কালামে ইলাহী

 

কালামে ইলাহী সম্পর্কেঃ হক সুবহানুহু ওয়া তায়া'লা আদি হতে অন্ত পর্যন্ত একই কালামের সাহায্যে কথোপকথনকারী। এই কথার অর্থ হচ্ছে , এর কোনাে ভাগ এবং বিভক্তি সম্ভব নয়। কেননা , চুপ থাকা এবং মুক হওয়া আল্লাহতায়ালার জন্য অসমীচীন।

আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, সেখানে আদি হতে অন্ত পর্যন্ত একটি মুহূর্ত মাত্র। কেননা , আল্লাহ্ সুবহানুহুর ‘যাতের' বা সত্তার উপর কালের কোনাে প্রবাহ নেই । এটা সুস্পষ্ট যে , একটি  মুহূর্তের মধ্যে , একটি একক বা অবিমিশ্র কালাম ছাড়া আর কি হতে পারে ?

 এই একটি ‘কালাম' বা কথার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যাপারটি বিভিন্ন হওয়ার কারণে কালামের ও বিভিন্ন ধরন সৃষ্টি হয়। যেমন - যদি তার সম্পর্ক ‘আমর' বা নির্দেশের সাথে হয়, তবে তার দ্বারা ভআমর' বা নির্দেশের সৃষ্টি হয়। আর যদি তার সম্পর্ক ‘মানহী' (যা নিষেধ করা হয়) এর সাথে হয়, তখন তার নাম হয় ‘নেহী' বা নিষেধ । যদি তার সম্পর্ক বিজ্ঞপ্তি প্রদানের সংগে হয়, তখন তা খবর হয়। এ সম্পর্কে এতটুকু বলা যথেষ্ট যে , অতীত এবং ভবিষ্যত সম্পর্কিত খবরটি অনেকে সন্দেহ ফেলে দেয় । বর্ণনাকৃত বিষয়ের অগ্র এবং পশ্চাৎ উদ্দেশ্যের অগ্র ও পশ্চাতের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু এটা কোনাে জটিল ব্যাপার নয়। কেননা, অতীত ও ভবিষ্যৎ কাল, বর্ণনাকৃত বিষয়ের জন্য বিশেষ গুণ, যা ঐ মুহূর্তের জন্য সৃষ্টি হয়েছে । কিন্তু উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে  যেহেতু উক্ত মুহূর্তটি স্বীয় অবস্থানে আছে এবং কোনাে রূপ বিস্তৃতি সেখানে সৃষ্টি হয়নি । কাজেই ,সেখানে অতীত এবং ভবিষ্যতের কোনাে অবকাশ নেই । দার্শনিকদের অভিমত হলাে একটি পদার্থের উপাদান বাহ্যিক অস্তিত্বের  দিক দিয়ে এক ধরনের এবং কাল্পনিক অস্তিত্বের দিক দিয়ে তার গুণাবলী অন্য ধরনের হয়। যখন একই বস্তুতে, উপাদান ও গুণাবলী বিভিন্ন হওয়ার কারণে সেটা  ভিন্ন হতে পারে , তখন বর্ণনাকারী ও বর্ণিত বস্তু, যা প্রকৃতপক্ষে একটি অন্যটি থেকে আলাদা, সেটাও অনিবার্য ভাবে ভিন্ন হতে পারে  । উপরে যা বর্ণিত হয়েছে তা আদি হতে অন্ত পর্যন্ত একটি মুহূর্ত মাত্র, এটা বাকপদ্ধতির সংকীর্ণতা হেতু। প্রকৃতপক্ষে ,সেখানে একথা বলার কোনাে অবকাশ নেই । এখানে তাে কালের মতাে , মুহূর্তও বলা যায় না।

দায়েরায়ে ইমকানের বাইরে আদি ও অন্ত মিশ্রিতঃ প্রকাশ থাকে যে , আল্লাহ্ পাকের নৈকট্যধারীগণের মধ্যে যিনি ‘দায়েরায়ে ইমকান' বা সম্ভাব্য বৃত্ত অতিক্রম করে তদূর্ধ্বে গমন করেন , তিনি আদি ও অন্তকে মিলিত রূপেপান। হজরতে রিসালাতে খাতেমীয়াত সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম শবে মেরাজে তাঁর ঊর্ধ্বগমনের সময় হজরত ইউনুস আলায়হিস্ সালামকে মাছের পেটের মধ্যে দেখে ছিলেন, নুহ আলায়হিস্ সালামের সময়ের তুফানও মওজুদ ছিলো । তিনিঁ বেহেশতীদের বেহেশতে দেখেছিলেন এবং দোজখীদের দোজখে। বেহেশতে দাখিল হওয়ার সময়ের পাঁচশত বৎসরকে তিনি অর্ধদিবস হিসাবে পেয়েছিলেন । হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. যিনি ধনী সাহাবী ছিলেন, তাঁকে বিলম্বে বেহেশতে আসতে দেখে নবী করিম সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করায়, উত্তরে তিনি বিপদসংকুল রাস্তার বর্ণনা দেন । এই সমস্ত ঘটনাবলী এক মুহুর্তেই সংঘটিত হয়েছিলাে , সেখানে অতীত ও ভবিষ্যতের কোনাে স্থানই ছিলো না। 

আল্লাহ্তায়ালা এই ফকীরকেও নবী করীম সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের তোফায়েলে কখনাে কখনাে এইরূপ দর্শন দান করেছেন । আমি ফিরিশতাদেরকে দেখলাম যে , তারা হজরত আদম আলায়হিস সালামকে সিজদাহ করছে এবং তারা এখনও সিজদাহ হতে মাথা উঠাননি। ইল্লিনের ফিরিশতা, যাদের প্রতি সিজদার হুকুম হয়নি - ঐ সমস্ত ফিরিশতাদেরকে সিজদাহকারী ফিরিশতা হতে আলাদা দেখলাম । তাঁরা তাঁদের মুশাহিদায় মত্ত এবং বিভোর। আর ঐ সমস্ত অবস্থা, যে সম্পর্কে আখিরাতে ওয়াদা দেওয়া হয়েছে ,সমস্ত কিছু এক মুহূর্তেই অবলোকন করি। এই দর্শনের পর অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে ,সেই জন্য আমি আখিরাতের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করছি না। কেননা , আমার স্মরণ শক্তির উপর পূর্ণ আস্থা নেই ।

মিরাজে নবুবী ও উরুযে আওলীয়ার মধ্যে পার্থক্যঃ এতটুকু জানা প্রয়োজন  যে , এই অবস্থা (মিরাজ ) রসুলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের দৈহিক ও রূহানী উভয়েরই হাসিল হয়েছিলাে এবং তাঁর যা কিছু দর্শন হয়েছিলাে তা তিনি চক্ষু ও দিব্যদৃষ্টির মাধ্যমে অবলোকন করছিলেন। কিন্তু অন্যদের ব্যাপারে যারা তোফায়েল বা তার মধ্যস্থতায় প্রাপ্ত, তাঁরা তাঁর অনুসরণের মাধ্যমে কেবল মাত্র রূহানীভাবে মুশাহিদা বা অবলোকন করে থাকেন । তারা একই সঙ্গে শরীর এবং বাইরের চোখ দিয়ে দেখেন না। যেমন কোনাে কবির ভাষায়ঃ

জানি যেথায় আছে বন্ধু আমার 

সেথায় যাওয়ার শক্তি নাই, 

তাই-দূর থেকে তার ঢোলের 

আওয়াজ হেথায় বসে শুনতে চাই। 

তাঁর স. ও তাঁর পরিবার পরিজনদের  সকলের উপর পরিপূর্ণ সালাত ও সালাম।

_______________

কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ

কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি  আলাইহি

অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন