নুযুলের সর্বশেষ পূর্ণতাঃ নিহায়েতুন্নিহায়েত্ বা সর্বশেষ বিন্দু বা মাকাম হাসিলকারী ওলী, পুনরায় প্রত্যাবর্তনের পথে সর্ব নিম্নস্তর বা মাকামে অবতরণ করেন। পূর্ণতার সর্বশেষ স্তরে পৌঁছানো তখনই সঠিক হয়, যখন তার অবতরণও হয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
এই বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যখন নুযুল বা অবতরণ অনুষ্ঠিত হয়, তখন প্রত্যাবর্তনকারী ব্যক্তি একান্তভাবে দুনিয়ার প্রতি মনোযোগী হন। এমন হয় না যে, প্রত্যাবর্তনকারী ব্যক্তির কিছু অংশ আল্লাহরদিকে মুতাওয়াজ্জাহ্ থাকে এবং বাকী অংশ মাখলুক বা সৃষ্টিজগতের দিকে। কেননা, এমতাবস্থায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, সেই ব্যক্তি পূর্ণতার চরম শিখরে আরোহণ করিতে সক্ষম হয়নি; কাজেই সে সর্বনিম্নে অবতরণেও পূর্ণতা হাসিল করেনি।
এখানে আসল ব্যাপার এই যে, নামায আদায়ের সময়— যা মু’মিনের জন্য মি’রাজ সদৃশ, অবতরণকারী ব্যক্তির লতীফাগুলি বিশেষভাবে আল্লাহ জাল্লা সুলতানুহুর দিকে মুতাওয়াজ্জাহ্ থাকে। আবার নামাজ থেকে ফারেগ বা মুক্ত হওয়ার সাথে সাথেই সে পরিপূর্ণরূপে মাখলুকের প্রতি মনোযোগী হয়। অবশ্য ফরয ও সুন্নত নামাজ আদায়ের সময় অবতরণকারীর ছয়টি লতীফা আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি মুতাওয়াজ্জাহ থাকে এবং নফল নামায আদায়ের সময়, উক্ত লতীফাগুলির শ্রেষ্ঠতম লতীফাটি আল্লাহরদিকে মুতাওয়াজ্জাহ্ থাকে। হাদীস শরীফে আছেঃ ‘আল্লাহরসাথে আমার মিলনের একটি বিশেষ সময় আছে’। সম্ভবতঃ এর দ্বারা ঐ বিশেষ সময়ের দিকে ইংগিত করা হয়েছে, যা কেবলমাত্র নামাযের জন্য বিশিষ্ট। এই ইংগিতের সপক্ষে অন্য এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছেঃ ‘আমার চক্ষুর শীতলতা নামাযের মধ্যেই। এই ইংগিত ব্যতীত, সহীহ কাশফ ও স্পষ্ট ইলহামও এ কথার সত্যতা প্রমাণ করে। এই মারেফাতটি, এই দরবেশের বিশেষ বিশেষ মারেফাতের অন্যতম। তরীকতের মাশায়েখগণ এই বিষয়কে দুইদিকে মনোসংযোগস্থল হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। সমস্ত কর্মকাণ্ডই আল্লাহতে সমর্পিত। তাঁদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক— যাঁরা হেদায়েতের অনুসারী এবং রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামের অনুগামী। মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরিবার পরিজনদের উপর পবিত্র দরূদ ও সালাম।
_______________
কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ
কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন