আল্লাহ তায়ালার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে

 

আল্লাহতায়ালার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেঃ ওয়াজেবুল ওজুদ তায়া’লা ও তাকাদ্দাসার  বৈশিষ্ট্য হলোঃ তিনি স্বীয় যাতের সঙ্গে মওজুদ বা বিদ্যমান এবং স্বীয় মওজুদ  হওয়ার জন্য আদৌ ওজুদের মুখাপেক্ষী নন। চাই আমরা ওজুদকে ‘আইনে যাত’  বা যাতের অনুরূপ অথবা যাতের উপর অতিরিক্ত যাই বলিনা কেনো। এই দুই  অবস্থাতেই অর্থাৎ আইনে যাত বা যাতের উপর অতিরিক্ত এ কথায় ঐ কথাই  আসে, যা থেকে বাঁচার চেষ্টা করা হয়েছে। হক সুবহানুহু তায়া’লার সুন্নত বা নিয়ম  এই যে, যা কিছু সৃষ্টির জন্য নির্ধারিত— তার নমুনা সম্ভাব্যজগতে প্রকাশ করে  দেন; চাই তা কেউ জ্ঞাত হোক অথবা না হোক। হক তায়া’লা ‘আলমে ইমকানে’  বা সম্ভাব্য জগতে, ওয়াজেবুল ওজুদের বৈশিষ্ট্যসমন্বিত একটি ওজুদের নমুনা সৃষ্টি  করেছেন। কেননা, প্রকৃতপক্ষে ওজুদ যদিও মওজুদ নেই এবং তা মাখলুকাতে  ছানীয়া বা দ্বিতীয় সম্ভাবনাসমূহ পর্যায়ের মধ্যে গণ্য, কিন্তু আমরা যদি তার  ওজুদকে ফরজ বা অপরিহার্য মনে করি, তবে তিনি স্বীয় অস্তিত্বের দ্বারাই মওজুদ  হবেন, অন্য কোনো ওজুদ বা অস্তিত্বের দ্বারা নয়। এ অবস্থা অন্যান্য মওজুদাত বা  প্রাণীসমূহের বিপরীত। কেননা, তাদের মওজুদ বা বিদ্যমান থাকার জন্য ওজুদ বা  অস্তিত্বের মুখাপেক্ষী হতে হয়, তাদের যাত বা সত্তা, তাদের অস্তিত্বের জন্য যথেষ্ট  নয়। বস্তুতঃ ঐ ওজুদ বা অস্তিত্ব- বস্তুর মওজুদ হওয়ার জন্য লোকেরা যাকে  প্রয়োজন মনে করে- যদি মওজুদ বা বিদ্যমান থাকে, তবে তা স্বীয় যাতের বা  সত্তার সাথেই মওজুদ থাকবে। ঐ পবিত্র যাত অন্য কোনো ওজুদের মুখাপেক্ষী  হবে না। খালেকে মাওজুদাত তায়া’লা ও তাকাদ্দাসা যদি স্বীয় যাতের সঙ্গে  মওজুদ থাকেন এবং কোনো সময়ই ওজুদের মুখাপেক্ষী না হন, তবে তাতে আশ্চর্য  হওয়ার কি আছে? প্রকৃত ব্যাপার সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা যদি এ অবস্থাকে অসম্ভব  মনে করে, তবে এ নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো।  

একটি প্রশ্নঃ যদি কেউ বলে, হুকামা বা জ্ঞানীগণ, আশ্আরীয়া বা আবুল  হাসান আল্ আশ্আরীর অনুসারীগণ এবং কিছু সুফী যারা হকতায়া’লা ওয়া  তাকাদ্দাসাকে ওজুদের অনুরূপ বলেছেন, তাঁরা তো তাই বলেছেন, যা আপনি  একটু আগে বর্ণনা করেছেন। যা হলো, যাতে হকতায়া’লা ওয়া তাকাদ্দাসা স্বীয়  যাতের সঙ্গে মওজুদ, ওজুদের বা অস্তিত্বের সঙ্গে নয়। একথার অর্থ এই যে,  ওয়াজেবুল ওজুদ এমন একটি ওজুদের সঙ্গে মওজুদ বা বিদ্যমান, যা তাঁর যাতের  অনুরূপ। আর তা হলো, তিনি স্বীয় যাতের সঙ্গে মওজুদ, ওজুদের সঙ্গে নয়?  

উত্তরঃ এ কথার জবাব এই যে, এই স্বীকৃত সত্যের আলোকে, এ বিষয়ে,  আহলে সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআতের অনুসারীদের সঙ্গে কোনো মতপার্থক্যই সৃষ্টি হয়  না। বরং এখানে হকের অনুসারীদের এরূপ বলা উচিত ছিলো যে, হকতায়া’লা  ওজুদের সঙ্গে মওজুদ, স্বীয় যাতের সঙ্গে মওজুদ নন। (এমতাবস্থায় কিছু  মতপার্থক্য সৃষ্টি হতো) এই স্বীকৃত সত্যের আলোকে, ওজুদ বা অস্তিত্বকে  অতিরিক্তভাবে নির্ধারিত করা ঠিক নয়। বস্তুতঃ ওজুদকে অতিরিক্তভাবে নির্ধারণ  করার ফলে এটাই প্রমাণিত হয় যে, দুইদলের মতপার্থক্যের কারণ— ‘ওজুদের’  বা অস্তিত্বের ব্যাপারে নয়, বরং তাঁর গুণের ব্যাপারে যে, গুণাবলী তাঁর যাতের  অনুরূপ অথবা যাতের উপর অতিরিক্ত। এখানে দুই দলই একথা মানেন যে,  হকতায়া’লা ওজুদের সাথে মওজুদ এবং এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোনোরূপ  মতপার্থক্য নেই। যদি কোনো ব্যাপারে মতবিরোধ থাকে, তবে তা হলোঃ এই  ওজুদ বা অস্তিত্ব, তাঁর যাতের অনুরূপ, অথবা তাঁর যাতের উপর অতিরিক্ত।  

দ্বিতীয় অভিযোগ বা প্রশ্নঃ যদি তারা এইরূপ প্রশ্ন করে, যখন ওয়াজেবুল ওজুদ  তায়া’লা ওয়া তাকাদ্দাসা স্বীয় যাতের সাথে মওজুদ, তখন ওয়াজেবে তায়া’লাকে  মওজুদ বলার হেতু কি? কেননা, মওজুদ তো ঐ জিনিসকে বলা হয়, যার সাথে  ওজুদ বা অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে। আর আপনিতো এখানে বলেছেন- 

আল্লাহতায়ালার আসলে কোনো ওজুদ বা অস্তিত্বই নেই? 

উত্তরঃ এ ব্যাপারে আমার কথা হচ্ছে এই যে, যার সাথে যাতে ওয়াজেবে  তায়া’লা ওয়া তাকাদ্দাসা মওজুদ, এমন কোনো ওজুদ বা অস্তিত্ব আল্লাহতায়ালার  মধ্যে নেই। কিন্তু এমন অস্তিত্ব, যা রূপক হিসাবে হক তায়া’লা যাত সম্পর্কে বলা  হয়, যদি ঐরূপ অস্তিত্বের কারণে ওয়াজেবে তায়া’লাকে মওজুদ বা বিদ্যমান বলা  হয়, তবে তা সঠিক হবে। এইরূপ অভিমত পরিহার করা জরুরী নয়।  

_______________

কিতাব: মাবদা ওয়া মা'আদ

কৃত: হজরত মুজাদ্দেদে আলফে সানী রহমাতুল্লাহি  আলাইহি

অনুবাদ: ড. আ ফ ম আবু বকর সিদ্দীক

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন