাদিস - ১০৪

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আউফ ইবনে মালেক আমজাঈ  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, হে আউফ! কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি ফিতনা প্রকাশ পাবে। তার মধ্যে প্রথম ফিতনা হচ্ছে, তোমাদের নবীর ওফাত পাওয়া, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কথা শুনে আমি কেঁদে উঠলাম। অতঃপর তিনি বললেন, দ্বিতীয় ফিতনা হচ্ছে, বায়তুল মোকাদ্দাসের বিজয় হওয়া। তৃতীয় ফিতনাটি এত ব্যাপক হবে যা শহর এবং গ্রামের প্রতিটি ঘরকেই গ্রাস করে নিবে। চতুর্থ ফিতনা হচ্ছে, মানুষের মধ্যে গণহারে মৃত্যু দেখা দিবে, যেন সকলে ছাগলের মাড়কের ন্যায় মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। পঞ্চম ফিতনা হচ্ছে, লোকজন প্রচুর সম্পদের মালিক হবে। এমনকি কাউকে একশত দিনার দান করা হলেও যে কম মনে করে রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়বে। আর ষষ্ঠ ফিতনা হলো, তোমাদের এবং রোমবাসীদের মাঝে একটা চুক্তি হবে। অতঃপর তারা আশি দলে বিভক্ত হয়ে বারো হাজার সৈন্যের বিশাল কাফেলা সহকারে তোমাদের দিকে ধেয়ে আসবে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১০৪]


হাদিস - ১০৫

সিলা ইবনে যুরার (رحمة الله) বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছেন। তাঁকে একজন লোক বলল, “দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটেছে”। একথা শুনে হযরত হোজাইফা  (رضي الله عنه) বললেন, না আল্লাহর কসম! সেটা কক্ষনো হতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মাঝে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর সাহাবায়ে কেরাম উপস্থিত থাকবেন, ততক্ষণ দাজ্জাল আসতে পারে না। বিশেষ এক গোত্র দাজ্জালের আগমনের আশা করলেও তার আগমন ঘটবেনা। এমনকি কারো কারো নিকট দাজ্জালের আবির্ভাব এতই প্রিয় হবে, যেমন তীব্র গরমের দিন মানুষের কাছে ঠান্ডা পানি পান করা খুবই প্রিয় হয়। এক পর্যায়ে হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) বললেন, হে উম্মতে মুহাম্মদিয়া! অতিসত্ত্বর তোমাদের মাঝে চার প্রকারের ফিতনা প্রকাশ পাবে। তার মধ্যে এককিট হচ্ছে, সাদা-কালো মিশ্রিত ফিতনা। আরেকটি হলো, অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিতনা। তৃতীয়টি হচ্ছে, অমুক অমুক ফিতনা। আর চতুর্থ ফিতনা তোমাদেরকে দাজ্জালের প্রতি ঠেলে দিবে, অতঃপর উক্ত সমতল ভূমিতে দুই দল যুদ্ধে বিগ্রহে লিপ্ত হয়ে পড়বে। আমার জানা নেই উভয় দল থেকে কোন দল সত্য বা হক্বের উপর রয়েছে এবং আমার তূণীরের তীর দ্বারা আমি উভয় দলের কোন দলকে সাহায্য করব।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১০৫]


হাদিস - ১০৬

বিশিষ্ট তাবেঈ হযরত তাউস (رحمة الله) বলেন, জনৈক লোক হযরত আবু মুসা আশআরী  (رضي الله عنه) এর কাছে জানতে চাইলো যে, এসব কি ঐ ফিতনা যা আপনি আমাদের সামনে বর্ণনা করতেন। উক্ত ঘটনাটি মূলতঃ তখনই যখন আবু মুসা আশআরী  (رضي الله عنه) এবং হযরত আমর ইবনুল আম  (رضي الله عنه) এর মাঝে কোনো এক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল জবাবে হযরত আবু মুসা আশআরী  (رضي الله عنه) বললেন, এগুলো হচ্ছে, ফিতনার মারাত্মক মারাত্মক অংশসমূহ হতে একটি। অতঃপর বাকি রইল, বড় বড় অন্ধকারচ্ছন্ন ফিতনা, যা গোটা জাতিকে গ্রাস করবে। যারা উক্ত ফিতনার প্রতি মনোনিবেশ কবে তাদেরকে অত্যন্ত নির্মমভাবে আকৃষ্ট করে নিবে। উক্ত ফিতনাকালীন যারা বসে থাকবে তারা দন্ডায়মান থাকা লোকজন থেকে উত্তম, আর একস্থানে দাড়িয়ে থাকা লোক চলাচলকারী থেকে ভালো। স্বাভাবিক গতি সম্পন্ন লোক দ্রুতগামী থেকে অনেক উত্তম। ফিতনা সম্বন্ধে মন্তব্যকারী থেকে নীরবতা অবলম্বনকারী উত্তম আর উক্ত ফিতনার সময় ঘুমন্ত ব্যক্তি অনেক ভালো জাগ্রত লোক থেকে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১০৬]

_______________

আল ফিতান

কৃত:নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন