খারেজীদের বিষাক্ত ছোবলে কলংকিত হয়েছে ইসলামের ইতিহাস
খলীফা হযরত আবুবকর (رضي الله عنه) ও হযরত ওমর (رضي الله عنه)-এর সময় খারেজীরা মাথাচাড়া দিতে পারেনি। কিন্তু আবু লু’লু নামক জনৈক অগ্নিপূজক বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করে গোপনে মদীনায় প্রবেশ করে। ২৩ হিজরীর ২৬শে যিলহজ্জ তারিখে হযরত ওমর (رضي الله عنه) ফজরের ছালাতে ইমামতি করছিলেন, এমন সময় সে ছদ্মবেশে প্রথম কাতারে অবস্থান নেয়। অতঃপর সুযোগ বুঝে তীক্ষ্ণ তরবারী দ্বারা তিন অথবা ছয়বার তাঁর কোমরে আঘাত করে। তিনদিন পর তিনি শাহাদত বরণ করেন। ফলে চরমপন্থী তৎপরতার পুনরুত্থান ঘটে।
উল্লেখ্য, ঐ দিন সে আরো ১৩ জন ছাহাবীকে আঘাত করে। তন্মধ্যে ৯ জন শাহাদত বরণ করেন। ঐ ঘাতক পালিয়ে যেতে না পেরে নিজের অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে।
ইহুদী আব্দুল্লাহ বিন সাবার ষড়যন্ত্রে খারেজী চরমপন্থীদের হাতেই ৩৫ হিজরীর ১৮ই যিলহজ্জ তারিখ জুম‘আর দিন রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর জামাতা ৮২ বছর বয়সী ওছমান (رضي الله عنه) নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন। নাহরাওয়ানের যুদ্ধে বেঁচে যাওয়া খারেজীরা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। অতঃপর তারা হযরত আলী (رضي الله عنه)-কে হত্যা করার জন্য গোপনে আব্দুর রহমান বিন মুলজামকে ঠিক করে। অনুরূপভাবে হযরত মু‘আবিয়া (رضي الله عنه)-এর কে হত্যা করার জন্য বারাক বিন আব্দুল্লাহকে এবং আমর ইবনুল আছ (رضي الله عنه)-কে হত্যা করার জন্য আমর বিন বাকরকে নির্বাচন করে। এভাবে তারা একই দিনে হত্যা করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে পড়ে। আব্দুর রহমান বিন মুলজাম তার দু’জন সহযোগী ওরদান ও শাবীবকে সঙ্গে নিয়ে ৪০ হিজরীর ১৭ই রামাযান জুম‘আর রাতে কূফায় গমন করে। ফজরের সময় হযরত আলী (رضي الله عنه)-এর বাড়ীর দরজার আঁড়ালে অস্ত্র নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকে। তিনি বাড়ী থেকে বের হয়ে যখন ‘ছালাত’ ‘ছালাত’ বলে মানুষকে ডাকতে ডাকতে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন, তখনই তারা আলী (رضي الله عنه)-এর মাথায় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে তাঁর দাড়ি রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
এ সময় হযরত আলী (رضي الله عنه)-কে লক্ষ্য করে ঐ রক্তপিপাসু বলেছিল,
لا حكم إلا لله ليس لك يا علي ولا لأصحابك،
‘হে আলী! আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান নেই। তোমার জন্যও নেই এবং তোমার সাথীদের জন্যও নেই হে আলী’।
তাকে হত্যা করার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে উঠে,
شحذته أربعين صباحا وسألت الله أن أقتل به شر خلقه
‘আমি চল্লিশ দিন যাবৎ তরবারিকে ধার দিয়েছি এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছি, আমি যেন এই অস্ত্র দ্বারা তাঁর সৃষ্টির মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারি’ (নাঊযুবিল্লাহ্)।
হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেছিলেন, আমি মারা গেলে তোমরা তাকে হত্যা করবে। আর বেঁচে থাকলে আমিই যা করার করব। কিন্তু তিনদিন পর ৪০ হিজরীর ২১শে রামাযান ৬৩ বা ৬৪ বছর বয়সে তিনি শাহাদত বরণ করেন। ঐ দিন একই সময় হযরত মু‘আবিয়া (رضي الله عنه)-কে আঘাত করলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
হযরত আমর ইবনুল আছ (رضي الله عنه) ভীষণ অসুস্থ থাকায় তিনি সেদিন মসজিদে আসতে পারেননি। ফলে তিনি বেঁচে যান। তবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ইমাম খারেজাহ ইবনু আবী হাবীবাকে ঐ ঘাতক হত্যা করে। এভাবেই খারেজীরা খুলাফায়ে রাশেদার মত জান্নাতী ও বিশিষ্ট ছাহাবীগণের প্রাণনাশ ঘটিয়ে ইসলামের সোনালী ইতিহাসকে কলংকিত করে।
_________________
কিতাবুল ফিতান ও অভিশপ্ত খারেজী সম্প্রদায়
সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন