ইয়াদ দাশতের তিনটি স্তর সম্পর্কেঃ
ইয়াদ দাশতের অর্থ হলো - জাতে হক তায়া'লার সর্বক্ষণ হুজুরী বা নৈকট্য। কলব মাকামের অধিকারী ব্যক্তিদেরও কোনো কোনো সময় একাগ্রতার কারণে এই অবস্থা হাসিল হয়। কেননা, মানুষের মধ্যে যা কিছু আছে,সবকিছুই কলবের মধ্যে আছে।যদিও উভয়ের মধ্যে সংক্ষিপ্তি ও বিস্তৃতির পার্থক্য থাকে।
বস্তুতঃ মরতবায়ে কল্ব বা কলবের মাকামেও
যাতে হক তায়া'লা ওয়া তাকাদ্দাসার হুজুরী সর্বক্ষণ
লাভ করা সম্ভব। কিন্তু এই অবস্থা, ইয়াদ দাশতের
সুরত বা বাহ্যিক নিয়ম মাত্র,ইয়াদ দাশতের হাকীকত বা আসল রূপ নয়।এমন হতে পারে যে,মাশায়েখগণ ‘ইনদিরাজুন নিহায়েত ফিল বিদায়েত বা সর্বশেষ বস্তুর প্রারম্ভে প্রবষ্টি হওয়া সম্পর্কে যা বলেছেন,তাতে ইয়াদ দাশতের এই সুরতের দিকে ইংগতি করেছেন। ইয়াদ দাশতের হাকীকত তো তাযকিয়ায়ে নফস্ বা নফসের পবিত্রতা ও তাকীয়ায়ে কলব বা কলবের বিশুদ্ধতার পরেই হাসিল হয়ে থাকে।
কিন্তু যদি যাতে হকের অর্থ ‘মরতবায়ে ওজুব্ গ্রহণ করা হয়, যার ফলে যাত পাক সমস্ত সিফাতে ওজুবীয়ার সমন্বয়কারী হন; এমতাবস্থায়, সমস্ত ইমকানী মারাতেব বা সম্ভাব্য স্তরসমূহ অতিক্রম করার পরেই,এই ধরনের শুহুদ বা দর্শন হাসিলের সাথে সাথেই, ইয়াদ দাশত হাসিল হয়। আর তাজাল্লিয়াতে সিফাতীতেও এই অর্থ গ্রহণ করা হয়ে থাকে।কেননা, এই সময় সিফাত বা গুণাবলী সম্মুখে থাকা যাতে হক তায়া'লার হুজুরীর জন্য অন্তরায় হয় না।
কিন্তু যদি যাতে হক তায়া'লা অর্থ মুজাররাদ অহদীয়াত্ বা শুধুমাত্র একক সত্তা নেওয়া হয়, যা সর্বপ্রকার ইসম, সিফাত, নেসবত এবং ইতিবার থেকে মুক্ত; তবে এমতাবস্থায় ইয়াদ দাশতের হাসিল সর্বপ্রকার ইসম, সিফাত, নেসবত ও ইতিবারের স্তর অতিক্রম করার পরেই সম্ভব হতেপারে।
এই ফকীর ‘ইয়াদ দাশত' সম্পর্কে যেখানেই বলেছে, সেখানে এই শেষের অর্থ গ্রহণ করেছে।এই স্থানে‘হুজুরী শব্দের ব্যবহার ও সঠিক নয়, যেমন ইয়াদ দাশতের মাকামধারীদের নিকট একথা স্পষ্ট কেননা, এ 'মাকাম হুজুর এবং গায়বত' বা উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি উভয় অবস্থা হতে উচ্চ। হুজুর শব্দটি উচ্চারণের সাথে সাথেই এমন একটি গুণ সামনে থাকা জরুরী যা ‘হুজুর' বা ‘উপস্থিত' শব্দের জন্য উপযোগী। এ প্রকারের ইয়াদ দাশতের ব্যাখ্যা তাই, যা দ্বিতীয় অর্থে বর্ণনা করা হয়েছে অর্থাৎ জাতে হকের অর্থ ‘মরতবায়ে ওজুব' গ্রহণ করা। এইরূপ ধারণার ফলশ্রুতিতে, ইয়াদ দাশতকে সর্বশেষ স্তর বলা, শুহুদ ও হুজুরীর কারণে সম্ভব। কেননা, এই মরতবা বা স্তরের পরে শুহুদ ও হুজুরীর কোনো সম্ভাবনাই থাকে না এবং সেখানে আছে হতবুদ্ধিতা, অজ্ঞতা অথবা মারেফাত বা পরচিতি।কিন্তু এটা ঐ মারেফাত নয়, যাকে তুমি মারেফাত মনে করেছো।
কেননা, তোমাদের ঐ মারেফাত তো আফয়ালী ও সিফাতী মারেফাত। আর এই মাকাম তো আসমা ও সিফাতের মারেফাত হতে বহু ঊর্ধ্বে অবস্থিত। সাইয়্যেদুল বাশার সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবার পরিজনদের উপরও দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক।
_______________
কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ
কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন