নবীর উপর ওলীর আংশিক প্রাধান্য

 

নবীর উপর ওলীর আংশিক প্রাধান্য সম্পর্কেঃ ওলী যে কামালাত-ই হাসিল করুন এবং যে স্তরে পৌঁছান না কেনাে, তিনি স্বীয় নবী আ. এর পায়রবীর তােফায়েলে সেখানে পৌছান। যদি নবীর অনুসরণ এবং পায়রবী না হতাে, তবে ইমানই নসীব হতাে না এবং উচ্চ মর্তবা হাসিলের রাস্তাও উন্মুক্ত হতাে না। সুতরাং কোনাে ওলী যদি আংশিক ফযীলতসমূহ থেকে এমন কিছু ফযীলত হাসিল করে, যা নবীর লাভ হয়নি এবং যদি তার বুলন্দ দারাজাত বা উঁচু মরতবাসমূহ থেকে কোনাে বিশেষ মরতবা নসীব হয়, যা নবীর হাসিল হয়নি; এমতাবস্থায় এটা নিশ্চিত যে নবীরও এই আংশিক ফযীলত এবং খাস্ মরতবা হতে পূর্ণ অংশ হাসিল হয়। কেননা, ওলীর মধ্যে এই পূর্ণতা লাভ, ঐ নবীর পায়রবীরই ফলশ্রুতি এবং এই সমস্ত কামালাত ঐ নবীর সুন্নতের অনুসরণেরই ফলমাত্র। কাজেই, এটা নিশ্চিত যে, নবী ঐ কামালাতের পূর্ণ অধিকারী। যেমন রসুল পুর নূর সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ইরশাদঃ “যিনি কোনাে নেক তরীকার প্রচলন করলেন, তিনি তার সওয়াব প্রাপ্ত হবেন এবং তিনি তাদের সমান সওয়াব পাবেন যারা এর উপর আমল করবে।'

অবশ্য ওলী এই পূর্ণতা প্রাপ্তির কারণে পূর্ববর্তী এবং এই দর্জায় পৌছানাের দিক দিয়ে সর্বপ্রথম হবেন। আর ওলীর, নবীর উপর এই ধরনের ফযীলত প্রাপ্তিকে আলেমগণ জায়েয বলেছেন। কেননা, এটা আংশিক ফযীলত মাত্র, যা পূর্ণ ফযীলতের আদৌ সমতুল্য নয়। আর ফুসুসুল হিকামের লেখক(১) বলেনঃ খাতিমুল আম্বীয়া সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইলম ও মারেফাতসমূহ খাতিমুল বেলায়েতের

(১. হজরত শায়েখ মহীউদ্দীন মােহাম্মদ বিন আলী ইবন আরাবী কাদ্দাসা সিররুহু, ৫৬০ হিজরীর ১৭ই রমজান, স্পেনের প্রসিদ্ধ শহর মরসীয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৬৩৮ হিজরীর ২২শে রবিউল আখির, দামেশকে ইনতিকাল করেন। তিনি ইলমে জাহির ও ইলমে বাতিনে পারদর্শী ছিলেন এবং একজন নামকরা দার্শনিক ছিলেন। তিনি তাওহীদে ওজুদী বা সবই তিনি, এই মতবাদ প্রচার করেন। যার প্রকৃতস্বরূপ অনেকে বুঝতে না পারায় দারুন মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে হজরত মােজাদ্দেদে আলফে সানি কাদ্দাসা সিররুহু তাওহীদে শুহুদী বা সবই তার দিক থেকে, মতবাদ পেশ করে সমস্ত মতানৈক্য দূরীভূত করেন। হজরত শায়েখ ইবন আরাবী বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মধ্যে ‘ফুসুসুল-হিকাম এবং ফতুহাতে-মককীয়া বিশেষ স্মরণীয়।)

নিকট থেকে হাসিল করেন, কাজেই, তিনিও এই মারেফাতের প্রতি অনুরক্ত এবং এই ফকীরকেও এই মারেফাতের দ্বারা অভিসিক্ত করা হয়েছে এবং এটা শরীয়তের অনুরূপ। বস্তুতঃ, ফুসুসুল হিকামের ব্যাখ্যাকারগণ উপরােক্ত বর্ণনাটির সত্যতা প্রতিপাদনের জন্য বাহানার আশ্রয় নিয়েছেন এবং বলেছেনঃ প্রকৃতপক্ষে খাতিমুল বেলায়েত হলাে খাতিমুন নবুয়তের খাজাঞ্চি বা কোষাধ্যক্ষ স্বরূপ। যখন বাদশাহ্ স্বীয় কোষাগার থেকে কিছু নিতে চান, তখন প্রকাশ্যতঃ তিনি খাজাঞ্চির কাছ থেকেই নেন; এতে বাদশাহের ইজ্জতের কোনাে হানি হয় না। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তাই, যা আমি ওপরে বর্ণনা করেছি। তাদের বাহানার কারণ হলাে, এর হাকীকত বা আসল তত্ত্ব না জানা। আল্লাহ্ সুবহানুহু সব কাজের হাকীকত সম্পর্কে অধিক ওয়াকিফহাল। সাইয়েদুল বাশার সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরিবার পরিজনদের উপর দরূদ ও সালাম।

_______________

কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ

কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি  আলাইহি

অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন