হক তায়া'লার মিছাল হয় না, মিছাল হতে পারেঃ হক সুবহানুহু ওয়া তায়া'লা ‘মিছাল' বা সাদৃশ্য থেকে পবিত্র। যেমন আল্লাহর বাণীঃ তার সাদৃশ্য কিছুই নাই। কিন্তু ‘উলামারা ‘মিছাল’ বা ‘মাছাল’ কে জায়েয বলেছেন। যেমন আল্লাহর বাণীঃ “আল্লাহ তায়া'লার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট উপমা আছে, অথবা আল্লাহর জন্যই তাে সর্বোকৃষ্ট শান বা মর্যাদা। সুলূকের পথে ভ্রমণকারীগণ এবং কাশফের অধিকারীরা উপমার দ্বারাই শান্তিপ্রাপ্ত হন এবং ধ্যানের মাধ্যমে তৃপ্তি লাভ করেন। তারা বর্ণনাহীনকে বর্ণনাযুক্ত দেখতে থাকেন এবং যাতে ওয়াজেবকে সম্ভাবনার আকৃতিতে পেতে থাকেন। বেচারা সালেক, দৃষ্টান্তকে দৃষ্টান্তের মালিকের অনুরূপ মনে করে এবং সুরত বা আকৃতিকে— আকৃতির মালিকের অনুরূপ ধারণা করে থাকে। এর কারণ এই যে, সালেক হক সুবহানুহু ওয়া তায়ালার পরিবেষ্টনকারী আকৃতিকে, সমস্ত বস্তুর মধ্যে পরিদর্শন করে এবং ঐ পরিবেষ্টনের উপমাকে সমস্ত দুনিয়ার মধ্যে মুশাহিদা করে এবং সে মনে করে যে, যা কিছু দৃষ্টিগােচর হয়, তার সবই হক সুবহানুহুর আবেষ্টনীর হাকীকত। কিন্তু, প্রকৃত ব্যাপার তা নয়। কেননা, হক তায়ালার বেষ্টনী তাে দৃষ্টান্ত ও তুলনাহীন এবং তিনি শুহুদ বা দর্শন এবং প্রকাশ পাওয়া অবস্থা থেকে মুক্ত ও পবিত্র। আমরা এই কথার উপর ইমান রাখি যে, আল্লাহ্তায়ালা সব বস্তুর পরিবেষ্টনকারী; কিন্তু আমরা তার এই পরিবেষ্টনের স্বরূপ সম্পর্কে অবহিত নই? আমরা যা কিছু জানি, তা হলাে এই পরিবেষ্টনের তুল্য অবস্থা। হক তায়ালার কুরব বা নৈকট্য এবং মা’য়ীআত বা সঙ্গতাকে এর উপর কিয়াস বা ধারণা করতে হবে। যা কিছু কাশফ ও মুশাহিদার মধ্যে আসে, তা তাে আনুরূপ্য মাত্র, হাকীকত বা আসলরূপ নয়। বরং এই সমস্ত কথার বাস্তবরূপও অজ্ঞাত। আমরা এর উপর ইমান রাখি যে, হক তায়ালা আমাদের নিকটে এবং সঙ্গে, কিন্তু আমরা এটা জানি না যে, এই নৈকট্য ও সঙ্গতার হাকীকত কি? এ সম্পর্কে হাদীছে ইরশাদ আছেঃ আমাদের রব হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় প্রকাশিত হবেন।' এই বাক্যে রসুলুল্লাহ স. মিছালী আকৃতি বর্ণনা করেছেন। কারণ, পূর্ণ রেজা (সন্তুষ্টি) অর্জনের দৃষ্টান্ত হাস্যোজ্জ্বল আকৃতিই হওয়া উচিত। একইভাবে হাত, চেহারা, পা, অঙ্গুলী ইত্যাদির দৃষ্টান্তও অনুমান করা যেতে পারে।
আল্লাহ্তায়ালা আমাকে এরকমই শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ্তায়ালা যাকে ইচ্ছা করেন, তাকেই অনুগৃহীত বান্দার মর্যাদায় ভূষিত করেন। আমাদের সরদার মােহাম্মদুর রসুলুল্লাহ স. এবং তাঁর পরিবার পরিজনের প্রতি দরূদ ও সালাম।
_______________
কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ
কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন