নফীয়ে কুল্ঃ তালেবের জন্য এটা জরুরী যে, সে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের সংগে সম্পর্কিত সমস্ত প্রকার বাতিল মা’বুদসমূহকে নফী বা ধ্বংস করবে এবং প্রকৃত মা’বুদের স্থিতির জন্য তার স্মৃতিপটে যা কিছু উদয় হয়, সে সমস্তকেও বিদূরিত করে কেবলমাত্র হক তাআ’লার মওজুদ থাকাকে যথেষ্ট মনে করবে। এই মাকামে অজুদ বা অস্তিত্বের কোনো সম্ভাবনাই নেই, কাজেই হক তায়া’লার জাতকে অস্তিত্ব ব্যতীতই তালাশ করা দরকার।
আহলে সুন্নাহ ওয়াল্ জামাআ’তের আলেমগণ কি সুন্দরই না বলেছেনঃ আল্লাহতায়ালার অজুদ, তাঁর ‘যাত’ সুবহানুহু ওয়া তায়া’লার উপর অতিরিক্ত। অজুদকে প্রকৃত যাত বলা এবং অজুদের উপর অন্য কোনো বিষয় স্থির না করা দৃষ্টির সংকীর্ণতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। শায়েখ আলাউদ্দৌলা বলেছেন, হক জাল্লা শানুহুর দুনিয়া অস্তিত্বের জগতেরও ঊর্ধ্বে, এই ফকীরকে যখন অস্তিত্বের জগতের উপর নেয়া হয় তখন হালের আধিক্যের মধ্যে থাকাবস্থায়ও আমি নিজেকে অনুসরণ জ্ঞানের দ্বারা মুসলিম হিসাবে গণ্য করতে থাকি। মোদ্দা কথা, সম্ভাব্যের ধারণায় যা কিছু আসে, তা সম্ভাবনা ব্যতীত আর কিছুই নয়। সুতরাং অতি পবিত্র ঐ যাত যিনি মাখলুকের জন্য- স্বকীয় পরিচিতি প্রদানের লক্ষ্যে অক্ষমতা ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট রাখেননি।
একটি সন্দেহের নিরসনঃ এমন ধারণা করা উচিত নয় যে, এই ফানা ফিল্লাহ বা আল্লাহর অস্তিত্বে লয় প্রাপ্তি এবং বাকাবিল্লাহ বা আল্লাহর সত্তায় স্থিতি (যা সালেকের চলার পথে পরিদৃষ্ট হয়), এর দ্বারা সম্ভাব্য বস্তু নিশ্চিত হয়ে যায়। কেননা, এরূপ হওয়া সম্ভব নয়। এর দ্বারা হাকীকত বা মূল বস্তুর মধ্যে পরিবর্তন
১. হজরত শায়েখ রুকনুদ্দীন আলাউদ্দৌলা সাম্নানী র. এর কুনিয়াত আবুল মুকারাম এবং নাম- আহমদ ইব্ন মুহাম্মদ। তিনি ৬৫৯ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং হিজরী ৭৩৬ এর ২২ শে রজব মৃত্যুবরণ করেন। তিনি হিজরী ৬৭৭ সনে, বাগদাদে শায়েখ নুরুদ্দীন আব্দুর রহমানের নিকট মুরীদ হন। দারা শিখ্ওয়া তাঁর একটি ছোট্ট গ্রন্থের কথা উল্লেখ করেছেন, যাতে শায়েখ তাঁর জীবনচরিত বর্ণনা করেছেন এবং নিজের ইজতিহাদের দ্বারা এমন কিছু আকীদা বর্ণনা করেছেন, যা চার ইমামের মজহাবের খেলাফ বা বিরোধী।
অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, যা আদৌ সম্ভবপর নয়। কাজেই, সম্ভাব্য বস্তু যখন অবশ্যম্ভাবী হতে পারে না, তখন তার জন্য এছাড়া আর কি থাকতে পারে যে, সে আল্লাহতায়ালার পরিচয় লাভ সম্পর্কে অক্ষমতা ও অযোগ্যতা প্রকাশ করবে? তাই কোনো কবির ভাষায়:
‘আনকা শিকার যায় না করা
জাল তুলে নাও হে শিকারী,
জাল যে পাতে আনকাআশায়
শূন্য হাতে যায় সে ফিরি’।
বুলন্দ হিম্মতের জন্য এরকমই প্রয়োজন যে, হক তায়া’লার যাতের অন্বেষণকারী শেষ পর্যন্ত কিছুই পাবে না এবং তার কোনো নাম নিশানাও প্রকাশ পাবে না। একটি জামাআ’ত এমন আছে, যারা এর ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করে। তাঁরা হক তায়া’লার যাতকে, স্বীয় অস্তিত্বের অনুরূপ মনে করে এবং তার সাথে সখ্যতা ও একাত্মতা সৃষ্টি করে। তাই কোনো কবির ভাষায়ঃ ‘তুমি কোথায় এবং আমি কোথায়- হে আমার প্রভু।’
_______________
কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ
কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি
অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন