ইলমুল আশ্ইয়া বা বৈষয়িক জ্ঞানের প্রত্যাবর্তন

 

ইলমুল আশ্ইয়া বা বৈষয়িক জ্ঞানের প্রত্যাবর্তন সম্পর্কেঃ বস্তুর জ্ঞান, যা ফানার মরতবায় বিদূরিত হয়, যদি তা বাকার স্তরে প্রত্যাবর্তন করে, তবে তার ফলে আরেফের কামালিয়াতের মধ্যে কোনােরূপ ক্রটির সৃষ্টি হয় না। বরং এই প্রত্যাবর্তনই তার কামালিয়াত বা পূর্ণতার কারণ হয়। স্মর্তব্য যে, তার পূর্ণতা এই প্রত্যাবর্তনের উপর নির্ভরশীল। কেননা, আরেফ বাকার স্থানে পৌছানাের পর, হক তায়ালার চরিত্রে চরিত্রায়িত হয়। বস্তুসমূহের জ্ঞান আল্লাহতায়ালার জাতের মধ্যে পরিপূর্ণ এবং তার বিপরীত জ্ঞান ক্ষতির কারণ। 

বস্তুতঃ যে ‘আরেফ আল্লাহর রঙে রঞ্জিত, এটা তারই অবস্থা। এর মধ্যে হিকমত বা রহস্য এই যে, মুমকেন বা সম্ভাব্যের মধ্যে ইলম হাসিল হওয়ার সূরত এই যে- ‘আলেম বা জ্ঞানীর মস্তিষ্কে মা'লুম বা জানার অবস্থার সৃষ্টি হয়। কাজেই, জ্ঞানীব্যক্তি নিজে, জ্ঞাত বস্তুর প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়। জ্ঞান যতই বৃদ্ধি পায়, জ্ঞানী ব্যক্তির উপর তার প্রভাব ততই বেশী হতে থাকে। যার ফলে, ঐ জ্ঞানী ব্যক্তির মধ্যে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন অধিক হতে পারে; যা তার জন্য ক্ষতিকর। কাজেই, তালেবের বা অন্বেষণকারীর জন্য এটা জরুরী যে, সে এই সমস্ত জ্ঞানকে অস্বীকার করবে এবং সবকিছুকে ভুলে যাবে। কিন্তু জাতে ওয়াজেবে তায়া'লার মধ্যে ইলম বা জ্ঞানের অবস্থা এরূপ নয়। জাতে হক সুবহানুহু এ অবস্থা থেকে পবিত্র যে, তার মধ্যে জ্ঞাত বস্তুর আকৃতি প্রবেশ করবে। বরং হকতায়ালার জ্ঞানের সম্পর্ক বস্তুর সাথে হওয়ার সাথে সাথে, বস্তুসমূহ নিজেই প্রকাশিত হয়।

পবিত্র ঐ জাত, যিনি বিভিন্ন অবস্থা সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও স্বীয় যাত, সিফাত ও আফআল বা কর্মের মধ্যে কোনােরূপ পরিবর্তনকে কবুল করেন না। আর যে ‘আরেফ আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রায়িত হন, তার জ্ঞানও ঐ ধরনের হয়ে থাকে। এজন্য তার মধ্যে বৈষয়িক জ্ঞানের সুরত প্রবেশ করতে পারে না; কাজেই তা তাঁর মধ্যে কোনােরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় না। আর এ কারণে তার মধ্যে কোনােরূপ পরিবর্তনও আসে না বা কোনাে মিশ্রভাব সংযুক্ত হয় না। কাজেই, এ অবস্থা তার ক্ষতি করে না, বরং পূর্ণতা প্রদান করে। এই হিকমত এবং গােপন তথ্য, আল্লাহতায়ালার গােপন ভেদরাজীর অন্তর্ভূত। হক্‌ সুবহানুহু তায়া'লা স্বীয় হাবীব আলায়হি ওয়া আলা আলিহী সালাতু ওয়াস্ সালামের বরকতে তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকেই মর্যাদামণ্ডিত করেন। 

_______________

কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ

কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি  আলাইহি

অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন