কুতুবে ইরশাদঃ
ঐরূপ কুতুবে ইরশাদ খুব কমই পাওয়া যায়, যিনি ফরদিয়াতের কামালাতেরও অধিকারী। বহুকাল ও শতাব্দী অতিক্রান্ত হওয়ার পরেই এই ধরনের কোনো মুক্তাসদৃশ দুর্লভ ওলী জন্মগ্রহণ করেন। এই অন্ধকার দুনিয়া তাঁর বিকাশের নূরে আলোকিত হয় এবং তাঁর ইরশাদ ও হেদায়েতের নূর সমস্ত পৃথিবীকে সমাচ্ছন্ন করে। ‘আরশ থেকে ফরশ পর্যন্ত যে কেউ রুশদ, হেদায়েত, ইমান এবং মারেফাত লাভ করুক না কেনো, তাঁর বদৌলতেই হাসিল করে থাকে এবং তাঁর দ্বারাই উপকৃত হয়। তাঁর মধ্যস্থতা ব্যতীত, কেউই এই সম্পদলাভে সক্ষম হয় না।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়ঃ তাঁর হেদায়েতের নূর সমস্ত পৃথিবীকে বিশাল বারিধির মতো পরিবেষ্টন করে আছে। আর মনে হয়, সে মহাসমুদ্রটি জমাটবদ্ধ, নিশ্চল। যে কেউ সেই বুজুর্গের প্রতি মনোযোগী হয় এবং তাঁর সঙ্গে আন্তরিকতা বজায় রাখে, অথবা তিনি যদি কোনো মুরীদের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন, তখন এই তাওয়াজ্জোহের সময় একটি দুয়ার উক্ত মুরীদের অন্তরে খুলে যায় তখন সে মুরীদ স্বীয় বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য ও মনোযোগ অনুযায়ী উক্ত পথে মহাসমুদ্রতুল্য বুজুর্গের কাছ থেকে ফয়েয আহরণ করে পরিতৃপ্ত হয়।
একইরূপে, যে ব্যক্তি সব সময় জিকিরে মশগুল, কিন্তু ঐ বিশিষ্ট বুজুর্গের প্রতি অমনোযোগী, অথচ তাঁর অমনোযোগিতা ঐ বুজুর্গকে অস্বীকার করার ফলে নয়, বরং তাঁকে না জানার কারণে- এমতাবস্থায় সে ব্যক্তিও ফয়েয প্রাপ্ত হয়ে থাকে। কিন্তু এই ফয়েয প্রাপ্তি, দ্বিতীয় অবস্থার চাইতে প্রথম অবস্থায় অধিক হয়ে থাকে।
কুতুবে ইরশাদের অস্বীকারের ফলঃ অবশ্য যে ব্যক্তি এই বুজুর্গকে অস্বীকার করবে, কিংবা উক্ত বুজুর্গ যার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন; এমতাবস্থায়, সে ব্যক্তি যতোই জিকিরে মশগুল থাকুক না কেন, সে অবশ্যই প্রকৃত হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হবে। উক্ত কুতুবে ইরশাদকে অস্বীকার করার ফলেই তার ফয়েয প্রাপ্তির রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। চাই তিনি তাকে ফয়েয না পৌঁছানোর ইচ্ছা করেন অথবা তাঁর কোনোরূপ ক্ষতি করার ইচ্ছা করেন; সে ব্যক্তি কখনোই আসল হেদায়েত পাবে না। সে যা কিছু হাসিল করবে, তা হবে হেদায়েতের বাহ্যিক রূপ মাত্র। হাকীকত ব্যতীত কেবল সুরত বা বাহ্যিকরূপ, মানুষের খুব কমই উপকারে আসে।
কুতুবে ইরশাদের প্রতি ইখলাসঃ আর যারা এঁদের সঙ্গে ইখলাস ও মহব্বত রাখবে, তাঁরা যদি আল্লাহতায়ালার জিকিরে সব সময় মশগুল নাও থাকে, তবুও তাঁদের প্রতি ভক্তি ও মহব্বত রাখার কারণে তাঁরা রুশদ ও হেদায়েতের নূর প্রাপ্ত হবে। হেদায়েতের অনুসারীগণের প্রতি সালাম।
_______________
কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ
কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন