রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর ভবিষ্যদ্বাণী ও খারেজীদের উত্থান

 

রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর ভবিষ্যদ্বাণী ও খারেজীদের উত্থান



ইসলামের প্রথম বাতিল দল হ’ল ‘খারেজী’।


অনেকে মনে করেন খারেজীদের উত্থান রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর যুগেই হয়েছিল। কিন্তু তা ছিল ব্যক্তি পর্যায়ের ঘটনা। এর প্রমাণ স্বরূপ তারা ‘যুল খুওয়াইছারা’র ঘটনা উল্লেখ করেন।


হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) বলেন,



بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ يَقْسِمُ قَسْمًا أَتَاهُ ذُو الْخُوَيْصِرَةِ، وَهْوَ ‏رَجُلٌ ‏مِنْ بَنِي تَمِيْمٍ، فَقَالَ يَا ‏رَسُولَ اللَّهِ اعْدِلْ. فَقَالَ وَيْلَكَ، وَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ ‏أَعْدِلْ قَدْ ‏خِبْتَ وَخَسِرْتَ إِنْ لَمْ أَكُنْ أَعْدِلُ فَقَالَ ‏عُمَرُ يَا رَسُولَ اللهِ ائْذَنْ لِي ‏فِيهِ، ‏فَأَضْرِبَ عُنُقَهُ. فَقَالَ دَعْهُ فَإِنَّ لَهُ أَصْحَابًا، يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ ‏مَعَ ‏صَلاَتِهِمْ ‏وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِمْ، يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ،  يَمْرُقُونَ ‏مِنَ الدِّينِ كَمَا ‏يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ ‏الرَّمِيَّةِ، يُنْظَرُ إِلَى نَصْلِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَىْءٌ، ‏ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى ‏رِصَافِهِ فَمَا يُوجَدُ فِيهِ شَىْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى نَضِيِّهِ، ‏وَهُوَ قِدْحُهُ، ‏فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ ‏شَىْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى قُذَذِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَىْءٌ، قَدْ سَبَقَ الْفَرْثَ ‏وَالدَّمَ، آيَتُهُمْ ‏رَجُلٌ ‏أَسْوَدُ إِحْدَى عَضُدَيْهِ مِثْلُ ثَدْىِ الْمَرْأَةِ، أَوْ مِثْلُ الْبَضْعَةِ ‏تَدَرْدَرُ وَيَخْرُجُونَ عَلَى ‏حِينِ فُرْقَةٍ مِنَ النَّاسِ-



‘আমরা রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর নিকটে উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গণীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। তখন বনু তামীম গোত্রের ‘যুল খুওয়াইছারা’ নামক এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ইনছাফ করুন’। তখন রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বললেন, তোমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি ইনছাফ না করি, তাহ’লে কে ইনছাফ করবে? আমি যদি ইনছাফ না করি, তাহ’লে তো তুমি ক্ষতিগ্রস্ত ও নিষ্ফল হব। হযরত ওমর (رضي الله عنه) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) ! আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি ওর গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, ‘ওকে যেতে দাও। তার কিছু সঙ্গী-সাথী রয়েছে। তোমাদের কেউ তাদের ছালাতের তুলনায় নিজের ছালাত এবং তাদের ছিয়ামের তুলনায় নিজের ছিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিম্নদেশে প্রবেশ করে না। এরা দ্বীন থেকে এত দ্রুত বেরিয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তীরের অগ্রভাগের লোহা দেখা যাবে, কিন্তু (শিকারের) চিহ্ন দেখা যাবে না। কাঠের অংশটুকু দেখলে তাতেও কোন কিছুর দেখা মিলবে না। মধ্যবর্তী অংশটুকু দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তার পালক দেখলে তাতেও কোন চিহ্ন পাওয়া যাবে না। অথচ তীরটি শিকারের নাড়িভুঁড়ি ভেদ করে রক্ত-মাংস অতিক্রম করে বেরিয়ে গেছে। এদের নিদর্শন হ’ল এমন একজন কালো মানুষ, যার একটি বাহু নারীর স্তনের ন্যায় অথবা গোশতের টুকরার ন্যায় নড়াচড়া করবে। তারা মানুষের মধ্যে বিরোধ কালে আত্মপ্রকাশ করবে।


[সূত্রঃ বুখারী হা/ ৩৬১০; মুসলিম হা/ ১০৬৪; মিশকাত হা/ ৫৮৯৪]।



অন্য বর্ণনায় এসেছে,



فَلَمَّا وَلَّى قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ مِنْ ضِئْضِئِ هَذَا قَوْمًا يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ ‏يُجَاوِزُ ‏حَنَاجِرَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ ‏الإِسْلاَمِ مُرُوقَ السَّهْمِ مِنَ الرَّمِيَّةِ، يَقْتُلُونَ أَهْلَ ‏الإِسْلاَمِ ‏وَيَدَعُونَ أَهْلَ الأَوْثَانِ، لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لأَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ ‏عَادٍ-



‘লোকটি চলে যাওয়ার পর রাসূ (صلى الله عليه و آله و سلم) বললেন, ঐ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন কিছু লোক আসবে যারা কুরআন পড়বে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন শিকারের দেহ ভেদ করে তীর বের হয়ে যায়। তারা মূর্তিপূজারীদেরকে ছেড়ে দিবে এবং মুসলমানদেরক হত্যা করবে। যদি আমি তাদেরকে পাই তাহ’লে ‘আদ’ জাতির মত তাদেরকে হত্যা করব’।


[সূত্রঃ বুখারী হা/৭৪৩২; মুসলিম হা/১০৬৪; মিশকাত হা/৫৮৯৪]।



অন্য বর্ণনায় এসেছে, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) হ’তে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর কাছে ‘জি‘রানা’ নামক স্থানে দেখা করে। এটি সেই স্থান যেখানে রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) হুনায়নের যুদ্ধে প্রাপ্ত গণীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। ছাহাবী বিলাল (رضي الله عنه)-এর কাপড়ের ওপর রূপার টুকরাগুলো রাখা ছিল। রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) মুষ্ঠিবদ্ধভাবে মানুষকে দান করছিলেন। তখন উপস্থিত ঐ লোকটি বলল, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহ্কে ভয় করুন ও ইনছাফ করুন!


রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বললেন, ‘ধ্বংস তোমার জন্য। আমি যদি ইনছাফ না করি তবে কে ইনছাফ করবে? আল্লাহর কসম! আমার পরে তোমরা এমন কোন লোক পাবে না, যে আমার চেয়ে অধিক ন্যায়পরায়ণ হবে’। সঙ্গে সঙ্গে ওমর (رضي الله عنه) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) ! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই’। তিনি বললেন, ‘না, আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, যদি এমন কর, তবে লোকেরা বলবে, আমি আমার সাথীদের হত্যা করি…’।


[সূত্রঃ মুসলিম হা/ ১০৬৩; ছহীহুল জামে‘ হা/ ৫৮৭৮]।


এই ব্যক্তিই ছিল প্রথম ‘খারেজী’ যে নবী করীম (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর বণ্টনের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে এবং নিজ প্রবৃত্তির রায়কে প্রাধান্য দেয়।



অন্যদিকে হযরত ওছমান (رضي الله عنه)-এর হত্যার ষড়যন্ত্রকারী এবং পরে অন্যায়ভাবে তাঁকে হত্যাকারী উচ্ছৃঙ্খল জনতাকেও ত্বাবারী ও ইবনু কাছীর (رحمة الله) ‘খারেজী’ বলে অভিহিত করেছেন।


তবে তখনও ‘খারেজী’ একটি পৃথক দল ও মতবাদ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেনি। এই ব্যক্তির বংশধর ও অনুসারীরাই ‘খারেজী’।


খারিজীরা কেমন হবে? কি করবে? রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) এ সম্পর্কে বিস্তারিত ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।


তিনি বলেন,



سَيَخْرُجُ قَوْمٌ فِى آخِرِ الزَّمَانِ، حُدَّاثُ الأَسْنَانِ، سُفَهَاءُ الأَحْلاَمِ، يَقُولُونَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ، لاَ يُجَاوِزُ إِيمَانُهُمْ حَنَاجِرَهُمْ-



‘শেষ যামানায় এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে অল্পবয়স্ক যুবক ও নির্বোধ। তারা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম কথা থেকে আবৃত্তি করবে। অথচ তাদের ঈমান তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না…’।


[সূত্রঃ বুখারী হা/ ৬৯৩০; মিশকাত হা/ ৩৫৩৫]।



হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) অন্যত্র বলেন,



يَخْرُجُ نَاسٌ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ وَيَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، ثُمَّ لاَ يَعُودُونَ فِيهِ حَتَّى يَعُودَ السَّهْمُ إِلَى فُوقِهِ. قِيلَ مَا سِيمَاهُمْ. قَالَ سِيمَاهُمُ التَّحْلِيقُ. أَوْ قَالَ التَّسْبِيد-‏



‘পূর্বাঞ্চল থেকে একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে ধনুক শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তারা আর দ্বীনের মধ্যে ফিরে আসবে না, যেমনভাবে ধনুক ছিলায় ফিরে আসে না। বলা হ’ল, তাদের আলামত কি? তিনি বললেন, ‘তাদের আলামত হচ্ছে মাথা মুন্ডন করা’।


[সূত্রঃ বুখারী হা/৭৫৬২]।



মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) আরো বলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে আমার উম্মতের মধ্যে মতানৈক্য ও ফিরক্বা সৃষ্টি হবে। এমতাবস্থায় এমন এক সম্প্রদায় বের হবে, যারা সুন্দর ও ভাল কথা বলবে আর কাজ করবে মন্দ। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমনভাবে তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তারা সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট। ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং যুদ্ধে তাদের দ্বারা শাহাদত বরণ করবে। তারা মানুষকে আল্লাহর কিতাবের দিকে ডাকবে অথচ তারা আমার কোন আদর্শের উপরে প্রতিষ্ঠিত নয়। যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, সে অপরাপর উম্মতের তুলনায় আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় হবে’। ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল  (صلى الله عليه و آله و سلم) ! তাদের আলামত কী? তিনি বললেন, ‘অধিক মাথা মুন্ডন করা’। [সূত্রঃ আবু দাউদ হা/ ৪৭৬৫; মিশকাত হা/ ৩৫৪৩, সনদ ছহীহ]।

_________________

কিতাবুল ফিতান ও অভিশপ্ত খারেজী সম্প্রদায়

সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন