ছয় লতীফা

 

ছয় লতীফা সম্পর্কেঃ কলবের সম্পর্ক ‘আলমে আমর' বা আদেশ জগতের সাথে । কবেক ‘আলেমে খালক' বা সৃষ্টি জগতের সাথে মিলিত এবং প্রেমাশক্ত করে , আলেম আমর থেকে আলেম খালকের দিকে , নিচে অবতরণ করানাে হয়েছে এবং বুকের বাম পাশের মাংস পিণ্ডের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে। দৃষ্টান্তটি এইরূপ যে , কোনাে বাদশাহ্ যেনো কোনাে মেথরের প্রেমাশক্ত এবং এই ইশকের কারণে বাদশাহ্ মলমেথরাণীর গৃহে উপনীত। । আর রূহ- যা কল্‌ব অপেক্ষা অধিক সূক্ষ্ম, “আসহাবে য়ামীন' বা বুকের দক্ষিণ পার্শ্বে অবস্থিত । আরো তিনটি লতীফা, যা লতীফায়ে রূহের উপর অবস্থিত ; তা কর্মে মধ্যম পন্থাই উত্তম, এই প্রবাদ বাক্যের আলোকে উৎকৃষ্টের মর্যাদায় সমাসীন। লতীফা যতোই সূক্ষ্ম হবে , তাতেই তা মধ্যম পন্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে । কিন্তু ব্যাপার এই যে , লতীফায়ে 'সের'এবং লতীফায়ে 'খফী' উভয়ই লতীফায়ে আখফার' দুইদিকে অবস্থতি। এর একটি বামদিকে এবং অপরটি ডানদিকে অবস্থিত । আর লতীফায়ে নফস, যা এর কাছেই অবস্থিত, তা মস্তিস্কের সাথে সম্পর্কিত, লতীফায়ে কলবের উন্নতি এই অবস্থার উপর নির্ভরশীল যে , তা রূহের মাকামে এবং তার উপরের মাকামেও উন্নীত হবে । একইভাবে , রূহ এবং এর উপরের মাকামগুলির উন্নতি এদের উপরের মাকামে পৌঁছানোর সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু এই পৌঁছানো , প্রথম দিকে ‘হালের' বা অবস্থার আকারে হয়ে থাকে এবং শেষের দিকে ‘মাকামের' বা স্থানের হিসাবে । আর নফসের উন্নতি তখনই হয়, যখন তা শুরুতে হাল হিসাবে এবং শেষে মাকাম হিসাবে কলবের মাকামে পৌছায়। অবশেষে , এই ছয়টি লতীফা আখফার মাকামে পৌছায় এবং সবগুলি একত্রিত হয়ে আলেম কুদ্দুস বা পবিত্র জগতের দিকে উড্ডয়নের ইরাদা করে এবং লতীফায়ে কালেব বা দেহকে খালি রেখে যায়। কিন্তু এই উড্ডয়ন প্রথম দিকে হাল হিসাবে হয় এবং পরে মাকাম হিসাবে এবং এই সময় ‘মাকামে ফানা' বা লয়ের মাকাম হাসিল হয়।

মৃত্যুর আগে মৃত্যু কী? সে সম্পর্কেঃ সূফীয়ায়ে কিরাম যাকে মৃত্যুর আগে মৃত্যুবরণ করা হিসাবে বর্ণনা করেছেন , তা হলো, লতীফায়ে কালেব বা দেহ থেকে উক্ত ছয় লতীফার বিচ্ছিন্ন হওয়া। এই লতীফা সমূহ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরেও দেহের মধ্যে অনুভূতি ও স্পন্দন অবশষ্টি থাকার গােপন ভেদ অন্যস্থানে বর্ণিত হয়েছে । যা যথাস্থানে অনুসন্ধান করা দরকার। এখানে এর বিস্তারিত বিবরণ প্রদানের অবকাশ নেই । বরং এই স্থানে আকারে ইংগিতে বর্ণনা করা হলো ।

আত্মিক ভ্রমণের জন্য এটা জরুরী নয় যে, সমস্ত লতীফা এক মাকামে একত্রিত হয়ে সেখান থেকে উর্ধ্বে বিচরণ শুরু করবে । কখনাে এমন হয় যে , কলব এবং রূহ উভয়ে মিলিত হয়ে এইরূপ করে ,কখনাে তিন এবং কখনাে চার লতীফা মিলিত হয়েও ঊর্ধ্বে ভ্রমণ করে ।কিন্তু যে কথা প্রথমে আলোচিত হয়েছে , (অর্থাৎ ছয় লতীফা সম্মলিতি হয়ে একসংগে ভ্রমণ) এটাই উচ্চ মর্তবা এবং পূর্ণতার অবস্থা। আর এই অবস্থা বেলায়েতের মোহাম্মাদী আলায়হি ওয়া আলিহি ওয়াস্ সালাত ওয়াত্ তাসলীমাতের সঙ্গে খাস। এতদ্ব্যতীত অন্যান্য অবস্থাগুলিও ‘বেলায়েতের' বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে একটি । যদি উক্ত ছয় লতীফা দেহে হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর, ‘মাকামে কুদ্দুস' বা পবিত্র স্থানে পৌছে এবং তার রঙে রঞ্জতি হয়ে আবার দেহের মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে এবং তারা মহব্বতের সম্পর্ক ব্যতীত অন্য সম্পর্ক স্থাপন করে , তখন তারা ‘কালেব' বা দেহের অনুশাসন মেনে নেয় এবং এই মিলনের পরে এক ধরনের ফানা সৃষ্টি করে এবং মৃতের ন্যায় হয়ে যায়। এ সময় তা একটি খাস তাজাল্লীতে নূরান্বিত হয় এবং নতুনভাবে জীবন ধারণ শুরু করে ।আর বাকাবিল্লাহের মাকামে সুদঢ় হয়ে , আল্লাহর আখলাক বা চরিত্রে চরিত্রবান হয়। এ সময় যদি তাদরেকে ঐ রাজকীয় পোশাক প্রদান করে দুনিয়ার দিকে নামিয়ে দেয়া হয়, তখন ব্যাপারটি নিকট হতে দূরে যাওয়ার পর্যায়ভুক্ত হবেএবং ‘তাকমীল' বা পূর্ণতার ভূমিকা তৈরী করবে । আর যদি তারা দুনিয়ার দিকে ফিরে না আসে এবং নিকটবর্তী হওয়ার পর দূরবর্তী না হয়, তবে তারা ‘আওলীয়ায়ে-উযলাত বা নির্জন ওলীদের মধ্যে পরিগণিত হবে। তারা তালেব বা মুরিদদের প্রতিপালন এবং অপূর্ণ লোকদের পূর্ণতা প্রদান করতে সক্ষম হবেনা। এ সমস্ত আদি ও অন্তরে কথা যা ইশারা ও ইংগিতে বর্ণনা করা হলো । এ রাস্তা অতিক্রম করা ব্যতীত এ অবস্থা উপলব্ধি করা অসম্ভব। তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হােক , যারা হেদায়েতের অনুসারী এবং যারা হজরত মোহাম্মাদ মোস্তফা সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের পায়রবীকে আবশ্যক মনে করেন ।

_______________

কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ

কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি  আলাইহি

অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন