দশটি মাকাম অতিক্রম করা ব্যতীত, সর্বশষে স্তরে পৌঁছানো সম্ভব নয়

 দশটি মাকাম অতিক্রম করা ব্যতীত, সর্বশষে স্তরে পৌঁছানো সম্ভব নয়, এ সম্পর্কে:  এই রাস্তার পূর্ণতা প্রাপ্তি এবং নিহায়াতুন নিহায়াহ বা মারেফাতের সর্বশেষ স্তরে পৌছাঁনো  দশটি মাকাম অতিক্রম  করার উপর নির্ভর করে। প্রথম মাকাম হলাে-তওবাহ এবং সর্বশেষ  মাকাম রিযা। পূর্ণতা প্রাপ্তি  মাকাম সমূহের  মধ্যে  রিযা  মাকামের  ঊর্ধ্বে কোনাে মাকাম নেই। এমনকি আখিরাতে আল্লাহর দর্শন এর চেয়ে  বড় নয়। মাকামে  রিযা  হাকীকত আখিরাতে  প্রকাশ পাবে । অন্যান্য মাকামের  হাকীকত আখিরাত প্রকাশ পাবে না। সেখানে তওবার কোনাে  অর্থই নেই, নেই জুহুদের কোনাে স্থান । সেখানে 'তাওয়াক্কুলের'  কোনাে প্রয়োজন নেই , নেই ‘সবরের' কোনাে ধারণা । অবশ্য যদিও ‘শোকর' সেখানে পাওয়া যাবে , তবে তা হবে ‘রিয়ার' একটি শাখা মাত্র। যা রিয়া হতে আলাদা কোনাে বস্তু নয়।

একটি প্রশ্নঃ যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে যে , একজন কামেল ব্যক্তি যে অন্যকে ও কামেল বানাতে পারে , তার মধ্যে দুনিয়ার প্রতি মহব্বত পাওয়া যায় কোনো ? তার নিকট থেকে এধরনের এমন অনেক কথা প্রকাশ পায়, যা তাওয়াক্কুলের বিপরীত । বে-সবরী বা অধৈৰ্য্য— সবরের বিপরীত , তাও তার মধ্যে দেখা যায়। না পছন্দ- যা রিয়া বা সন্তুষ্টির বিপরীত , তাও তাঁর মধ্যে পাওয়া যায়। এর কারণ কি ? । 

জওয়াবঃ এর উত্তরে আমার বক্তব্য হলাে-এই সমস্ত মাকাম হাসিল হওয়া । কলব এবং রূহের সাথে সম্পৃক্ত। আর একান্ত খাস ব্যক্তিদের জন্য এ মাকাম ‘নফসে মুতমাইন্না বা প্রশান্ত নফসের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু কালেব বা দেহের সাথে যা সম্পর্কিত , তা এই হাকীকত হতে বঞ্চিত । তবে এতটুকু হয় যে , শরীরের কাঠিন্য কোমলতায় পর্যবসিত হয়।

কোনাে এক ব্যক্তি শিবলী র. (তার কুনিয়াত আবু বকর। তিনি হজরত জুনায়েদ বোগদাদীর খলীফা ছিলেন । তিনি অধিকাংশ সময় প্রেমে বিভোর অবস্থায় থাকতেন । শেষজীবনে , না জানি কখন মৃত্যু আসে , এই ভয়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর পরিবর্তে কেবল ‘আল্লাহ্ আল্লাহ' জিকির করতেন । তাঁর মর্যাদা এত অধিক ছিলাে যে , তাঁর মাের্শেদ হজরত জুনায়েদ বোগদাদী র. তাকে , কাওমের তাজ খিতাবে বিভূষিত করেন । তিনি ২৭শে জিলহজ্জ, হিজরী ৩৩৪ সনে ৮৮ বৎসর বয়সে বাগদাদে ইন্তিকালঃ  করেন ।) 

কে জিজ্ঞাসা করেনঃ আপনি তো মহব্বতের দাবী করনে , কিন্তু আপনার মোটা তাজা শরীরটা তো এ দাবীর বিপরীত ? তাঁর প্রশ্নের উত্তরে শিবলী র. নিম্নোক্ত কবিতাটি পাঠ করেনঃ “আমার কল্‌ব মহব্বত করেছে। কিন্তু আমার শরীর তার কোনাে খবরই রাখে না। যদি শরীর এ ব্যাপার জানতো, সে কখনই মোটাতাজা হতো না।

কাজেই ,যদি কোনাে কামেল ব্যক্তির কালেবে বা দেহে , এই সমস্ত মাকামের বিপরীত  কোনাে বস্তু প্রকাশ পায়, তবে সেই ব্যক্তির বাতিনী অবস্থার প্রেক্ষিতে  তা তার জন্য ক্ষতিকর  হয় না। অপরপক্ষে, কোনাে অপূর্ণ ব্যক্তির মধ্যে এই সমস্ত মাকামের অপূর্ণতার কারণে তার ‘জাহির ও বাতিন' উভয় অবস্থাতেই অপূর্ণতা প্রকাশ পায়। এই ধরনের লোকেরা প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয় এবং তার সুরত ও হাকীকতে তাওয়াক্কুলের বিপরীত  বস্তু পাওয়া যায়। তার কলব ও কালেব বা দেহে হতে অধৈৰ্য্য অস্থিরতা প্রকাশ পায় এবং তার রূহ এবং শরীর - এ উভয় বস্তু হতে কিরাহাত বা অপছন্দভাব প্রকাশ পায়। এই বস্তুগুলি, যা দিয়ে হক সুবহানুহু তায়া'লা স্বীয় ওলীদের আচ্ছাদিত করেছেন এবং অধকিাংশ লোকদেরকে তাদরে কামালাত হতে মাহরুম রেখেছেন । এই সকল বস্তু ওলীদের মধ্যে অবশিষ্ট রাখার ব্যাপারে একটি সূক্ষ্ম হিকমত আছে এবং তা হলাে - বাতিল হতে হকের পার্থক্য না হওয়া যা এই দুনিয়ার জন্য বিপদাপদ ও পরীক্ষার মাকাম বা স্থান, একান্ত জরুরী। আর ওলীদের মধ্যে এই বস্তুগুলি অবশিষ্ট থাকার দ্বিতীয় কারণ হলাে-তাঁদের উন্নতি । যদিও এই বস্তুগুলি তাদের মধ্যে কেবল সুরত বা আকৃতি হিসাব পাওয়া যায়। যদি এগুলি ওলীদের মধ্যে হতে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত হয়, তবে তাঁদের উন্নতির রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে । তখন তাঁরা ফিরিশতাদের ন্যায় একটি মাকামে আবদ্ধ হয়ে পড়বেন। তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হােক , যারা হেদায়েতের অনুসারী এবং হজরত মুহাম্মদ  মুস্তাফা সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের পায়রবী বা অনুসরণকে একান্ত প্রয়োজন মনে করেন । তাঁর পরিবার পরিজনদের প্রতি পূর্ণ দরূদ ও সালাম বর্ষিত হােক ।

______________

কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ

কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি  আলাইহি

অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন