মারেফাত লাভের পর কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষতিকর কি?

 

মারেফাত লাভের পর কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষতিকর কি? এ সম্পর্কেঃ কোনো  একজন মাশায়েখ বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর মারেফাত বা পরিচয়  লাভ করেছে, কোনো গুনাহ্ তার কোনোরূপ ক্ষতি করতে পারে না। এই বক্তব্যের  উদ্দেশ্য হলোঃ ঐ ব্যক্তি মারেফাত হাসিলের পূর্বে যে গুনাহ্ করেছিলো তা তার  কোনো ক্ষতি করতে পারে না। কেননা ইসলাম কবুলের পূর্বে যে গুনাহ্ অনুষ্ঠিত  হয়ে থাকে, ইসলাম সে সবকে পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। উপরন্তু, সুফীদের  তরীকা অনুযায়ী হাকীকি বা প্রকৃত ইসলাম হলো ফানা ও বাকা হাসিলের পর  আল্লাহ সুবহানুহু তায়া’লার মারেফাত বা পরিচয় লাভ করা। বস্তুতঃ এরূপ  মারেফাত হাসিল হলে পূর্বের সমস্ত গুনাহ্ বিলীন হয়ে যায়।  

অবশ্য উপরোক্ত কথার এরকমও অর্থ হতে পারে যে, গুনাহের অর্থ ঐ গুনাহ্ই  যা মারেফাত লাভের পর সংঘটিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, গুনাহের অর্থ হবে-  সগীরা বা ছোট গুনাহ্, কবীরা বা বড় গুনাহ্ নয়। কেননা আল্লাহর ওলীগণ কবীরা  গুনাহ্ হতে মুক্ত। আর সগীরা গুনাহ্ এই জন্য ক্ষতিকর নয় যে, আরেফ বা  আল্লাহর পরিচয় লাভকারী ঐ গুনাহে বারবার লিপ্ত হন না এবং কোনোরূপ বিলম্ব  ছাড়াই তা থেকে তওবাহ ও ইস্তিগফার বা ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।  

অথবা এর অর্থ এরকমও হওয়া সম্ভব যে, আরেফের দ্বারা কোনোরূপ গুনাহ্ই  সংঘটিত হয় না। কেননা, যদি গুনাহ্ই না হয়, তবে ক্ষতির কোনো আশংকাই  থাকে না। কাজেই, এখানে রাজেম (বা আবশ্যিক ব্যাপার)কে উল্লেখ করে,  মালজুম (যা অবশ্যই হবে) অর্থ নেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালার অস্বীকারকারীরা  উক্ত বক্তব্য থেকে যা ধারণা করেছে তা হলোঃ আরেফের জন্য গুনাহে লিপ্ত হওয়া  সম্ভব। কেননা গুনাহ্ তার কোনো ক্ষতি করে না। এরূপ ধারণা মূলতঃ বাতিল  এবং স্পষ্টতঃ যিন্দীকের ন্যায়। এরাই শয়তানের দল। সাবধান! শয়তানের  দলইতো ক্ষতিগ্রস্ত। হে আমাদের রব! তুমি আমাদের অন্তরকে হেদায়েত প্রদানের  পর বক্রতার দিকে ফিরিয়ে দিয়ো না এবং আমাদের উপর তোমার তরফ থেকে  রহমত নাযিল করো। নিশ্চিয় তুমি তো অধিক অনুগ্রহ প্রদানকারী।  

আল্লাহ্তায়ালা তাঁর রহমত, বরকত এবং সালামত নাযিল করুন আমাদের  নেতা হজরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরিবার  পরিজনদের উপর।  

আমি আল্লাহতায়ালার নিকট (যার মাগফিরাত বা ক্ষমাপ্রদর্শন খুবই প্রশস্ত)  এই আশা রাখি যে, এরূপ আরেফ- যিনি ইসলামের হাকীকত সম্পর্কে পূর্ণরূপে  অবহিত হয়েছেন, মারেফাতপ্রাপ্তির পূর্বেকার গুনাহ্ তার কোনো ক্ষতি করবে না।  যদি তা অত্যাচার ও বান্দার হক সম্পর্কিত না হয়। কেননা হক সুবহানুহ  তায়া’লাই সব কিছুর মালিক এবং বান্দার কলব তাঁর আংগুলসমূহের দুইটি  আংগুলের মধ্যে। তিনি যেভাবে ইচ্ছা কলবকে পরিবর্তন করতে সক্ষম। বস্তুতঃ  ইসলাম কবুল করার সাথে সাথেই সমস্ত গুনাহ্ মাফ হয়ে যায়, কিন্তু বান্দার হক  সংক্রান্ত গুনাহ্ মাফ হয় না। কিন্তু হাকীকতে ইসলাম ও তার পূর্ণতাপ্রাপ্তির ফযীলত  এতবেশী যে, যা কখনোই তার বাহ্যিক সুরতে হাসিল হয় না।  

_______________

কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ

কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি  আলাইহি

অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন