সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর বিশেষ মর্যাদা সম্পর্কে

 

সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর বিশেষ মর্যাদা সম্পর্কেঃ হজরত খাতেমুল মুরসালীন  সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম, অন্য সমস্ত নবী আলায়হিমুস্ সালাত্ ওয়াস্  তাস্লীমাতের মধ্যে, তাজাল্লীয়ে যাতির সঙ্গে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন। সমস্ত কামালতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এই বিশেষ মর্যাদায় বিভূষিত হওয়ার কারণে, তিনি স.  বিশেষ সম্মানের অধিকারী। রসুলেপাক সল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের পূর্ণ অনুসরণকারী বিশেষ ওলীদের জন্যও এই বিশেষ মাকামে একটি অংশ আছে। এই  বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কেউ যেনো এমন প্রশ্ন না করেন যে, তা হলে তো এই  উম্মতের কামেল ওলীগণ সমস্ত আম্বীয়াদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়ে যান এবং এই ধারণা  আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদার প্রতিকূল। আর এই ফযীলত বা মর্যাদা  আংশিকও নয় বরং সার্বিক। কেননা, মানুষের মধ্যে একজনের চেয়ে অন্যজনের  মর্যাদা অধিক হওয়া, কেবলমাত্র কুরবে ইলাহী জাল্লা শানুহুর কারণে হয়ে থাকে।  এর তুলনায় অন্য সমস্ত মর্যাদা খুবই নগণ্য। এ প্রশ্নের উত্তরে আমার বক্তব্য এই  যে, ‘এই উম্মতের কামেল ওলীগণের এই মাকামে একটি অংশ আছে।’ এই  উক্তির ফলে একথা প্রমাণিত হয় না যে, তাঁরা এই মাকামে পৌঁছেছেন এবং মর্যাদা  প্রাপ্তিতো এই মাকামে পৌঁছবার কারণেই হয়ে থাকে। এই উম্মত- যারা খায়রুল  উমাম বা সমস্ত উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসাবে বিবেচিত- তাদের মধ্যেকার কামেল  ওলীদের সর্বশেষ উরুজ বা ঊর্ধ্বারোহণের স্থান আম্বীয়া আলায়হিমুস্ সালামদের  পদতলে। হজরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সমস্ত মানুষের মধ্যে,  আম্বীয়া আলায়হিমুস সালামদের পরে, সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তাঁর উরুজের মাকামও  কোনো নবীর পদতলে স্থিত, যা সমস্ত আম্বীয়াদের মর্যাদা হতে নিুতর।  সমস্ত আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হলোঃ এই উম্মতের কামেল অনুসারীগণ এই  মাকামের যা ফাওকুল ফাওক বা সর্বোচ্চ কামালাতের মাকামের নীচের মাকামের  পূর্ণ অংশ পেয়ে থাকেন। আর এই ফাওকুল্ ফাওকের মাকাম আম্বীয়া আলায়হিমুস্  সালামদের জন্য খাস। খাদেম যেখানেই থাকুক না কেনো, তার নিকট মনিবের  উদ্বৃত্ত খাদ্য পৌঁছে থাকে। দূরের খাদেমও মনিবের মাধ্যমে নেয়ামত হাসিল করে  থাকে। নিকটের খাদেম খেদমত করা ব্যতীত লাভ করতে সক্ষম হয় না। 

যেমন  কোনো কবির ভাষায়ঃ  

ঐ যে কাফেলা জানি আমি তা

পৌঁছব না সেথা কভু,  

দূর থেকে তার ঢোলের আওয়াজ  

যথেষ্ট তো তবু।  

প্রকাশ থাকে যে, কোনো কোনো সময় মুরীদেরা স্বীয় পীর সম্পর্কে এইরূপ  ধারণা করে যে, পীরের মাকামসমূহ হাসিল হওয়ার পর- তার ও তার পীরের স্থান  সমপর্যায়ের। কিন্তু এই ব্যাপারে আসল কথা তাই, যা উপরে আলোচিত হয়েছে।  সমপর্যায়ের ব্যাপারটি তখনই হতে পারে, যখন মুরীদ পীরের মাকামে পৌঁছায়। ঐ  মাকামগুলি হাসিলের উপর তা নির্ভরশীল নয়। কেননা, এই হাসিল তো পীরের  তোফায়েলে হয়েছে। এই বক্তব্যে কেউ যেনো এইরূপ ধারণা না করেন যে, মুরীদ  কখনোই স্বীয় পীরের বরাবর বা সমান হতে পারেন না। বরং সমপর্যায়ভুক্ত হওয়া  সম্ভব এবং জায়েয এবং এরকম হয়েও থাকে। কিন্তু কোনো মাকাম হাসিল হওয়া  এবং সেই মাকামে পৌঁছানো- এতোদুভয়ের মধ্যে খুব সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে।  প্রত্যেক মুরীদ ওই কথা বুঝতে সক্ষম নন। এই সূক্ষ্ম পার্থক্যটি বুঝবার জন্য  কাশফে সহীহ বা সত্য দর্শন এবং ইলহামে সুরীহ বা স্পষ্ট ইলহামের প্রয়োজন।  আল্লাহ সুবহানুহু তায়া’লা সত্য কথাকে অন্তরে নিক্ষেপকারী। তাঁদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক যারা হেদায়েতের অনুসারী। 

_______________

কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ

কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি  আলাইহি

অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন