খারেজী মতবাদ সৃষ্টির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

 

খারেজী মতবাদ সৃষ্টির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট


রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর ইন্তিকালের পর তাঁর সকল ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত খারেজীরা আত্মপ্রকাশ করে।


হিজরী ৩৭ সালে একটি ঘটনার মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে সকল ধারণা স্পষ্ট হয়ে যায়।



হযরত আলী (رضي الله عنه)-এর শাসনামলে খলীফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুনাফিক ও খারেজীদের চক্রান্তে মুসলমানরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এক দল আলী (رضي الله عنه)-এর এবং অন্য দল মু‘আবিয়া (رضي الله عنه)-এর পক্ষাবলম্বন করে। ক্রমে অবস্থা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যায়। অবশেষে ৬৫৭ সালের জুলাই মাসে ‘ছিফ্ফীন’ নামক স্থানে আলী (رضي الله عنه)-এর সাথে মু‘আবিয়া (رضي الله عنه)-এর যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধকালে সমস্যার সমাধানের লক্ষে দু’জন বিচারক নির্ধারণ করা হয় এই মর্মে যে, তারা দু’জনে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের জন্য যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা উভয় পক্ষ মেনে নিবে। আলী (رضي الله عنه)-এর পক্ষ থেকে আবু মূসা আশ‘আরী (رضي الله عنه) এবং মু‘আবিয়া (رضي الله عنه)-এর পক্ষ থেকে আমর ইবনুল আছ (رضي الله عنه)-কে নির্ধারণ করা হয়। ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে ‘তাহকীম’ বা সালিস নির্ধারণ নামে পরিচিত। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর শাম ও ইরাকের সকল ছাহাবীর ঐক্যমতে বিচার ব্যবস্থা পৃথকীকরণ এবং আলী (رضي الله عنه)-এর কুফায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তকে অমান্য করে তখনই আলী (رضي الله عنه)-এর দল থেকে কিছু লোক বের হয়ে যায় এবং ‘হারুরা’ নামক প্রান্তরে এসে অবস্থান করে। তাদের সংখ্যা মতান্তরে ৬, ৮, ১২ অথবা ১৬ হাযার হবে। বিচ্ছিন্নতার সংবাদ পেয়ে আলী (رضي الله عنه) দূরদর্শী ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (رضي الله عنه)-কে তাদের নিকট প্রেরণ করেন। তিনি তাদের সংশয়গুলিকে বিচক্ষণতার সাথে খন্ডন করায় বেরিয়ে যাওয়াদের মধ্য থেকে প্রায় ৪ অথবা ৬ হাযার লোক আলী (رضي الله عنه)-এর আনুগত্যে ফিরে আসেন। অতঃপর আলী (رضي الله عنه) কুফার মসজিদে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলে মসজিদের এক কোনায় ‘লা হুকমা ইল্লা লিল্লাহ’ ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানি না’ স্লোগানে তারা মসজিদ প্রকম্পিত করে তুলে। তারা আলী (رضي الله عنه)-কে উদ্দেশ্য করে বলে যে, আপনি বিচার ব্যবস্থা মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন! অথচ বিচারের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ্। আপনি সূরা আন‘আমের ৫৭নং আয়াত (ان الحكم الا لله) ‘আল্লাহ ব্যতীত কারো ফায়ছালা গ্রহণযোগ্য নয়’-এর হুকুম ভঙ্গ করেছেন। আল্লাহর বিধানের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের দরুন আপনি মুশরিক হয়ে গেছেন ইত্যাদি।



তাদের মতে আলী, মু‘আবিয়া, আমর ইবনুল আছ সহ তাহকীমকে সমর্থনকারী সকল ছাহাবী কুফরী করেছেন এবং কাফের হয়ে গেছেন। অথচ সত্য হ’ল, মানুষের ফায়ছালার জন্য মানুষকেই বিচারক হ’তে হবে। আর ফায়ছালা হবে আল্লাহর আইন অনুসারে।



খারেজীরা নিজেদের এই নির্বুদ্ধিতাকে ধর্মীয় গোঁড়ামিতে রূপ দান করে এবং মুসলমানদের মাঝে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা করে।


হযরত আলী (رضي الله عنه) তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমাদের ব্যাপারে আমরা তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।


১. তোমাদেরকে মসজিদে আসতে আমরা নিষেধ করব না,


২. রাষ্ট্রীয় সম্পদ হ’তে আমরা তোমাদের বঞ্চিত করব না,


৩. তোমরা আগে ভাগে কিছু না করলে আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না।



কিছুদিন পর তারা সাধারণ মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে শুরু করে। তখন আব্দুল্লাহ বিন খাববাব (رضي الله عنه) রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর ফিৎনা সংক্রান্ত হাদীছ শুনালে তারা তাঁকে হত্যা করে। তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীর পেট ফেড়ে বাচ্চা বের করে ফেলে দেয় এবং দু’টুকরো করে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। হযরত আলী (رضي الله عنه) জিজ্ঞেস করেন, ‘আব্দুল্লাহ্কে কে হত্যা করেছে? জবাবে তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে বলে, আমরা সবাই মিলে হত্যা করেছি। এরপর হযরত আলী (رضي الله عنه) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। যুদ্ধের আগে তিনি নিজে ইবনু আববাস ও আবু আইয়ূব (رضي الله عنه) সহ তাদের সাথে কয়েক দফা আলোচনা করেন এবং তাদের সংশয়গুলিকে দূর করতঃ সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন।

_________________

কিতাবুল ফিতান ও অভিশপ্ত খারেজী সম্প্রদায়

সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন