নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকাল হতে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য ফিতনা ও তার সংখ্যা সম্পর্কে অভিহিতকরণ (১০)


নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকাল হতে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য ফিতনা ও তার সংখ্যা সম্পর্কে অভিহিতকরণ (১০)


হাদিস - ৯১

আরতাত ইবনুল মুনযির (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বক্তব্য আমাদের নিকট পৌঁছেছে, তিনি এরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে লাগাতার ভাবে চার প্রকারের ফিৎনা দেখা দিবে। প্রথমতঃ তাদের উপর এমনভাবে বালা-মসিবত আসতে থাকবে, যার কারণে মুমিনগণ বলতে থাকবে, এইতো আমি মরে গেলাম! এরপর সেটা কিছুটা হালকা হয়ে যাবে। দ্বিতীয়তঃ এত বেশি তীব্রতার সাথে ফিতনা আসতে থাকবে, যার ফলে প্রত্যেক মু’মিন মৃত্যুর প্রহর গুনবে, এরপর একটু হালকা হবে। তৃতীয়তঃ একের পর এক ফিতনা আসতে থাকবে। মনে হবে যেন ফিতনা থেকে কিছুটা মুক্ত হতে পেরেছি, কিন্তু পরক্ষণে সেটা আবারো তীব্রভাবে আসবে। চতুর্থ ফিতনা এমনভাবে প্রকাশ পাবে, যার কারণে মানুষ ইসলাম ত্যাগ করতে বাধ্য হবে। এমন অবস্থার সম্মুখিন হলে মানুষ ইমাম এবং জামাআত ও একতাবদ্ধতাবিহীন দিগি¦দিক শুন্য হয়ে ছুটতে থাকবে। অতঃপর মসীহে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। এরপর সূর্য্য পশ্চিম দিকে উদিত হওয়া ও কিয়ামতের মাঝখানে বাহাত্তর জন দাজ্জাল প্রকাশ পাবে। তাদের মধ্যে অনেক এমন হবে যার অনুসরণকারী হবে মাত্র একজন। ➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯১]


হাদিস - ৯২

আবুততোফাইল (رحمة الله) বলেন, আমি হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, মারাত্মক মারাত্মক তিন ধরনের ফিতনা প্রকাশ পাওয়ার পর চতুর্থ ফিতনা লোকজনকে দাজ্জালের দিকে নিক্ষেপ করবে, যা মানুষকে ধ্বংসের মূখে পতিত করবে। যে দাজ্জালের কারণে কখনো মানুষ ভালো অবস্থার সম্মুখিন হবে আবার কখনো সম্মুখিন হবে ভয়াবহ অবস্থার। আরেকটি ফিতনা হচ্ছে, অন্ধকারাচ্ছন্ন কালো ফিতনা, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় লোকজনের উপর আছড়ে পড়বে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯২]


হাদিস - ৯৩

হযরত উমাইর ইবনে হানী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘ফিতনায়ে আহলাস’ হলো,তাতে পলায়ন হবে। (অর্থাৎ পরস্পরের মধ্যে এমন শত্র“তা দেখা দিবে যে, একে অন্য হতে পলায়ন করতে থাকবে।) এবং ছিনতাই হবে। ‘ফিতনাতুস সাবরা’ (অর্থাৎ ধরেন প্রাচুর্যের কারণে বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ার ফিতনা), উক্ত ফিতনার ধোঁয়া কোন এক ব্যক্তির পায়ের নিচ হতে নির্গত হবে। (অর্থাৎ সেই ব্যক্তিই উক্ত ফিতনার নায়ক হবে।) সে আমার খানদানের লোক বলে দাবি করবে,অথচ সে আমার আপনজনদের মধ্যে হবেনা। প্রকৃতপক্ষে পরহেজগার লোকই হলেন আমার বন্ধু। অতঃপর লোকেরা এক ব্যক্তির উপর ক্ষমতা অর্পনে একমত হবে, তারপর আরম্ভ হবে অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিতনা। যখন বলা হবে ফিতনা শেষ হয়ে গেছে, তখন তা এত প্রসারিত হবে যে, আরবের এমন কোন ঘর অবশিষ্ট থাকবে না। যেখানে তারা প্রবেশ করবেনা, (অর্থাৎ প্রতিটি ঘরে তা প্রবেশ করবেই। আর মানুষ তখন এমন ভাবে লড়াই করতে থাকবে যে, সে একথা জানবেনা যে, সেকি সত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে? নাকি বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এভাবে সব সময় তা চলতে থাকবে। অবশেষে সকল মানুষ দু’টি তাবুতে (দলে) বিভক্ত হয়ে যাবে। একটি দল হবে ঈমানের,এখানে মুনাফেকী থাকবে না। আর অপর দলটি হবে মুনাফেকীর যার মধ্যে ঈমান থাকবে না। যখন উভয়টি একত্রিত হবে, তখন তুমি দাজ্জালের আগমন প্রত্যক্ষ কর, সে ঐ দিনই অথবা পরের দিন আবির্ভূত হবে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৩]


হাদিস - ৯৪

হযরত আব্দুলাহ ইবনে যবীর গাফেকী (رحمة الله) বলেন, আমি হযরত আলী  (رضي الله عنه) বলতে শুনেছি যে, চার ধরনের ফিতনা হবে। ১. ‘ফিতনাতুস সাররা’; (অর্থাৎ প্রাচুর্যের কারণে বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ার ফিতনা, ২. ‘ফিতনাতু র্দরা’ (অর্থাৎ দরিদ্রতার কারণে কষ্টে নিমজ্জিত হয়ে পড়ার ফিতনা), ৩. ‘এই রূপ ফিতনা’ এ কথা বলে তিনি স্বর্ণের খনির কথা আলোচনা করলেন। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) এর বংশধর থেকে এমন এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবেন, যার হাতে আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমত ন্যাস্ত করবেন।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৪]


হাদিস - ৯৫

হযরত আবু সাঈদ খুদরী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমার পরে বহু ফিতনা সংঘটিত হবে। তন্মধ্যে একটি হলো, ‘ফিতনায়ে আহলাম’ তাতে পলায়ন হবে, (অর্থাৎ পরস্পরের মধ্যে এমন শত্র“তা দেখা দেবে যে, একে অন্য হতে পলায়ন করতে থাকবে।) এবং তাতে ছিনতাই হবে। অতঃপর এর পরে এমন ফিতনা সংঘটিত হবে যা তার চেয়েও আরো ভয়াভহ হবে, তারপর এমন ফিতনা হবে যে, যখন বলা হবে ফিতনা শেষ হয়ে গেছে, তখন তা এত প্রসারিত হবে যে, প্রত্যেক ঘরে তা প্রবেশ করবেই। এবং প্রত্যেক মুসলমানকে আঘাত করবেই। এরপর আমার বংশধর থেকে কোন এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৫]


হাদিস - ৯৬

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুবায়রা  (رضي الله عنه) বলেন চার প্রকারের ফিতনা হবে। ১. দৃষ্টি সম্পন্ন ফিতনা, ২. প্রবৃত্তি ফিতনা, ৩. অন্ধ ফিতনা, ৪. দাজ্জালের ফিতনা।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৬]


হাদিস - ৯৭

হযরত কা’ব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন তিন ধরনের ফিতনা প্রকাশ পাবে, যেমন অনেক ক্ষেত্রে পথচারীকে আটকানো হয়। কিছু ফিতনা প্রকাশিত হবে শাম দেশে, অতঃপর পূর্বদিকে এত মারাত্মক ফিৎনা দেখা দিবে যদ্বারা বড় বড় রাজা বাদশাহগন সর্শেফুল দেখতে থাকবে। এরপর সাথে সাথে প্রকাশ পাবে পশ্চিমা ফিতনা। অতঃপর হলুদ রংয়ের পতাকা বিশিষ্ট কিছু লোকে আবির্ভাব ঘটবে। বর্ণনাকারীর বক্তব্য হচ্ছে, পশ্চিমা ফিতনা হচ্ছে, মূলতঃ অন্ধ ফিতনা।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৭]


হাদিস - ৯৮

হযরত কা’ব (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এন্তেকালের পচিশ বৎসর পর পর্যন্ত আরবের উম্মানের মাঁথা ঘুরতে থাকবে। এরপর বিভিন্ন ধরনের ফিতনা প্রকাশ পাবে, যার মধ্যে গণহত্যা থেকে শুরু করে সবকিছুই ঘটবে। এরপর মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ও নিরপত্তা অনুভব হবে। এক পর্যায়ে তারা ঘুরতে ঘুরতে লাটিমের মত স্থীর হয়ে যাবে। এরপর এমন ফিতনা প্রকাশ পাবে যা মূলত ব্যাপক হত্যার রূপ নিবে। আমি কিতাবুল্লাহতে উক্ত ফিতনা সম্বন্ধে পেয়েছি, যেটা এমন অন্ধকারচ্ছন্ন ফিতনা যা প্রত্যেক মর্যাদা সম্পন্ন লোককে গ্রাস করে নিবে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৮]


হাদিস - ৯৯

ভিন্ন সুত্রে উপরের হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ৯৯]


হাদিস - ১০০

আবু সালেহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত কা’ব মসজিদে নববীর সংস্কার কাজ চলতে দেখে বললেন, আল্লাহর কসম! আমার ইচ্ছা হচ্ছে, মসজিদে নববীর সংস্কার করা না হোক। কেননা তার একটি গম্বুজ স্থাপন করা হলে আরেকটি গম্বুজ খসে পড়বে।

একথা শুনে কা’বকে বলা হলো, হে আবু ইসহাক উক্ত মসজিদে নামায আদায় করলে এক হাজার নামায থেকে বেশি সওয়াব দেয়া হবে একথা কি বলা হয়নি। অর্থাৎ, মসজিদে হারামের পর সওয়াবের দিক দিয়ে কি মসজিদে নববীর অবস্থান নয়।

জবাবে হযরত কা’ব (رضي الله عنه) বলেন, হ্যাঁ আমি একথা বলছি, কিন্তু আসমান থেকে জমিনের দিকে যে ফিতনা ধাবমান হচ্ছে, সেটা একেবারে নিকটে এসে পড়েছে, আর মাত্র এক বিঘত পরিমান বাকি রয়েছে, যা মসজিদে নববীর সংস্কার কাজ সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে আছড়ে পড়বে। তখনই এই শেখ, অর্থাৎ, হযরত ওসমান ইবনে আফ্ফানকে হত্যা করা হবে। একথা শুনে জনৈক লোক বলে উঠল, তার হত্যাকারীর সাথে কি হযরত ওমর  (رضي الله عنه) এর হত্যাকারীর ন্যায় আচরন করা হবে না।

জবাবে কা’ব (رضي الله عنه) বললেন, লক্ষ বার অথবা তার থেকেও বেশি। এরপর বিশাল, বিস্তৃত এলাকা জুড়ে যুদ্ধ-বিগ্রহ হতে থাকবে। অতঃপর পশ্চিমা এলাকা এবং পূর্ব দিক থেকে দুই দল সৈন্যের আগমন ঘটবে। উভয়দল ‘সিফ্ফীন’ নামক স্থানে একে অপরের মুখোমুখী হবে এবং তাদের মাঝে তীব্র লড়াই সংঘটিত হবে। অতঃপর তারা ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির অধীনস্থতা গ্রহণ পূর্বক যুদ্ধে বিরতি দিবে।➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ - ১০০]

_______________

আল ফিতান

কৃত:নুয়াইম বিন হাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন